Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

‘স্বাধীনতা’র দু-চার-কথা

অমর্ত্য বন্দ্যোপাধ্যায়

 


ছাত্র, গবেষক, গদ্যকার

 

 

 

জনপ্রিয় ইংরেজি সংবাদপত্র ‘দ্য ওয়্যার’ সূত্রে জানা যাচ্ছে যে, ‘হিন্দু বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে’ গুরুগ্রাম প্রশাসন প্রতি মঙ্গলবারে শহরের মাংসের দোকানগুলিকে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়াও মাংসের দোকানগুলির উপরে ৫০০০ টাকার লাইসেন্স ফি-কে বাড়িয়ে ১০,০০০ টাকা করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বেআইনি কসাইখানাগুলির উপরে ধার্য হওয়া জরিমানার পরিমাণ ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০০০ টাকা করা হয়েছে। এগুলিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলা যেতে পারে। অবান্তর, অপ্রাসঙ্গিক বলা যেতে পারে। এমনকি, ‘অমন তো কতই হয়’, বলে জনৈক প্রাক্তন ‘জননেতা’র মতো মুখ ঘুরিয়ে চলেও যাওয়া যেতে পারে। তাতে সমস্যার কোনও সুরাহা হয় না। হিংসা বড় ছোঁয়াচে রোগ— ঘৃণা বড় সংক্রামক। মহম্মদ আখলাখের হত্যা অথবা গাজিয়াবাদের আসিফকে নিগ্রহের মতো একেকটি ঘটনাকে আর আমাদের ভারতবর্ষে দাঁড়িয়ে বিচ্ছিন্ন বলা চলে না। হিংসা ছড়াচ্ছে, সেই সংক্রমণ বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।

জাতি অথবা ধর্ম যখন মানুষের, বিশেষত আক্রান্ত অথবা নিহত মানুষের একমাত্র পরিচয় হয়ে দাঁড়ায়— তখন সেখানে দাঁড়িয়ে আর সমাজতত্ত্ব আওড়ানো চলে না। সমাজের অধঃপতনকে স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করে তখন মাথা নামিয়ে নিতে হয়। লজ্জিত হবার অধিকারটুকুও ক্ষুণ্ণ হয় তখন। হিন্দু, মুসলমান, দলিত, আদিবাসী— এই সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষ তো আগেও আমাদের দেশে ছিল। ভবিষ্যতেও থাকবে… কারণ মহাত্মা গান্ধির কথাতেই আমি বিশ্বাস করি যে, ‘ইতিহাসের পথ ধরে বহু পরাক্রমশালী একনায়কের, অত্যাচারী শাসকের আবির্ভাব ঘটেছে— কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী যে, তাঁদের প্রত্যেককেই পরাজিত হতে হয়েছে, সরে যেতে হয়েছে, বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যেতে হয়েছে।’ কাজেই মোদি-যোগী-শাহের প্রতিনিধিরা গণতান্ত্রিক পথেই একদিন বিদায় নেবেন। এটা আমার বিশ্বাস। কিন্তু তাঁদের যে ‘ঐতিহ্য’, যে ‘সনাতন’ ভারতবর্ষকে তাঁরা রেখে যাবেন, সেই ভারতবর্ষকে সুস্থ করতে— আবার সেই আগের জায়গাতে ফিরিয়ে আনতে অনেকটা সময় লেগে যাবে। কিছু কিছু ক্ষতচিহ্ন সহজে মেলাতে চায় না। অনেক দিন ধরে তার শুশ্রূষা করতে হয়।

একেকটি ছবিকে মনের মধ্যেকার রূপোলী পর্দাতে একেকবারে সাজিয়ে নিই চলুন। ফিল্মি পরিভাষাতে একে ফ্ল্যাশব্যাকও বলতে পারেন। সেই যে বেসরকারি হিন্দি চ্যানেলের সাংবাদিক— সাহসী ডাকাবুকো মেয়েটি দুঁদে পুলিশ অফিসারদের উদ্দেশ্যে সরোষে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিল, “ও কেয়া জ্বল রহা হ্যায়?” ঝোপের ওধারে ও কিসের আগুন? … হাথরাসের নির্যাতিতার জাত বা ধর্মকে নিয়ে প্রশ্ন তুলতে লজ্জা হয়। কিন্তু ঠিক তার পরদিনই যখন টিভির পর্দাতে দেখি অভিযুক্তেরা স্বয়ং বুক বাজিয়ে তাঁদের উচ্চবর্ণত্বের কথা, ‘সাহসের’ কথা আরও একবার খোলা ক্যামেরার সামনে সদর্পে ঘোষণা করছে— মনে মনে ভাবি অস্পৃশ্যতার যুগই কি তাহলে আবার ফিরে এল?

