Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

হিন্দুত্ববাদের বিকল্প রাজনৈতিক মতবাদ সামনে আনতে না-পারলে ইন্ডিয়া জোটের ভবিষ্যৎ নেই

সুমন কল্যাণ মৌলিক

 


ইন্ডিয়া জোট এখনও পর্যন্ত বিজেপিকে নির্বাচনী কৌশলেই পরাজিত করার চেষ্টা করছে, বিজেপি তথা সংঘ পরিবার আজ যে রাজনৈতিক মতাদর্শকে সামনে এনেছে, তার বিকল্প রাজনৈতিক মতবাদকে উপস্থিত করার কোনও চেষ্টা নজরে পড়ছে না। এ-কথা ঠিক যে আজ বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইতে একের বিরুদ্ধে এক প্রার্থী দেওয়াটা জরুরি, কিন্তু তার চেয়েও বেশি জরুরি ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় এলে তারা কী ধরনের ভারতবর্ষ চায়, তার একটা সুস্পষ্ট ছবি জনগণের সামনে তুলে ধরা

 

ভারতের সংসদীয় রাজনীতি আজ এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। দিল্লির সরকারের ভাবগতিক থেকে এটা পরিষ্কার যে অযোধ্যায় মহা সমারোহে রামন্দির উদ্বোধনের পরেই সাধারণ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হবে। ধর্মীয় মেরুকরণের এই তুঙ্গমুহূর্তে পাঁচ রাজ্যের সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনের সাফল্যকে পুঁজি করে জয়ের হ্যাটট্রিকের জন্য ঝাঁপাবে বিজেপি-সহ গোটা সংঘ পরিবার। বিজেপির নির্বাচনী কৌশলের মধ্যে নতুনত্ব কিছু থাকার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। বিগত এক দশক ধরে হিন্দুরাষ্ট্রের লক্ষ্যকে সামনে রেখে একের পর এক গণশত্রু নির্মাণ (মুসলমান, সীমান্তের শত্রু, টুকরে টুকরে গ্যাং, আন্দোলনজীবী, কলমধারী মাওবাদী, কালচারাল মার্ক্সিস্ট, অধিকার আন্দোলনের কর্মী ইত্যাদি) ও তাদের নিকেশ করার জন্য মহামহিম হিন্দু হৃদয়সম্রাটের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা এক শক্তিধর দেশ— এই ফর্মুলাতে রাজনীতিকে পরিচালিত করাই তাদের রণকৌশল। স্বাভাবিকভাবেই রুটি-রুজি, চাকরি, ফসলের ন্যায্য দাম, স্বাস্থ্য, শিক্ষার মতো বিষয়গুলি তাদের কাছে প্রাধান্যের জায়গা নয়। ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দু ফ্যাসিবাদ ও কর্পোরেট আগ্রাসনের রসায়নে গড়ে ওঠা এই রাজনীতি কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে এখনও পর্যন্ত অপ্রতিরোধ্য। এখন প্রশ্ন হল এই রাজনীতিকে ভোটের ময়দানে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফেলার জন্য যে ইন্ডিয়া জোট তৈরি হয়েছে তারা কি আদৌ এই লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত! এবারের নির্বাচনের গুরুত্ব আজ আর শুধু কোনও একটি পক্ষের জয়-পরাজয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সোজা কথা হল ভারতীয় সংবিধানকে সাক্ষী রেখে ধর্মনিরপেক্ষ, বহুত্ববাদী ভারতের জন্ম হয়েছিল, তার অস্তিত্বই আজ চ্যালেঞ্জের মুখে। মোদি-জমানার সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক প্রভাব হল শুধু সরকার নয়, বিচারব্যবস্থা-সহ যে-সমস্ত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তারাও তাদের কাজকর্মের মাধ্যমে এই হিন্দুত্ববাদী অগণতান্ত্রিক রাজনীতিকে নৈতিক বৈধতা জোগাচ্ছে। ফ্যাসিবাদী দর্শনের মূল কথা হল সবার উপর রাষ্ট্র সত্য (ফলিত প্রয়োগে শাসকের স্বার্থই রাষ্ট্রের স্বার্থ) তাই ১৯৫০-পরবর্তী ভারতে যেটুকু নাগরিক স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার ছিল তাও আজ শেষের মুখে। এই অবস্থায় আসন্ন সাধারণ নির্বাচন এক অ্যাসিড টেস্টে রূপান্তরিত হয়েছে।

 

দুই.

