Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

সুতপা সেন

পাঁচটি কবিতা -- সুতপা সেন

পাঁচটি কবিতা

 

হেমন্তের বনে

ধীরে ধীরে হেমন্তের বনে আগুন ধরে
আগুনের ধিকিধিকি আঁচে সেঁকতে থাকে আমাদের বাসন্তী রং
জীবনের উত্তাপ, আলগোছে নদীর বুক থেকে উঠে আসে লুকনো দীর্ঘশ্বাস।
ধূলিমলিন দিন থেকে খসে পড়ে বাকল
নতুন পাতার মতো লুকিয়ে থাকা গানগুলি কলস ভাসিয়ে দেয়
সন্ধেবেলায়, তারাদের আলোর সঙ্গে তারা পৌঁছে যায়
আকাশের দরজার কাছে, যেখানে বহুবর্ণ রাতের মেঘেদের
ঘুমের অভ্যন্তর থেকে নেমে আসে অমলিন কাব্যকথাগুলি।

 

গহন বনে বৃষ্টি নামে

আমার মনখারাপের মেঘেরা যখন জটলা করে নদীর ধারে
তখন আলগা কিছু শব্দ আসে, আলতো হাতে
বালির বাঁধে হাত রেখে যায়, সেই প্লাবনে একটা কাব্য
রোমাঞ্চকর গহন বনে বৃষ্টি নামে। পালতোলা এক নৌকো আসে
ঢেউয়ের মাথায় কলার ভেলায় ভাসতে থাকে আগের জন্ম।

 

আমার না-দেখা আয়না

কখনও তো ভালোবাসার জন্য আয়নার সামনে দাঁড়াইনি আমি
তাকাইনি স্থির জলের দিকে, কিছু ভঙ্গুর ছায়া বেলাশেষের
রোদের পথ ধরে মিলিয়ে গেছে সূর্যাস্তে। তোমার সঙ্গে দেখা হয়েছিল অকালবসন্তে
এক নিস্তব্ধ দিন থেকে জেগে উঠেছিল নদী। আমার না-দেখা আয়না, স্থির জল
খুঁজে পেয়েছিলাম— সেকথা বলিনি তোমাকে, কোনদিনও।

 

দ্বৈপায়ন

আজ রাত্রে অনেকগুলো তরবারি ছিন্ন করল অন্ধকার
দ্বৈপায়ন হ্রদের মাদকতা থেকে উঠে এসে ঊরুভঙ্গের ধ্বজা উড়িয়ে
চলে যায় কেউ বীতশোক, বীতরাগ— আশ্চর্য ধনুর্ধর মাটির সঠিক টান চিনে নিয়ে
সারথির নিবিড় স্বপ্নের থেকে তুলে নেয় ক্ষুধার্থ দিন কেননা এরপরে কিছু
ভয়ঙ্কর রোদ্দুর আকস্মিক বিমানহানার মতো কাল থেকে কালান্তরে লাগাবে কাঁপন।
সাগরের ফেনার মতো আলোর আসা যাওয়া, নিভৃত দিনগুলির বুকে মেঘের আনাচকানাচ থেকে
হয়তো ছড়াবে ভালোবাসা আজ না-হলে কাল।

 

যাপন না-করা আগামী বসন্তগুলি

একেকটা দিন রোদের বুকের থেকে নেমে এসে
দেবদারু গাছের পাতায় মেঘ আনে— তারা সব নম্র নিটোল
আশ্চর্য ভালবাসার মতো। রাজপথ জুড়ে বইতে থাকে নদী
তার রুপোলি বালুচর আমাদের দৈনন্দিন উন্মাদ যাপনকে কেমন
অতিদূর আলোর মতো শান্ত করে দেয়।
আমরা দাঁড়িয়ে থাকি অসমাপ্ত বৃত্তের কাছাকাছি
যাপন না-করা আগামী বসন্তগুলি আকাশের শরীর থেকে নামিয়ে আনে বিদ্যুৎ।