Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

মেডিক্যাল শিক্ষার হালচাল

প্রবুদ্ধ বাগচী

 



গদ্যকার, প্রাবন্ধিক, সমাজভাবুক

 

 

 

 

এক কোটি কুড়ি লাখ টাকা! না, এটা কোনও সরকারি প্রকল্পের বাজেট নয়, এমনকি নয় কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বার্ষিক অনুদান— লখনৌ শহরের একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ স্নাতক স্তরে ডাক্তারি পড়ার জন্য এই পরিমাণ কোর্স ফি নির্ধারণ করেছিল আজ থেকে চার বছর আগে। অনুমান করা অসঙ্গত নয়, বিগত চার বছরের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে মিলিয়ে এখন হয়তো ডাক্তারি পড়ুয়াদের কাছে প্রায় দু কোটি টাকা চাওয়া হচ্ছে এমবিবিএস পড়ে পাশ করে বেরোনোর জন্য। আসলে এটা হিমশৈলের চূড়া। দেশে মেডিক্যাল শিক্ষা নিয়ে যে কী পরিমাণ চরিত্র বদল হয়ে গেছে গত প্রায় দশ বছরে তার একটা হদিশ পাওয়া যায় চোখ-কপালে উঠে যাওয়া একটা তথ্য দেখলে। টাইমস অফ ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত এই প্রতিবেদন অনুযায়ী সারা দেশে এমবিবিএস আসন সংখ্যার ২৮ শতাংশ মূলত ধনীর দুলাল বা দুলালীদের জন্য আপাতত সংরক্ষিত। এই আসনগুলিতে যারা পড়ছেন তাঁদের বার্ষিক খরচ দশ লক্ষ টাকা বা তারও বেশি অর্থাৎ সাদা পাটিগণিতের হিসেবে সাড়ে পাঁচ বছরের পাঠ্যক্রমে মোট ব্যয় পঞ্চাশ-পঞ্চান্ন লক্ষ টাকার কম নয়। অনেকে এই সূত্রে রসিকতা করে বলছেন ধনীদের জন্য সংরক্ষণ তো তাহলে সরকারি সংরক্ষণ ব্যবস্থাকেও ছাপিয়ে উঠেছে! কারণ খুব সহজ। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় তফশিলি জাতির জন্য কোটা ১৫ শতাংশ, তফশিলি জনজাতির জন্য ৭.৫ শতাংশ আর ওবিসি-দের জন্য ২৭ শতাংশ— বিপরীতপক্ষে ধনীদের জন্য বরাদ্দ শতকরা আঠাশটি!

