Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

সন্তোষ পাল — তিন

মৃণাল চক্রবর্তী

 

পূর্ব প্রকাশিতের পর

অণুর চোখে বৃষ্টি নেমেছিল যখন সেই কোন কালের গেজিং-এ রাত বারোটা। নভেম্বরে বৃষ্টি নামল হঠাৎ কেন কে জানে। দেয়াল ঘড়ির আলো দেখা যাচ্ছিল। আমি কিছুক্ষণ তাকিয়ে দেখলাম সেকেন্ডের কাঁটা ঘোরে কিনা। ঘুরল। তখন রাত বারোটা। বাইরের গেজিং তখন এক হারিয়ে যাওয়া শহর। খাওয়ার পরে নটার সময় আমি শেষবার দেখেছিলাম বারান্দা থেকে। সব দোকান বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। উল্টোদিকে একটা ব্যাঙ্কের গায়ে আলো জ্বলছিল। অণু এসেছিল একটু পরে। নাইটির ওপর একটা চাদর জড়িয়ে। বাইরে এসেই জড়িয়ে ধরেছিল আমাকে।

–উফফ, কী ঠান্ডা।

আমার হাত থেকে সিগারেটে একটা টান দিয়েছিল অণু। আমি সিগারেট শেষ করে ওকে নিয়ে আমাদের ঘরে গিয়েছিলাম। হোটেল শাংরিলা। সবুজ দেয়াল। খাটে বালিশ, কম্বল ঠিক-ঠিক রাখা। আলো নিভিয়ে আমরা শুয়ে পড়েছিলাম। হিহি কাঁপতে কাঁপতে কম্বলের মধ্যে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলে তুমি অণু।

তুমি অণু আমাকে কোলবালিশের মত জড়িয়ে ধরেছিলে। পশ্চিম সিকিমের এক অতীতগামী শহরে আমি প্রথম পুরুষ হয়েছিলাম। প্রথমবার পুরুষ। পরদিন সকালে আমরা পেমিয়াংসি মনেস্টারিতে গিয়েছিলাম হেঁটে হেঁটে। আমার জিপে যাবার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু দেড়শো টাকা ভাড়া শুনে তুমি রাজি হওনি। এই প্রথম তোমার-আমার মধ্যে ঝগড়া হতে পারত অণু। কিন্তু রেস্টোরেন্টে উল্টো দিকে বসে থাকা একটা সতেরো-আঠেরো বছরের ছেলে তা হতে দিল না। অল্প বাংলা বুঝত ছেলেটা। ওর খিদে পেয়েছিল। সে-কথা তখন না বলে ভাঙা হিন্দিতে এসে জানতে চাইল, আমরা হেঁটে যাব কিনা।

তুমি রাজি হয়েছিলে। আর ব্যাস, রোদের চাদর বিছিয়ে দিয়েছিল গেজিং পাহাড়। আমরা একসঙ্গে খেয়েছিলাম। কর্মা দু-প্লেট থুকপা খেয়েছিল। তুমি খুব আদরের চোখে তাকিয়ে ওর খাওয়া দেখছিলে। পরে আমরা যখন এর বাড়ি ওর বাড়ি পেরিয়ে খাড়া পথে হাঁটছিলাম, তখন ছেলেটা বলেছিল ও আগের রাতে কিছু খায়নি। তোমার চোখের পাতা ভারী হয়ে গিয়েছিল, যেন আবার বৃষ্টি নামবে। এরপর হঠাৎ আমরা এক সময় আসল রাস্তাটায় পড়লাম। আর কর্মা আর একটু দূরে আঙুল দেখিয়ে বলল, গুম্ফা।

