Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

এক দফা, এক দাবী: টেট শিক্ষকদের স্থায়ী চাকুরি

সুমনা রহমান চৌধুরী

 

সমস্ত অসমে চাকরি নিয়ে আশঙ্কায় ভুগছেন ৪১ হাজার ঠিকাভিত্তিক টেট শিক্ষক। যেকোনও দিন চাকরি চলে যেতে পারে তাঁদের। কারণ অসমের শিক্ষামন্ত্রী সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য নতুন ফরমান দিয়েছেন “নিয়মিত পদে চাকরির জন্য যে সমস্ত টেট-উত্তীর্ণ ঠিকাভিত্তিক শিক্ষকদের টেট সার্টিফিকেটের সাত বছরের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে, তাদের আবার টেট পরীক্ষায় বসতে হবে।” এবং এক শিক্ষকের প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরও বলেন, “ড্রাইভিং লাইসেন্স রিনিউ করেন কিনা তিনি? তাহলে টেট সার্টিফিকেট রিনিউ করতে হলেও আবার টেট পরীক্ষাতেই বসতে হবে।” এখানেই পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য অপেক্ষা করছে। একজন শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষকতার যোগ্যতা নিরূপক পরীক্ষার সার্টিফিকেটকে ড্রাইভিং লাইসেন্সের সমান ভাবেন!   

সারা অসমে শিক্ষকদের চাকরি এবারই যে শুধু হুমকির মুখে তা কিন্তু নয়। এরও আগে চাকরি চলে গেছে কয়েক হাজার শিক্ষামিত্রের। আগামীতে কথা চলছে মিড-ডে মিল প্রকল্পকে এনজিও-দের হাতে তুলে দেওয়ার। যদি তা হয়, তবে সারা অসমে কাজ চলে যাবে ১ লক্ষ ২৩ হাজার রন্ধনকর্মীদের। এরই মধ্যে ইলেকশনের আগে সারা অসমের লক্ষাধিক রন্ধনকর্মী আন্দোলনে নেমেছিলেন যাতে মিড-ডে মিল এনজিও-দের হাতে তুলে না দেওয়া হয়। ইলেকশনের মুখে রন্ধনকর্মীদের আন্দোলনের চাপে সরকার সেই নির্দেশ ইলেকশনের রেজাল্ট অবধি স্থগিত রেখেছিল। কিন্তু এখনও অনিশ্চিত এই এত লক্ষ রন্ধনকর্মীর ভবিষ্যৎ।

এ তো গেল ভূমিকা। এবারে সরকারের এই ইচ্ছাকৃত বেকার-সৃষ্টির প্ল্যানিং-এর মূলে যাওয়া যাক। অসমে প্রথমবার টেট পরীক্ষা হয় ২০১২ সালে। যারা পাশ করে তাদের সবাইকে ঠিকাভিত্তিক শিক্ষক হিসাবে সর্বশিক্ষার আওতায় নিয়োগ করা হয়। সাথে সাথে টেট পাশ শিক্ষকদের ডিএলইডি করতেও বলা হয়। এবং ২০১২ সালেই প্রথম দফায় একদল শিক্ষকের চাকরি ডিএলইডি প্রশিক্ষণ চলাকালীনই নিয়মিত শূন্যপদে আবেদন করার ভিত্তিতে নিয়মিত করাও হয়। এবারে টেট সার্টিফিকেটে লেখা এই সার্টিফিকেটের ভ্যালিডিটি সাত বৎসর। এবং সরকার ঘোষণা করে বাকি ঠিকাভিত্তিক শিক্ষকগণ যাদের ডিএলইডি প্রশিক্ষণ চলছে, সাত বৎসরের মধ্যেই ধাপে ধাপে সবাইকে নিয়মিত করা হবে।