অবশ্য এটা ঘোষিত সংরক্ষণ নয়, তবে কার্যত পরিসংখ্যান সেইদিকেই ইঙ্গিত দেয়। এই উচ্চহারে ফি নেওয়া হচ্ছে যেসব প্রতিষ্ঠানে সেগুলি সবই বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ যেখানে ১০.৫ শতাংশ সিট ম্যানেজমেন্ট কোটায় রাখা থাকে, এর পরেই আসবে ডিমড ইউনিভার্সিটি নামের প্রতিষ্ঠানগুলি, সেখানে ম্যানেজমেন্ট কোটা ১০ শতাংশ। এর পরেও আছে প্রাইভেট কলেজগুলিতে এনআরআই কোটা (৫ শতাংশ)। আর সবচেয়ে বিস্ময়ের কথা, সরকারি কলেজে ম্যানেজমেন্ট ও এনআরআই কোটা যেখানে দুই শতাংশ, সেখানে বেসরকারি কলেজে সরকারি কোটা নামমাত্র (০.৬ শতাংশ)। যার পরিষ্কার ব্যাখ্যা হচ্ছে সরকারি কোটায় মেধাবী পড়ুয়ারা সহজে বেসরকারি কলেজে ঢুকতে না পারলেও সরকারি কলেজে ম্যানেজমেন্ট/এনআরআই কোটায় চড়া দরে আসন বিলি করা যাবে। এই দরের বিষয়েও একটা আন্দাজ থাকা ভাল। এনআরআই কোটায় যারা পড়তে আসছেন তাঁদের বার্ষিক ফি গড়ে ৩৬ লক্ষ (কোর্স ফি প্রায় দু কোটি টাকা) আর ম্যানেজমেন্ট কোটার ক্ষেত্রে এই গড় ১৮ লক্ষ টাকার কম নয়। আর এই কোটা নামক মৌচাকের সামনে সেইসব পড়ুয়াদেরই ভিড় যাঁদের সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষায় (নিট) র‍্যাঙ্ক একেবারে পেছনে— এমনকি, ৬ লাখের নিচে র‍্যাঙ্ক করা পড়ুয়ারাও দিব্যি চাঁদির জোরে ঢুকে পড়তে পারছেন ডাক্তারির ছাত্র হিসেবে! বলে রাখা ভালো মূলত গুজরাত ও রাজস্থানে বেশ কিছু সরকারি মেডিক্যাল কলেজে খুল্লমখুল্লা ম্যানেজমেন্ট ও এনআরআই কোটা চালু করে দেওয়া হয়েছে গত এক দশকে— এইসব সিটে গড় বার্ষিক ফি সাড়ে আঠারো লক্ষ টাকা। মেডিক্যাল শিক্ষার বিপুল খরচের কারণ দেখিয়ে পঞ্জাব সরকার তাঁদের নিয়ন্ত্রণাধীন মেডিক্যাল কলেজগুলিতে গত বছর (২০২১) থেকে ফি বাড়িয়ে দিয়েছেন প্রায় সাতাত্তর শতাংশ যদিও এই বাড়তি অর্থ সরকারের মোট খরচের তুলনায় কিছুই নয়। তুলনায় মহারাষ্ট্র বা মধ্যপ্রদেশে ডাক্তারি পড়ার খরচ কিছুটা কম (বার্ষিক এক লক্ষ টাকার মতো)। আর সবচেয়ে কম খরচে ডাক্তারি পড়া যায় এখন যে দুটি রাজ্যে তা হল পশ্চিমবঙ্গ ও বিহার— এখানে এখনও গড়ে বার্ষিক দশ হাজার টাকা টিউশন ফি দিয়ে পড়া যায়, অবশ্যই সেগুলি সরকারি কলেজ। বেসরকারি কলেজগুলিতে এই রাজ্যেও ম্যানেজমেন্ট ও এনআরআই কোটা চালু আছে যাদের বার্ষিক দক্ষিণা দিতে হয় যথাক্রমে প্রায় পাঁচ লক্ষ ও পনেরো লক্ষ টাকা। তবে তথ্য হিসেবে এটাও বলা দরকার কেন্দ্রীয় সরকারের পরিচালনায় যে সব এইমস আছে (এখন সারা দেশে ১৫টি) সেগুলিতে এখনও নামমাত্র খরচে পড়াশোনা করা যায়, তবে এটা নিতান্তই ব্যতিক্রম। এই হিসেব দেখে দেশের সামগ্রিক মেডিক্যাল শিক্ষার বিপুল ব্যয়ের চিত্র বুঝতে পারা সম্ভব নয়।

