Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

তন্ময় মৃধার কবিতা

তন্ময় মৃধার পাঁচটি কবিতা

পাঁচটি কবিতা

 

জুলাই ২, ২০১৮

খুব আলগোছে আমি এ সব করেছি—
এই আয়ু, এই যাতায়াত, এই মায়াযাপনের লঘু
ঘুম ঘুম গান; স্বেদ, রক্ত, প্রিয়তা বা পরম বিরোধ
সবই বড় বৃষ্টিভেজা, বড় বেশি শ্রীমণ্ডিত এবং
শ্রীহীন, তথাপি দুঃখিত নই এবং গর্বিত নই আমি।
অত্যাচারী নই বলে, অত্যাচারিত নই বলে হননের
মায়াময় ভুবনে আমি বড় বেশি একাকী ও
একাত্মতাহীন।

 

জুলাই ৪, ২০১৮

মেঘের মধ্যে দাঁড়িয়ে রয়েছি
পাহাড়ে পাহাড়ে আর প্যাগোডার পতাকায়, লালি
গুরাসের গায়ে পায়ে, জনবিরল সরাইখানায়,
বাংলাদেশি তরুণ ট্রেকারের কালো চুলে মেঘ শুধু
মেঘে মাখামাখি হয়ে আছে।
যে দু’একটি কথা আমরা বলতে পারছি তাও
শুষে নিচ্ছে ওই জলকণা ভরা মেঘ। পিছুটানহীন
রাস্তা সটান উঠে যাচ্ছ আরও মেঘবিজড়িত
শূন্যতায়।
মেঘেদের দেশ এত কোমল করুণ আর কামনার
কথাগুলি এই দেশে পরস্পর সন্নিহিত নয়— আর্দ্র,
উদাসীন আর স্বল্পভাষী, সঞ্চরনশীল।

 

২৯ অক্টোবর, ২০১৮

এমন তো কতই দেখেছি
জল মাটি আকাশ ধানখেত
তালগাছ আমবন
বাঁশঝাড় আদিবাসীপাড়া
গোরুমোষ মুরগীর দঙ্গল
সবজিমান্ডি কালোলোক ফেরিঘাট
অস্তরাগাশ্রয়ী গঙ্গা পাড়ে হেলে পড়া
জীর্ণ কবেকার রাজার প্রাসাদ
গুমোট গরম আর হাওয়ার মতন লম্বা
অনেক রাতের স্টেশন
পরিত্যক্ত জলযান স্তব্ধ আয়ু সবুজ সারেং
এইসব যথেষ্ট দেখেছি বলে এইখানে
তোমাকে ছেড়ে একটি অমাবস্যা এবং
অন্ততঃ একটি পূর্ণিমা আমি অন্যত্র কাটিয়ে
এই অকাল বৃষ্টির রাতে একা একা
ফিরেছি যখন শুনছি টুপটাপ বৃষ্টি পড়ছে
জিজেক জিজেক—

দর্শন দর্শন দৃষ্টি— বৃষ্টি আর
বাতাসের কাছে
তোমার আমার অন্ধ কত অশ্রু
কতকাল স্তব্ধ হয়ে আছে।

 

১৭ নভেম্বর, ২০১৮

রাত্রিই যে কবিতা লেখার একমাত্র উপযুক্ত সময়
এটা স্রেফ মিথ। যখন ঝঙ্কৃত রোদ্দুর আর
মধ্য নভেম্বর দিবা দীপ্ত দ্বিপ্রহর— এক ঝাঁক উজ্জ্বল
পায়রার কথা ছেড়ে দিন একটা নির্বোধ কাক
ছাড়া যখন ডাকাডাকি করবার মতো সাহস
টুকুনও কারও নেই তখনই দূরের ছাদে ছোট্টো
মেয়ে তো নয় কেউ না কেউ মেলে দেয় মনোরম
শুভ্রনীল জামা ও কাপড়। এর চেয়ে পবিত্র দৃশ্য
আপাতত ভূ-ভাগে বিরল।

          একটি নিভৃত ছেলে চুপচাপ মুছে যাচ্ছে
মাহিন্দ্রা স্করপিও গাড়ির পিছন আর নেংটি ইঁদুরের
মতো একটি আধুনিক মেয়ে ছাদে ঘুরে ঘুরে
ফোনে কথা বলছে সম্ভবত কৈলাশ সত্যার্থীর
সঙ্গে হবে। আমি ঠিক নিশ্চিত নই৷ এ জীবনে
নিশ্চিত করে কিছু বোঝা কিছু বলা ইনশাআল্লাহ
কঠিনই কঠিন।

 

৬ ডিসেম্বর, ২০১৮

কে চায় বলুন তো একটা কবিতা লিখতে? আমি
তো চাই না। আমি তো চাই না কোনও কবিতা
লেখা হোক। তবুও তো লেখা হয়, তবুও কবিতা
লেখে লোক, লোক মানে জনসাধারণ, যাদের
বিষাদ সিন্ধু, যাদের হৃদয়ভরা শোক
অহরহ
লিপিবদ্ধ হয়ে চলে বাংলা কবিতায়। একা ফুটে
একা একা ঝরে যায় ফুল। দৃশ্যত দূষিত সাদা
কুয়াশায় ঢেকে যায় আমাদের নিকট ও নিকটতম
দূর— দম বন্ধ লাগে। মনে হয় অসম্ভব নরম
একটা দুঃখের গানের ভিতরে দীর্ঘ দিন শুয়ে
আছি আমি— তোমার না আসার মৃদু স্বর্গীয়
দুর্গন্ধ শুধু থমকে থাকে বাতাসে নিশ্চল, আর
নিটোল অভিশাপ, যাকে যথেষ্ট নরম করে প্রেম
বলে ব্যাখ্যা করা হয়। সত্যের অনেকখানি দূর
দিয়ে অতএব ভাষা তার চলার রাস্তা খুঁজে নেয়৷