Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

সন্তোষ পাল — দশ

মৃণাল চক্রবর্তী

 

পূর্ব প্রকাশিতের পর

১০

এখানেই থেকে গেলে পারতে।– পুল্টুশের গলা শুনে মনে হল সদ্য ঘুম থেকে উঠে এসেছে।– এই বয়েসে এমন বন্ধু পাওয়া খুব শক্ত।

–তুমি আবার বন্ধুত্বের ব্যাপার কবে থেকে জানা শুরু করলে? তোমার বন্ধু কে?— আমি গাড়ির পেছনের সিটে বসে ঢুলছিলাম।
–আমিই তো সব চেয়ে বেশি জানি। সব চেয়ে বেশি বন্ধু দরকার আমার। কিন্তু তুমি আমার বন্ধু হলে না।

দাঁড়াও দাঁড়াও।– আমি একটু মনের গলাখাঁকাড়ি দিয়ে নিলাম।– তোমার সঙ্গে আমার কেন বন্ধুত্ব হয়নি, হবে না, জানো পুল্টুশ? তোমার মধ্যে কোনও রসবোধ নেই। ওই ব্যাপারটা বন্ধুত্বের জন্যে খুব জরুরি। অন্তত আমার ক্ষেত্রে। তোমাকে আমি এখন খিস্তি করতে চাই না, তাছাড়া আমার ঘুম পাচ্ছে। তুমি করালীর মতো। ওর গল্প আমি তোমাকে পরে বলব। এখন যাও।

–ওই যে তোমার বন্ধু ভুতো তোমাকে হোটেলের বাইরে ছাড়তে এল না, সেটা লক্ষ করলে?

এটা ঠিক যে ভুতো আমাকে ছাড়তে নামেনি। দীপ্তি বলল, ও ঘুমোচ্ছে। বলেই চোখ সরিয়ে নিল। মিতলির মুখ শুকনো ওর বাবার কথা ভেবে। আমি ওকে আদর করে দিলাম। গাড়িতে ওঠার সময় দীপ্তি বলল, ফোন কোরো। আমি হাত নেড়ে গাড়িতে উঠে পড়লাম। গাড়িটা ডান দিকে বাঁক নেবার আগে পর্যন্ত ওরা হাত নেড়ে গেল। আমার অল্প অল্প ঘুম পাচ্ছিল। তখনই ফোন বাজল। সন্তোষ পাল।

–একদম রেডি তো?— ব্যস্ত, আত্মবিশ্বাসী গলা।
–আমি বেরিয়ে পড়েছি। ঘণ্টা চারেক লাগবে।
–তখন সন্ধে হয়ে যাবে। ঠিক আছে। চলে আসুন। শিলিগুড়ি ঢোকার ঠিক এক কিলোমিটার আগে বাঁ-দিকে তাকাবেন। ওখানে স্কুটিতে আমার লোক বসে থাকবে। মাথায় টুপি। গাড়ির নম্বরটা আমাকে বলুন।
–ছবি পাঠাব?
–মুখেই বলুন না, আমার মনে থাকবে।– খুব মিষ্টি গলায় উনি বললেন।

আমি ড্রাইভারকে জিগ্যেস করে নম্বরটা বললাম। উনি বললেন, ড্রাইভারকে বলে দেবেন, শিলিগুড়ি ঢোকার পনেরো মিনিট আগে যেন গাড়ি ৪০-এর ওপর না চালায়। উনি ফোন বন্ধ করলেন। আমি ড্রাইভারকে বললাম। সে মাথা নাড়ল।

–এর পরে কোন রং-এর সুতো ঢুকবে আমি জানি না কিন্তু।– ঘ্যানঘেনে গলায় পুল্টুশ বলল।– একেই তোমার মেমরি ভাল না। কালচে হলুদ সুতো খোঁচাতে খোঁচাতে আমার অনেক সময় চলে যায়।
–তার পরে আমার বানানো গল্পের সুতোগুলো আছে।– আমি একমত হলাম।
–হ্যাঁ, সবুজ সুতো। দেখলেই সন্দেহ হয়। আমার খুব চিন্তা হচ্ছে। এভাবে একদম অচেনা জায়গায় চলে যাবে।

