Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

সৈকত রক্ষিত

তিনটি কবিতা

 

তোমার কুঞ্চিত ঠোঁটে

কত নামে কত কথা লিখতে লিখতে
কেটে গেল সহস্র বিনিদ্র রজনী
শুধু নিজের কথাই লেখা হলো না আজও
                   মানবী, আমি তোমার নাম নিয়ে মরি…

কতজনের কত অকথিত জীবনকথা এ-যাবৎ লিখেছি
একঘর অন্ধকারে নিজের চোখের জলের কথা
লেখাই হলো না!
অশ্রুপতনের মুহূর্তগুলি একটি তারে
                   বেদনার মতো বৃথায় বেজে গেল!

এখনো তোমার হাতের স্পর্শ ঝাপসা হয়ে
           লেগে রয়েছে আমার করভূমে
সারা শরীর জুড়ে কড়ির মতো সেদিন
ঝন-ঝন করতো কত যে উষ্ণ চুম্বন
সব উষ্ণতাই কাঁচা দেওয়ালের গায়ে বর্ষার মাটি
                 নিঃশব্দে ঝরে পড়ল!

নৈঃশব্দই আজ শতমুখী দুর্যোগ হয়ে বেঁচে আছে
আমি সেই দুর্যোগের মুখে দাঁড়িয়েও
যোনির মতো তোমার কুঞ্চিত ঠোঁটে
              চুম্বন রাখার কথা ভাবছি।

 

অন্তর্বর্তী

হয়তো সেই বাগানের কল্পনাও কখনো করেছি
যে-বাগান উজাড় হয়ে গেছে
কিন্তু এমন কোনো গাছের কথা ভাবিনি কখনো
               যার শাখায় ফুটলো না ফুল!

ফুল ফুটুক ফুল ঝরে যাক
মানবী, তার ফাঁকেই চলো আমরা
             ডালে বসা পাখিদের গান শুনি

দড়ির ছেঁড়া খাটে অদৃষ্টের 
          কত যে অন্ধকার নিয়ে শুয়েছি!
কিন্তু এমন কোনো রাতের আকাশ দেখিনি
যেখানে তোমার এলোচুলের ফাঁকে ফুটে নেই
ঝিকিমিকি তারা

অন্ধকার যতই নিবিড় হোক- হোক না
নক্ষত্রেরও পতন হবে জানি
চলো তারই ফাঁকে আমরা
         করতলে চাঁদের উদয় আনি!

 

অন্তরের প্রত্যাখ্যান

রেখে গেলাম
কিছুই নিয়ে যায়নি
সাজিয়ে দিয়ে গেলাম যখন যা দিয়েছিলে

তুমি দেবে এমন কোনো প্রত্যাশাও ছিল না আমার
তবু দিয়ে তো ছিলে

তারপরও
সারা জীবন মন্দিরার মতো বেজে গেল তোমার
অন্তরের প্রত্যাখ্যান
তাই একান্ত মুহূর্তগুলির যে-ছবি এঁকেছিলাম
সে-ছবিতে আমার রঙের প্রলেপ থাকল না কোনো
থাকল শুধুই নীরব, বর্ণহীন, একাকী আর্তনাদ

তবুও ছেড়ে যেতে মন চায়নি-
আগ্রাসী মন আমার!
তোমার সম্মুখে বৃক্ষ হয়ে দাঁড়াবো বলে
আপন অঙ্কুরে আপনি গোপনে ঢেলেছি জল
জানলা খুলে দিয়ে খুলেছি রোদ-বাতাসের পথ
কিন্তু সে-পথে জাগরণের বার্তা এলো না কোনো
এলো না প্রেম, এলো না জীবন

জীবন রে! কেন এমন দণ্ডে দণ্ডে কষাঘাত আমার?

তোমার ঘর, তোমার সংসার
তোমার দরজা- দেয়ালের গায়ে-গায়ে
রেখে গেলাম সেই প্রশ্ন
আর তোমার উদ্ধত চরণে আমার প্রণতি।