Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

এ মাসের কবি: শৌভ চট্টোপাধ্যায়

এ মাসের কবি: শৌভ চট্টোপাধ্যায় । আলোচনা: কৌশিক বাজারী

শৌভ চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা

 

আমার সুসমাচার

১.

কিছু একটা ঘটেছে কোথাও—
পুকুরের কাছে গেলে, পুকুরের জল
হঠাৎ শুকিয়ে যাচ্ছে, আলোর তলায়
দাঁড়ালেই নিভে যাচ্ছে আলো!
কত গাছ, ধীরে ধীরে উঁচু হল—
তাদের ফলন্ত ডাল,
আশ্চর্য ফুলের শিল্প,
সমস্তই
হাতের নাগাল থেকে সরে গেল, দূরে
কোথায় কী যেন একটা ঘটে গেছে
আমি আর
তোমার মুখের দিকে তাকাতে পারি না

 

২.

সুড়ঙ্গের মাঝামাঝি এসে, বুঝতে পারি,
যাকে আমরা এতক্ষণ আলো বলে ভেবেছি, ওপাশে,
আসলে তা আলো নয়, জঙ্গলে আগুন লেগেছে—
দেখতে-দেখতে পুড়ে যাচ্ছে সব। এইমাত্র,
পিছনের পথটুকু, দীর্ঘশ্বাস হয়ে, হাওয়ায় মিলিয়ে গেল
সামনে যতটা বাকি, সে-ও এক
অবিচ্ছিন্ন আর্তনাদ ছাড়া, কিছু নয়!
পাথুরে দেয়াল-জুড়ে, আমাদেরই আঁকাবাঁকা ছায়া
আমাদের ঘিরে ধরছে
অথচ তোমার মুখ রেখাহীন, তাতে
ছায়া নেই, পাথরের
সুস্পষ্ট আদল রয়েছে

 

৩.

আবার পুরনো সেই সমস্যার কাছে
ফিরে আসি— ঘুমিয়ে পড়েছি, নাকি
জেগে আছি, কিছুতেই বুঝতে পারি না!
ক্রমশ সূর্যের গায়ে, কালো-কালো দাগ
ফুটে ওঠে— দগ্ধ বন, পাখিদের হাহাকারে
মূর্ছিত আকাশ!
শূন্যের ভেতরে ট্রেন থেমে গেছে,
শূন্যের ভেতরে কাঁপে জল—
শেষতক বোঝা যায়, আমি নাকি
আসলে আমারই ছেলে— বাবাকে খুঁজতে এসে,
অন্ধকারে, জ্যোৎস্নায় হারিয়ে গিয়েছি…
ঘুমিয়ে পড়েছি, নাকি
জেগে আছি, কিছুতেই বুঝতে পারি না…

 

প্রেরিত চিঠির খোঁজে

১.

তোমাদের সঙ্গে কিছু কথা ছিল, সকাতর
ডাক ছিল বুকের ভেতরে—
অথচ সেসব তোমরা না-শুনেই
সারাদিন, কী আশ্চর্য ম্যাজিক দেখালে!
দেখালে, কীভাবে শূন্যে জাদুহাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে
মৃতকে আবার মারো, জীবন্তে বাঁচাও,
কীভাবে হাওয়ার মধ্যে হাত নেড়ে
খুঁজে আনো সিকি ও আধুলি
এভাবেই কেটে গেল, সারাদিন—
তোমাদের সঙ্গে কোনও কথাবার্তা হল না আমার
তোমাদের কথা শুনে, মনে হল, বিদেশে এসেছি

 

২.

অথচ, তোমার দিকে তাকাতেই, দেখি
ঘুমিয়ে পড়েছ তুমি। অসময়ে
তোমাকে জাগাতে বড় মায়া হয়
তোমার পাশেই ঠায় বসে থাকি, আর
লক্ষ করি—ঘুমন্ত তোমার ঠোঁট
নড়ে উঠছে, চোখের তলায়
উদ্দেশ্যবিহীন ঘুরছে চোখের তারাটি
কাকে দেখছ? ঘুমের ভেতরে তুমি
কার সঙ্গে কথা বলছ এত?
এবং তোমার হাত
ক্রমশ কঠিন হয়, মুঠো হয়ে থাকে
তুমি কি স্বপ্নের মধ্যে জেগে থাক? না কি এই
জাগরণ, দুঃস্বপ্ন, ঘুমের ভেতরে
কিছুতেই তোমাকে ছাড়ে না?