পরবর্তী টেট হয় ২০১৪ সালে। আবার সারা অসমে কয়েক লক্ষ যুবকযুবতী টেট পাশ করেন। এবারে ২০১৪ সালের টেট পাশ কিছু যুবক-যুবতীকে সর্বশিক্ষার আন্ডারে নিয়োগ করা হয়। বিশাল সংখ্যক টেট-উর্ত্তীর্ণ যুবকযুবতী অপেক্ষা করে থাকে নতুন চাকরি নিয়োগের বিজ্ঞাপনের। কিছু বিজ্ঞাপন মাঝে মাঝে করা হয়, এবং সেখানে পদের সংখ্যা এতই কম থাকত যে বেশিরভাগেরই নিয়োগ হত না। এরই মধ্যে ২০১৭ সালে সরকার থেকে শূন্যপদের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। সব টেট-উর্ত্তীর্ণরা আবেদন করেন সুনির্দিষ্ট ডেকোরাম মেনে, আইপিও কেটে। ডকুমেন্টস ভেরিফিকেশনও হয় সর্বশিক্ষার মিশন ডিরেক্টরের অফিসে। এরপর ৩ সেপ্টেম্বর একটা লিস্ট বের করা হয়, তাতে টেট এবং হায়ার সেকেন্ডারি মিলিয়ে যে ‘কাট অফ মার্কস’ বা লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল সেটা যারা অর্জন করেন, সেইসব যুবক-যুবতীরা সর্বশিক্ষার আন্ডারে ঠিকাভিত্তিক নিয়োগ পায়। আবার ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭-তে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা নাটকীয়ভাবে ঘোষণা করেন(হয়তো উনিশের ইলেকশনে পাখির চোখ রেখে), যেসব শিক্ষকরা ৩ সেপ্টেম্বর নিয়োগের জন্য মনোনীত হননি, তাদের সবাইকে ৭ সেপ্টেম্বর গুয়াহাটি জজ্ ময়দানে উপস্থিত হতে এবং ওখানেই তাদের নিয়োগপত্র দেওয়া হবে। শিক্ষামন্ত্রীর কথামত এগারো হাজার টেট উর্ত্তীর্ণ যুবক-যুবতীগণ ওখানে যান এবং তাঁর হাত থেকে নিয়োগপত্র গ্রহণ করেন।

নিয়োগপত্রে দেখা যায় ১১ মাসের চুক্তিভিত্তিক চাকরি। ২০,০০০ টাকা ফিক্সড বেতন। এবং ‘স্টেট পুল’ নামক একটা টার্ম বানিয়ে এগারো হাজার শিক্ষককে সেখানে নিয়োগ করা হয়েছে। এবং আশ্চর্যের বিষয় হল শিক্ষকরা কিন্তু “স্টেটপুল” নামক কোনও স্কিমে চাকরির আবেদন করেননি। করেছিলেন সর্বশিক্ষার অধীনে!

এবারে ২০১২ সালে সর্বশিক্ষার অধীনে যে ২০% ঠিকা শিক্ষকের চাকরির স্থায়ীকরণ এখনও হয়নি, তাদের টেট সার্টিফিকেটের ভেলিডিটি ২০১৯-এর মে মাসে শেষ হয়ে গেছে। এবং তাদের চাকরির চুক্তিও এই জুন মাসে শেষ। এবারে সরকারের কথা হল যাদের টেটের সার্টিফিকেটের মেয়াদ সাত বছর পূর্ণ হয়ে গেছে, তাদের আবার টেট পরীক্ষায় বসতে হবে, নিয়মিত বা রেগুলার পদে আবেদন করতে হলে। এবং যদি টেট পরীক্ষায় আবার না বসেন তবে যে ঠিকাভিত্তিক পদে আছেন সেখানেই সরকার চাকরির মেয়াদ যতদিন এগারো মাস করে করে বৃদ্ধি করে যাবে, ততদিন কাজ করতে পারবেন।

এখানেই এনসিটিই এবং আরটিই আইনের কথা আসে। ২০১১ সাল থেকে আজ অব্দি বারবার এনসিটিই থেকে রাজ্য সরকারকে বলা হয়েছে সর্বশিক্ষা থেকে শিক্ষক নিয়োগ করা যাবে না। শিক্ষক নিয়োগ রাজ্যের দায়িত্ব। বেতনের ৯০ শতাংশ কেন্দ্র বহন করবে এবং ১০ শতাংশ বহন করবে রাজ্য। বারবার কেন্দ্র, এনসিটিই এবং আরটিই থেকে রাজ্য সরকারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে সমস্ত শিক্ষকদের সর্বশিক্ষা থেকে রাজ্য সরকারের ডিরেক্টর অব এলিমেন্টারি এডুকেশনের আওতায় নিয়োগ দিতে, কিন্তু রাজ্য সরকার আরটিই এবং এনসিটিই-র সমস্ত নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজের মর্জিমতো কাজ করে গেছে।

