Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

ওডিশার মিলেটরানি এবং এক দিনবদলের গল্প

চার নম্বর নিউজডেস্ক

 

‘আমরা ভাত ছাড়া একদিন থাকতে পারি। মিলেট ছাড়া পারি না। প্রতিদিন মান্ডিয়া (ফিঙ্গার মিলেট) থেকে বানাই রুটি, ধোসা। এগুলো আমাদের শক্তি বাড়ায়, রোজ রোজ মাঠে গিয়ে কাজ করার শক্তি দেয়’— বলছিলেন রাইমাতি। রাইমাতি ঘিউরিয়া। ওডিশার মিলেটরানি। ৩০টি প্রজাতির মিলেটের সংরক্ষক এবং অসংখ্য কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া ওডিশার ‘মিলেটদিদি’, তরুণী রাইমাতি ঘিউরিয়া ওডিশার কোরাপুটের মেয়ে। সপ্তম শ্রেণির বেশি পড়া এগোয়নি। দরিদ্র, আদিবাসী ভারতবর্ষ। জেলা থেকে পরে পদ্মশ্রীপ্রাপ্ত কমলা পূজারিকে দেখে চাষ শিখেছেন রাইমাতি। কমলার হাতে ধরে দেশজ প্রজাতির চাষে উৎসাহ রাইমাতির। খুব স্বাভাবিক, বিয়ের জন্য একটু হলেও থমকে যাওয়া সেইসব উৎসাহ। ১৬ পেরোলেই বিয়ের পর কুন্দ্রা ব্লকের নাউগুরা গ্রামে গিয়ে গৃহস্থালি সামলানো ছাড়াও অল্প অল্প করে ফিরিয়ে আনছিলেন হারিয়ে যাওয়া উৎসাহ, চাষের কাজ।

কমলার হাত ধরেই চেন্নাইয়ের এনজিও এমএস স্বামীনাথন রিসার্চ ফাউন্ডেশনে যোগ দেওয়া এবং সেখান থেকেই বড় আকারে চাষবাস এবং মিলেট সংরক্ষণ। নিজের মালিকানা বলতে চার একর জমি যেখানে শুধুই দেশজ প্রজাতির ফসলের চাষ হয়। দেশীয় প্রজাতির চাষ ছাড়াও প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানে অগ্রগতি আনার চেষ্টা করেছেন রাইমাতি। ২০০০ সাল থেকেই রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সহায়তায় সিস্টেম অফ রাইস ইন্টেনসিফিকেশন, ধান এবং মিলেট চাষের জন্য লাইন ট্রান্সপ্ল্যান্টিং মেথড, সিড মাল্টিপ্লিকেশন ইন্ডেক্স, জৈব চাষের বিভিন্ন বায়ো ইনপুট ইত্যদি শিখে নিয়েছেন রাইমাতি। এবং এসব মিলিয়েই বর্তমানে ২,৫০০ চাষি রাইমাতির কাছে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন উন্নত মিলেট চাষে।

রাইমাতি একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীও চালাচ্ছেন। মিলেট থেকে ভ্যালু-অ্যাডেড প্রোডাক্ট তৈরিতে ব্যস্ত সেই গোষ্ঠীর মেয়েরা বানাচ্ছেন পকোরা, লাড্ডু। স্থানীয় বাজার ও টিফিন-সেন্টারে বিক্রি করছেন সেইসব। নিজের পৈতৃক জমিতে একটি ফার্ম স্কুল খুলেছেন রাইমাতি। ২০১২ থেকে সেই ফার্ম স্কুলেই চালাচ্ছেন প্রশিক্ষণ।

এসবের পরিণতি ৭২টি প্রজাতির দেশীয় ধান এবং ৩০টি প্রজাতির দেশীয় মিলেটের সংরক্ষণ— যার অন্যতম কয়েকটির নাম কুন্দ্রা বাটি মান্ডিয়া, জসরা, জওনা, জমকালি ইত্যাদি। এই ‘কুন্দ্রা বাটি মান্ডিয়া’ প্রজাতি ওডিশা সরকার থেকে এবছরই সরকারিভাবে বাজারে আসতে চলেছে। এসবের জন্যেই রাইমাতি ঘিউরিয়া আজ ‘ওডিশার মিলেটরানি’। পেয়েছেন ২০১৬ ও ২০১৮ সালে যথাক্রমে আইসিএআর ও টাটা স্টিলের ফুড ফেস্টিভালের বিচারকদের রায়ে শ্রেষ্ঠ চাষির পুরস্কার। এবং পালকে শেষ সংযোজন ২০২৩-এর ৯ সেপ্টেম্বর দিল্লির জি-টোয়েন্টি সম্মেলনে মিলেটের দেশীয় প্রজাতির সমারোহে যোগদান।

‘এত এত মানুষ, আমার ছবি তুলছেন, কথা বলছেন। আমার সত্যি নিজেকে মিলেটরানি মনে হচ্ছে। মিলেট নিয়েই থাকব আমি’— বলছিলেন রাইমাতি।

রাইমাতি ঘিউরিয়ারা তথাকথিত আলো না পাওয়া আদিবাসী ভারতবর্ষকে আলোর দিকে ফেরাক, কৃষির ভিত্তিতে। কারণ ধর্ম না, কৃষিই চেনায় ভারতবর্ষ। দেশীয় ভারতবর্ষ। সনাতন ভারতবর্ষ…