 

৩.

কত কিছু কানে আসে— সারারাত
বিছানায় বসে থাকি, ঘুমোতে পারি না। ভাবি,
তোমাদের যুদ্ধ নিয়ে, তোমাদের বিগ্রহ নিয়েও
দু-একটি কথা আছে, বলে যাব
তোমাদের কানাভাঙা মৃৎপাত্র দেখে
একদিন বলে দেব, তার গায়ে
আঙুলের ছাপ কার, কার রক্ত শুকিয়ে রয়েছে
রক্তের ভেতর থেকে, মাঝেমধ্যে, রূপকথার মাছ
ঘাই মেরে ফিরে যাবে, তার পেটে
হারানো সোনার আংটি, কবেকার,

অবিকৃত আজও!

দূর দেশে, পৃথিবীর তিনভাগ জলে
আমার ছেলের মুখ ধুয়ে যায়, চোখদুটি বোজা
আমি তাকে চিনি না এখনও…

 

৪.

উঠোনে শিশুরা খেলছে, এমন সময়ে
কে যেন বেরিয়ে এসে, একচোট খুব
বকাঝকা করে যায়
খানিকক্ষণ চুপচাপ। পুনরায় খেলা
শুরু হয়। ভেসে আসে হাঁকডাক,
আর্তনাদ, কান্নার আওয়াজ
তোমাদের ডেকে আনি। দেখাই, ওদিকে
ধোঁয়ার কুণ্ডলী যেন, তাহলে কি
আগুন লেগেছে?
তোমাদের মুখ দেখে বোঝা ভার
সিঁদুরে-মেঘের নীচে, নিরুত্তাপ দিন
কীভাবে ফুরিয়ে আসে

 

অনর্থকোষ

ভাষা

ভাষা যে আসলে একটি আয়না, এ-ব্যাপারে, মোটের ওপর সকলেই একমত। কিন্তু, তুমি যদি জানতে চাও, আয়নায় ফুটে-ওঠা বিম্বটি কীসের, তাহলেই গোল বাঁধবে। এমন আয়নাও কি সম্ভব, যাতে, কোনও বস্তু কিংবা ঘটনা ছাড়াই, প্রতিবিম্ব ফুটে ওঠে?

ইদানীং, আমার মনে হয়, বাস্তবতা একটি অত্যন্ত গোলমেলে ধারণা। ভাষার বাইরে বেরিয়ে তাকে বোঝা, আর পৃথিবীর বাইরে দাঁড়িয়ে আর্কিমিদিসের আলম্ব খোঁজার প্রয়াস, আসলে, একই সমস্যার দুটি দিক। শূন্যে ছুড়ে দেওয়া একটি মুদ্রা, ঘুরতে ঘুরতে, নেমে আসছে তোমার পেতে-রাখা হাতের তালুতে। হেড না টেল?

তোমার কাছে পৌঁছনোর আগেই, আমি লক্ষ করি, শব্দের শরীর থেকে খসে পড়ছে অর্থ আর অলঙ্কার। সংলাপ আর স্বগতোক্তির ফারাক, আমি ভালো বুঝতে পারি না।

 

দেশ

শুনেছি, ব্রহ্মাণ্ড না কি প্রসারিত হচ্ছে। অথচ কোথায়, কীসের মধ্যে, ও কোন দিকে ঘটছে এই প্রসারণ, তার কোনও সদুত্তর নেই। পদার্থবিদরা বলেন, প্রসারিত হওয়াই স্থানের ধর্ম। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, এই মহাবিশ্বের যেকোনও দুটি বিন্দুর পারস্পরিক দূরত্ব ক্রমশ বাড়তে থাকবে, এটাই নিয়ম। কিন্তু কেন?

