পাঁচটি কবিতা
স্বপ্নদোষ
স্বপ্নের ভেতর মিছিমিছি স্বপ্ন আসে।
গায়ে হেলান দিয়ে বসি।
ফুরিয়ে আসা একটা বছরের মতো
নিঝুম কবরখানা আশেপাশে,
একলা থাকতে থাকতে, থাকতে থাকতে
কারা যেন ঘুমিয়ে পড়েছে সেখানে—
অথচ শহর জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে
অসংখ্য পাতাবাহারি বিয়ের কার্ড!
ঘন সবুজ শ্যাওলার ভেলভেটে মোড়া
যাদের ওয়েডিং গাউনের ফ্রিল
তাদেরকে চিঠি লেখা বারণ,
মনে থাকে যেন!
তোমাকে আর দেখতে পাব না ভাবলেই
দড়াম করে খুলে যায়
আখরোট কাঠের জানালার দুই পাল্লা;
শিরশিরে হাওয়া, লোভাতুর শীতকাঁটা
তখনই মনে করিয়ে দেয়…
তোমার সাথে উচ্ছন্নে যাওয়া বাকি রয়ে গেছে আমার
চিত্রনাট্য
তোমার প্রেমিকের কাঁধ ছুঁয়ে বসে আছি দেখে
চমকে উঠো না যেন।
আপাতত আমি এক ঝানু স্ক্রিপ্টরাইটার
দ্রুত হাতে লিখে নিচ্ছি অপরাধনামা,
কাঠবেড়ালি নয়, পাঁচ টাকার সল্টেড বাদাম
ধরিয়ে দিয়ে গেছে কেউ বাঁ হাতে—
মাঝেমাঝেই সে ছোকরা ঝালিয়ে নিচ্ছে সর্বনাম,
আমিও সুচারু কলমে বদলে দিচ্ছি
কাহিনির আগাপাশতলা, অশান্তিচুক্তি—
লেখার শেষে একটা নড়বড়ে টেবিল এঁকেছি
দুটো হাতলবিহীন চেয়ার, খালি চায়ের কাপ,
পায়ের কাছে বৃদ্ধ কুকুর, ব্যাকড্রপে শহিদমিনার
অক্ষর বোবা হয়ে এলে
আড়মোড়া ভাঙে প্রেমের মসিহা,
চটি ঘষটাতে ঘষটাতে ফিরে আসি আমিও…
তোমার দিকে পাশ ফিরে ঘুমোব বলে
যাত্রা
আরক্ত চোখের সিগনাল ভেঙে
হুড়মুড় করে ঢুকে পড়েছে
সন্দেহপ্রবণ সাইকেল রিকশা
ময়নাতদন্তে পরিচয়হীন, ঈর্ষাকাতর
ঘুমের দড়ি ছিঁড়ে যায় অচিরে
দমকা হাওয়ায় উড়ে আসে
রং-চটা আলোর রুমাল
তোমাকে দেখে হতবাক হয়ে যাই কেমন!
দেখি চশমা ছাড়াই দিব্যি পড়ে ফেলছ
দুপুরপাঁচালি, লাল কাঁকড়ার সফর
দুঃখের খিল এঁটে দাঁড়িয়ে যে এতকাল
তার থেকে ক্রমশ
দূরে সরে যাচ্ছে
অহেতুক বৃষ্টির খসড়া
সবকিছু ধুয়েমুছে সাফ অনন্তজলের ভিতর
এযাবৎ যত অবসাদ, কাগুজে গুজব…
আঙুলে ইশারা ছোড়ো এইবেলা
সন্দেহের তিরধনুক ফেলে রেখে
রুপোলি রিকশায় চেপে বসো
আবর্ত
ফিরে আসি
চকিত রোগা বুকে মেঘমল্লার ঝরোখা—
ঝুলন্ত বিকেলের নিবুরোদ,
ধুলোপায়ে সন্ধের দিকে হাঁটা
বিবশ সিঁদুরে-লাল…
থিরথির অভিমান—
ডুবস্নান, মেঘলা জলের মাঠ
টানটান শিরদাঁড়া নিয়ে
অন্ধকার জ্বেলে বসে যে নেড়া ছাদে,
তার রেখাহীন তালুতে
বাড়ন্ত ঘুমের মুচলেকা
আরও একবার যেন বেজে ওঠে কবিতায়…
ফিরে আসি
সেই তো আবার ফিরে আসি
শ্লোক
আলোর মতো আঙুল যাদের,
তাদের চোখের শাসন
সহ্য করি না মোটে।
বুকের চারপাশে অস্থায়ী বেড়া,
বেড়ার গায়ে হেসেখেলে বাড়ে
লাল নীল হলদে বুনো ফুল…
শেষরাতের নিয়মমাফিক জ্বরে
নিঃস্ব হাত পেতে ঝিমোই—
একটা একটা করে ফুল
ছিঁড়তে
ছিঁড়তে
আলোর আঙুল কপাল জুড়ে
দগদগে শ্লোক লিখে যায়