পুল্টুশ প্রশ্ন করেনি, অবাক হয়নি, এমন একটা সুরে কথাগুলো ছেড়ে দিল। ও বুঝতে পেরেছে আমি সত্যিই পুরনো দিনের মেলায় যাব। আমাকে কেউ আটকাতে পারবে না। এসব-ই সত্যি। কিন্তু ওকে আমি বোঝাতে পারব না সব জায়গা ছেড়ে চলে যাবার আগেই আমার আর যেতে ইচ্ছে করে না। কী যেন আটকে দেয়। যেন প্রেমিকার অভিমানকে পাত্তা না দিয়ে চলে যাচ্ছি। অনেকক্ষণ আঠার মত লেগে থাকে সেই মনখারাপ।

সন্ধে নামছে সমতলে। গাড়ি কম। এমনিতে এ-সময় আমার মনে হয় বাড়ি ফিরব, বা ওরকম কোথাও। আমি সব সময় আমার কলকাতার ফ্ল্যাটের বারান্দায় আলো জ্বালিয়ে বেরোই। লালচে আলো। আমি দরজার কাছে যাবার আগেই ও বারান্দা থেকে চলে আসবে দরজা খুলে দিতে।

–ব্যস, এই তো চলে এলে। এবার আমি যাই?
–আর একটু থাকো লালচে আলো। তুমি তো জানো আমি বেশিক্ষণ তোমায় আটকে রাখব না।

ও একটু হেসে বারান্দায় চলে যায়। লালচে ওই আলোর কথা মনে পড়ায় আমার একটু কষ্ট হচ্ছে।

জনবসতি ঘন হচ্ছে। রাতমুখো ট্রাকের সংখ্যা বাড়ছে। ড্রাইভার গাড়ির স্পিড কমিয়ে দিল। বুঝলাম পুল্টুশ ফিরে গেল। এবার কোন সুতো সাজাতে বসবে কে জানে।

ড্রাইভারই দেখল টুপি পরা লোকটাকে। একটা শুকনো গাছের পাশে স্কুটি দাঁড় করিয়ে আমাদেরই রাস্তা দেখছিল মনে হল। ড্রাইভারকে অনেক ভাল কথা বলে নেমে এলাম। গাড়ি বাঁক নিল ফেলে আসা পথে। সেদিকে তাকিয়ে একটু মন খারাপ করল।

–আমি জনি, স্যর। উঠে পড়ুন। আমাদের দেরি হয়ে গেছে। আপনিই শেষ প্যাসেঞ্জার।

আমি কাঁধের ব্যাগটা ঝুলিয়ে উঠে পড়লাম তার পেছনে। স্কুটার চলতে আরম্ভ করল। লোকটা চালাতে চালাতেই ফোনে কাকে যেন বলল।

–তুলে নিয়েছি। আসছি।
–সন্তোষবাবু?— আমি জানতে চাইলাম।
–ঠিক সময় দেখা হয়ে যাবে। একটু শক্ত করে সিটটা ধরে বসুন স্যর। আমরা বাঁদিকে যাব। রাস্তা অন্ধকার।

আমি বোঝার আগেই স্কুটার একটা যেন অদৃশ্য গলিতে ঢুকে গেল। আকাশের সামান্য আলো ছাড়া সে-রাস্তায় কোনও আলো নেই। স্কুটার খুব জোরে চলছে।

–এটা কোথায় যাবার রাস্তা?
–অন্য রাস্তা স্যর। পুরনো দিনের রাস্তা।

পুল্টুশ একটু চাপে পড়েছে মনে হল। নড়াচড়া করছে। জনি বলল—

–নড়বেন না স্যর। আমরা প্রায় এসে গেছি।

তার মানে পুল্টুশের নড়ার শব্দ ও পেয়েছে। আমি অবাক হলাম। কিন্তু হঠাৎ চোখে পড়ল একটা ফাঁকা মাঠের মত জায়গা। চারপাশে ম্লান আলো জ্বলছে। আরও কাছে যেতেই দেখলাম, আলোগুলো একটা বাসের গায়ে জ্বলছে। মনে হল যেন অনেক প্রদীপ লাগানো আছে বাসের চারপাশে। বাইরে কেউ নেই। একদম বাসের গায়ে গিয়ে দাঁড়াল জনি, যার মুখ আমার দেখা হল না। আমি নামলাম। তাকে কিছু বলার আগেই বাসের দরজা খুলে গেল। ভেতর থেকে কে যেন ডাকল, আসুন, এর পর দেরি হয়ে যাবে।