এ-কথা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই যে এ-বছর ২৮টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স’ (ইন্ডিয়া জোট) মোদিদের ভোটের রাজনীতিতে পরাজিত করতে এক গুরুত্বপূর্ণ বাজি। একাধারে এই রাজনৈতিক দলগুলির সবাই মিলে এক সর্বভারতীয় অস্তিত্ব রয়েছে। দলগুলি মতাদর্শগতভাবে বিভিন্ন মেরুর হলেও বিজেপির হিন্দুরাষ্ট্রের স্লোগান এবং কংগ্রেস-মুক্ত (প্রকৃত অর্থে বিরোধীমুক্ত ভারত) ভারতের আহ্বান এই দলগুলিকে বাধ্য করেছে এক জোটভুক্ত হওয়ার। আবার অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ধর্মনিরপেক্ষতা ও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রতি এদের একটা সমর্থন রয়েছে। কেরল, পশ্চিমবঙ্গের মতো দু-একটি ব্যতিক্রম বাদ দিলে জোটভুক্ত দলগুলো আগামী সাধারণ নির্বাচনে পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, বরং জোট করেই তারা বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হতে পারে। কর্নাটকে গুরুত্বপূর্ণ জয়ের পর সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনে জোটের মূল সূত্রধর কংগ্রেসের হতমান পারফরমেন্সের পরেও ইন্ডিয়া জোটের নির্বাচনী ভবিষ্যৎ অন্ধকার নয়। এর প্রধান কারণ দক্ষিণ ভারত ও পূর্ব ভারতে তাদের শক্তিশালী উপস্থিতি।

সমস্যা হল ইন্ডিয়া জোট এখনও পর্যন্ত বিজেপিকে নির্বাচনী কৌশলেই পরাজিত করার চেষ্টা করছে, বিজেপি তথা সংঘ পরিবার আজ যে রাজনৈতিক মতাদর্শকে সামনে এনেছে, তার বিকল্প রাজনৈতিক মতবাদকে উপস্থিত করার কোনও চেষ্টা নজরে পড়ছে না। এ-কথা ঠিক যে আজ বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইতে একের বিরুদ্ধে এক প্রার্থী দেওয়াটা জরুরি, কিন্তু তার চেয়েও বেশি জরুরি ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় এলে তারা কী ধরনের ভারতবর্ষ চায়, তার একটা সুস্পষ্ট ছবি জনগণের সামনে তুলে ধরা। এই রাজনৈতিক প্রশ্নটিকে অস্বীকার করলে বিজেপিকে হারানো অসম্ভব।

 

তিন.

রাজনীতির একটা সাধারণ শর্ত হল কে আচরিত রাজনীতির অ্যাজেন্ডা ঠিক করছে আর কারা সেই অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া দিতে বাধ্য হচ্ছে। দীর্ঘ সময় ধরে বিজেপি সফল হয়েছে সংসদীয় রাজনীতির অ্যাজেন্ডাকে নির্ধারণ করতে। এই রাজনীতির মূল কথা হল দেশবিভাগের পর ভারত রাষ্ট্র হিন্দুদের জন্য তৈরি হয়েছিল কিন্তু মেকি ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক নেতাদের চক্রান্তে ভারতবর্ষ এক শক্তিশালী হিন্দুরাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারেনি। আজ হিন্দু হৃদয়সম্রাট নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি সরকার এই স্বপ্নকে সাকার করতে সক্ষম। কাশ্মিরে ৩৭০ ধারা বিলোপ, অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ, নয়া নাগরিকত্ব আইনের প্রস্তাবনা, নতুন করে ইতিহাস লিখন, গুরুত্বপূর্ণ স্থানের নাম বদল সেই হিন্দুরাষ্ট্র গঠনের পথে এক-একটা ধাপ মাত্র, যার চূড়ান্ত পরিণতি নতুন সংবিধান যা এই নতুন হিন্দুরাষ্ট্রকে নৈতিক বৈধতা দেবে। এই রাজনীতি পূর্বে উল্লেখিত গণশত্রুদের তালিকা তৈরি করেছে যারা এই হিন্দুরাষ্ট্র গঠনের পথের কাঁটা। এই রাজনীতি এতটাই সর্বগ্রাসী যে সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের সাধারণ চাওয়াপাওয়াকে সে রাজনীতির বৃত্তের বাইরে রাখতে একটা মাত্রায় সমর্থ হয়েছে। বিজেপি চায় তাদের রাজনীতির মাঠেই খেলাটা সীমাবদ্ধ থাকুক।

 

চার.