তোমার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে, হঠাৎ খেই হারিয়ে ফেলি। ক্রমশ, আমাদের মাঝখানে, আরও উঁচু হচ্ছে পাহাড়। পাকদণ্ডী বেয়ে হাঁটতে-হাঁটতে, মনে হয়, পথ আর ফুরোতে চাইছে না।

একদিন, পাহাড়ের খাঁজে, আমি আবিষ্কার করেছিলাম এক প্রাগৈতিহাসিক পশুর চোয়াল। দেখেছিলাম, একটা আর্তনাদ, কীভাবে পাথর হয়ে আছে।

 

হনন

সমস্ত রাত, সে চমকে জেগে উঠেছে কতবার! কতবার, কান্নায় মুচড়ে উঠেছে তার ভাষাহীন ঠোঁট। তারপর ফের, মায়ের বুকে মুখ গুঁজে, নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়েছে। অথচ আমার ভয়, দুঃস্বপ্ন ও যন্ত্রণার মুহূর্তসকল, রাত্রি থেকে দিন, এবং নিদ্রা পেরিয়ে জাগরণের দিকে অগ্রসর হয়। তবে কি মুক্তি নেই?

জ্ঞান, আসলে এই পরাভবের। এখন বুঝতে পারি, কেন এই পথ, ও তার দুধারের মাটি, রক্তে ভেজা। কেন, হাওয়ার ভেতরে, এখনও ভেসে বেড়াচ্ছে একটি অশ্রুত আর্তনাদ। আর কি সম্ভব, নিজেকে সংযত রাখা?

যখন আমিই সেই হত্যাকারী; আর ওই, মাটিতে লুটিয়ে-পড়া, ছিন্নশির দেহটিও আমার।


কালো জলের খিড়কিপুকুর থেকে জাফরান রৌদ্রালোক: শৌভ চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা

কৌশিক বাজারী

…অপার বা অনন্ত নয় ঠিক। কারণ তা এই পৃথিবীরই গাছপালা ঘর মুনিয়া ও রুবাইয়ের আশেপাশে ঘোরে। আবার ঘরের মধ্যে সমুদ্র জাহাজ ঢেউ পূর্বজন্মের আলো, তাও এসে পড়ে অনায়াস, কতই সহজে! চলচ্চিত্রের মত ফ্ল্যাশব্যাক ঝলসে ওঠে হঠাত কোনও পৃষ্ঠায়, যেন শৌভ মুনিয়াকে বলছে, দেখ, ওই আমার গতজন্মের ঘর, আর বাড়ির পিছনে সেই কালো জলের খিড়কির পুকুর!

পায়ে পায়ে খিড়কির পুকুরে একা নেমে যাচ্ছে বিকেলের রোদ। জলের ওপরে দুলছে এবাড়ির আশ্চর্য ছায়া। ছোটবেলায় একবার, পায়ে শাপলা জড়িয়ে সেকি কাণ্ড! ডুবে যেতে যেতে স্পষ্ট দেখেছিলুম, পুকুরের তলায় ঘুরে বেড়াচ্ছে দুটি অতিকায় মাছ। তাদের সারা গায়ে কালচে শ্যাওলার পরত, আর নাকে ঠাকুরদার গড়িয়ে দেওয়া নথ। দেখেছিলুম, লাল শাড়ি পরে আমার মা, দোতলার জানলা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলছে রক্তমাখা তুলো।

আর মূহূর্তে কথক পাঠক শ্রোতা আর গল্পের চরিত্রের মধ্যে স্থান বদল হতে থাকে! মুনিয়া সেই গতজন্মের মায়ের জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে, রুবাই শৌভর জায়গায় পায়ে শাপলা জড়ায় শৌভ দূর থেকে মনে মনে পাঠ করে এই দৃশ্য। আর আমি, পাঠক, হতবাক দৃশ্যের পর দৃশ্য পেরিয়ে যাই…

….

