Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

বিয়ে হোক বা লিভ টুগেদার, কোনও ভালোবাসাই তুচ্ছ নয়, এক কৃষিজীবী যুগলের জীবনকথা

চার নম্বর নিউজডেস্ক

 

দুজন মানুষের মধ্যে ভালোবাসার মানদণ্ড কি কেবল বিয়ে? বিয়ে না করে একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত কি দুজনের সম্পর্কের উষ্ণতাকে কোনওভাবে শীতল করে দেয়?

ইলিয়াস কে পি এবং শমিতা মোনে-র ক্ষেত্রেও এই প্রশ্নগুলো ওঠা উচিত ছিল নিশ্চয়ই, কিন্তু তাঁরা আমল দেননি। সম্পূর্ণ আলাদা রাজ্য ও প্রেক্ষাপট থেকে উঠে আসা দুজন মানুষের জৈব চাষের প্রতি ভালোবাসা, তাঁদের নিয়তিকে কাছে টেনে আনে। এরপর দেশব্যাপী বিভিন্ন কৃষি সমাবেশে দুজনের বারবার দেখাসাক্ষাৎ সেই পরিচিতিকে এগিয়ে নিয়ে যায় বিশেষ বন্ধুত্বের দিকে।

ইলিয়াসকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে কেরলের এই জৈবচাষি সোজাসাপটা জানান, “ছেলেবেলা থেকেই খুব বিদ্রোহী বিদ্রোহী একটা ব্যাপার ছিল আমার মধ্যে। ঠিকই করেছিলাম কাউকে ভালোবাসা তো দূরের কথা, কোনওদিন বিয়েই করব না। কিন্তু শমিতা এতটাই বিশেষ জায়গা করে রেখেছে আমার জীবনে, যে আমাদের সম্পর্ক যদিও বা ভেঙে যায়, চাইব যেন বন্ধুত্ব অটুট থাকে। যদিও আমাদের বন্ধুত্ব ভালোবাসায় বদলেছে, একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্তও নিয়েছি, কিন্তু আমরা মনস্থির করে নিয়েছি যে বিয়ে করব না। তবে এই সিদ্ধান্ত কাউকে কিছু প্রমাণ করার জন্য নয় কিন্তু।”

যদিও এই পথ দুজনের কারও পক্ষেই আদৌ কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না, বিশেষত ভারতের মতো দেশে যেখানে বিয়ে না করে একসঙ্গে থাকা সামাজিক অপরাধ। ইলিয়াসও মেনে নেন সেই সমস্যা, তবে তার সঙ্গে এ কথাও জানাতে ভোলেন না যে খুব বেশি লোক তাঁদের ব্যাপারে জানেন না। নিজেদের বন্ধুবৃত্তে এ নিয়ে কোনওদিন কোনও সমস্যা হয়নি, এমনকি বিষয়টি নিয়ে প্রথমে সন্দিহান হয়েও শমিতার মা-ও পরে এই সম্পর্ক মেনে নিয়েছেন।

এই দম্পতির সবসময়ের চিন্তা অবশ্য একটাই, যে কখন যে কোনও ব্যবসায়িক লেনদেনের কাজে বিবাহের শংসাপত্র দেখানো আবশ্যিক হয়! ইলিয়াস অবশ্য প্রস্তুত, এবং এরকম সমস্যা সত্যিই এলে বিয়ে করতেও পিছপা হবেন না দুজনে, জানালেন তিনি। যদিও মজার ব্যাপার হল, ইলিয়াসকে সেরকম কোনও সমস্যা ভোগ করতে না হলেও, শমিতাকে হয়েছে। বিশেষত বিদেশে কোনও এক সমাবেশে যোগদান করতে যাওয়ার সময় তাঁকে ভিসা দেওয়া হয়নি।

কয়েক বছর হল ইলিয়াস আর শমিতার যাত্রা শুরু হয়েছে এই গৎ-ভাঙা পথে। ইলিয়াস বর্তমানে আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত সংস্থা কেরল জৈব কর্ষক সমিতির একজন যুগ্ম সম্পাদক, শমিতা দেশের সবচেয়ে বড় জৈব চাষিদের সংগঠন অর্গানিক ফার্মিং অ্যাসোসিয়েশনের গবেষণা-নির্দেশক। দুজনে মিলে কেরলে একটি জৈব দোকানও চালান, যেখানে শুধুমাত্র চাষিদের থেকে সরাসরি জিনিস এনে বিক্রি করা হয়।

ইলিয়াসের মতে তাঁরা দুজনে ভাগ্যবান, কারণ আরও অনেক দম্পতিকে এর চেয়ে অনেক খারাপ অবস্থার শিকার হতে হয়। সমাজে এখনও দুজন সাবালকের নিজের জীবন নিজের মত করে বাঁচবার স্বাধীনতা নিরঙ্কুশ নয়। আমরা আশা করতেই পারি, আরও অনেক কিছুর মতোই একদিন দুজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ নিজের মত সুখী থাকতে পারবেন, সমাজের রক্তচোখ উপেক্ষা করে। ততদিন শুভেচ্ছা অফুরান এই ব্যতিক্রমী যুগলের প্রতি।