শুধু তাই নয়, ক’বছর আগে কয়েক হাজার শিক্ষামিত্রের চাকরি যায় সমস্ত অসমে। তাদের আন্দোলনের কারণে সরকার বলে প্রতিটা স্কুলে একটা করে শিক্ষামিত্রের পদ তৈরি করবে এবং শিক্ষামিত্র সবাইকে ২০১৪ সালের টেট-এ বসতে বলে। আজকের সময়ের গ্রাউন্ড রিয়্যালিটি হল, পদ তৈরি হয়েছে বটে, কিন্তু সেই পদে কোনও নিয়োগ হয়নি এখনও অবধি।

এমনকি টেট শিক্ষকরা (নিয়মিত কিংবা ঠিকাভিত্তিক) জানেনই না কোন পোস্টে তারা চাকরি করছেন! কোনও পদ নেই। এসএসএ শিক্ষক, স্টেটপুল শিক্ষক, রেগুলার শিক্ষক— এই হিসেবে কাজ চলছে অসমের স্কুলগুলোতে! যা আবারও এনসিটই নিয়মকে আগ্রাহ্য করে।

বিজেপি সরকারের “২০১৬ ভিশন ডকুমেন্টের” ১৭ নং পয়েন্টে লেখা “সব কর্মরত ঠিকাভিত্তিক টেট শিক্ষকদের চাকরির নিয়মিতকরণ”। অথচ ২০১৯-এ এসে সরকারের এহেন চূড়ান্ত ভাষ্যবদল!! শিক্ষার অধিকার আইন (RTE), এনসিটিই-এর বিধি নিয়মের মধ্যে থেকেই ঠিকাভিত্তিক শিক্ষকগণ তাদের দাবি উত্থাপন করেছেন। টেট পাশ করার পরও ঠিকা শিক্ষকগণ সাত বছর ধরে শিক্ষকতা করে আসছেন। এনসিটিই-এর নিয়ম মেনে তারা ডিএলইডি প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ করেছেন। তাহলে একবার যারা টেট পরীক্ষায় পাশ করেছেন, সমস্ত প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ করেছেন, সর্বোপরি এতগুলো বছর ধরে শিক্ষকতা করে চলেছেন, তারা কেন আবার পরীক্ষায় বসবেন? তারা তো নিজের যোগ্যতা একবার প্রমাণ করেছেন! আর কতবার প্রমাণ করলে সরকার বলবে প্রমাণ হয়েছে! যারা নেট পরীক্ষা, স্লেট, এসিএস, আইএস কিংবা যে কোনও যোগ্যতা পরীক্ষা পাশ করেন, তাদেরকে কি বারবার পরীক্ষা দিয়ে প্রমাণ করতে হয় তারা এখনও যোগ্য? তবে টেট শিক্ষকদের কেন করতে হবে? সাতবছরের ভিতর তাদের চাকর নিয়মিত না হওয়ার জন্য দায়ী কে?? শিক্ষক না সরকারের শিক্ষাবিভাগ?? পাঁচবছরে সরকার নিজের প্রতিশ্রুতি রাখতে চূড়ান্ত ব্যর্থ। সরকারের সেই ব্যর্থতার দায় কেন একজন শিক্ষক নিজের কাঁধে বইবে! ঠিক কোন যুক্তিতে শিক্ষকরা আবার টেট পরীক্ষায় বসবেন?? ২০১২ সালের যে ৮০ শতাংশ টেট উর্ত্তীর্ণকারী শিক্ষকের নিয়মিত চাকরি করা হয়েছিল তাদের তো আবার পরীক্ষা দিয়ে নিয়মিত হতে হয়নি! তবে তাদের সাথের বাকি ২০ শতাংশকে কেন পুনরায় পরীক্ষায় বসে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে?