ওর চেনা রাস্তা দিয়ে উঠে আমরা দু-কিলোমিটার হাঁটা কমিয়েছিলাম। তুমি হাঁফাচ্ছিলে। মুখটা লাল হয়ে গিয়েছিল তোমার। আমরা তিন জন বসে পড়েছিলাম পিচের রাস্তায় এক ধারে। একটা দুটো জিপ যাচ্ছিল ওপরের দিকে। জিপ থেকে হাসিমুখে আমাদের দিকে হাত নাড়তে নাড়তে চলে যাচ্ছিল এখানকার মানুষ আর কয়েকজন বিদেশি। তার পর আর কোনও শব্দ ছিল না কোথাও। আমরা কয়েক হাজার ফুট ওপরে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম নিচের দুনিয়াটা। সব ঝাপসা। তোমার খুব ঠান্ডা লেগেছিল তখন, চাদরে আর শীত মানছিল না। কর্মা ওর জ্যাকেট খুলে তোমার গায়ে জড়িয়ে দিয়েছিল। তুমি মোটেই রাজি হচ্ছিল না। কর্মা ওর সাঙ্ঘাতিক হাসিটা হেসে বলেছিল ওর দিদিও ঠিক এরকম করে। বোঝে না যে কর্মার ঠান্ডা লাগে না। ক্লান্ত লাগে না। খিদে পায় খালি। সেই দিদি বরের সঙ্গে মাঙ্গন চলে গেছে। বলে দূরের একটা পাহাড় দেখিয়ে বলেছিল, মাঙ্গন।

এর পর তুমি খুব আরামে ওর জ্যাকেটটা পরেছিলে। মাথা ঢেকে নিয়েছিলে চাদরে। তোমাকে ভূতুড়ে দেখাচ্ছিল। কর্মা আর আমি হাসছিলাম। তুমি লজ্জা পেলেও আরও বেশি ভূতুড়ে হয়ে হাঁটতে শুরু করেছিলে আমাদের পেছনে ফেলে। তোমার সেই লজ্জা আর আমাদের হাসি খুঁজতে আমি কতবার ওই পথে গেছি। কিচ্ছু পড়ে নেই কোথাও। গেজিং এখন যে কোনও একটা ঘিঞ্জি পাহাড়ি মফস্বল। পেলিং-এর হেলিপ্যাডে হোটেল উঠে গেছে। খালি ফেরার পথে তিকজুকের সেই দোকানটা…

ড্রাইভার গাড়ি থামাল এক জায়গায়। আমি বলেছিলাম, গরম কাপড় কিনতে হবে। তখন দোকান বন্ধ হবার সময়। আমি একটা ভারী জ্যাকেট, মাফলার আর টুপি কিনেছিলাম। অণুদের গাড়ি তখন অনেক এগিয়ে গেছে। ড্রাইভার আমার হয়ে যখন দরদাম করছিল তখন আমি ওর নাম জিগ্যেস করলাম। ও বলল, কর্মা। কর্মা ভুটিয়া। আমার আর জিগ্যেস করা হল না, ওর দিদি মাঙ্গনে থাকে কিনা। তোমাদের জিপ অনেক দূরে চলে গিয়েছিল অণু।

হোটেল ড্যাফোডিলে একটাই রুম খালি ছিল চিলেকোঠায়। কর্মার থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে আমি রাম কিনে চলে এলাম আমার ঘরে। কর্মাকে বললাম এখন না যেতে। আমি ওর সঙ্গে থাকতে চাইছিলাম দু-এক দিন। রাই-এর কথা শুনেই আমি কোথাও একটা চলে যাব। একটু পরেই এসে গেল গরম ভাত আর ডিমের ঝোল। তার আগে দ্রুত অনেকটা মদ খেয়ে আমি খাবার খেলাম। দেখলাম, অনেকগুলো ফোন এসেছিল। এত বেশি যে আর দেখতে ইচ্ছে করল না। ফোন বন্ধ করে দিলাম।

স্বপ্নে সন্তোষ পালকে দেখলাম। কোচবিহারের রাজবাড়ির সামনে হাঁটাচলা করছেন। ক্যামেরার লেন্সের দিকে তাকিয়ে যে ‘লুক’ তিনি দিলেন, তাতে মনে হল আমার ওপর বিরক্ত হয়েছেন। আমি কোচবিহার না যেতে পারার কারণ দেখাতে চাইলেও উনি গ্রাহ্য করলেন না। একটা সোনার মুকুট পরে রাজবাড়ির ভেতরে ঢুকে গেলেন।

