Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

বুবুন চট্টোপাধ্যায়

তিনটি কবিতা

 

প্রান্তর

ওসব পুরনো কথা থাক।
জ্যোৎস্নাতেও জং ধরে গেছে।
কত কালের চাঁদ।
এখন শুধু চাঁদের বিভ্রম।
বয়েস সুতো ছাড়ছে মৃত্যুর দিকে।
এইসময়, এই শ্যাওলা সময়ে বন্ধুরা আয় জড়াজড়ি করে থাকি।
ছায়ারা দীর্ঘ হচ্ছে। ক্রমশ প্রান্তরের দিকে।
ফিকে জ্যোৎস্না পেরিয়ে চল বনপথে যাই।
সেখানে শৈশবকাল। সেখানে রামধনু।
সেখানে নদীর চর।
চাঁদ ছায়া ফেলছে দিগন্তের দিকে।

 

আলো

তখন মাথার মধ্যে এত মেঘ ছিল না। যাব বললেই পায়ের ভেতর দুব্বোঘাস ফুটে উঠত।
বন্ধুরা অদূরেই দাঁড়িয়ে থাকত।
ঝোলা কাঁধে আমরা যেতাম রবীন্দ্রসদন চত্বরে। ভোরবেলা।
তখন ওই আমাদের দিগন্ত।
চড়া রোদে কবিতা আর গান যেন মায়া হরিণী। সবাই ছুঁতে চাইছি ভেতরে সেই নিভৃত হরিণকে।
তখন মাথার মধ্য এত মেঘ ছিল না।
বৃষ্টি হলেও কী ঝলমলে রোদ ছুঁয়ে থাকত আমাদের শরীর কবিতার জন্য।

তখন মাথার মধ্যে এত মেঘ ছিল না।
বন্ধুরা কাছাকাছি ছিল।
রোদ ছিল।
বৃষ্টি ছিল।
একটা বাসে করেই দিগন্তে চলে যাওয়া যেত।

তখন মাথা ভর্তি জোনাকি।
আমাদের প্রত্যেকের নিজস্ব আলো ছিল।
যতই অন্ধকার হোক।

 

বিষাদ

একটা মেঘলা মন আস্তে আস্তে সরে যায়। স্টেশন, বাজার, হাট, বন্দর থেকে একটা মনখারাপ মন দূরে কোনো কার্নিশে রোদ খোঁজে। রোদের কাছে হাঁটু মুড়ে ছায়া হয়ে বসে। নষ্ট বৃষ্টির ছাট লাগে মনখারাপের গায়ে। মেঘের গায়ে তখন প্রিয়জনের মুখ দেখতে দেখতে ভাবে গত বছর বর্ষায় ছুঁয়ে থাকার জন্য একটা ই বর্ষাতি ছিল, একটাই ছাতা ছিল, আর পাশেই দিগন্ত। যখন খুশি রেডরোড পেরিয়ে চলে যাওয়া যেত দিগন্তে। সেসব গত জন্মের সমূহ স্পর্ধা। আজ মনখারাপ মন ভাঙা কার্নিশে ঘাড় গুজে ভাবে বহু ক্রোশ অভিমান পেরিয়ে দিগন্তে যেতে হয়। সেখানেও দারোয়ান আছে। দিগন্তের পালক পরা দারোয়ানরা আধার কার্ড ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেয় না।

বিষণ্ণ মানুষের কোনো পরিচিতি থাকে না, ভিড় ঠেলে চলে যাওয়া ছাড়া।