কিন্তু এইসব কথা আদপে উঠছে কেন? উঠছে এই কারণে যে রাজ্যসভার সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বছর ছয়েক আগে (২০১৬) দেশে মেডিক্যাল শিক্ষার পরিকাঠামো ও শিক্ষার মান নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছিলেন। তাঁদের মনে হয়েছিল, মেডিক্যাল কাউন্সিলের আওতায় যেভাবে সারা দেশে কলেজগুলিকে অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে বা যেভাবে মেডিক্যাল শিক্ষা পরিচালিত হচ্ছে তাতে নানা গলদ আছে। বিশেষত অভাব আছে স্বচ্ছতার। কথাটা সার্বিকভাবে কতটা সঠিক বলা মুশকিল। তবে এই রাজ্যে আমাদের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি, বিশেষ কোনও মেডিক্যাল কলেজে কোনও কোর্সের অনুমোদন দেওয়ার জন্য যখন কাউন্সিলের টিম আসতেন তার আগে রাতারাতি অন্য কলেজ থেকে শিক্ষক বদলি করে এনে, ক্লাসরুম বা হাসপাতালের সাময়িক সংস্কার করে সব সাজিয়েগুছিয়ে রাখা হত। দিল্লির কাউন্সিলের টিম এই সাজানোগোছানো ব্যবস্থা দেখে সন্তুষ্ট হয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাঁদের অনুমোদন দিয়ে দিতেন। কাউন্সিলের সদস্যরা চলে গেলেই আবার যে কে সেই অবস্থা। এই পদ্ধতি নিশ্চয়ই কাম্য ছিল না। বিশেষত বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ, যেখানে বিপুল বিনিয়োগ হয়েছে এবং ম্যানেজমেন্ট কোটা বা এনআরআই কোটায় ছাত্র ভর্তি করে তার একটা বড় অংশের ফেরত আসার কথা ভাবা হয়েছে সেখানে চূড়ান্ত ক্ষমতাপ্রাপ্ত মেডিক্যাল কাউন্সিল কলেজের পরিকাঠামোর মূল্যায়ন করার ক্ষেত্রে যদি পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে পড়ে, তাহলে বড় বিপদ। কারণ, শেষ অবধি পাশ করা চিকিৎসকরা মানুষকে স্বাস্থ্যপরিষেবা দেবেন, সেখানে গোড়ায় গলদ থাকলে তা চরম দুশ্চিন্তার।

তাই সংসদীয় কমিটির বক্তব্যের পর যখন মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার পরিবর্তে ‘ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন’ আইন হিসেবে পাশ হল (২০১৯) তখন তার উদ্দেশ্য হিসেবে দুটো মৌলিক কথা বলা হল— সর্বভারতীয় অভিন্ন এন্ট্রান্স পরীক্ষা ও সামগ্রিক মেডিক্যাল শিক্ষার আমূল সংস্কার এবং দুর্নীতিমুক্ত নিয়ন্ত্রণ। সেই সঙ্গে বলা হল, মেডিক্যাল শিক্ষার মান বাড়াতে হবে আর কমাতে হবে তার পড়ার খরচ। আইন পাশ হওয়ার পরেই রাজ্যভিত্তিক পরীক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তে চালু হয়ে গেছে সর্বভারতীয় এন্ট্রান্স (নিট) কিন্তু মেডিক্যাল শিক্ষার ব্যয় কি আদৌ কমেছে? আমাদের হাতে আসা তথ্যে অন্তত তেমন কোনও ইঙ্গিত নেই। তাহলে কি পুরো ব্যাপারটাই আসলে “তৈলাধার পাত্র” না “পাত্রাধার তৈল”-এর মতো কাগুজে পরিবর্তন?

