Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

তর্কপ্রিয় ভারতীয়র কণ্ঠরোধ এবং অন্যান্য

ঋতম ঘোষাল

 

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস কাগজের ওয়েব সংস্করণে অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু লিখেছেন দেশের চিন্তাবিদ এবং অ্যান্টিন্যাশনাল তকমা পাওয়া লেখক, শিল্পী, প্রযুক্তিবিদ, বৈজ্ঞানিকদের প্রতি ভারতের ক্ষমতাসীন দলের কীবোর্ড ওয়ারিয়রদের পাকিস্তান চলে যাওয়ার উপদেশ যদি মানা হয়, তাহলে অচিরেই পাকিস্তান বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আইকিউ সম্পন্ন মানুষের দেশে পরিণত হবে। কৌশিকবাবু নস্ট্রাডামুস নন, কাজেই জানতেন না এই প্রতিবেদন ছাপার দিন দুয়েকের মধ্যেই তাঁর ‘অভিনীত’ সুমন ঘোষের পরিচালনায় আর্গুমেন্টিভ ইন্ডিয়ান ছবি থেকে ‘গরু’, ‘গুজরাট’, ‘হিন্দুত্ব’, ‘হিন্দুরাষ্ট্র’ শব্দগুলি বাদ দিতে বলে বিতর্ক সৃষ্টি করবে কেন্দ্রীয় সরকারের পরিচালনাধীন সেন্সর বোর্ড।

অভিনীত শব্দটা কোটের মধ্যে রাখলাম, কারণ সুমন ঘোষের ছবিটি ফিচার ফিল্ম নয়, ডকুমেন্টারি। কৌশিকবাবু এই ছবিতে যাঁর সাক্ষাতকার নিয়েছেন তিনিও পাকিস্তানে চলে যাওয়ার উপদেশ পেয়েছেন বারবার, নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন।

অধ্যাপক সেন ঘোষিতভাবে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলটির বিরোধী। অতীতেও নানাভাবে প্রতিবাদ করেছেন সংঘের রাজনীতি ও সেন্সরশিপের। তাঁর প্রবন্ধসংকলনের নামে সুমনবাবুর ছবির নাম। আয়রনি বোধহয় এখানেই যে যুক্তি তর্ক ডায়লগ ডিসকোর্স বন্ধ করতে শেষ ভরসা সেন্সরশিপের শরণাপন্ন হতে হয় প্রবল পরাক্রমশালী কেন্দ্র সরকার ও ক্ষমতাসীন দলটিকে।

তবে আশার কথা এটাই, সুমনবাবু ফেসবুকে জানিয়েছেন তিনি ছবিটি ইন্টারনেটে রিলিজ করাবেন সেন্সরশিপ এড়াতে। এনডিটিভির পক্ষ থেকে যখন অধ্যাপক সেনের কাছে যাওয়া হয় তখন জানান “I was shocked but I thought, I have to argue.”

তর্কপ্রিয় ভারতীয় প্রজ্ঞার ঐতিহ্য মেনেই অমর্ত্যবাবু জানান এ কথা। “I was shocked but I thought, I have to argue.” পক্ষান্তরে পহলাজ নিহালনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জানান সেন্সর বোর্ড “নিজের কাজ করেছে”।

এই বিষয়ে সোচ্চার হয়েছেন বাংলার শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ। অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মতে এটি একটি নির্লজ্জ সিদ্ধান্ত, যা বোকামিরই নামান্তর। কবি শঙ্খ ঘোষ উদ্বেগ প্রকাশ করে সেন্সর বোর্ডের সদস্যদের সংবাদমাধ্যম মারফত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে অনুরোধ করেন।

প্রসঙ্গত অরবিন্দ কেজরিওয়ালের জীবন আধারিত “অ্যান ইনসিগনিফিকেন্ট ম্যান” ছবির নির্মাতাদের সেন্সর বোর্ড পরামর্শ দিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের অনুমোদন নিয়ে ছবি রিলিজ করাতে। একইভাবে রত্না পাঠক শাহ, কঙ্কনা সেন অভিনীত লিপস্টিক আন্ডার মাই বোরখা ছবিকেও অতীতে অনুমোদন দেয়নি সেন্সর বোর্ড, তবে সেবারে ‘যুক্তি’ ছিল নারীকেন্দ্রিক ছবি বাজারে চলে না। রত্না, কঙ্কনা, অরবিন্দ– প্রত্যেকের সরকারবিরোধী অবস্থান এখানে উল্লেখ্য। তবে কি বছর তিনেক আগে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসা দলটি ইতিমধ্যেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করল? প্রশ্নটা কিন্তু উঠতে শুরু করেছে, বরাবরের ভারতীয় তর্কপ্রিয়তার ঐতিহ্য মেনেই।

এইমাত্র খবর পাওয়া গেল বাংলা ছবি মেঘনাদবধ রহস্য থেকে রাম ও রামায়ণ শব্দ দুটি বাদ দিতে বলেছে সেন্সর বোর্ড। মাইকেল-ও কি তবে এখন শত্রুপক্ষ? উত্তরের অপেক্ষায় থাকব আমরা, দেখা শোনা জানা পড়া সোশাল নেটওয়ার্ক সাইট আর মেসেঞ্জার অ্যাপে সীমাবদ্ধ রাখতে না চাওয়ার দল।