শৌভর ‘মায়াকানন’ পড়ার পর মনে হয়েছিল একজন পূর্ণভাবের বাংলা কবিকে পাওয়া গেল। সেই মুহূর্তে ওই লেখার ভেতরের যে কবি চরিত্রটি, তাকে ভালোবেসে ফেলি। কারণ কবিকে একমাত্র তার কবিতার ভেতরেই সম্পূর্ণ করে পাওয়া সম্ভব। ব্যক্তি মানুষের জীবনের মেদ সেখানে থাকেনা। সেখানে সে বায়ুভুত। তরল ও উদ্বায়ী। অথচ ঋজু! তার সঙ্গে মিশে যেতে মানা নেই। হ্যাঁ, অবশ্যই যখন সে সম্পূর্ণ সহজ হয়ে নিজেকে ঢেলে দেয়।

তার পরের বই সেইরকম একটি বিগ ব্যাং তুল্য ঘটনা। যেখানে কবি স্বয়ং বায়ুভূত হয়ে ঢুকে পড়ছে পাঠকের মস্তিষ্কে। ‘নিঃশব্দে অতিক্রম করি’ তেমন এক রহস্য। যেখানে কবিপত্নী মুনিয়া, শিশু রুবাই আর কবি শৌভ এই  এক সংসার‍ যাত্রার ভেতরে বয়ে চলে, যার কিছু দূরে কবির এক অপর সত্তা হেঁটে চলেছে সমান্তরাল, সে দেখছে এই তিনজনের সংসার, দেখতে দেখতে চলেছে এক মহাজাগতিক একাকিত্বের দিকে। এই যৌথ সংসার আর একার মধ্যে যে দেয়াল, তা কখনও কখনও কবিতার অন্তিমে এসে থমকে দাঁড়ায়। সহজ যাত্রার থেকে সহসা এক জটিল অন্ধ রহস্যের ভেতর আমাদেরও ফেলে রেখে যায়।

কার বাড়ি মাঠের ওধারে, শাদা?
সারাদিন বন্ধ পড়ে থাকে, আর
রাত্রি হলে ঘরে ঘরে জ্বলে ওঠে আলো
কারা আসে, কারা যায়, অস্পষ্ট গানের সুর

ভেসে আসে মাঠের এপাশে।

কখনও অনেক রাতে, যদি ঘুম ভেঙে যায়,
বারান্দায় সিগারেট খেতে এসে দেখি—
চাঁদের খুলির নীচে জ্বলে আছে

অন্য এক প্রেতের করোটি

সারাদিন ভুলে থাকি, কাজেকর্মে, নানান ছুতোয়
কেবল দিনের শেষে, বাড়ি ফিরে
মনে পড়ে সেই অন্য বাড়িটির কথা–
মাঠের ওপাশে স্থির, যেন খুব

অপেক্ষায় ফাঁকা!

একটি কবিতার বই বা কবির বিষয়ে লিখতে গেলে খুব স্বাভাবিক যে সবকিছু মসৃণভাবে এগোবে না। এই যে শৌভর কবিতার কিছু বিশেষ লক্ষণের কথা বলতে গিয়ে উদাহরণস্বরূপ একটি কবিতা দিলাম, লিখে, পুনরায় পড়তে গিয়ে দেখি ভুল উদাহরণ! যা কিছু পূর্বে বলেছি তার উদাহরণ ঢুঁড়তে ফের বইটির ভেতরে ঢুকে পড়ে আমি এই ভুল উদাহরণ তুলে এনেছি। কারণ আর কিছুই না। এই কবিতাটিতে আটকে গেছলাম তার দূরবর্তী রহস্যের কারণে, যে রহস্য ভেদ করার দায় আমার নেই কিন্তু আক্রান্তের আর্তিটুকু ছেড়ে যায় না কিছুতেই!