বাসের ভেতরে হালকা গোলাপি অন্ধকার আর কী যেন ফুলের গন্ধ। কামিনীর গন্ধের চেয়ে হালকা, কিন্তু ওই রকমই। জনি আমাকে নিয়ে চলল পেছন দিকে। এখানে দু-ধারেই একটা করে সিট। গোটা বাস জুড়ে শান্তির মত ছড়িয়ে আছে যেন জনি এবং অন্য সব কালো টুপি কালো কোটদের ম্লান হাসি। আমি বসে পড়তেই জনি ফিরে যেতে লাগল ড্রাইভারের কেবিনে যেখানে বাকি সব কালো কোট কালো টুপি পরা মানুষেরা বসে আছে। এবার ভাল করে দেখলাম, অনেক লম্বা বাস। দূরগামী ট্রেনের দুটো কোচ একসঙ্গে জুড়ে দিলে যেমন হয়। জনি যেন অনন্ত পথে এগিয়ে চলেছে।

এদিক ওদিকে ছায়ামানুষ বসে আছে। বাসে উঠে এদের আমি দেখতে পাইনি ওরা ছায়ার মত বলে। সবাই পেছনে হেলান দিয়ে সামনে তাকিয়ে বসে আছে। কেউ কাউকে দেখছে না। কথা বলছে না। কতক্ষণ ধরে চলছে এই নীরব আর নির্জনের খেলা? বাস মনে হচ্ছে ভেসে চলেছে। কোনও ডান নেই বাঁ নেই, সোজা। কোনও গান চলছে না, সিনেমা নয়। সামনের ছায়াকে কিছু জিগ্যেস করব ভেবে মুখ খুললাম এবং মুহূর্তে বুঝতে পারলাম আমি কথা বলতে পারছি না। অন্যদের মত হেলান দিলাম। একইভাবে পেছনে হেলান দিয়ে আধশোয়া হতেই একটু পরে চোখ বুজে এল।

প্রথমদিকে মনে হচ্ছিল যেন নিচু স্বরে ঝিঁঝির ডাক শুনছি। কোরাস। পরে মনে হল মানুষের ভাষা। বাংলাই বেশি। কিন্তু বিনবিনে, মৌমাছির গুঞ্জনের মত। মনে হল ওটা আসলে চিন্তার শব্দ। বিভিন্ন তরঙ্গে চিন্তা বয়ে চলেছে চারদিকে। মন দিয়ে শুনে গেলে কোনও কোনও তরঙ্গ ধরা দেয়। বাকিগুলো জাল ফুঁড়ে বেরিয়ে যাওয়া মাছের মত জলে ঘাই মেরে চলে যায়। সে হয়ত ধরা পড়ে অন্য ঘাই মারা মাছের চিন্তার বেতারে। এরপর আমি দুজনের চিন্তা শুনতে পেলাম। নিচু কিন্তু স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। এক পুরুষ আর এক মহিলা। তার মানে চিন্তারও কণ্ঠস্বর হয়। তার মানে ওরাও আমার চিন্তা শুনছে।

–শুনছি। এবার দেখবেন আপনি দেখতেও পাচ্ছেন অনেক কিছু। সোজা সামনে তাকান।

মহিলা চিন্তা বলল। তাকিয়ে দেখি সবাই বাসের একেবারে অন্য কোণায়, ড্রাইভারের কেবিনের পেছনে এক বিশাল টিভির দিকে তাকিয়ে। এতক্ষণ সবাই ওটাই দেখছিল। প্রথম দিকে এলোমেলো ছবিগুলোকে চিন্তা দিয়ে আমি গুছিয়ে ফেললাম। এবার যে সিনেমাটা চলতে শুরু করল তা আমার জন্যে।

–না। আমারও জন্যে। এই মহিলার জন্যেও।
–আরও অনেকে আছে আমাদের মত। তাদের জন্যেও। দেখুন, একটু পরেই বুঝতে পারবেন।