স্টেটপুল নামক যে ক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছে সেখানে এগারো মাস পরে একজন শিক্ষকের চাকরির পুনরায় চুক্তি নির্ভর করবে সরকারের দয়ার উপর। এগারো মাস পরে যদি সরকার বলে স্টেটপুল বাতিল, তবে এই এতজন শিক্ষকের চাকরিও বাতিল!!

আবার যদি টেট পরীক্ষা হয় এবং তাতে সারা অসমে কয়েকলক্ষ ছেলেমেয়ে পাশ করে, তাদেরকে নিয়েও এভাবে ছিনিমিনি খেলবে সরকার। ইচ্ছে করে বেকার সৃষ্টির এই খেলায় কাগজকল কর্মীদের মতোই অনাহারে অর্ধাহারে মৃত্যু হবে শিক্ষকদের।

অথচ এরকম একদমই নয় যে রাজ্যে ৪১,০০০ স্থায়ী শিক্ষকের পদ নেই। শিক্ষা দফতরের ডেটা এবং রেকর্ড দেখলেই বোঝা যায় এ রাজ্যে বর্তমানে প্রাইমারি স্কুলে লক্ষাধিক শূন্যপদ পড়ে রয়েছে! কতজন শিক্ষক প্রতি বছর রিটায়ার করছেন! কতগুলি স্কুল এ রাজ্যে আছে, যেখানে মাত্র একজন শিক্ষক সমস্ত স্কুল পরিচালনা করছেন! যেখানে পিটিআর অনুপাত ৩০:১ হওয়া উচিত এনসিটিই নিয়ম অনুযায়ী। কিন্তু সরকার সে পথে হাঁটে না। ইচ্ছে করে কিম্ভূত নিয়মে শিক্ষকদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে।

শিক্ষার অধিকার আইন অনুসারে ভারতবর্ষের বেশ কয়েকটি রাজ্য ইতিমধ্যেই সমস্ত টেট শিক্ষকদের চাকরি স্থায়ী করেছে। অসম-ই শুধু ব্যতিক্রম। এখানে ৪১ হাজার শিক্ষক টেট পাশ করে, ডিএলইডি প্রশিক্ষণ সহ সরকারের সব ক্রাইটেরিয়া পরিপূর্ণ করেও স্থায়ী চাকরিতে নিয়োগ হয় না। বছর বছর চুক্তি আর সরকারের করুণার উপর তাদের ভাত খাওয়া না খাওয়া নির্ভর করে।

শিক্ষকরা রাজ্যের সমস্ত কাজ করেন। এনআরসি-র কাজ থেকে ভোট গণনা, দুর্যোগে ত্রাণবন্টন সহ লোকগণনা— সব। ইলেকশন ডিউটিতে মারপিট, অশান্তির সম্মুখে তারাই যায়। সেফটি সিক্যুরিটি নেই, মাটিতে শুয়ে মশার কামড় খেয়ে তারা ইলেকশন ডিউটি করেন। প্রাইমারি স্কুলগুলোতে ফোর্থ গ্রেড কোনও স্টাফ নাই, পিওন নাই, নিজের বেতনের বিলটা অবধি স্কুল শেষে ব্লকে পৌঁছে দিতে হয় শিক্ষকদের। এমনকি স্কুল শেষে স্কুলের দরজা জানালাটা অবধি তাদের লাগিয়ে আসতে হয়। দুদিন পরপর গুণোৎসব সহ যাবতীয় কাজে রাতদিন এক করে ছাত্র পড়ানো সহ সব করতে হয়। তারপর তাদের ভাগ্যে কী অপেক্ষা করে?? সরকার এবং তার দফতরের দয়ায় সে তার চাকরির সঙ্কটে ভোগে। দুশ্চিন্তা আর অনিদ্রায় ভোগে। নিজের অধিকার দাবী করলে মন্ত্রীদের মুখ ঝামটায় মাথা নিচু করে আসতে হয় তাদের। কুকুরের সঙ্গেও বোধহয় এর চেয়ে ভালো ব্যবহার করা হয়।