আজকে ইন্ডিয়া জোটকে বিজয়ী হতে গেলে সর্বপ্রথম রাজনীতিকে বিজেপি-নির্ধারিত হিন্দুত্বের আঙিনা থেকে বের করে আনতে হবে। সম্প্রতি একাধিক সুযোগ উপস্থিত হলেও ইন্ডিয়া জোট (বিশেষ করে কংগ্রেস) সেই সুযোগ নিতে ব্যর্থ। বিজেপির মার্গদর্শক রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ যে অখণ্ড হিন্দুত্বের ভাষ্য নির্মাণ করে তার ভরকেন্দ্রে রয়েছে ব্রাহ্মণ্যবাদ। কিন্তু এই ভাষ্যের প্রধান সমস্যা হল জাতপাতভিত্তিক বর্ণবাদী ব্যবস্থা। ব্রাহ্মণ্যবাদের সঙ্গে তফসিলি জাতি, দলিত তথা অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির সম্পর্ক বৈরিতামূলক। সংঘকর্তারা বর্ণবাদী ব্যবস্থার মূল কাঠামোকে অক্ষুণ্ণ রেখে কিছু প্রসাধনী পরিবর্তন চায়। তারা আজ আম্বেদকরের ভাবনাকে আত্মসাৎ করতে চায়। অন্যদিকে আম্বেদকরের রাজনীতির ভিত্তি হল বর্ণবাদী ব্যবস্থার বিলোপ (annihilation of caste)। এইজন্য ব্রাহ্মণ্যবাদী ব্যবস্থার আদর্শ গ্রন্থ মনুসংহিতাকে দিয়ে দলিত রাজনীতি ধ্বংস করতে চায়। এই বিরোধকে আরও বিকশিত করে দলিত মানুষের ক্ষমতায়নের দাবিটিকে সামনে আনতে পারলে সবচেয়ে ক্ষতি বিজেপির। তামিলনাড়ুর ডিএমকে বিধায়ক সনাতন ধর্মের স্বরূপ উন্মোচন করে এই বিরোধকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। আর বিহারের নীতিশকুমার সরকার কর্তৃক প্রকাশিত জাতগণনার রিপোর্ট ভারতীয় রাজনীতিকে হিন্দুত্বের চোরাবালি থেকে মুক্ত করার এক সুবর্ণ সুযোগ উপস্থিত করেছে। তফসিলি জাতি, ওবিসি ও ইবিসি (ইকনমিকালি ব্যাকওয়ার্ড)-দের হালহকিকত প্রমাণ করে দিয়েছে তথাকথিত অখণ্ড সমাজের আসল চেহারাটা। বিজেপি তথা সংঘ পরিবার এই রিপোর্টের পর এতটাই টালমাটাল, যে তারা না পারছে এই রিপোর্টকে মানতে, না পারছে প্রত্যাখান করতে। বিজেপি এই রিপোর্টকে প্রত্যাখান করলে ওবিসি ও তফসিলি জাতির বিদ্রোহ অনিবার্য, আবার মেনে নিলে তার রাজনৈতিক ভাষ্যের ভরকেন্দ্র ব্রাহ্মণ্যধর্মের বিদ্রোহ। এই অবস্থায় ইন্ডিয়া জোট এক ভাষায় জাতগণনার দাবিতে সরব হয়নি, এমনকি রাহুল গান্ধি বিহারের রিপোর্টকে স্বাগত জানালেও সদ্য সমাপ্ত পাঁচটি রাজ্যের নির্বাচনে এটাকে কোনও ইস্যুই করা হয়নি। সনাতন ধর্ম সংক্রান্ত বিতর্কে ইন্ডিয়া জোটের কৌশলী প্রতিক্রিয়া বাস্তবে বিজেপির বক্তব্যকে সমর্থন করেছে। একই সঙ্গে ছত্তিশগড়, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের বাস্তুঘুঘুরা (কমলনাথ, দিগ্বিজয় সিং, অশোক গেহলটরা) নরম হিন্দুত্বের রাজনীতির মাধ্যমে বিজেপির মোকাবিলা করতে চেয়েছেন যা তাঁদের পরাজয়কে নিশ্চিত করেছে। রাজস্থান, ছত্তিশগড় ও মধ্যপ্রদেশে দেড় বছরের কংগ্রেস শাসনকাল চরিত্রগতভাবে ছিল বিজেপির শাসনের পুনরাবৃত্তি। তাই ইন্ডিয়া জোটের বিকল্প রাজনৈতিক ভাবনার কথা প্রচারে আসেইনি। বিজেপির উগ্র হিন্দুত্বের রাজনীতির বদলে নরম হিন্দুত্বকে আশ্রয় করা আসলে বিজেপির মাঠেই খেলা— এই সাধারণ সত্যটি উপলব্ধি করতে না পারলে ইন্ডিয়া জোটের মুখ থুবড়ে পড়াই ভবিতব্য। ইন্ডিয়া জোটের সব শরিকদেরই বুঝতে হবে লক্ষ কণ্ঠে গীতাপাঠের বিকল্প কখনওই চণ্ডীপাঠ হতে পারে না।

 

পাঁচ.

