Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

কৃষি বিপ্লব

সফিউল

 

 

কৃষি আবার শিরোনামে

খবরের কাগজে কৃষকরা প্রথম পাতায় জায়গা করে নিয়েছেন। চুঁইয়ে পড়া অর্থনীতিকে শিরোধার্য করে উন্নয়নের মডেল নিয়ে শোরগোল আপাতত বন্ধ হয়েছে। ১৯৯১ সাল থেকেই ‘সাহসী’ সংস্কারের কথা শুনে আসছি আইএমএফ-বিশ্বব্যাঙ্ক সৃষ্ট অর্থনীতিবিদদের মুখে। কিন্তু কোথায় সেই নয়া অর্থনৈতিক সংস্কার আর তার সুফল? সঞ্চয়-ব্যাঙ্ককে শক্তিশালী বানানো আর বেকারসমস্যা দূর করে ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোর কেইনসীয় প্রকরণের মধ্য দিয়ে পুঁজিবাদের যে বিকাশ চাওয়া হয়েছিল তা ব্যর্থ হওয়ার পর থেকে এই নয়া অর্থনৈতিক ঢক্কানিনাদ শুনে শুনে ক্লান্ত আমরা। কিন্তু স্বঘোষিত হিন্দুত্ববাদী বিজেপি যেদিন ৯ জন হিন্দু কৃষককে গুলি করে মারল, ধামাচাপা দেওয়া সেই নয়া অর্থনৈতিক বুদবুদ ফেটে গেল সকলের চোখে সামনে। তবে কৃষকের মৃত্যু আজকে খুব স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে গেলেও, মিডিয়া কৃষক মৃত্যু নিয়ে শোরগোল না তুললেও, কৃষকের মৃত্যুতে পাড়ায় পাড়ায় কৃষকের কাস্তে, হাল, কোদালের ছবি পোস্টার হিসাবে না পড়লেও ভোটের সময় চুপি চুপি হলেও কৃষি আলোচনার বিষয়বস্তু হিসাবে উঠে আসেই। তাই আমরা আজ আলোচনা করব দেশের শিল্পায়নের ভিত্তি, উন্নয়নের ভিত্তি, কৃষি বিপ্লব প্রসঙ্গে। বিপ্লব শুনেই অনেকে নাক কুচকালেও পাত্তা দেওয়ার কারণ দেখি না। কৃষকের মৃত্যু বা হত্যার সঙ্গে ফসলের মূল্যের সম্পর্ক কী গভীর তার জন্য কোনও পাঠ নেওয়ারও দরকার হয় না।

১৯৯৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত কৃষক আত্মহত্যার পরিসংখ্যান

উপরের চিত্রে ১৯৯৫ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত কৃষক আত্মহত্যার খতিয়ানটি ভালো করে লক্ষ করুন। ৯০-এর দশকের শুরুতে বিশ্ব বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে ও তার পরেই কৃষক মৃত্যুর সংখ্যা কীভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে এবং চূড়ায় পৌঁছেছে বাজপেয়ির পূর্বতন বিজেপির সময়ে। মিডিয়াতে কৃষক মৃত্যু খবর না হলেও বিজ্ঞাপনের ঢক্কানিনাদ দিয়ে কৃষকের আর্তনাদ চাপা দেওয়া যায় না উপরের পরিসংখ্যান তার একটি প্রমাণ। নিঃশব্দে দেশজুড়ে শাসকের পরিবর্তন হয়ে যায়, বামপন্থীদের ঠেকা দেওয়া সরকার তাদের দাবি মেনে কৃষিক্ষেত্রে মূল্য নির্ধারণ করতে একটি কমিশন গঠন করতে বাধ্য হয়। এর সঙ্গে আরও আনুষঙ্গিক ঠেকিয়ে রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয় যার কোনওটি এখনও স্থায়ী সমাধান হিসাবে গৃহীত না হলেও ঊর্ধ্বমুখী কৃষক আত্মহত্যার পরিসংখ্যানে এক স্থিতাবস্থা আসে ও কয়েকবছর পরে সংখ্যাটা কিছুটা কমে। দ্বিতীয় দফায় নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি সরকার আসার পর আবার যখন কৃষক আত্মহত্যার সংখ্যা বাড়তে শুরু করে তখনই সরকার কৃষক আত্মহত্যার ডেটা প্রকাশ করাই বন্ধ করে দেয় ২০১৫ সালের পর। বিজেপির সরকার মনে করছে বাজপেয়ির সময়ের সত্যি তথ্য প্রকাশ করার ভুল তারা করবে না।