আর এই প্রশ্নের জবাব আছে আসলে ‘সংস্কার’ কথাটার আমরা কী মানে করব তার ওপর। এর আগে আমরা দেখেছি ‘প্ল্যানিং কমিশন’ এর বদলে ‘নীতি আয়োগ’ তৈরি করা হয়েছিল সেই সংস্কার কর্মসূচিরই অংশ হিসেবে, এতে এখনও কী লাভ হয়েছে বোঝা যায়নি। কারণ, আর্থিক মন্দগতি বা কর্মসংস্থানের মন্দা আজ দেশের সব থেকে বড় সমস্যা— এর হাল ফেরাতে ‘নীতি আয়োগ’ কী সমাধান বাতলেছেন তা আমরা কেউই জানি না। ভারতের চিকিৎসাব্যবস্থার ক্ষেত্রেও বড় কয়েকটি বাধার জায়গা ছিল অনেকদিন থেকেই। প্রথমত দেশে জনপ্রতি চিকিৎসকের উপস্থিতির হার অত্যন্ত কম (প্রতি দশ হাজার জনসংখ্যায় ৭.৮ জন) যা আবার শহর থেকে গ্রামে বা রাজ্য থেকে রাজ্যে উঁচু হারে বদলে যায়। গ্রামের ডাক্তার সংখ্যার ৩.৮ গুণ পাওয়া যাবে শহরে। আবার ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যে প্রায় সাড়ে আট হাজার মানুষ প্রতি একজন ডাক্তার, যা তামিলনাড়ুতে আবার সব থেকে বেশি (সাড়ে তিনশোজনে একজন চিকিৎসক)। অন্যদিকে আবার ভারতীয় ডাক্তারদের একটা অংশ অন্য দেশে চলে যান— মার্কিন দেশের নামী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলির দশ শতাংশ ভারতীয় ডাক্তার, যুক্তরাজ্যেও ভারতীয় ডাক্তারদের সংখ্যা বেশ উল্লেখযোগ্য। এই যেখানে অবস্থা সেখানে এখন সারা দেশে এমবিবিএস-এর আসন সংখ্যা তিরাশি হাজারের কাছাকাছি যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক অনেক কম। চাহিদা আর জোগানের এই ভারসাম্যহীনতার মধ্যে একদিকে যেমন কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে খরচ বেড়ে গেছে পাশাপাশি দুর্নীতির ছাপও পড়ছে দেদার। দেশে মেডিক্যালে ভর্তি হতে না পেরে গড়ে পাঁচ হাজার পড়ুয়া পাড়ি দেয় অন্য দেশে মেডিক্যাল পড়ার জন্য যেখানে তুলনায় কম খরচে পড়া যায়। সম্প্রতি ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে আমরা দেখলাম সেখানে কত ভারতীয় ডাক্তারি পড়ুয়া থাকেন। চিন, রাশিয়া এমনকি বাংলাদেশেও ভারতীয় ছাত্ররা ডাক্তারি পড়তে যান। কিন্তু সমস্যার কথা হল এদের বেশিরভাগই আর দেশে ফেরেন না আর যারা দেশে ফিরে নতুন করে ভারতে প্র্যাক্টিস করার জন্য পরীক্ষা দেন তাঁদের মধ্যে শতকরা ছাব্বিশ ভাগ পরীক্ষায় পাশ করতে পারেন না।

তাহলে এখানে তথাকথিত সংস্কারের ভূমিকা ঠিক কী? প্রশ্নটা ভাববার। এই কারণে ভাবার যে আমাদের দেশের কেন্দ্রীয় সরকার স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বরাদ্দ করেন জিডিপি-র মাত্র তিন শতাংশ। একটা হিসেব বলছে, সরকারের প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় ৯ টাকা হলে স্বাস্থ্যে ব্যয় হয় ৩ টাকা ১০ পয়সা। তাহলে স্বাস্থ্য ও মেডিক্যাল শিক্ষার ক্ষেত্রে উপযুক্ত বাড়তি পরিকাঠামোর খরচ আসবে কোথা থেকে? আসছেও না কিন্তু। এই মুহূর্তে দেশে যে মেডিকেল কলেজ আছে তার প্রায় অর্ধেক বেসরকারি আর তার থেকেও বড় কথা হল এই কলেজগুলির সংখ্যা বেড়েছে গত কুড়ি বছরে সব থেকে বেশি— ২০০০ সাল নাগাদ দেশে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ছিল যেখানে ৬১টি সেখানে ২০১৯ সালে এই সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ২৬১-তে। সরল অঙ্কের হিসেবে এইসব কলেজগুলিতেই আসন সংখ্যায় ম্যানেজমেন্ট কোটা বা এনআরআই কোটা সবথেকে বেশি। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের জমানায় এইসব কলেজগুলির অনুমোদন পদ্ধতি তুলনায় সরল করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি নিজেদের হাসপাতালে শয্যা পরিকাঠামো না থাকলেও নিকটবর্তী কোনও সরকারি হাসপাতালের কিছু শয্যা লিজে নিয়ে তা কলেজের শয্যা হিসেবে বিবেচনা করে তার অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। আমাদের রাজ্যেও ইতিমধ্যে দু-একটি মফসসলের সরকারি হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা বেসরকারি কলেজের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে।