বাবাকেও দেখলাম। সেই একইরকম আছে, বয়েস বাড়েনি। মার সঙ্গে দাওয়ায় বসে খুব বিরক্ত হয়ে আমার দার্জিলিং চলে আসা নিয়ে খিটখিট করছে। মা কী করবে জানে না। মালতীর সঙ্গে আমার বিয়ে হবে ঠিক করেছিল। কিন্তু আমি তো যাইনি। সেই মেয়েটা আমার ছবি ছিঁড়ে ফেলেছে। বন্ধুদের ছবিটা দেখিয়ে ও লজ্জা-লজ্জা খেলত। এখন আর ঘুমিয়ে পড়ার আগে ফুঁপিয়ে কাঁদে না মালতী আমার কথা ভেবে। ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। হবু বরের কোনও ছবি ওর কাছে নেই। আমি সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

অণু, তোমার স্বামী তোমার সব কাছের অতীত জেনে গেছে। কিন্তু ও জানে না সেই কোন কালে আমি তোমার চাদরের গন্ধ পেয়েছিলাম। সেই চাদর এখনও আমার কলকাতার ফ্ল্যাটের ওয়র্ডরোবে শুয়ে তোমার গন্ধ ধরে রেখেছে। কেমন একটা মেয়েলি গন্ধ, হালকা শ্যাম্পু, নরম সাবান আর রাতে মুখে কী যেন মাখতে তুমি, সেই গন্ধ। এসব গন্ধের জন্যে আমি আর বিয়ে করে উঠতেও পারলাম না। এদিকে কত না বয়েস হয়ে গেল আমার। গভীর দুঃখে ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকালে উঠে দেখলাম, আমি একটা বিচ্ছিরি জায়গায় আছি। দার্জিলিং-এর একদম শুরুতে। স্টেশনের দিকে। আমার জন্যে চা নিয়ে এল কর্মা। এ-ধরনের হোটেলে ড্রাইভারেরা চট করে বন্ধুত্ব পাতিয়ে ফেলে। তাছাড়া সবাই আঞ্চলিক। আমরা দুজনে চা খেতে খেতে খুব গল্প করলাম। তবে চায়ে চিনি ছিল বলে আমার খুব খারাপ লাগছিল। আমি চিনিছাড়া চা খাই। কারণ আমার প্যানক্রিয়াস যথেষ্ট পরিমাণে ইনসুলিন বের করে চিনি গলাতে পারে না।

সেই চিনি জমতে থাকে। আমার পেটের ফ্যাটেও চিনি থাকে। শরীর ইচ্ছেমত চিনি বানায়। একটা ওষুধ এত চিনি গলাতে পারে না। মধু হয়ে দাঁড়ায় বিষ। বিষ, বন্ধুরা জানেন, মধুর চেয়ে অনেক বেশি একসাইটিং। কিন্তু ডায়াবেটিস কথাটার মধ্যে এক ধরনের দুর্বলতা আছে বলে, পুরুষদের ক্ষেত্রে যৌন দুর্বলতা, পুরুষ অন্যমনস্ক হয়ে যায়। গম্ভীর এবং বিষাদী এই পুরুষকে মিঠে গলায় তার অসুখ নিয়ে প্রশ্ন করলে, পুরুষ আরও পুরুষ হয়ে বলে, ইন কনট্রোল।

ওপরের একটা হোটেলে উঠে এলাম দশটা নাগাদ। কর্মা গাড়ি নিয়ে পার্কিং-এ চলে গেল। এখন নানা নতুন নিয়ম হয়েছে পাহাড়ে। প্লাস্টিকের প্যাকেট তো বন্ধ হয়েছে কোন কালে। খবরের কাগজে মুড়ে দেয় মদের বোতল। কিন্তু কাগজে তো শিসে থাকে, সেটা তো বিষ। কাল সেই কাগজ আমি বাইরে ফেলে দিয়ে ঢুকেছি। তার মানে শিসে ছড়িয়ে দিয়েছি মাটিতে। শিসের সঙ্গে বিষের মিলও আছে। কী যাতনা বিষে বুঝিবে সে কীসে কভু আসি শিসে দংশেনি যারে? লেড পয়জনিং! খবরের কাগজেই তো লিখছে এসব। ফোনটা চালু করলাম। তার মানে শিসে শিসে বিষক্ষয়। বারান্দায় বসে আমি এবার একটা সত্যি চা খেতে খেতে এখন হাসলাম। হাসিটা বাইরে বেরিয়ে এল। পাশের বারান্দার একটা লোক আমাকে হাসতে দেখে চোখ সরিয়ে নিল। ফোন কেঁপে উঠল ঠিক তখন।