এক জায়গায় মুনিয়ার কথা বলা হচ্ছে, আসলে মুনিয়া বা শৌভ নয়, আবহমান সেই প্রেম আর স্তব্ধতার কথা। যা আসলে মানবের সভ্যতার চেতনার পরিমাপে নিয়ন্ত্রিত কাজ কতদূর অগ্রসর হয়ে গেল দেখে নিতে এসে, কিছু দূর এগিয়ে, থমকে পিছন ফিরে নিজের দিকে তাকানোর মতো।

আমার সমস্ত কথা তুমি জানো। যদিও এখন
কেবলই সন্দেহ হচ্ছে, আমি কি তোমাকে

সবটুক, যথাযথ, বোঝাতে পেরেছি?

নাহলে, অমন একটা গুরুতর কথা
শুনেও, কীভাবে তুমি হেসে উঠলে? ঘরের আলোটি
নিবিয়ে, নিঃশব্দে এসে, শুয়ে পড়লে রুবাইয়ের পাশে

আমি বড় ভয়ে ভয়ে থাকি। আমি শুধু অনর্গল কথা
বলে যাই। অন্ধকারে, আমাদের গলার আওয়াজই
একমাত্র পরিচয়। তুমি তো জানোই—

শব্দ দিয়ে দূরত্বও মাপা যায়, অবস্থা বিশেষে!

এইসব কথা কবি বলছে তার বাস্তব সংসার থেকে কিছুটা দূরে একটা অন্যতর জগতের ভেতর থেকে। যেখানে তার রক্তমাংসের শরীর অবলুপ্ত। নয়ত বলতে পারা যায় না সেই কথা। রুবাইকেও গল্প শোনাতে গিয়ে তাকে আতান্তরে পড়তে হয়। যা কিছু গল্পের মতো বলা হয় সেই শিশুকে তা বাস্তব সত্য নয়। শিশু তা বোঝে না। সে সরল বিশ্বাসে পিতার সমস্ত গল্প বিশ্বাস করে, পিতাও বিমর্ষ হয় সেই কথা ভেবে, আর তখন সেই দ্বিতীয় সত্তার আবির্ভাব হয়। যে জানে বাস্তব সত্যের খুব অদূরেই বসে থাকে এক বিষণ্ণ অতিবাস্তব! যা আমরা দেখতে পাই না।

রুবাইকে গল্প বলি। বানিয়ে বানিয়ে,
অনেক কথাই বলি। আর সে-ও
সরল বিশ্বাসে সব মেনে নেয়, চুপ করে শোনে

তারপর, ঘুমে চোখ ঢুলে আসে। আমার কথাও
ক্রমশ জড়িয়ে যায়। ভাবি, এত বিশ্বাসের ভার
ভাষা কি সইতে পারবে?

মাঝরাতে, ঘুম ভেঙে দেখি— সারা ঘর
আলোয় থমথম করছে। রুবাইয়ের শিয়রের কাছে
ভাষা তার সাজ খুলে, অস্ত্রশস্ত্র ফেলে,

চুপ করে বসে আছে— চোখে জল!

অনেকদিন পর পর হঠাত হঠাত একেকটা বই হাতে আসে। যা পড়ার পর মনে হয়, শেষ হয়ে গেল! এটুকুনি! অথচ ৬৪ পৃষ্ঠাই ত! হ্যাঁ, একেকটা বই হয়, সম্পূর্ণ বই এবং শেষহীন…

পরিশেষে যে কথা বলার, শৌভর এমন কবিতা আমি পড়িনি, যা অল্পের জন্য তার পথ থেকে সরে গেল, না ভাষায়, না ভাবে। হয়ত শৌভ সেই কবিতাগুলি মাথায় লিখেই ছিঁড়ে ফেলে। অথবা এমন ভাবনা তার মাথাতেই আসেনা। কারণ ভাষার চাতুর্য, কায়দা, যা ভাবের স্বল্পতা হেতু এসে যায় তা এই কবিতাগুলিতে নেই। যেন খুব সহজ ভাবে বলা হয়েছে কথাগুলি, যেন বা কবিতাই নয়। কবিতার ভেতর এই কবিতাহীনতা রক্ষা করা, আর তাকে সোজা দাঁড়করিয়ে রাখা, কোনও সচেতন প্রয়াস নয়। এই হল সেই জাফরান রৌদ্রালোক। জীবনকে ঘিরে ফুটে থাকে আপনিই।