এখন আমরা সেই ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত কৃষকের ফসলের মূল্য সমস্যার সমাধানের উদ্দেশ্যে অধ্যাপক স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশগুলিকে ভিত্তি করে আলোচনা করব। যে কৃষি বিপ্লবের কথা বলছি, তার একটি পরিকল্পনা বা দলিল হাজির করেছিল স্বামীনাথন কমিশন। কমিশন বলেছিল, ফসলের দেড়া দাম আর আমূল ভূমিসংস্কার, এই দুটো প্রকরণের মধ্য দিয়েই কৃষি সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব। দেখা যাক, এই প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের পরিমাণ কত?

কৃষি বিপ্লবের জন্য প্রয়োজনীয় খরচ

কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা Food Corporation of India দেশে মোট উৎপন্ন খাদ্যশস্যের মাত্র ১৫% কেনে, ও সেই ধান বা গম রেশনের মধ্য দিয়ে বিক্রয় করে, যার ফলে তাকে সরকার থেকে বছরে ৬৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়। এই হিসেব থেকে এটুকু স্পষ্ট হয় যে তারা ১০০% খাদ্যশস্য কিনলে ও রেশনের মাধ্যমে তা বিক্রয় করলে ৪ লক্ষ কোটির মতো ভর্তুকি দিতে হত সরকারকে। এখন কেন্দ্রে বিজেপি বা কংগ্রেস দুটি দলই কৃষিক্ষেত্রে ভর্তুকি দেওয়ার থেকে আম্বানি, আদানি, নীরব মোদিদের ভর্তুকি দিতে পছন্দ করে। নয়া অর্থনৈতিক সংস্কার বলে ভাড়ায় খাটা মিডিয়া বা অর্থনীতিবিদদের দিয়ে সবরকমের ভর্তুকির বিরুদ্ধে কথা বললেও কার্যক্ষেত্রে আসলে তারা কৃষকদের দাবিদাওয়া চুপ করিয়ে দিয়ে সমস্তটাই কর্পোরেট প্রভুদের পদতলে নৈবেদ্য হিসাবে সাজিয়ে দিতে চায়, তার জন্য নানারকম শব্দের মায়াজাল বুনতে থাকে। আমরা যারা কর্পোরেটদের প্রভু হিসাবে স্বীকার করি না তাদের সোজা কথাটা সোজাভাবেই বলা দরকার। কৃষিপণ্যের বাজারে মধ্যস্বত্ত্বভোগী দালালদের হঠানোর কথা সঠিক ও স্বাভাবিকভাবে বেশ কয়েক বছর ধরেই উঠে এলেও কংগ্রেস ও বিজেপি অনেকগুলি দালালদের হঠিয়ে রিলায়েন্স, বিড়লা, বা বহুজাতিক “মোর”, “স্পেন্সার”-দের অন্তর্ভুক্তির কথা বলতে চায়। যারা আইআরসিটিসি বা রিটেল আউটলেটে আজকের দিনেও মাসে ২ বা ৩ গ্রাম সোনার সম মূল্যের মাইনে দিয়ে সেই ৭০% কৃষিনির্ভর দেশের নাগরিকদের ভৃত্যের জীবন বা ভিখারির জীবন নির্বাহ করতে বাধ্য করতে চায়। ভোটের সময়ে তাই স্পষ্টভাবে বলা দরকার ৭০% কৃষিনির্ভর দেশের প্রধান বিনিয়োগক্ষেত্র হিসাবে কৃষিকে চিহ্নিত করে উৎপাদন ও বণ্টনের মধ্যে ভারত সরকারকে সরাসরি মাঝখানে এসে দাঁড়াতে হবে।