এক দীর্ঘ পিচের রাস্তা। দুধারে রাশি রাশি কৃষ্ণচূড়া ফুলে ভরে আছে। মাটিতে পড়ে আছে অনেক ফুল, দুধারেই। দুদিক থেকেই ঢাল নেমে গিয়ে মিশেছে অনন্ত শস্যের ক্ষেতে। কোথাও কোনও মানুষ নেই বা অন্য কোনও প্রাণী। ফুল ঝরে পড়ার মৃদু শব্দ ধরা পড়ল সাউন্ড ট্র্যাকে। প্রথমে ভাল লাগলেও পরে ভলিউম বেড়ে যেতে অস্বস্তি হচ্ছিল। পুরুষ-চিন্তা বলল—

–এক ভদ্রলোক খুব গন্ডগোল করছেন অনেকক্ষণ ধরে। লোকাল ভলিউম না বাড়িয়ে জেনারেল ভলিউম বাড়িয়ে দিচ্ছেন।

প্রথমে কেমন যেন একটা জড়ানো চিন্তাস্বর ভেসে এল যেটা ক্রমে স্পষ্ট হতে লাগল। পুরুষ-চিন্তা বলল—

–আমি কানে শুনতে পাই না। এখানে হিয়ারিং এড কাজ করছে না। স্যরি। কনট্রোল খুঁজে পেয়েছি। আর হবে না, স্যরি।
–স্যরি
–স্যরি

আমরা তিনজন বললাম পর পর। আবার শান্তি নেমে এল। আমি একবার জেনারেল সেটিং-এর কথা ভাবলাম। এখানে চিন্তা কি সব সময়েই সঙ্ঘবদ্ধ? আমি একা ভাবতে পারব না? এক যুবক চিন্তা ভেসে এল—

–আপনাকে আমি লিঙ্ক-টা পাঠিয়ে দিচ্ছি।
–থ্যাঙ্ক ইউ।

আমি একটু চমকে গেছিলাম। তার মানে এ আমাদের চিন্তা শুনছিল।

–না। আমি শুনছিলাম না। আমার কাছে আপনার হেল্পলাইন থেকে মেসেজ এল, ভদ্রলোককে সাহায্য করুন, তাই। নিন, আপনার কাছে লিঙ্ক চলে গেছে।
–থ্যাঙ্ক ইউ।

একটু লজ্জা পেয়ে বললাম। কিন্তু ওপাশে চিন্তার পথে পাথর পড়ে আছে। চোখের সামনে ভাসছে চিন্তার লিঙ্ক: ৫৩৪২৬৭হ্যাশ ৫ডট ৭। কিন্তু ক্লিক করব কী করে? কেন, চিন্তা দিয়ে। আমি ভাবলাম, ক্লিক করছি, ব্যস। সবুজ আলো জ্বলে উঠল। মাথায় এল, আমারই চিন্তার রঙে পান্না হল সবুজ। সেটা লেখা হয়ে গেল এক জায়গায়। পাশে লেখা, ‘পাঠাই?’ তার পাশে তিরচিহ্ন। তার মানে মেসেজিং-এর ব্যবস্থা আছে। ভয়ে ‘বাদ দি?’-এ চাপ দিয়ে ফেললাম। আপদ গেল। মাথার মধ্যে, বাইরে থেকে নয়, আর একটা নতুন চিন্তা শুনলাম।

–এটা ভাল করে শিখে নিন। কাজে লাগবে। ভুল চিন্তা চলে গেলে ভয় নেই। সবাই বুঝবে আপনি নতুন। নমস্কার।

একটু পরেই কনফিগারেশন বুঝে গেলাম। অন্যের মন না শুনতে চাইলে আমার মনও কেউ শুনবে না। তার জন্যে একটা সবুজ আলো বন্ধ করে দিতে হয়। করে দিলাম। একা হতেই পুল্টুশের কথা মনে পড়ল। একটা গলাখাঁকারি শোনা গেল।

–আছি। ঘাবড়ানোর কিছু নেই।
–একটু ঘুমিয়ে নিলে, নাকি?
–হ্যাঁ। তবে তার আগে সুতোগুলো ভাগ করে ফেললাম। ভেবেছিলাম বাসে ওঠার ঠিক আগেই নেমে যাব। কিন্তু তোমাকে অচেনা জায়গায় তো একা যেতে দিতে পারি না। তাই ঘুমোলাম। নাক ডাকছিল তোমার। আমার খুব সেন্সিটিভ কান তো, ভেতরে থাকি, তাই। উঠে পড়লাম।
–শিলিগুড়ি থেকে কত দূরে যাচ্ছি আমরা? এত সময় লাগছে কেন?