আগেও বহুবার কেঁপেছে। এবার চূড়ান্ত কাঁপুনি নিয়ে বন্ধ হয়ে গেল। চার্জ নেই, আমারও অর্জ নেই। একটু পরেই আমি মল-এ যাব। সেখানে দেখা হবে রাইয়ের সঙ্গে। তার আগে এক বার শেভ করা দরকার।

দূরের পাইন বন ঝলমল করে উঠল হঠাৎ। কী হল ব্যাপারটা? এতক্ষণ তো এমন হাসিখুশি দেখায়নি! এর মধ্যেই স্নান আর হালকা মেক-আপ হয়ে গেল? না রে বাবা, এক টুকরো মেঘ সরে গেছে। এবার ঘটনাটা বোঝা গেল। ওই মেঘটাই এখন কেমন একটা শাদা ছেঁড়া কাপড়ের মত ঝুলে আছে পাশে। গাছগুলোকে এত সুন্দর দেখাচ্ছে যে আমি সব চেয়ে লম্বা গাছটার নাম দিলাম রোদ্দুর। পরে আমি ওকে রোদ বলে ডাকব। ওর ‘ভালো’ নাম হল রোদ্দুর আর পদবি পাইন। রোদ্দুর পাইনের সঙ্গে কথা হবে।

এখন আমি অল্প অল্প বুঝতে পারি যে এই কথা বলার জন্যেই আমার বিয়েটা হল না। ঠিক করে বলতে গেলে, কথা বলা হল না বলেই হল না বিয়ে। লাইনটা ভেবে খুব ভাল লাগল। বেশ একটা না-ভাবা ছন্দ এসে গেছে। একা একা আমি নিজেকে প্রতিভাবান বলে শাবাশি দিলাম। কী একটা মনে হতে পাশের বারান্দায় দেখলাম লোকটার পাশে কখন এসে ঘাপটি মেরে পড়ে থাকা সম্ভবত ওর বৌ-ও আমার শাবাশি দেবার বাহ্যিক অভিনয় দেখল। এতে আমার কিছু এসে যায় না। কিন্তু একটা কথা মাথায় এল আমার এবং আমি গভীর অপরাধবোধে ভুগতে লাগলাম। পুল্টুশকে আমি বন্ধ করেছি সেই কখন। ওর খুব কষ্ট হয়েছে নিশ্চই। অন করে দিলাম। ভীষণ কাশতে শুরু করল। ঢেঁকুর তুলল কয়েকবার। তারপর একটু দম নিয়ে বলল—

–এতটা বাড়াবাড়ি করার দরকার ছিল না। আমি এখানে আসতে চাইনি। তুমিই নিয়ে এসেছ। এত কষ্ট দেয়!
–আয়ম স্যরি।
–এবার একদিন বেরিয়ে যাব। আর ফিরব না।
–কোথায় যাবে পুল্টুশ? আমার বিয়ে হওয়ার আগে তুমি কোথাও যেতে পারবে না।
–এবং তোমার জম্মে বিয়ে হবে না। ওই অ্যাটিটিউড নিয়ে বিয়ে করা সম্ভব না। একটু ভাবনাচিন্তা করে এগোনো দরকার। কাগজে অ্যাড দাও, কাছাকাছি বয়েসি লোনলি মহিলা খোঁজো। ইন্টারনেটে বিয়ে করতে পারো তো, অনেকে করে।
–ওর রিপোর্ট ভালো না। আমি যে-কটা খবর পেয়েছি, ডিজাস্ট্রাস!
–ওই নিয়ে থাকো তাহলে। আমি এবার চলে যাব। মাইরি বলছি।
–বাইরে তুমি এক সেকেন্ডও বাঁচবে না। তুমি এরকম শাসানি আগেও দিয়েছ। তাছাড়া আমার এখন মনে হচ্ছে তুমি চাও না আমার বিয়ে হোক। কারণ তাহলে তোমাকেই ভিটেমাটি ছাড়তে হবে। আর প্লিজ, এবার চুপ করো। এখন রোদ্দুর পাইন আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
–সেটা আবার কে?
–ওই ব্যাপারটাই তুমি বুঝবে না। এখন তুমি ব্যায়াম করে নাও। সময় পেরিয়ে যাচ্ছে।