এই প্রেক্ষিতে উপরের হিসাবটা অন্য আরেকভাবেও করা যায়। বছরে ২৫ কোটি টন বা ২৫০ কোটি কুইন্টাল ধান-গম-জোয়ার-বাজরা-ডাল ভারতে উৎপন্ন হয়। কুইন্টাল পিছু ২৫০০ টাকা করে মূল্য ধরে সরাসরি কৃষকদের থেকে (মাঠ থেকেই) সবটা কেনা হলে দরকার ৬.২৫ লক্ষ কোটি টাকা। যাতায়াত ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ ধরলে তা মোটামুটি ৭ লক্ষ কোটি। রেশনের মাধ্যমে তা অর্ধেক দামেও বিক্রয় করলে (১২ টাকা কেজি) সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে ওই সাড়ে তিন লক্ষ কোটি, যা আগের হিসেবের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। বছরে ৪ লক্ষ কোটি ধরলে ৫ বছরে সরকারের প্রায় ২০ লক্ষ কোটি টাকা খরচ হওয়ার কথা। পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা থেকে বোঝা যায় একটি দেশে উন্নয়নের মাপকাঠিতে এক একটি ধাপ উল্লম্ফনের জন্য ৫ বছর সময়কেই যথেষ্ট ধরা হয়। এই ২০ লক্ষ কোটি টাকা ভারতবর্ষের সামগ্রিক চিত্র বদলে দিতে পারে নিঃসন্দেহে। হয়তো ভারতের সঙ্গে প্রায় একসঙ্গেই স্বাধীন হওয়া চিন যে সময়ে তাদের দেশের হালচাল বদলে দিতে পেরেছিল তার থেকেও কম সময়ে। এই ২০ লক্ষ কোটি টাকা যেহেতু কোটি কোটি হাতে ঘুরছে, কারও হাতেই এত টাকা যাচ্ছে না যার ফলে তা পুঁজি হয়ে উঠতে পারে, সুতরাং ৫ বছরেই তা অন্তত ১০০ গুণের এক অতিকায় শিল্পবাজারে রূপান্তরিত হতে বাধ্য। টাকা চলাচলের বেগ বা circulation velocity উচ্চ থাকতে বাধ্য। ভর্তুকি দেওয়া মানে না খেতে পাওয়া ব্যক্তিকে শুধু খেতে দেওয়াই নয়, সেটি আসলে ধুঁকতে থাকা অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতেও যে আবশ্যিক ব্যবস্থা সেটা আজকাল রাহুল গান্ধিকেও মানতে হচ্ছে। শুধু আম্বানি আদানিদের পকেটে টাকা ঢেলে দিলেও যে তারা বেঁচেবর্তে সুখে খেতে পারবে না সেটা মোদির জমানা দেখিয়ে দিয়েছে। নীরব মোদিদের পকেটে সম্পদ তুলে দিলেও মানুষের পারচেজিং ক্ষমতা তলানিতে ঠেকে গেলে এদেশে তাদের ব্যবসা বাণিজ্য চলবে না। তাই মোদিকে দেশে দেশে ঘুরে বেড়াতে হয়েছে আমাদের দেশের সম্পদ লুঠ করে তার প্রভুরা কোন দেশে ভালোভাবে বাণিজ্য করতে পারে সেই নিয়ে বাণিজ্য চুক্তি করার জন্য। ভোটের সময় তাই আমাদের স্মরণ করানোর দরকার দেশের অর্থনীতির হাল ফিরতে পারে দেশের কৃষিনির্ভর জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে। তার জন্য কৃষকের ফসলের যথাযথ মূল্যের ব্যবস্থা করা আবশ্যিক। এর শুরু স্বামীনাথন কমিটির সুপারিশ দিয়ে হলেও, দিতে হবে অনেক দূর পাড়ি।

স্বামীনাথন যা বলেননি

উনি বলেননি যে ফসলের দেড়া দাম কে দেবে? ফলে অন্যায় সুযোগ অনবরত নিয়ে চলেছে মিল মালিকরা। খাদ্য সুরক্ষার নামে যা চলছে তা আসলে মিল মালিকদের মোচ্ছব। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় ভর্তুকি মানেই যদিও তাই। কয়েকদিন আগে ঢাকঢোল পিটিয়ে বিজেপিওয়ালারা ঘোষণা করেছিল যে খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের চালের প্রতি ৩৪ টাকার মধ্যে ৩২ টাকা সরকার দেয় আর গমের ২২/২৩ টাকা প্রতি কেজির মধ্যে ২০/২২ টাকা সরকার প্রদান করে। মমতা ব্যানার্জির সরকার জনগণকে ২ টাকা কেজি দরে চাল বা গম খাওয়াচ্ছেন বলে যে প্রচার করা হয় তা যে ভিত্তিহীন বা সর্বৈব মিথ্যা তা প্রমাণ করার জন্য এই অভয়বাণীটি তারা দিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হল ওই ৩২ টাকা কার পকেটে যাচ্ছে? মিল মালিকরা যদি সহায়ক মূল্য ১৪১০ টাকা কুইন্টাল দরে ধান কেনে তাও এক কেজি চালের দাম ২২ থেকে ২৩ টাকা হয়। তার মানে কেজি প্রতি ৯ থেকে ১০ টাকা তাদের লাভ। গমের ক্ষেত্রেও তাই। কিন্তু মিল মালিকরা কত দামে কিনছে কৃষকদের থেকে? অধিকাংশ ধানই তারা ১০০০ থেকে ১১০০ কুইন্টাল দরে কেনে। ফলে প্রতি কেজি চালের দাম দাঁড়ায় ১০ থেকে ১১ টাকা। অর্থাৎ ১৩ থেকে ১৫ টাকা লাভ।

