Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

সাদা অন্ধকার নামছে শহরে

মৃন্ময় চক্রবর্তী

কলকাতার আশেপাশে শিলাবৃষ্টির সময় কোথাও কোথাও বরফের চাঁই পড়ার খবর শোনা গেছে, কিন্তু তুষারপাত? তা আবার খোদ কলকাতায়? এটা ভাবাই যায় না! হিম জলে ভেজা বর্ষাতিটা খুলতে খুলতে বলে হেমেন। একটু আগেই অফিস থেকে ফিরেছে সে। ফিরেই গিয়েছে বাজার। কিন্তু বাজার আজ আশ্চর্য রকম শুনশান থাকায় খালি হাতে ফিরতে হয়েছে তাকে। ওকে রীতিমতো ঠকঠক করে কাঁপতে দেখে শেফালি বলল, স্টোভটা ধরিয়ে দিচ্ছি হাত পা সেঁকে নাও।

বর্ষাতিতে কি তুষার ঠেকানো যায়? এমন তো অভ্যাস নেই। জলবায়ুও এমন নয় যে তেমন জামাকাপড় তোলা থাকবে ঘরে। তারপর একটা প্রাইভেট সংস্থার ছাপোষা চাকরি। এমনিতেই গুচ্ছের জামাকাপড় তার নেই। যা আছে বেশিরভাগটাই আলনায় নয়ত দড়িতে ঝোলানো। তোলা একটা-দুটো আছে, কোথাও অনুষ্ঠানাদি হলে পরে যাওয়ার জন্য। তারপর সত্যি বলতে শীতের জামা তো আজকাল বড় একটা লাগে না কলকাতায়, কাজেই।

–তুমি অফিস থেকে ফেরার সময়েও এমনটা ছিল না। বেশ বৃষ্টি হচ্ছিল। যেমন হয়। আমার তো চিন্তা হচ্ছে খুব। পুকুরের মাছগুলো মরে যাবে না তো গো?

–যা শুরু হল, তাতে আমরাই কী বাঁচব? দরজাটা বন্ধ করে দাও। উফ কী ভয়ানক ঠাণ্ডা! লেপ কম্বল বের করেছ?

–হুম, করলাম। তোমার আমার গরম জামাগুলো নামালাম। বিল্টুটা যে কী করছে এখন… ওর কাছে তো গরম জামা কিছু নেই!

–চিন্তার কিছু নেই। গেছে তো মামারবাড়ি। কিছু একটা ব্যবস্থা করবে ওরা। একবার ফোন করে দেখো ওখানেও শুরু হয়েছে কিনা। বহরমপুর তো কলকাতার বাইরে।

–ফোন করেছি, ওখানে নাকি খুব ঝড় হচ্ছে। বৃষ্টিও পড়ছে মুষলধারে।

ব্যাগ থেকে বিড়ির প্যাকেটটা বের করে হেমেন। ধরায়। ধোঁয়া ওড়াতে ওড়াতে বলে, কী আশ্চর্য ব্যাপার, ভাবাই যাচ্ছে না! শেফালি মাখা মুড়ি এগিয়ে দেয় ওকে। তারপর টিভিটা খোলে। টিভিতে চ্যানেলগুলো খুব অস্পষ্ট আসছে। ভিশন ক্লিয়ার নয়। হেমেন বলে, তুষারপাতে মনে হয় কেবল লাইনও জ্যাম হয়ে যাবে। শেফালি মনমরা হয়ে চ্যানেল ঘুরিয়ে যায়, বলে, জানো খবরে বলছিল সারা দেশে নাকি সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

ফোন বেজে ওঠে। হেমেন তড়াক করে লাফিয়ে নামে খাট থেকে। ফোনটা ধরে। কিন্তু কেটে যায়। ঘুরিয়ে করার চেষ্টা করে, কিন্তু হয় না। খবরটা একটু ধরো তো, ইস কাল যে স্যালারি ডে। এখন যদি এমন অবস্থা হয় তবে খাব কী?

টিভি গোঁ গোঁ আওয়াজ করে। শেফালি চ্যানেল ঘোরাতে গিয়ে দেখে সাদা হয়ে যাচ্ছে সব। যাহ, সত্যিসত্যিই বোধহয় নেটওয়ার্কটা গেল।

–মোবাইলটাতেও তো কল হচ্ছে না! শেফালি, খুব বিপদের আভাস পাচ্ছি বুঝেছ!

–তেমনই তো মনে হচ্ছে গো। এই মরেচে কারেন্টটাও চলে গেল! আমার ভয় করছে!

–ঘরে কেরোসিন, গ্যাস মজুত আছে?

–হুম কেরোসিন আছে, তবে গ্যাস ফুরিয়ে এল।

–চাল, চিনি, ডাল, আলু, আছে?

–আছে অল্প।

–বাজারে গিয়ে আজ কিছু পেলাম না। কাল বাজার খুলবে কিনা জানা নেই। ব্যাঙ্ক, অফিস হয়ত বন্ধ থাকবে। পকেটেও অল্প টাকা। যদি এসব অনির্দিষ্টকাল চলে তো হয়েছে!

–তবে আমার মনে হচ্ছে তেমন কিছু হবে না, কাল হয়ত সব ফরসা হয়ে যাবে দেখো!

শেফালি রান্নাঘরে দেশলাই খুঁজতে থাকে। হেমেন কম্বল গায়ে জড়িয়ে বাইরের দরজার দিকে যায়। একটা পাল্লা খুলতেই দুম করে একটা সাদা আলো অন্ধকার ঘরে ঢুকে পড়ে।

–কোথায় যাচ্ছ?

–কোথাও না, এদিকে এসো শেফালি, শিগগির!

শেফালি রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসে, আরে বাপরে। সব কিছু তো সাদা হয়ে গেছে!

–হ্যাঁ, হোয়াইট ডার্ক। সারাদেশ এখন সম্ভবত এই সাদা অন্ধকারের নীচে চলে যাচ্ছে!