Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

অভীক ভট্টাচার্য

তিনটি কবিতা

 

কাঁটাতার

কাঁটাতারের এপার থেকে তোমাকে দেখছি

এখন চারপাশে ক্রমেই গাঢ় হয়ে আসছে অন্ধকার
তোমার ছায়া লম্বা হয়ে এসে পড়েছে কাঁটাতারের ওপর

একটা টফির রাংতা হাওয়ায় পাক খেতেখেতে
নেমে আসছে মাঝখানের ফাঁকা জমিতে, যা আমাদের নয়

আর কাঁটাতারের গায়ে, হাওয়ায় শুকোতে দেওয়া শাড়ির মতো
ঝুলে থাকছে রাংতার ঝলমলে হাসি, যা আমাদের

বার্লেক্স রোমান্স

একটা কাঠের গাছের গা থেকে আর একটা কাঠের গাছে গড়িয়ে পড়ছে জানলা রং করার চটচটে সবুজ, একটা কাঠের ঘড়ির ভেতর কাঠের পেন্ডুলাম দুলে চলেছে সকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত, একটা কাঠের মাথার দুপাশ থেকে একজোড়া কাঠের চোখ তোমার ওপর নজর রাখছে সারাক্ষণ

ধরো, এসব কিছুই যদি আর কিছু প্রমাণ না করে একদিন, ধরো, ঘড়ির ওপর থেকে কাচের আড়াল মুছে যাওয়ার পর যদি দ্যাখো ক্লাউনের লাল ফ্লাফি থেকে হাহাকারের মতো সূর্যাস্ত ঝরে পড়ছে তোমাদের কর্কটক্রান্তির দেশে, বিশাল একটা ঢালু মাঠের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে শনশন হাওয়ার অন্ধকার

ধরো, শেষ বিকেলের লম্বা হয়ে আসা ছায়ার মধ্যে ফাঁকা একটা রাস্তার চৌমাথায় পৌঁছে সেদিন যদি তুমি কাউকেই দেখতে না পাও, যদি চকোলেট আর চকোলেটের মোড়কের হাত থেকে পালাতেপালাতে তুমি পৌঁছে যাও একটা উটপাখির কাছে, উটপাখির কাছ থেকে পালাতেপালাতে পৌঁছে যাও একটা বাওবাব গাছের কাছে, বাওবাব গাছের কাছ থেকে পালাতেপালাতে পৌঁছে যাও ব্রবডিংনাগের কাছে

ধরো, যদি ছুটতে গিয়ে ঢালু মাঠ বেয়ে গড়িয়ে আসা সবুজের আঠায় গেঁথে যায় তোমার পা, যদি কাঠের পেন্ডুলাম থেকে স্প্রিংয়ে ঝোলানো একজোড়া কালো দস্তানা নেমে এসে দুলতে থাকে তোমার চোখের সামনে, যদি অনেকগুলো লোক চারপাশ থেকে ঘিরে ধরে জিগ্যেস করে তোমার দেশ কোথায়

তুমি কি লিখে রাখবে তারপর কীভাবে রাস্তায় চিৎ করে ফেলে থেঁতলে দেওয়া হয়েছিল তোমার চোখ, কীভাবে একের পর এক নখ উপড়ে নেওয়া হয়েছিল তোমার হাতপায়ের আঙুল থেকে, সেই শান্ত সন্ধ্যায়

 

জেনোসাইড

পিস্তলের পরমাশ্চর্য নল থেকে সামান্য দূরে, ঘাসের ওপর, এখন ছড়িয়ে আছে বসন্তের বিকেল, আর, ধরুন, চৈতি খরগোশ লাফিয়ে যাচ্ছে উপমহাদেশের অলৌকিক সূর্যাস্তের দিকে

এই মাউজার পিস্তল বসন্তকাল বিষয়ে, মেটামরফোসিস বঙ্গীয় রেনেসাঁ বিষয়ে গতকালকের ক্লাসে আপনি যাযা বলেছিলেন এখন তার ওপর অপার্থিব এক স্বর্ণাভা যা বিকেলের, আপনার চশমার মোটা কাচ জিভের সামান্য জড়তার ওপর এখন কমলা রঙের অপসৃয়মান আলো যা সূচিত করছে দিবাবসান, আপনার প্রজ্ঞা প্রশ্রয়ী হাসির ওপর গড়িয়ে নামছে ক্যারামেলের মতো আঠালো অন্ধকার, আপনার মাথার ওপর ঝরছে হলুদ লোধ্ররেণু, দেবতার আশীর্বাদের মতো

তর্জনীর সামান্য চাপ আর স্প্রিংয়ের আশ্চর্য কারুকৃতি যখন একএকটি মসৃণ ধাতুখণ্ডকে ছিটকে দেয় সামনে তখন তা এই বসন্তবিকেলের কতখানি বাতাসকে প্রতিস্থাপিত করে, মাটির সমান্তরাল নল থেকে বেরিয়ে বাস ধরে বাড়ি পৌঁছনোর পথে তার সম্ভাব্য ট্র্যাজেকটরি শহরের কোনকোন থানা ছুঁয়ে যায়, সেসংক্রান্ত পূর্বাপর দিশানির্দেশ তৎসম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়ে পরের ক্লাসে আপনি কীকী বলতে পারেন আমরা তা আঁচ করে রোমাঞ্চিত হয়ে উঠি

আপনার প্রগাঢ় ধী আমাদের নাদান বিস্ময়বোধের ওপর, আজকের সন্ধ্যাটুকু, সকুণ্ঠ, নেমে আসতে থাকে