Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

মার্চ মাসের কবিতা

অনিন্দিতা গুপ্ত রায়

 




লেখক কবি ও গদ্যকার।

 

 

 

 

এক

সমস্ত অনু্যোগের সামনে গাছের মত নত হয়ে আসা বিকেল
তারপর রাত্রির ভিতর গড়িয়ে যাওয়া আশংকা—আমাদের
বয়সের চিহ্ন নিয়ে বিলকুল একা ও নি:স্ব!
রাস্তার দুধারে যে রঙ তুমি ফেলে রেখে গেছ পাতায় পাতায়
তার কাছে ক্ষমা লিখে হাত পাতি সংগোপন।
যেসব কথার মানে ঠিক মত বলা বা বোঝা
হয়ে উঠল না
তাদেরও তো শিকড়ের কাছাকাছি আগাছা প্রচুর!
ঘন শীত শেষ হয়ে এলে এবারের মত অন্য কোথাও
জানি প্রার্থনা সাজিয়ে রেখেছ।
মার্চের পাখিদল এঁকে রেখে বসিয়েছ  জল গাছ পাতার
আড়াল। নিজস্ব ছায়া আর ডানার বাতাস।
বেদনারহিত সেই নির্জন আকাশের দিকে আমার স্পর্ধাসহ,
আকন্ঠ খড়কুটোসহ আমাকেও নিয়ে যাবে, বলো!

 

দুই

ঋতুবদলের গল্পে তারপর অনভ্যাস নিজেকে মানিয়ে নিতে থাকে। দিন ও রাতের ছোটবড় হয়ে আসার ভিতর ঠেলেঠুলে এঁটে যায় পশমগন্ধ, হাতপাখা, অথবা রঙিন ছাতার তাঁবু হয়ে ওঠা। দৈর্ঘ্য থেকে খুলে আসা পরিচিত এককের গায়ে সময় দাঁড়ায়। ছোট হতে হতে ধুলোর মতন আলগোছে লেগে আছে অবেলার রোদ। তার কাছে একটু দাঁড়ালে জেনে নিই এইসব দিনকাল পাথরপ্রতিম ঠিক কতটুকু ভারী। এখন যা বরফের ছুরি তার জল হয়ে যেতে খুব সময় লাগেনি কোনদিন। ঘুমের ভিতর অবিশ্রান্ত যে বৃষ্টি ফোঁটা তার রঙ কিরকম ঘন হয়ে ওঠে শুধু।

 

তিন

অজস্র পাতাওড়ার গল্প পার হয়ে লিখতে বলেছিলে বসন্ত,
কুহুগান আর কিছুটা বারুদ।
শীতঘুমের ভিতর থেকে খুঁড়ে এনেছিলে অলৌকিক ভেজা
মাটি, মেঘের নরম।
বিবর্ণ সকাল দুপুর জুড়ে তাই শিরোনাম  থেকে সরিয়ে ফেলি
ধুলো মাটি ছাই ও কুয়াশা। ভুল বানানের ভিতর চেনা নাম
হারিয়ে যেতে দেখে অস্থির হই না ততো। দমবন্ধ পংক্তি থেকে
গা ঝাড়া দিয়ে উঠে বসে একেকটা শিকলের শব্দ আর আমি
আরও জোরে আঁকড়ে ধরি তোমার আঙুল।
হাত মুঠো করলেই ধকধক করে ওঠা যে স্পর্শ তার গায়ে
নতুন পাতার লাবণ্য।
নৌকোয় হেলান দিয়ে উদাসীন জল অল্প অল্প করে নাব্যতা
বাড়ানোর কথা ভাবে।
শূন্যতা লিখতে গিয়ে লিখি একটা অবয়ব
যার ভিতরে অজস্র হাওয়া নিজেকে নিংড়ে
ভেঙে ফেলছে বারবার। ফুরিয়ে আসার আগে ঝমঝম করে
বেজে উঠছে আলো। সেসময়
ফাঁকা উঠোনের দিকে হেঁটে যাচ্ছে দ্যাখো অগোছালো
শৈশবস্মৃতি
যার সবটা তোমাকে বলা হল না আজো!