পড়ার খরচ নিয়েও সরকারের বক্তব্য হল, কোনও কলেজের অর্ধেক আসনের ফি সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বাকি অর্ধেকের ফি তারা সরাসরি বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে চায়। এই প্রবণতা খুব নির্দিষ্টভাবেই মেডিক্যালের আসন নিয়ে ফাটকাবাজির সম্ভাবনাকে জোরালো করে যা আদপে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পক্ষে হানিকর।  বিপরীতপক্ষে উপযুক্ত আলোপ্যাথি ডাক্তারের পরিবর্তে ‘আয়ুশ’ ডাক্তারদের জায়গাটা ক্রমশ চওড়া করে দেওয়া হচ্ছে যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মেডিক্যাল শিক্ষা নয়। গ্রামেগঞ্জে ডাক্তারের অভাব মেটাতে স্থানীয় ‘কোয়াক’দের ট্রেনিং দিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়ার প্রস্তাবের মধ্যে আছে গ্রামীণ মানুষের প্রতি একধরনের উপেক্ষার ভাব যারা নাকি জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ। ইতিমধ্যেই অসমে তিন বছরের ‘ডিপ্লোমা ইন মেডিসিন অ্যান্ড রুরাল হেলথ’ কোর্স চালু করে দেওয়া হয়েছে যাতে পাশ করলে গ্রামীণ চিকিৎসার সুযোগ পাওয়া যাবে। রাষ্ট্রীয় বাল সুরক্ষা যোজনা (আরবিএসকে)-র অধীনে শিশুদের প্রাথমিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে ‘আয়ুশ’ ডাক্তাররা কিছু কিছু ওষুধ প্রেসক্রিপশন হিসেবে লিখছেন। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন জানিয়েছেন, আগামী ৮-১০ বছরের মধ্যে উপযুক্ত চিকিৎসকের অভাব যতদিন পূরণ না হয় ততদিন নাকি এইসব সাময়িক ব্যবস্থা মেনে না নিয়ে উপায় নেই। কিন্তু এর মধ্যে রয়ে গেছে এক মস্ত প্রহসন। এমবিবিএস-এর আসন সংখ্যা ও কলেজের সংখ্যা জনসংখ্যার অনুপাতে সুসাম্যে নিয়ে আসতে গিয়ে যদি একদিকে আসনের পড়ার খরচ বেড়ে যেতে থাকে আর আসন পূরণ করার দায় পুরোটাই বেসরকারি কলেজের ওপর ছেড়ে দিয়ে সরকার দায় ঝেড়ে ফেলতে চায় তাহলে তো গোড়াতেই গলদ দেখা দেয়। কোটি টাকা দিয়ে পাশ করা ডাক্তার গ্রামে গিয়ে জনস্বাস্থ্যের দায়িত্ব নেবেন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন এই কথা হলফ করে বলতে পারেন কি?

তাছাড়া, কমিশনের প্রস্তাব যা হয়তো আগামী বছরেই কার্যকরী হবে তা হল ন্যাশনাল একজিট টেস্ট (নেক্সট)— যার ফলে এমবিবিএস পাশ করা চিকিৎসকদের কোর্স শেষে প্র্যাক্টিস করার জন্য আবার একটি পরীক্ষায় বসতে হবে। এর ফলে আবার একটা ফিল্টার তৈরি হওয়ায় মোট পাশ করা ডাক্তার আর প্র্যাক্টিস করতে পারা ডাক্তারের সংখ্যায় বছরে বছরে একটা ফারাক তৈরি হবে। তাতে কি আবার সেই সাম্য বিঘ্নিত হবে না? উত্তর নেই। আসলে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন বস্তুটি সরকারের নীতির একটা মুখপত্র— আগের মেডিক্যাল কাউন্সিল খুব খারাপ ছিল এই আওয়াজ তুলে নতুন এই আইনবদ্ধ কমিশন এমন একটি কেন্দ্রীয় নিগড়ে দেশের চিকিৎসাব্যবস্থাকে বেঁধে ফেলতে চায় যার যুক্তি অনেক সময়েই দুষ্কর। আসলে সেই ঘুরেফিরে একই কথা— ‘সংস্কার’ কথার প্রকৃত ব্যঞ্জনা কী? আদপে কোন লক্ষ্যে এই সংস্কার? এনএমসি তাঁদের কাজেকর্মে ইতিমধ্যেই তা প্রকট করতে আরম্ভ করেছে। পড়ে মরুক গে দেশের লোক!