আজ বিজেপিকে তার পছন্দের মাঠ থেকে বাইরে আনতে হলে রুটি-রুজির রাজনীতিকে সামনে আনতেই হবে। দরকার এই সংক্রান্ত ক্ষোভ-বিক্ষোভগুলিকে কাজে লাগিয়ে নতুন রাজনীতির ভাষ্যকে সামনে আনার। ইন্ডিয়া জোট সেই কাজে সফল তো নয়ই বরং অন্য কেউ সামনে এনে দিলেও তাকে ব্যবহার করার যোগ্যতাও নেই নেতৃত্বের। এই অযোগ্যতা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠল সাম্প্রতিক সংসদ অনুপ্রবেশ সংক্রান্ত বিতর্কে। এ-কথা সবার জানা যে পৃথিবীর তরুণ প্রজাতন্ত্র ভারতে গত ষাট বছরের ইতিহাসে বেকারি সর্বোচ্চ শিখর ছুঁয়েছে মোদি-জমানায়। এ-নিয়ে ক্ষোভ ভাষা পেয়েছে তরুণ যুবকদের সংসদে প্রতিবাদে। তাদের প্রতিবাদের ধরন নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে কিন্তু চাকরির যে দাবি তোলা হয়েছে তা ন্যায্য। এ-ক্ষেত্রে ইন্ডিয়া জোটের দায়িত্ব ছিল দেশের যুবসমাজের এই জ্বলন্ত দাবিটিকে সজোরে সমর্থন করার। কিন্তু তারা বিজেপির ফাঁদে পা দিয়ে বিষয়টিকে নিরাপত্তার ইস্যু করে তুলল। বেকারি ও কর্মসংস্থানের মতো বিষয় পেছনের সারিতে চলে গিয়ে সংসদের নিরাপত্তার প্রশ্নটি প্রধান হয়ে উঠল। এই অবিমৃষ্যকারিতার ফলে সংসদে অচলাবস্থা, প্রায় সমস্ত বিরোধী সাংসদদের বহিষ্কার ও এই সুযোগে একের পর এক জনবিরোধী বিল পাশ।

শুধু কর্মসংস্থানের প্রশ্ন নয়, একশো দিনের রোজগার যোজনা, জ্বালানির ক্রমবর্ধমান দাম, মুদ্রাস্ফীতি, জনকল্যাণমুখী প্রকল্পে ব্যয় হ্রাসের মতো বিষয়গুলোকেও আজ বিকল্প রাজনৈতিক ভাবনার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে কংগ্রেসের সমস্যা হল যে, ক্রোনি ক্যাপিটালিজমের কারণে আদানিদের এই দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হয়ে ওঠা, কর্পোরেট মুনাফার নিশ্চয়তা প্রদান সরকারের প্রধান কর্তব্য হয়ে ওঠা, তার শুরু কংগ্রেস জমানাতেই। পূর্বের সেই ভুল স্বীকার করে আজ নতুন পথে অগ্রসর হওয়াই সময়ের দাবি। জনকল্যাণমুখী অর্থনীতির পক্ষে দাঁড়িয়ে কর্পোরেট আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে ভোটবাক্সে তার সদর্থক প্রভাবই পড়বে।

 

ছয়.

সাম্প্রতিক সময়ের কিছু অভিজ্ঞতার স্মরণ আজকে আবার করা জরুরি। বিজেপি-প্রকল্পিত অ্যাজেন্ডার বাইরে রাজনীতিকে নিয়ে যেতে পারলে কী হতে পারে, সাম্প্রতিক সময়ে তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ কৃষক আন্দোলন। সরকারের যাবতীয় অপপ্রচার ও আন্দোলনকারীদের দেশদ্রোহী তকমা দেওয়া সত্ত্বেও কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্ব তাঁদের লক্ষ্যে স্থির থেকেছেন। ফলত সরকার পিছু হটেছে। সেই মাত্রাতে না হলেও নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের মাধ্যমে দেশের জনগণকে বেঘর করার প্রচেষ্টাও অনেকাংশে রুখে দেওয়া হয়েছে। কর্নাটক নির্বাচনের আগে রাহুল গান্ধির নেতৃত্বে ভারত জোড়ো যাত্রা সংসদীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসাবে বিবেচিত হতে পেরেছিল কারণ বিজেপির ঘৃণার রাজনীতির বিরুদ্ধে মানুষকে জোড়বার একটা কথা ছিল। এই উদাহরণগুলোকে যদি ইন্ডিয়া জোট ভরসা করে তবে তাকে বিকল্প রাজনীতির উপস্থাপনা করতেই হবে।


*মতামত ব্যক্তিগত