এ রাজ্যে এমএ, বিএড করেও প্রচুর শিক্ষক টেটের মাধ্যমে প্রাইমারি স্কুলে চাকরি করছেন। কেন? কারণ হাইস্কুল বা হাইয়ার সেকেন্ডারিতে ভেকেন্সি আছে, কিন্তু শিক্ষক নিয়োগ হয় না এ রাজ্যে। সারা অসমে সরকারি সেক্টরে বছরে শূন্য নিয়োগ হয়। প্রাইভেট সেক্টরেও অসমে চাকরির কোনও সুযোগ নেই, কারণ তেমন বড় কোনও শিল্প, কলকারখানা নেই। চা-শিল্প হুমকির মুখে। চিনির কল আমার জন্মের আগে উঠে গেছে। একমাত্র ছিল দুটো কাগজ কল! সে দুটোও এখন নেই। মানে বন্ধ হয়ে গেছে। কর্মচারীদের বেতন নেই ২৯ মাস। কর্মীদের আত্মহত্যা সহ মৃত্যুসংখ্যা এখন অব্দি ৫৫ ছাড়িয়েছে।

তাহলে কোনওক্রমে যদি যুবক-যুবতীরা একটা চাকরিতে ঢুকে নিজের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে চায়, পরিবারের মুখে ভাত তুলে দিতে চায়, তাহলে তাদেরকে চাকরি থেকে বের করে দেওয়ার অধিকার সরকারকে কে দিল?? চাকরি দেওয়ার ক্ষমতা যদি সরকারের না থাকে, তাহলে চাকরি নেওয়ার অধিকার সরকারে হয় কী করে??

এই একটা চাকরি অনেক ছেলেমেয়ের কাছে আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপ। অনেক ছেলেমেয়ের চাকরির বয়েস চলে গেছে। অনেক ছেলেমেয়ে এই একটা চাকরির উপর নির্ভর করে তাঁর সমস্ত ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করছে। এমতাবস্থায় যদি তাদের চাকরি চলে যায়, তাহলে এই এতগুলো পরিবারের কী হবে সেটা সরকার বাহাদুর দেখতে বা বুঝতে চান না। আর চান না বলেই ৪১ হাজার শিক্ষককে অনিশ্চয়তার দিকে প্ল্যান করে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।

এই মূহূর্তে আমরা ৪১ হাজার ঠিকাভিত্তিক শিক্ষকের টেট পরীক্ষা দেওয়া বা না দেওয়া নিয়ে কোনও দাবী, আপত্তি বা আন্দোলন নয়৷ আমাদের দাবি ৪১ হাজার ঠিকাভিত্তিক শিক্ষকদের চাকরির নিয়মিতকরণ। চাকরির সুরক্ষা। এবং আগামী সেপ্টেম্বরে নতুন টেট পরীক্ষা হওয়ার আগেই সরকারের তরফে সব শিক্ষকদের চাকরি নিয়মিত করা।

এই দাবী নিয়েই আমরা ৪১ হাজার শিক্ষক গত ১৮ তারিখ সারা অসমে জেলাশাসকের অফিসের সামনে ধর্না কার্যসূচি করে মুখ্যমন্ত্রী সহ সব মেকানিজমে মেমোরেন্ডাম পাঠিয়েছি। এই দাবী নিয়েই আগামী ২৯শে জুন আমাদের ‘দিসপুর চলো অভিযান’। সারা অসমে শিক্ষকেরা ত্রিস্তরীয় আন্দোলন (গণতান্ত্রিক, আইনি এবং সাংবিধানিক) চালিয়ে যাচ্ছি। যতদিন না সরকার নিঃশর্তভাবে ঠিকাভিত্তিক শিক্ষকদের সব দাবী মেনে নেয়, এই আন্দোলম থামবে না। আরও তীব্র, আরও আরও জঙ্গি আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। আমরা অসমে আর একবারও কাগজকলের মতো পরিস্থিতি চাই না। আমরা আমাদের একজন সাথী শিক্ষকেরও আত্মহত্যা চাই না। চাকরির সুরক্ষা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। সেই অধিকার কারও কেড়ে নেওয়ার অধিকার নেই।

এক দফা, এক দাবি
টেট শিক্ষকদের স্থায়ী চাকুরি।