এ-কথা শুনে বুঝদারের মত হাসল পুল্টুশ। তবে একটু কেশেও ফেলল। ঠান্ডা লেগেছে বোধ হয়।

–এই সামান্য ব্যাপারটা বুঝতে পারলে না! পুরনো জায়গায় যেতে সময় তো বেশি লাগবেই।

এই পয়েন্টটা তো মাথায় আসেনি। ঠিক কথা। পুল্টুশের পিঠ চাপড়ে দিতে ইচ্ছে করল আমার। পুল্টুশ খুশি হয়ে বলল—

–আরে ঠিক আছে। ঠিক আছে। আসলে এই জার্নিটা ভালই লাগছে, বুঝলে? তোমার ওই বিয়েপাগলা ব্যাপারটা আমার খুব বাজে লাগত। তোমাকে বলিনি? মেয়েরা ওরকম তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করবে, মজা করবে তোমায় নিয়ে, এটা কি আমার ভাল লাগে বলো? আফটার অল, আমি তো তুমিই, এক দিক থেকে…

সু্যোগ পেলেই নীতিশাস্ত্র, ভালমন্দ, ঠিক-বেঠিক নিয়ে লম্বা ডায়লগে চলে যায় লোকটা।

–আমি এখন একটু রেস্ট নেব, পুল্টুশ।
–রেস্টেই তো আছ। তবে আমারও এখন সময় নেই। যাই, অনেক চিন্তা-ভাবনা করার আছে। আমার মনে হয় এবার বাসটা আকাশ দিয়ে উড়ছে। দ্যাখো তো…

আকাশ দিয়ে! মানে কী! জানলায় একটা স্ক্রিন টানানো ছিল মনে হয়। এখন কিছু নেই। শুধু অন্ধকার। সহযাত্রীদের অবয়ব দেখা যায় না এমন গভীর অন্ধকারে কোথায় যাচ্ছি? এত অন্ধকার আছে নাকি পৃথিবীতে? আর যদি এটা আকাশই হয়, তবে সেখানে তারা কোথায়? চাঁদ কোথায়? আলকাতরার মত থকথকে অন্ধকার দেখে কেমন-একটা অস্বস্তি হল। আমি খোলা চিন্তার জগতে ফিরে এলাম। শুধু একটা পাসওয়ার্ড চাইল। আমি চোখ মারতেই গুনগুন শব্দ শুনতে পেলাম। আস্তে আস্তে কথাগুলো বোঝা গেল। সবাই এক কথা ভাবছে। খুব ভদ্র গলায় অদৃশ্য হেল্পডেস্ক জানাল—

–এই রাস্তা তো আর যে কোনও রাস্তা নয়, বন্ধুরা। আমরা সময়ের হাত ধরে স্পেসকে ছাপিয়ে চলে যাচ্ছি চিন্তার গতিতে। এখানে কালো ছাড়া কোনও রং নেই। আমাদের চোখ এই গতি বুঝতে পারে না। আপনারা পরে বুঝতে পারবেন এসব। এখন স্ক্রিনটা টেনে দিন। এরকম অন্ধকার প্রথম দিকে অনেকের সহ্য হয় না। নিজেদের সঙ্গে গল্প করুন বা একা থাকুন। একটা সময় আলো ফুটবে। সেই আশ্চর্য আলোয় চোখ খুলে বাইরে তাকাবেন না। আমরা জানাব কখন বাইরে তাকাতে হবে। কোনও প্রয়োজন হলে জানাতে ভুলবেন না। বিদায়, এখনকার মত।

সহযাত্রীদের চিন্তার গুঞ্জন বাড়ছে আর বাড়ছে আর বাড়ছে।

 

আবার আগামী সংখ্যায়