Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

মেডেল রহস্য

তুহিন দাস

 

লোকটি, আবুল খায়ের, খেলায় কোনওদিন মেডেল পায়নি। একদিন দোকান থেকে অনেকগুলো সাধারণ মেডেল কিনে এনে ড্রইংরুমের দেয়ালে ঝুলিয়ে রেখে সবাইকে দেখাতে লাগল : এই যে আমার মেডেল…। তারপর সে খেলা ছেড়ে দিল।

রাত্রিবেলা ঘুমের সময়ে ওই মেডেলগুলো ঝনঝন করে বেজে উঠত। খুব ভোরবেলা উঠে সে লিখত মেডেলগুলোর কথা, সংবাদপত্রে ছবিসহ নাম আসার কথা, হাততালির কথা, জীবনের কথা। এভাবে লিখতে লিখতে সেও একদিন লেখক হয়ে গেল। অনেক বছরের পরে সে একটা পুরস্কার পেল। তারপর আস্তে আস্তে তার লেখা বন্ধ হয়ে গেল।

এর অনেকদিন পরে সে মেডেলগুলো ফুটপাথে ফেলে দিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে থাকল। ওই মেডেলগুলো কুড়িয়ে পেয়ে ছোট্ট ছোট্ট ছেলেদের সে কী খুশি! তারাও ওই সোনালী রঙের মেডেলগুলোর সঙ্গে কথা বলতে শুরু করল। তারা ওই মেডেলগুলো নিয়ে বাড়ি ফিরে গিয়ে দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখল।

এরপর একদিন ওই ছেলেদের ড্রইংরুম থেকে মেডেলগুলো চুরি হতে শুরু করল। সবাই অবাক এমন মূল্যহীন মেডেল কেউ কেন চুরি করছে? একে একে ছয়টি মেডেল চুরি হয়ে গেলে সকলে ভাবতে লাগল : মেডেলগুলো নিশ্চয়ই সোনার। লোকেরা খুঁজতে শুরু করল অন্য মেডেলটি কোথায়?

কিন্তু অন্য মেডেলটি যার কাছে ছিল, সে মেডেলটি হারিয়ে ফেলেছিল। আর লোকটি, আবুল খায়ের, মেডেলটি খুঁজে পাচ্ছিল না। সে শহরের প্রতিটি রাস্তা-গলি-ড্রেন আঁতিপাঁতি করে মেডেলটি খুঁজতে খুঁজতে একদিন পাগল হয়ে গেল। কিন্তু লোকেরা, আর যারা মেডেলটি খুঁজছিল তারা মেডেলটির রহস্য আর বুঝতে পারল না।

এ শহরের অনেকেই এখনও ওই মেডেলটি খুঁজে ফেরে। এখনও রাস্তায় পড়ে থাকা এক চকচকে মেডেলের রূপকথা প্রায়ই শোনা যায়।