কথাটা মনে ধরল ওর। বলল—

–এটা ঠিক বলেছ। পরে কথা হবে। দরকার পড়লে ডেকে নিও।
–ডাকব। আজ রাতে কথাবার্তা হবে।
–জানি। কী আশায় আছ জানি, আবার ফলাফল কী হবে সেটাও জানি। বাই।

রোদ তখন অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। আমি নিচু গলায় ওকে ডাকলেও সাড়া দিল না। পাশের বারান্দার ফ্যামিলি একটা বাচ্চা নিয়ে নিচে নেমে আমাকে একবার মাথা তুলে দেখে গেল। ভাবছে আমার তার হাল্কা কেটেছে। ওদের গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। ওরা নিশ্চই লাভা-লোলেগাঁও যাবে।

মানুষ পাগলদের নিয়ে বেকার হাসে। মজা পায়। যেমন ধর্ষিতা মেয়েকে ধর্ষণের কুড়ি বছর বাদেও দূর থেকে দেখিয়ে চাপা গলায় বলে, জানিস, ও রেপড হয়েছিল। নপুংসকদের ভয় পায় বলে হাসে না। একদম ভেঙে যাওয়া উন্মাদকে মানুষ ভয় পায়। একা রাস্তায় এইরকম মানুষ দেখলে সিঁটিয়ে যায়। কিন্তু যূথবদ্ধ সুস্থ মানুষ একশো হিটলার-চার্চিলকে হারিয়ে দেবে নিষ্ঠুরতায়। এসব ছেড়ে হঠাৎ অন্য একটা চিন্তা মাথায় এল। কেউ কি জানে যে আমরাই সম্মানিত সংখ্যালঘু? আমরা যারা প্রকাশ্যে নিজেদের সঙ্গে কথা বলি, অনুপস্থিত চরিত্রদের সঙ্গে গোটা জীবন কাটিয়ে যাই, যারা ওদের পাগল বলি না, তারা চলে যায় আমাদের নিয়ে ঠাট্টা করতে করতে গ্যাংটক-গেজিং-পেলিং। ওরা জানে না চিড়িয়াখানার বাইরে আমরা, ভেতরে ওরাই। আমরা ভদ্র, বাঘ-ভালুকের মত। ওরা কেমন, সেটা শুধু বলতে পারতেন সন্তোষ পাল।

নতুন হোটেলটা ভালো। সুন্দর স্নান করে আমি হাঁটতে বেরোলাম। কিন্তু মল-এ কোথাও রাই নেই। এটা ভাল হল। আমার দাড়ি এখন সবচেয়ে খারাপ স্টেজের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সকালে আয়নায় নিজেকে দেখে আমি চমকে উঠেছিলাম। দুষ্টু বাচ্চাদের আমার ছবি দেখিয়ে ভয় দেখানো যায়। আমাকে হাসতে দেখলে ওরা এক গ্লাস দুধ চুপ করে খেয়ে নেবে। আমি রাই-এর জন্যে প্রস্তুত নই এখনও। অজস্র শীতের দার্জিলিং-এ আসা সাহসী মানুষের মলকেলি থেকে ছিটকে আমার দিকে এগিয়ে এল অণু। ও জিনস আর জ্যাকেটে সেজে আমার দিকে এগিয়ে এল। ওর বর বাচ্চাকে দূরের বিভিন্ন জিনিস দেখাচ্ছে, এমন এক রুপোলি সময়ে অণু আর আমি মুখোমুখি হলাম। তবে এটা সমতলের মুখোমুখি নয়, অণু ওপরে, আমি তিরিশ কদম নিচে।

অণু নেমে আসতে আসতে হাত তুলল, ইন্দ্র।

আমার মন বলল, কোথায় রাই? রাই কোথায়?

 

আবার আগামী সংখ্যায়