এগুলি চেনা প্রশ্ন, জানা উত্তর (?)। বিদ্বজনেরা বলবেন ‘rhetoric’, কিন্তু একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থার বয়ান অনুযায়ী মোদীর ভারতবর্ষে ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতার পরিমাণ ক্রমশই কমছে। সবার প্রথমে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ফ্রিডম হাউজের সাম্প্রতিকতম রিপোর্টটির দিকেই তাকানো যাক। দ্ব্যর্থহীন ভাষায় সেখানে বলা হয়েছে যে, মোদির ভারতবর্ষে ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতার পরিমাণ যে কেবল ২০১৪ সাল থেকেই ক্রমান্বয়ে অবনতির দিকে গেছে তাই নয়, ২০১৯-এ মোদির পুনর্নিবাচনের পর থেকেই, সেই অবনমনের হারটিও আরও ত্বরান্বিত হতে পেরেছে। এই কারণেই, গতবছর অবধিও তাঁদের বিচার অনুযায়ী আমাদের দেশ মানবাধিকারের সাপেক্ষে ‘মুক্ত’ রাষ্ট্র হিসেবে পরিগণিত হলেও, ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী তাঁরা ভারতবর্ষকে ‘আংশিক মুক্ত’ রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করেছেন। এর কারণ হিসেবে তাঁরা দেখিয়েছেন যে, আমাদের দেশে ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতার বিষয় দুটিকে ইদানীং কালে ভয়ানকভাবেই অবহেলা করা হচ্ছে।

ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রসঙ্গে দু-চার কথা বলা যাক। আমার সবচেয়ে খারাপ লাগে তখন, যখন কিনা দুর্ভাগ্যবশত কোনও একটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে পরে, ঘটনাচক্রে যদি দেখা যায় যে আক্রান্ত মেয়েটি সংখ্যাগুরু ধর্মের অনুগামী এবং অভিযুক্ত মানুষটি ঘটনাক্রমে মুসলমান, সমস্ত সামাজিক মাধ্যমগুলিতে তখন কেমন যেন একটা পৈশাচিক উল্লাসের আবহ লক্ষ করা যায়। “এই তো এতক্ষণে প্রমাণ করা গেল যে ব্যাটারা ঠিক ওইরকম!”— হুবহু এমনই একটি মানসিকতার আশ্চর্য এক গণউদযাপন দেখতে পাই তখন। ধর্ষণ যে কখনও উদযাপনের বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়াবে কল্পনাও করতে পারিনি। আমার মনে পড়ে, রাজনৈতিক হিংসায় যখন মানুষের মৃত্যু হয় তখন, তাঁর মানবিক পরিচয়টুকু মিথ্যে হয়ে গিয়ে, রাজনৈতিক পরিচয়টিই মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়। ঠিক তেমনই, আজকের ভারতবর্ষে আক্রান্তের মানবিক পরিচয়কে ছাপিয়ে তাঁর ধর্মীয় পরিচয়টিই যখন মুখ্য হয়ে উঠেছে, হতাশ চোখে কেবল উপলব্ধি করি যে, আজ সংখ্যালঘু কেউ আক্রান্ত হলে পরে, তার প্রতিবাদ করলে আপনি ‘আন্দোলনজীবী’ থেকে শুরু করে ‘শহুরে নকশাল’ অথবা ‘দেশদ্রোহী’ অবধি যে কোনও একটি তকমাতেই স্বচ্ছন্দে ভূষিত হয়ে যেতে পারেন। অথচ একমাত্র সংখ্যাগুরু কেউ আক্রান্ত হলে পরে, আপনি যদি তখন তার প্রতিবাদ করেন, তাহলেই এবং একমাত্র তাহলেই আপনি সাচ্চা ‘দেশভক্ত’ হিসেবে চিহ্নিত হবেন। প্রতিবাদটা যে দু তরফেই হওয়া উচিত, আক্রান্তের যে কোনও জাতি বা ধর্ম হয় না— সেই সাধারণ বিষয়টিকেই আমরা আজ পুরোপুরিভাবে ভুলতে বসেছি, এবং এটা আমাদেরকে ধারাবাহিকভাবে ভুলতে শেখানো হয়েছে।