দ্বিতীয়ত, সরকার খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পে যে চাল বরাদ্দ করে তা বাজারের সেরা চাল। কিন্তু জনগণ রেশনে যা পায় তা গরু ছাগলের খাদ্য হিসেবে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয় তারা। অতএব আর এক দফা লাভ মিল মালিকদের। সুতরাং কৃষি বিপ্লবের দলিলের ফাঁক ভরাট করে বলা যায় দেড়া দাম দিতে হবে সরকারকে, এবং তা সরাসরি কৃষকদেরকেই। আজ না হলেও কাল এই ছোট ছোট মিল মালিকরা হটে যাবেই, আমাদের অসচেতনতার সুযোগ নিয়ে এদের জায়গায় বিজেপি বহুজাতিকদের স্থান করে দিতে চাইবে। আমাদের বলতে হবে এখানে দাঁড়াবে জনগণের ভোটে জেতা সরকার বা জনগণের কোনও সংস্থা, উৎপাদন থেকে বণ্টন ব্যবস্থায় চুক্তির ভিত্তিতে কোনও সস্তা শ্রমিক নয় এখানেও সর্বত্র থাকবে সরকারি চাকরির সুযোগ সুবিধা পাওয়া আমলা, করণিক, অফিসারদের মতই একদল দক্ষ শ্রমিক।

কৃষি বিপ্লবের খরচের সংস্থান

বিশ্বব্যাঙ্ক থেকে অনবরত ঋণ নেওয়া চলছে। শোনা যাচ্ছে ভারতই সর্ববৃহৎ ঋণকর্তা। অথচ কৃষি বিপ্লবের পথে গেলে খরচ তোলার জন্য আয়করই যথেষ্ট ছিল। হিসেবটা দেখা যাক।

অর্জুন সেনগুপ্তের এক দশক পরে ধরে নেওয়া হচ্ছে ৮০% পরিবারের মাসিক রোজগার দ্বিগুণ হয়েছে। অর্থাৎ ৫ জনের পরিবারে প্রতিদিন মাথাপিছু আয় ২০-র বদলে ৪০ হয়েছে। তাহলে পরিবারের মাসিক আয় হয় ৬০০০ টাকা, বছরে ৭২,০০০ টাকা। অর্থাৎ ২০ কোটি পরিবারের মোট রোজগার হয় প্রায় ১৫ লক্ষ কোটি টাকা। এদিকে মোট জাতীয় আয় হল ১৩৫ লক্ষ কোটি টাকা। ২৫ কোটি পরিবারের বাস এই দেশে। অতএব বাকি ৫ কোটি পরিবার আয় করে বছরে ১২০ লক্ষ কোটি। এবার এই ৫ কোটির মধ্যে মোটামুটি হিসেবে মাত্র ১ কোটি পরিবার কর দিতে পারেন। বাকি ৪ কোটি পরিবারের বার্ষিক রোজগার যদি ৩ লক্ষও ধরা হয় তবে এই ৪ কোটি পরিবারের মোট রোজগার দাঁড়ায় ১২ লক্ষ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১ কোটি পরিবারের আয় দাঁড়াল ১০৮ লক্ষ কোটি টাকা। বা পরিবার পিছু বার্ষিক আয় ১ কোটি ৮ লক্ষ টাকা। এই ১ কোটি পরিবারকেও দুই ভাগে বিভক্ত করলে সরকারি চাকুরিজীবীরা যারা প্রত্যক্ষ করের আওতাভুক্ত, তাদের সংখ্যা ৮০ লক্ষ ধরা যেতে পারে। এরা ১০ লক্ষ টাকা রোজগারের ট্যাক্স স্ল্যাবের অধীন। ২০% হারে ধরলে এদের কর হয় দেড় লক্ষ কোটি টাকার কাছাকাছি। তাহলে বাকি ১০০ লক্ষ কোটি টাকা রোজগার করছে মাত্র ২০ লক্ষ পরিবার। সুতরাং ৩০% হারে কর ধরলে এদের মোট কর হয় ৩০ লক্ষ কোটি টাকা। ফলে প্রত্যক্ষ কর বাবদ সরকারের আদায় হওয়ার কথা বছরে ৩০ লক্ষ কোটি টাকার বেশি। আর গত বছর আদায় হয়েছে মাত্র ২.৮ লক্ষ কোটি!!