২০১৭ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হলেন, তখন রুশ দাবাড়ু গ্যারি কাসপারভ একটি ভারী সুন্দর কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, দেশের মধ্যে যারা সংখ্যাগুরু তাদেরকে যদি কেউ বোঝাতে পারে, যে বাকি সংখ্যালঘুদের থেকে তাদের ভয়ানক একটি বিপদের আশঙ্কা রয়েছে, এবং একমাত্র সেই মানুষটিই সেই সংখ্যাগুরু জনতাকে তাদের আশু বিপদের হাত থেকে রক্ষা করতে সক্ষম, তবে তার রাজনৈতিক নির্বাচনের পথ অনেকটাই সুগম হয়ে যায়। মনে করে দেখুন, সেই সময়ে দাঁড়িয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সেই ভয়াবহ রকমে তীক্ষ্ণ একমুখী একটি প্রচারকৌশল— যার মূল সুরটিই ছিল “আগত মুসলমান শরণার্থীদের ঢেউয়ের হাত থেকে আমি মার্কিনী অর্থনীতিকে রক্ষা করব।” এবারে মনে করুন, ২০০২ সালে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর ‘হিন্দু-হৃদয়সম্রাট’ হয়ে উঠবার চিত্রনাট্য। গোধরা এবং তার পরবর্তীতে সেই নির্মম হিংসা, এবং একের পর এক ভুয়ো এনকাউন্টারের মোড়কে ‘হিন্দু-হৃদয়সম্রাট’কে খতম করবার ‘ঘৃণ্য চক্রান্ত’কে বানচালের সেই একের পর এক ফিল্মি বয়ান। ২০১৯-এ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ-জিগিরের রক্ত-গরম করা সেই ইতিহাস। মানুষকে একবার হানাহানির আবহে একে অপরের বিরুদ্ধে কোনওভাবে লড়িয়ে দিতে পারলেই রাজনীতির দাবা খেলাটা সহস্রগুণে সহজ হয়ে যায়। কিন্তু এর ফলে সমাজের বুকে যে একেকটি গভীর ক্ষতচিহ্নের জন্ম হয়, তার কোনও সুরাহা হয় না।

শোষণ অথবা তোষণ— দুইই সমান রকমে ক্ষতিকারক। ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটারের আন্দোলনের সময় দেখা গিয়েছিল যে, শ্বেতাঙ্গ পুলিশকর্মীদের একাংশ রীতিমতো মনে মনে বিশ্বাস করেন যে ‘কৃষ্ণাঙ্গ মানুষেরা জাতিগতভাবে অপরাধী, অথবা অপরাধকে তাঁরা প্রশ্রয় দেন।’ আজ রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার সমিতির সামনে বিবেচিত একটি রিপোর্টের সমীক্ষা অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে যে ২০১৯ সালে ভারতীয় পুলিশ কর্মচারীদের ৫০ শতাংশই মনে করেন ‘মুসলমানেরা জাতিগতভাবে অপরাধপ্রবণ।’ এর বাইরে আরও ৩৬ শতাংশ পুলিশকর্মী মনে করেন যে, ‘জাতিগতভাবে না হলেও গড়পড়তা মুসলমানেদের মধ্যে আইন না মেনে চলার একটা প্রবণতা কাজ করে।’ এইখানে দাঁড়িয়ে আবারও বলতে ইচ্ছে করছে যে— শোষণ অথবা তোষণ, দুইই সমান রকমে ক্ষতিকারক। তোষণের ফলে আমরা সংখ্যালঘু একেকটি সম্প্রদায়কে সচেতনভাবে আর অগ্রসর হতে দিই না, যাতে সমাজগতভাবে তাদের শিক্ষা, চেতনা প্রভৃতির দৈন্যকে কাজে লাগিয়ে নেতারা ভোট বৈতরণী পার হতে পারেন। অন্যদিকে আবার সংখ্যাগুরু ভোটব্যাঙ্ককে এক করতে গিয়ে মোদি-যোগীর মতো মানুষেরা একেকজন, সংখ্যালঘুদেরকে সমূলে নির্মূল করবার মতো নিষ্ঠুরতম একটি উপায়কে সাদরে গ্রহণ করেন। মুসলমানেদের জন্য পড়ে থাকে কেবল একপাশে খাড়া একটি পাহাড়, অন্যপাশে গভীর একটি খাদ। জননেতা হিসেবে মুখ হয়ে উঠতে থাকেন একেকজন মৌলবাদী পণ্ডিত অথবা গোঁড়া ধর্মীয় পুরোহিতেরা একেকজন। কিন্তু বিজেপির ‘rhetoric’ যে কেবল এইটুকুতেই শেষ হচ্ছে না। মুসলমানদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে অনেক কথা শুনতে পাই। কিন্তু কেউ একজনও জনগণনা বা কোনও সরকারি তথ্যের ভিত্তিতে তাদের বক্তব্যকে প্রমাণ করতে চেষ্টা করেন না। তুলনাত্মক আলোচনায় যান না। কেবল মিথ্যে আশঙ্কার ‘জুজুবুড়ি’ দেখানোটাই তাদের কাজ বোধহয়। কোভিড-জেহাদ নিয়ে আদালতের উলটো বিবৃতি সত্ত্বেও সাম্প্রদায়িক, হিংসাত্মক প্রচার কোথাও এতটুকুও ব্যহত হয় না। উলটে লকডাউনের সময় দিনের পর দিন আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকা সত্ত্বেও দক্ষিণ ভারতের একেকটি বিখ্যাত দেবস্থানকে কেন সেই অবস্থাতেও খুলে রাখা হল, সেই নিয়ে কিন্তু কারও এই দেশে বিশেষ মাথা ব্যথা দেখি না। এসব কথা কেবল আমি বলছি না, রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার সমিতির রিপোর্টে, এমনকি ফ্রিডম হাউজের বার্ষিক সমীক্ষা রিপোর্টেও এই সমস্ত বিষয়গুলিই উঠে আসতে পেরেছে।

এদিকে যোগীজির উত্তরপ্রদেশে একই সময়ে একের পর এক দলিত নিগ্রহের ঘটনা ঘটছে। ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। এমনকি ধর্ষণে অভিযুক্ত উচ্চবর্ণের মানুষটি জেল থেকে সহজেই জামিনে ছাড়া পেয়ে বেরিয়ে এসে, আক্রান্তের পরিবারের একজন সদস্যকে সকলের সামনেই দিনের আলোতে নির্লজ্জভাবে গুলি করে খুন করছে। জাতিগত বা ধর্মগত এই উন্নাসিকতাকে, এই বেপরোয়া মনোভাবকে এমন নগ্নভাবে প্রকাশিত হতে দেখলে, আমাদের সংবিধান প্রণেতাদের জন্য কেবল একমুঠো হতাশার নৈবেদ্য ছাড়া আর কোনকিছুই অবশিষ্ট থাকে না বোধহয়। ধর্মনিরপেক্ষতা কেবল সুদূরের স্বপ্ন এখন, মানুষকে যে আমরা মানুষ বলেই মনে করতে শিখিনি। … লভ জেহাদের ভারতবর্ষে আপনাকে স্বাগত জানাই। আইনের মারপ্যাঁচে বিশেষ একটি সম্প্রদায়কে এরকম ঘোষিতভাবে রাজনৈতিক ইচ্ছা অনুযায়ী ছলেবলে কৌশলে প্যাঁচে ফেলবার এমন এক প্রচেষ্টা, নিঃসন্দেহে শাসকের তরফে অভিনবত্বের পরিচায়ক।

বাকি যা রইল, সেই রাজনৈতিক স্বাধীনতার কথাই বা আর নতুন করে কী বলব? অশীতিপর একজন কবিকে জামিন দিতে গেলেও এদেশের আইন অনুযায়ী এখন দুবছরের উপর সময় লেগে যায়। (যদিও তার আগে সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের একাংশকে সাহসের সঙ্গে এই খবরটিকেও প্রচার করতে হয় যে, কবি এবং তার ‘সহযোগী’দের বিরুদ্ধে সরকারপক্ষের তরফে আদালতে পেশ করা মূল যে প্রমাণটি, সেটিই নাকি আদতে নকল বা ‘planted’ ছিল)। বৃদ্ধ সমাজসেবীকে রোগের কারণে হাত কাঁপে বলে, জল খাবার সময় সামান্য একটি স্ট্র ব্যবহারের মতো আদ্যোপান্ত নিরীহ, অত্যন্ত সাধারণ একটি অনুমতি পেতেও তাঁকে দিনের পর দিন উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়ে বসে থাকতে হয়। এঁরা নাকি ‘দেশদ্রোহী’ এবং ‘প্রধানমন্ত্রীকে খুনের চক্রান্তে জড়িত’। ‘rhetoric’ এবং আরও ‘rhetoric’-এরই পুনরাবৃত্তি কেবল। গোয়েবলসের তত্ত্বকে আমরা আজ হাতেকলমে প্রমাণিত হতে দেখছি।

…এদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই। কেউ কেউ জিজ্ঞেস করতে পারেন যে, “আপনি তো লিখছেন? স্বাধীনতা না থাকলে লিখতে পারতেন?” হয়তো পারতুম না। কিন্তু এখনও যে লিখতে পারছি, তার মানে এই নয় যে আগামী দিনেও লিখতে পারব। প্রত্যেকটি ‘বিচ্ছিন্ন’ ঘটনা আজ ভয় ধরাচ্ছে। ওই যে বলেছি, হিংসা বড় ছোঁয়াচে রোগ— ঘৃণা বড় সংক্রামক। আজকের ভারতবর্ষে একজন আক্রান্তের মানবিক পরিচয়কে ছাপিয়ে তাঁর ধর্মীয় বা রাজনৈতিক পরিচয়টিই প্রত্যেকবারে মুখ্য হয়ে উঠছে। এর চেয়ে বড় সঙ্কেত আর কিই বা হতে পারে? প্রতিবাদ ভিন্ন আর বিকল্প পথের হদিস নেই।