শুধুই ঋণ মকুব?

সীমাহীন অনন্ত ভর্তুকির নীতিতে বিশ্বাস করে একমাত্র যুদ্ধবাজ দক্ষিণপন্থী শক্তিগুলিই। যারা নিজেদের দেশের অর্থনীতিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে চান না। যারা অন্য দেশ থেকে লুট করে এনে দেশের বেকার জনগণকে ভিখারি বানিয়ে রাখতে চায়। জুলিয়াস সিজারের উক্তি ছিল, with men we shall get money and with money we will get men. রোমান প্রজাতন্ত্রের শেষের দিকে যখন রোম সাম্রাজ্যের পতনের অবশ্যম্ভাবিতা স্পষ্ট হয়ে গেছে, তখন গ্রামীণ বেকাররা শহরে এসে ভিড় করেছিল। এই ভবঘুরেদের নিখরচায় পোষা হত। দাসদের শ্রমের ফসল থেকে আসা অনুদানের উপর নির্ভর করতে শুরু করেছিল জমি থেকে উচ্ছেদ হওয়া এই কৃষকরা। স্বভাবতই এই প্রাক্তন কৃষক লুম্পেন অংশ ছিল দাস-বিদ্রোহের বিরোধী শক্তি। প্লেবিয়ান আর দাসদের মধ্যে যদি ঐক্য সম্ভব হত তাহলে হয়তো আর সেনাবাহিনীর উত্থান হত না, দোর্দন্ডপ্রতাপ সেনাপ্রধানরা তৈরি হত না, রোমান প্রজাতন্ত্রের পতন হত না। একটি গণতান্ত্রিক সরকারের প্রাথমিক লক্ষ্যই হল দেশে করদাতার সংখ্যা বাড়াতে বাড়াতে প্রতিটি মানুষকেই করদাতা হিসেবে তৈরি করা। অনুদানের উপর নির্ভরশীল গরীব মানুষকে বারংবার মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানো নয়।

কেইনসীয় অর্থনীতির মধ্য দিয়ে ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোর অর্থনীতির যুগ তারা নিজের হাতেই শেষ করেছে। আজ হল খয়রাতির মধ্য দিয়ে ক্রয়ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা। কিন্তু এই প্রক্রিয়ার সবচেয়ে বড় গলদ হল দুর্নীতি। নগদ দিয়ে ভোগ্যপণ্যের ক্রেতা বানানোর প্রক্রিয়াটিও কেন্দ্রীভূত হয়ে যায় খয়রাতির যারা বাহক, তাদের চুরির মধ্য দিয়ে। দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক দল মানেই চোর, ফলে ১০০ দিনের কাজের টাকা থেকে শ্রী-র টাকা, সবই কেন্দ্রীভূত হয় কিছু হাতে, ফলে টাকা ঘোরে না, কোটি টাকার গাড়ি কিনতেই খরচ হয়। তাই কৃষি বিপ্লবের দলিলে ভর্তুকির জয়গান করে শুধুই ঋণমকুব নৈব নৈব চ। করদাতার সংখ্যা বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে এগোতে গেলে বর্তমান কর কড়ায় গণ্ডায় উদ্ধার করতে হবে। যেভাবে দেশের নানা কোণায় সেনাবাহিনী সুশৃঙ্খলভাবে ছুটতে পারে, যেভাবে সর্বভারতীয় বা আন্তর্জাতিক কোনও পরীক্ষা সুশৃঙ্খলভাবে সংগঠিত করা হয় নিপুণভাবে নির্মিত নেটওয়ার্কের সাহায্যে সেইভাবেই কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন পরিবহন থেকে বণ্টন পর্যন্ত একটি সুশৃঙ্খল নেটওয়ার্ক তৈরি করতেই হবে, সেই দায় যাতে নতুন সরকার নেয় তার জন্য সর্বোচ্চ চাপ প্রদান করে যেতে হবে।

২০১৯

বিজেপি খুশিই হবে যদি গরুর বাইরে নির্বাচনী ইস্যু না যায়। রাহুল গান্ধিও তাই-ই চাইবেন। আমাদের তাঁদের খুশি করার দায় নেই। আসুন এই হিসেবটা ধরিয়ে দিই পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীকে।