দিলীপ ঘোষ, মেরিন মুখোপাধ্যায়
সংখ্যার বিচারে ভারতে অপুষ্ট জনতা সবচেয়ে বেশি। শতাংশের বিচারেও, আফ্রিকার কিছু দেশ আর যুদ্ধপীড়িত মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ বাদ দিলে, ভারতে অপুষ্টির হার বেশ বেশি। বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রাগুলির নিরিখেও ভারতের অগ্রগতি রীতিমতো উদ্বেগজনক। এ-পর্যন্ত শেষতম জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্যসমীক্ষার ফলাফলেও (২০১৯-২১) দেখা যাচ্ছে শিশুদের অপুষ্টি দূরীকরণে ভারতের উদ্যোগ খুব ফলপ্রসূ নয়। বিশ্বের সমস্ত অপুষ্ট শিশুদের এক-তৃতীয়াংশের বাস এ-দেশে
কেউ যদি বেশি খাও, খাওয়ার হিসেব নাও,
কেননা অনেক লোক ভালো করে খায় না…—তিন তালের গান, কবির সুমন
দারিদ্র্য ও ভারত
১৫ জানুয়ারি ২০২৪, ভারতের প্রেস ইনফর্মেশন ব্যুরো একটি বিজ্ঞপ্তি[1] জারি করে জানায় ২০১৫-১৬ সাল থেকে এ-যাবৎ এ-দেশে প্রায় ২৪.৮২ কোটি মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছেন। এর পরের তথ্য আরও চমকপ্রদ— ২০১৩-১৪ থেকে ২০২২-২৩ পর্যন্ত দেশের দারিদ্র্যরেখার নিচের জনসংখ্যা কমে আসে ২৯.১৭ থেকে ১১.২৮ শতাংশে। ভারতের যোজনা কমিশনের পরিবর্তিত রূপ নীতি আয়োগের একটি আলোচনামূলক পেপার Multidimensinal Poverty in India since 2005-06[2]-এ এই দাবি করা হয়েছে প্রথম। আর সেখান থেকেই ওই প্রেসবিজ্ঞপ্তি। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (UNDP) তথ্যেও দেখা যায়, দেশে আগের তুলনায় এখন অনেক বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠেছেন।
এর থেকে আমরা ধরে নিতে পারি যে, দারিদ্র্য যখন কমেছে তখন মানুষ আগের চেয়ে বেশি খাবার খাবে, সঠিক পুষ্টিকর খাবার খাবে, ক্যালোরি গ্রহণ বাড়বে আর অপুষ্টির হারও কমবে।
ভারতে সেই স্বাধীনতার পর থেকে নানাবিধ সূচক নিয়ে দারিদ্র্য মাপার চেষ্টা চলেছে। আয়, ব্যয়, ভোগ ইত্যাদির পরে হাল আমলে (২০১৫ সাল থেকে) আলকিরে-ফস্টার পদ্ধতিতে ১২টি সূচকের সাহায্যে বহুমাত্রিক দারিদ্র্য মাপা হচ্ছে। এ-যাবৎ তিনটি জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্যসমীক্ষার (NFHS 3, 4, 5) বছর ধরে অর্থাৎ ২০০৫-০৬, ২০১৫-১৬ আর ২০১৯-২১ সালের জন্য এই বিশেষ দারিদ্র্যসূচক মাপা হয়েছে। উল্লেখ্য এটাই যে ওই ১২টি সূচকের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক পুষ্টিসংক্রান্ত। আরেকটু ভিতরে ঢুকলে দেখা যাবে, পুষ্টির বিষয়টিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে আরও গভীরে— কোনও পরিবারে “০ থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশু[3], ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী মহিলা আর ১৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সী পুরুষ[4]; এদের ক্ষেত্রে যদি তথ্য পাওয়া যায়, যে সে/তিনি কোনওরকম অপুষ্টিতে ভুগছে(ন)”, তা হলে পুরো পরিবারটি বঞ্চিত অর্থাৎ দরিদ্র[5] বা দারিদ্র্যের মাপকাঠিতে পিছিয়ে।
ভারতের পুষ্টিচিত্র
অভ্যন্তরীণ যে সমীক্ষায় আমরা নিয়মিত আমাদের দেশের বা রাজ্যের পুষ্টির মাপকাঠিতে নিজেদের অবস্থানটি দেখতে পাই, তা হল, জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্যসমীক্ষা বা National Family Health Survey (NFHS)। নিচের সারণি ১-এ শেষ দুটি NFHS-এ পাওয়া ভারত আর পশ্চিমবঙ্গের পুষ্টিচিত্রটি দেওয়া হল।
উপরের সারণি-১ আর আগে উল্লিখিত দারিদ্র্য কমার খবর পাশাপাশি রাখলে বোঝা যাচ্ছে দেশে দারিদ্র্য কমেছে মানেই অপুষ্টিও কমেছে এমন নয়। সাধারণ হোক বা রক্তে লৌহকণিকার মতো অনুপুষ্টি, দেশে অপুষ্টির অবস্থা কম বা বেশি খারাপের দিকেই। তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা আরেকটু বেশি খারাপ— এ-রাজ্যে ২০১৫-১৬-র জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্যসমীক্ষা ৪-এর থেকে ২০১৯-২১-এর ৫ নম্বর সমীক্ষায়, সামগ্রিক অপুষ্টির চিত্রটি আরও মলিন হয়েছে। শুধু তাই নয়, অনেক সূচকেই রাজ্যের অবস্থা জাতীয় গড়ের থেকে খারাপ।
আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের পুষ্টিচিত্র
২০১৫ সালে জাতিসংঘের সদস্য ১৯৩টি দেশ বিশ্বব্যাপী স্থিতিশীল উন্নয়নের পথে চলার যে অঙ্গীকার করেছিল, আর যে-লক্ষ্যমাত্রা নিজেদের জন্য ধার্য করেছিল, সেই স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (SDG)[6] সময়কাল শেষ হয়ে এল প্রায় (২০৩০-এ)। সেই অঙ্গীকার যা কিনা ‘অ্যাজেন্ডা ২০৩০’ নামে বহুলপরিচিত, তা শেষপর্যন্ত আমাদের দেশকে উন্নয়নের কোন রাজপথে নিয়ে যায়, তার হিসেবের জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে আর ৫টি বছর। কিন্তু ইতিমধ্যে যে তথ্য হাতে আসছে, সেগুলি একবার দেখে নেওয়া যাক।
আমরা জানি, বিশ্বব্যাপী এই স্থিতিশীল উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা সতেরোটি, যা কিনা আবার ১৬৯টি উপ-লক্ষ্যে বিভক্ত। সারা পৃথিবীতে প্রায় আড়াইশোটি[7] আন্তর্জাতিক সূচক ধার্য করে নিয়ে দেশগুলিকে সেই সূচকের মাপকাঠিতে প্রতি বছর মেপে চলেছে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিভাগ[8]। আর তার ফলাফলের ওপর প্রতি বছর সাস্টেনেব্ল ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট নামে একটি করে প্রতিবেদনও প্রকাশ করে চলেছে জাতিসংঘ, বার্টেল্সমান-স্টিফট্যুং ফাউন্ডেশন, সাস্টেনেব্ল ডেভেলপমেন্ট সলিউশন্স নেটওয়ার্ক আর কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস[9]। সেই তথ্যে যাওয়ার আগে, আমরা একটু বিশেষভাবে দেখে নেব বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের দুই নম্বর লক্ষ্যটিকে (SDG-2), যেটি বিশ্বের ক্ষুধানিবারণের লক্ষ্য বলে বেশি পরিচিত। এই লক্ষ্যটিতে অগ্রগতি মাপার আন্তর্জাতিক সূচক ১৫টি— যার মধ্যে ৬টি অপুষ্টি, খাদ্যনিরাপত্তা ও খাদ্যবৈচিত্র্যের মাপকাঠি।
এই বাৎসরিক প্রতিবেদনের ছবিতে ভারতে ক্ষুধার এসডিজি-টিকে কেমন দেখায় সেটা নিচের সারণিতে দেওয়া হল (২০১৮ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত)।
সারণি-২ বলছে ভারতের ক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবেই সাস্টেনেব্ল ডেভেলপমেন্ট-দুই নম্বর লক্ষ্যটি ২০১৮ থেকেই খুব ঝুঁকিপূর্ণ (Major challenges remain) অবস্থাতে রয়ে গেছে; আর ভালোর দিকে তার অগ্রগতিও প্রায় থেমে গেছে (Stagnating), ২০২১ থেকে। ২০১৮ থেকে ২০২০ তার অগ্রগতি ছিল মাঝারি রকমের; কিন্তু কোভিড মহামারির পর অগ্রগতি প্রায় নেই বললেই চলে। ২০৩০-এ তাই অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছনোর কোনও আশু সঙ্কেত নেই।
এবার আমরা দেখে নেব SDG-2-র যে সূচকগুলি মেপে, ক্ষুধার লক্ষ্যে দেশের এমন অবস্থা, তার মধ্যে থেকে শুধুমাত্র (অ)পুষ্টির সূচকগুলি।
সারণি ৩: আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে অপুষ্টির সূচকগুলি (ভারত)[10]
সারণি-৩ থেকে আমরা দেখছি, সাধারণভাবে জনবিন্যাসে অপুষ্টির হার কমলেও, কমার হারটি আশানুরূপ নয় (৭ বছরে এক শতাংশও নয়)। শিশুদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি অপুষ্টি (উচ্চতা অনুপাতে ওজন) বরং বাড়ছে। একেবারে নতুন বিপদ হল অতি-পুষ্টির মতো অপুষ্টি ক্রমশ বাড়ছে (৩.৯ শতাংশ থেকে ৭.৩ শতাংশ)। আর দেশের এক-চতুর্থাংশেরও কম শিশুর খাবারের থালাটি পুষ্টির সবকটি উপাদানের শর্ত পূরণ করে।
কেন এমন অবস্থা
সংখ্যার বিচারে ভারতে অপুষ্ট জনতা (সব বয়সের মধ্যে অপুষ্টি ধরে নিয়ে) সবচেয়ে বেশি[11]। শতাংশের বিচারেও, আফ্রিকার কিছু দেশ আর যুদ্ধপীড়িত মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ বাদ দিলে, ভারতে অপুষ্টির হার বেশ বেশি। বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রাগুলির নিরিখেও ভারতের এসডিজি ২ (ক্ষুধার নিবারণ), ৩ (সুস্বাস্থ্য ও সমৃদ্ধি) এবং ৫-এর (লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ) অগ্রগতি রীতিমতো উদ্বেগজনক[12]। এ-পর্যন্ত শেষতম জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্যসমীক্ষার ফলাফলেও (২০১৯-২১) দেখা যাচ্ছে শিশুদের অপুষ্টি দূরীকরণে ভারতের উদ্যোগ খুব ফলপ্রসূ নয়। বিশ্বের সমস্ত অপুষ্ট শিশুদের এক-তৃতীয়াংশের বাস এ-দেশে[13]। এমনকি অনুপুষ্টির ব্যাপারেও দেশের ৬৭ শতাংশ পাঁচ বছরের নিচে শিশু রক্তাল্পতায় ভুগছে। ১৫-১৯ বছরের কিশোরীদের প্রায় ৬০ শতাংশ রক্তাল্পতায় ভুগছে। এবং যতজন গর্ভবতী হচ্ছেন তার প্রায় অর্ধেকেরও বেশি (৫২.২ শতাংশ) রক্তাল্পতায় ভোগেন। তার ওপর পুষ্টিসংক্রান্ত জ্ঞান এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাসের অভাবে ইদানিংকালে বাড়ছে অতিপুষ্টির বিপদ— মহিলা, পুরুষ উভয়েরই প্রায় এক-চতুর্থাংশ (যথাক্রমে ২৪ শতাংশ ও ২২.৯ শতাংশ) মেদাধিক্য এবং অতিস্থূলতায় ভুগছেন[14]। যার ফলাফল পরিণত বয়সে উচ্চ রক্তচাপজনিত অসুখ, রক্তে শর্করা বৃদ্ধি, হৃদযন্ত্রের সমস্যা, বা যকৃতে মেদাধিক্যের সম্ভাবনা। সব মিলিয়ে এই বিপুল জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ কোনও না কোনও কারণে অপুষ্ট। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে দারিদ্র্য, অসাম্য, লিঙ্গবৈষম্য, গার্হস্থ্য হিংসা, আর্থসামাজিক টানাপোড়েন, সাক্ষরতার অভাব, অপ্রতুল স্বাস্থ্যবিধান ব্যবস্থা, নানারকম স্বাস্থ্যপরিষেবা পাওয়ার খামতি, কম বয়সে বিয়ে ও সন্তানধারণ, বারংবার সংক্রমণজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়া, এবং সঠিক পুষ্টিসংক্রান্ত জ্ঞান ও সঠিক অভ্যাস না থাকা— এই একাধিক কারণ মিলিতভাবে অত্যধিক অপুষ্টির কারণ।
অপুষ্টির অর্থনীতি
২ জুলাই ২০২৫-এ প্রেস ইনফর্মেশন ব্যুরোর জারি করা একটি বিজ্ঞপ্তিতে[15] দেখা যাচ্ছে জাতীয় নমুনা সমীক্ষা সংস্থার (NSSO) ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ সালে করা পারিবারিক ভোগ্যপণ্যের ওপর খরচের সমীক্ষায় (Household Consumption Expenditure Survey) উঠে এসেছে ভারতে, গ্রাম আর শহর— দুই জায়গাতেই মাথাপিছু ক্যালোরি খাওয়ার পরিমাণ কমেছে। এমনকি ১৯৭২-৭৩ সাল থেকে টানা চার দশক ধরে গ্রামীণ ভারতে এই ক্যালোরি গ্রহণ কমতেই থেকেছে। ১৯৭২-৭৩ সালে যেখানে একজন গ্রামবাসী গড়ে দিনে ২২৬৬ কিলোক্যালোরি খেতেন, ২০০৯-১০ সালে তা নেমে দাঁড়ায় ২০২০ কিলোক্যালোরিতে। শহরে একই সময়ে তা ২১০৭ থেকে নেমে হয় ১৯৪৬ কিলোক্যালোরি। ২০০৯-১০ থেকে ২০১১-১২ মাথাপিছু ক্যালোরি খাওয়া একটু বাড়লেও, ২০২২-২৩ থেকে ২০২৩-২৪-এ সেটা আবার নেমে যায়— গ্রামে ২২৩৩ কিলোক্যালোরি থেকে ২২১২ কিলোক্যালোরিতে; শহরে ২২৫০ কিলোক্যালোরি থেকে ২২৪০ কিলোক্যালোরিতে।
এইবার আমরা দেখব, এই সময়ে কি ভারতে (গ্রাম বা শহরে) মানুষের আয় কমেছে? আয়ের পরিমাণ সঠিক পাওয়া না গেলেও আমরা সেটা বুঝতে পারি মাসিক মাথাপিছু ভোগ্যপণ্যে ব্যয়ের মাধ্যমে [Monthly Per Capita Consumption Expenditure (MPCE)][16], জাতীয় আয় (জিডিপি)-র মাধ্যমে আর সেই জাতীয় আয়ের মাথাপিছু পরিমাণ বাড়ছে না কমছে সেই হিসেব দেখে[17]।
আর এই সময়ে জাতীয় আয় বৃদ্ধির[18] হারটাও দেখা যাক।
ওপরের রেখাচিত্রে পরিষ্কার যে একমাত্র ২০২০-২১-এর কোভিড মহামারির বছরটা বাদ দিলে, দেশের আয়ের বাৎসরিক বৃদ্ধির হার কিন্তু মোটের ওপর ধনাত্মকই ছিল, যদিও প্রতি বছরের হার তার আগের বছরের থেকে সবসময় বেশি হয়নি।
এবার আমরা দেখে নিই, এই সময়ে দেশে মাথা পিছু আয়[19] বেড়েছে কি না।
রেখাচিত্র-২ থেকে দেখা যাচ্ছে যে ২০১৯ থেকে ২০২০-র মধ্যে দেশের মাথাপিছু আয় কিছুটা কমলেও, মোটের ওপর ১৯৯৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত সেটি বছর বছর বৃদ্ধিই পেয়েছে।
অর্থাৎ আমরা দেখলাম, মাসিক মাথাপিছু ভোগ্যপণ্যে ব্যয়, জাতীয় আয়বৃদ্ধির হার আর মাথাপিছু আয়— এই সবকটি সূচকই কিন্তু দেশের মানুষের আয়বৃদ্ধিরই প্রমাণ দিচ্ছে।
তাহলে, মাথাপিছু ক্যালোরি খাওয়ার পরিমাণ কমল কেন?
এর উত্তর খোঁজার আগে আমরা দেখে নেব, এই সময়ে দেশের মানুষের যে মাসিক মাথাপিছু ভোগ্যপণ্যে ব্যয়, সেটি খাবারের ওপর কত শতাংশ খরচ হয়েছে, আর খাবার নয় এমন পণ্যে কত শতাংশ খরচ হয়েছে।
ওপরের সারণি-৫ থেকে এটা দেখা যাচ্ছে যে ১৯৯৯-২০০০ সাল থেকে ২০২৩-২৪, জাতীয় নমুনা সমীক্ষায় উঠে আসা তথ্য অনুযায়ী, ভারতের গ্রামে ও শহরে দুই ক্ষেত্রেই খাবারের ওপর মানুষ কম খরচ করেছেন— গ্রামে সেটা নেমে এসেছে ৫৯.৪০ শতাংশ থেকে ৪৭.০৪ শতাংশে; শহরে ৪৮.০৬ শতাংশ থেকে ৩৯.৬৮ শতাংশে।
এবার আমরা দেখব, এই সময়ে খাবারের ওপর খরচ কমলেও, মানুষ কী খাচ্ছিলেন? অনেক রকমের খাবারের মধ্যে থেকে আমরা বেছে নিয়েছি দানাশস্য (চাল, গম, ভুট্টা, ওট্স, বার্লি, বাজরা ইত্যাদি cereal), নানারকমের ডাল (pulses), পশুজাত প্রোটিন (মাছ, মাংস, ডিম) আর বাজার থেকে প্রক্রিয়াজাত খাবারগুলি (beverage and processed food)। ওই আগে উল্লিখিত জাতীয় নমুনা সমীক্ষার প্রতিবেদন থেকেই নিচের সারণি তৈরি করা হল।
ওপরের সারণি-৬ থেকে এটা স্পষ্ট যে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের দানাশস্য আর ডাল-জাতীয় খাবার খাওয়ার খরচ এবং প্রবণতা কমেছে উল্লেখজনকভাবে। অন্যদিকে বাজারে চটজলদি পাওয়া যায় এমন প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার খরচ এবং প্রবণতা বেড়েছে উদ্বেগজনকভাবে। ১৯৯৯-২০০০ সাল থেকে ২০২৩-২৪-এ গ্রামে দানাশস্যের ওপর ব্যয় (মাসিক মাথাপিছু খরচের শতাংশে) কমেছে ২২.১৬ শতাংশ থেকে ৪.৯৭ শতাংশে। শহরে সেটা ১২.৩৫ শতাংশ থেকে ৩.৭৪ শতাংশে। এই সময়ে গ্রামীণ ভারতে ডাল বা ডালজাতীয় খাবারে খরচ কমেছে ৩.৮১ শতাংশ থেকে ১.৭৮ শতাংশে। শহরে ২.৮৪ শতাংশ থেকে ১.২২ শতাংশে। পশুজাত (প্রোটিন) খাবারে খরচ অবশ্য গ্রাম, শহর দুই জায়গাতেই বেড়েছে। অন্যদিকে বাজারের প্রক্রিয়াজাত খাবারের ওপর ব্যয় বেড়েছে ৪.১৯ শতাংশ থেকে ৯.৮৪ শতাংশে (গ্রামে); আর ৬.৩৫ শতাংশ থেকে ১১.০৯ শতাংশে (শহরে)।
এখান থেকে বেরিয়ে আসছে তিনটে প্রশ্ন—
এক. আয়বৃদ্ধি বা ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কি মানুষের খাবারের ওপর খরচ কমে?
দুই. আয়বৃদ্ধির সঙ্গে কি মানুষের ক্যালোরি বা পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা কমে?
তিন. আয়বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে খাদ্যাভ্যাসও কি বদলে যায়?
এই প্রশ্নগুলির অনুষঙ্গে মনে পড়ল দারিদ্র্য (সে যেরকমভাবেই মাপা হোক না কেন— কম আয় হোক বা ব্যয়, বা সক্ষমতার অভাব)–>অসাম্য–>ক্রয়ক্ষমতা–>খাদ্যনিরাপত্তা–>পুষ্টির যোগাযোগের বিষয়ে ২০০৯ সালে লেখা অর্থনীতিবিদ অ্যাঙ্গাস ডিটন আর জঁ দ্রেজের একটি নিবন্ধের[20] কথা— যেখানে ১৯৮৩ থেকে ২০০৪-০৫ পর্যন্ত জাতীয় নমুনা সমীক্ষার প্রতিবেদন, ১৯৭৫ থেকে ২০০৪-০৫ পর্যন্ত জাতীয় পুষ্টি মনিটরিং ব্যুরো, আর তখনও পর্যন্ত সম্পন্ন হওয়া তৃতীয় জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্যসমীক্ষা এবং ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ থেকে তথ্য নিয়ে এঁরা দেখিয়েছিলেন—
ক. ১৯৮৩ থেকে ২০০৮, এই পঁচিশ বছরে ভারতীয়দের মধ্যে মাথাপিছু ক্যালোরি খাওয়ার পরিমাণ উল্লেখজনকভাবে কমেছে। এবং গ্রামীণ ভারতে এই কম খাওয়ার পরিমাণ শহরের চেয়ে অনেকটাই বেশি। আর সম্পন্ন পরিবারগুলোতে এই কম খাওয়ার ঝোঁকও বেশি। সেক্ষেত্রে আমাদের আরেকবার ক্যালোরিনির্ভর দারিদ্র্যরেখাটির দিকে নজর দেওয়া উচিত।
খ. শুধু ক্যালোরি নয়, এই কম খাওয়ার পরিমাণ প্রোটিন এবং অন্যান্য পুষ্টিকর খাদ্যের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য— শুধু বেড়েছে স্নেহ বা ফ্যাটজাতীয় খাবার খাওয়ার প্রবণতা। বিজ্ঞাপন, শহুরে প্রভাব, সম্পন্ন পরিবারগুলির খাদ্যাভ্যাসকে নকল করার একটা প্রবণতা এক্ষেত্রে কাজ করতে পারে।
গ. মাথাপিছু আয় বা অথবা খাবারের দাম কম/বেশির সঙ্গে এই কম ক্যালোরি, প্রোটিন খাওয়ার কোনও আপাত যোগাযোগ নেই। বরং এই সময়ে দেখা যায়, মাথাপিছু আয় বেড়েছে আর অন্যান্য পণ্যের তুলনায় খাবারের দাম কম বেড়েছে। তা সত্ত্বেও গরিব ঘরের মাথাপিছু ব্যয় (MPCE) হোক বা সম্পন্ন বাড়ির— সব ক্ষেত্রেই এই মাথাপিছু ক্যালোরি খাওয়া কমেছে।
ঘ. হয়তো (যদিও স্পষ্ট নয়), দেশের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নতি, পরিস্রুত পানীয় জলের জোগান, উন্নত যাতায়াতব্যবস্থা, আরও বেশি বেশি টিকাকরণের হার, ব্যক্তিগত যানবাহনের মালিকানা এবং কায়িক শ্রমনির্ভর কাজের ধরন থেকে কৃষিতে যন্ত্রনির্ভর কাজ আর শিল্পে, পরিষেবায় বৌদ্ধিক শ্রমভিত্তিক কাজের দিকে চলে যাওয়া একটা অর্থব্যবস্থায়, ক্যালোরি খাওয়ার প্রবণতা কমই থাকে। উদাহরণস্বরূপ, ১৭৭৫ থেকে ১৮৫০-এর গ্রেট ব্রিটেন— যেখানে মজুরি বাড়লেও খাদ্যের চাহিদা তেমন বাড়েনি। এবং ১৯৮০ থেকে ৯০-এর চিন— যেখানে স্বাস্থ্যের সূচকগুলির প্রভূত উন্নতি দেখা গেলেও ক্যালোরি খাওয়ার প্রবণতা কম দেখা গেছিল।
ঙ. নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্যালোরি খাওয়ার সঙ্গে পুষ্টির বা অপুষ্টির সূচকগুলির কোনও গড় প্রবণতা টানা বিপজ্জনক। কম ক্যালোরি নিশ্চয়ই একটা মানুষকে অপুষ্টির দিকে ঠেলে দেবে; কিন্তু বিভিন্নরকমের কাজে জড়িত, বা বিভিন্ন বয়সী মানুষের বিভিন্ন ধরনের ক্যালোরির প্রয়োজনীয়তা আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। তার সঙ্গে এটাও খেয়াল রাখতে হবে যে এ-দেশে ক্যালোরি খাওয়ার পরিমাণ কমলেও অপুষ্টি দূরীকরণ হয়নি। এবং এর সঙ্গে প্রোটিন, ভিটামিন, অনুপুষ্টি আর স্নেহজাতীয় খাবারের পরিমাণ এবং খাদ্যবৈচিত্র্যের কথাও আমাদের ভেবে দেখা উচিত। ক্যালোরি কতটা প্রয়োজন, তার একটা স্ট্যান্ডার্ড নর্ম তৈরি করা সেইজন্য কঠিন।
চ. উন্নয়নের সঙ্গে ক্যালোরির যোগাযোগ একমাত্রিক নয়, বহুমাত্রিক। উন্নতির সঙ্গে কাজের ধরন পাল্টানো, কায়িক শ্রম থেকে বৌদ্ধিক শ্রমের দিকে যাওয়ার একটা প্রবণতা দেখা যায় পৃথিবী জুড়ে— সে-ক্ষেত্রে কিন্তু বেশি ক্যালোরি খাওয়ার প্রবণতা কমবে।
ছ. আমাদের দেশে ক্যালোরি খাওয়ার সঙ্গে ফলাফল-সংক্রান্ত তথ্যের অভাব আছে (calorie intake-focussed data to outcome-focussed indicators)। যেমন বোঝা যায় না, যথেষ্ট সম্পন্ন পরিবারের সন্তানও কেন বয়স-অনুপাতে খর্বকায় হয় (স্টান্টিং) যা কিনা একটি দীর্ঘমেয়াদি অপুষ্টির সূচক। এ-বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।
জ. ভারতের পুষ্টিসংক্রান্ত তথ্যে বেশ কিছু অমীমাংসিত ধাঁধা আছে। যেমন ধরা যাক অপুষ্টি থেকে সুপুষ্টিতে যাওয়ার গতি। একাধিক জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্যসমীক্ষার দিকে চোখ রাখলে বোঝা যায়, এ-দেশে বয়স অনুপাতে কম ওজনের শিশু, বা কম জন্ম-ওজনের শিশু, বা মহিলাদের মধ্যে রক্তাল্পতার হার প্রায় যেন দশকের পর দশক স্থির হয়ে আছে। বা ভারতীয়দের গড় উচ্চতা অন্যান্য দেশের তুলনায় খুবই কম হারে বাড়ছে। চরম অপুষ্টি বা তজ্জনিত অসুখের ঘটনা কমলেও, বয়স অনুপাতে কম ওজনের শিশু, সব বয়সের মধ্যে রক্তাল্পতা ভারতীয়দের মধ্যে থেকেই যাচ্ছে। দেশের দ্রুত অর্থনৈতিক বৃদ্ধি কেন সুপোষণের ফল দিল না, সেটা আরও গভীরে খোঁজা প্রয়োজন।
অপুষ্টির রাজনীতি
যে-প্রশ্নটা আমরা করেও করি না, এবার আসি সেই প্রশ্নে— ভারতে ক্যালোরি খাওয়ার পরিমাণ এই যে পড়তির দিকে, এর সঙ্গে কি ক্রয়ক্ষমতার কোনও যোগাযোগ আছে? বা, আরও সরাসরি, দেশের অধিকাংশ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কি ইদানিং কমেছে যে কারণে খাদ্যের বা ক্যালোরি গ্রহণের পরিমাণও কমেছে? অর্থনীতিবিদ উৎসা পট্টনায়েক অনেকদিন ধরেই বলে আসছেন যে দারিদ্র্যসীমাকে ক্যালোরি খাওয়ার সঙ্গে না মিলিয়ে অন্য সূচকে বেঁধে দেওয়ায় প্রকৃত দরিদ্র মানুষের সংখ্যা অনেকটাই আড়ালে থেকে যাচ্ছে। উৎসা (২০০৪[21], ২০০৭[22]) বলেছেন, ভারতে, বিশেষ করে কৃষিক্ষেত্রে, ক্ষুধার বঞ্চনা বাড়ছে কারণ মানুষের ক্যালোরি বা বকলমে খাবার কিনে খাওয়ার ক্রয়ক্ষমতা কমছে। কৃষিক্ষেত্রে আয় কমে যাওয়া, জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়া আর বেকারত্ব এই সমস্যাকে প্রকট করছে আরও। ২০০৫-এ অর্থনীতিবিদ প্রণব সেন খোঁজার চেষ্টা করেন[23]— কেন দারিদ্র্যসীমার কাছাকাছি থাকা মানুষজন বেঁধে দেওয়া ২৪০০ (গ্রামীণ) ক্যালোরি আর ২১০০ (শহরকেন্দ্রিক) ক্যালোরির কম খাচ্ছেন। তিনি দেখান পারিবারিক খাদ্যের বাজেটে ইদানিং টান পড়েছে কারণ খাবার বাদে পরিবারের প্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিসের দাম বেড়েছে। হয়তো এটা সম্পূর্ণ ঘটনা নয়— আরও অনেক কারণ হয়তো কম খাওয়ার প্রশ্নে জড়িয়ে আছে। তাই এ-বিষয়ে তর্কের অবকাশ আছে।
কিন্তু ২০২৪ সালে সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্সে ভারত রয়েছে ১২৭টি দেশের মধ্যে ১০৫তম স্থানে।
ইতিমধ্যে ২০২৫-এ জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (Food and Agriculture Organisation বা FAO) তাদের বাৎসরিক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে— “THE STATE OF FOOD SECURITY AND NUTRITION IN THE WORLD”। তাতে এবারের থিম— Addressing High Food Price Inflation for Food Security and Nutrition। সেই প্রতিবেদনে ভারতের অপুষ্টির মাত্রা আগের বছরগুলিতে (আগের প্রতিবেদনে) যা ছিল, তার চেয়ে কমলেও, তা এখনও যথেষ্ট উদ্বেগজনক। অপুষ্টি, খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা, রক্তাল্পতা, নবজাতকের কম ওজন— এসব সূচকে ভারত পিছিয়ে আছে প্রতিবেশী অনেক দেশের থেকে। ২০২২-২৪ এই সময়ে ভারতে সামগ্রিক অপুষ্টির হার ছিল ১২.০ শতাংশ (২০২০-২২-এ ১৬.৬ শতাংশ; ২০২১-২৩-এ ১৩.৭ শতাংশ)। তুলনায় বাংলাদেশে ১০.৪ শতাংশ (২০২১-২৩-এ ১১.৯ শতাংশ), শ্রীলঙ্কায় মাত্র ৭.৪ শতাংশ (২০২১-২৩-এ ছিল আরও কম ৪.১ শতাংশ)। সবচেয়ে চিন্তার বিষয়, ২০২৩-এ ভারতের ১৫-৪৯ বছরের মহিলাদের মধ্যে ৫৩.৭ শতাংশই রক্তাল্পতায় ভোগেন— যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ। পাকিস্তানে এই হার ৪৬.৫ শতাংশ, বাংলাদেশে ৩৭.৬ শতাংশ। চিন ও ভিয়েতনামে তা নেমে এসেছে যথাক্রমে ১৫.৬ ও ২০.৫ শতাংশে[24]। সর্বোপরি ভারতে প্রায় ২৭.৪ শতাংশ শিশু কম জন্ম-ওজন নিয়ে জন্মাচ্ছে। এবং সারা পৃথিবীর সঙ্গে সঙ্গে ভারতেরও বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের লক্ষ্য ২-এর টার্গেট ২.১ (ক্ষুধা, খাদ্যে অসাম্য ও খাদ্যনিরাপত্তার অভাব ঘোচানো) আর টার্গেট ২.২-তে (সব রকম অপুষ্টি দূর করা) পৌঁছনো প্রায় দুঃসাধ্য মনে হচ্ছে। চিন্তার কথা!
স্বাস্থ্যকর সুষম খাদ্য আর ক্রয়ক্ষমতা
মূল প্রশ্নটা ছিল, দেশের অধিকাংশ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কি ইদানিং কমেছে? কীসের ক্রয়ক্ষমতা? খাবার কিনে খাওয়ার। কোন খাবার? একটি স্বাস্থ্যকর সুষম খাবার! তাহলে দেখে নিই কাকে বলে স্বাস্থ্যকর সুষম খাবার।
একটি স্বাস্থ্যকর সুষম খাদ্য বা ডায়েট চারটি উপাদান নিয়ে গঠিত—
- খাদ্যের বৈচিত্র্য— একেকটি খাদ্য-গ্রুপের মধ্যে এবং এক গ্রুপ থেকে অন্য গ্রুপের মধ্যে,
- খাদ্যের পর্যাপ্ততা— প্রয়োজনমতো সমস্ত দরকারি পুষ্টি সেই খাদ্যটিতে পর্যাপ্ত আছে কিনা,
- মিতাচারিতা— সেইসব খাদ্যের ব্যাপারে যা স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ ফলাফলের সঙ্গে সম্পর্কিত, এবং
- ভারসাম্য— সেই খাবার থেকে এনার্জি এবং ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট কী এবং কতটা পাওয়া যাচ্ছে।[25]
এবার, স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাদ্যের দাম বা খরচ [Cost of a healthy diet (CoHD)] হল, সেই দেশের সম্ভাব্য সবচেয়ে সস্তা কিন্তু স্বাস্থ্যকর, সুষম খাদ্য বা ডায়েট (যা কিনা মানবশরীরের প্রয়োজনীয় এনার্জি এবং পুষ্টির চাহিদাকে পূরণ করে)[26] কেনার দাম বা খরচ— সাধারণত সেটি স্থানীয়ভাবে পাওয়া যায় এরকম বিভিন্ন খাবারের সমন্বয়ে তৈরি একটি ডায়েট। এই খরচকে তারপর জাতীয় স্তরে আয়ের বণ্টনের সঙ্গে তুলনা করা হয়— তার আগে আয়ের কত শতাংশ খাদ্য নয় এমন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও পরিষেবা কেনার জন্য ব্যয় হচ্ছে দেখা হয়— এবং তার ফলে, দেশের কত শতাংশ আর সংখ্যক মানুষ সেই সবচেয়ে সস্তা কিন্তু পুষ্টিকর খাবারের জন্য ন্যূনতম ব্যয়টুকুও করতে পারছেন না সেটা বের করা হয়।
সেই সূচকগুলি হল— prevalence of unaffordability (PUA) বা ক্রয়ক্ষমতার সাধ্যের বাইরে থাকা জনসংখ্যার হার, এবং number of people unable to afford a healthy diet (NUA) বা কতজন মানুষ সেই সবচেয়ে সস্তা খাবারটিও কিনতে পারছেন না তার সংখ্যা।
এত কিছু করার পর খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এই বছরের প্রতিবেদন ভারতের জন্য অঙ্ক করে দুটি চাঞ্চল্যকর খবর দেয়—
১. ২০১৭ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে ভারতে ওই সবচেয়ে সস্তা পুষ্টিকর, স্বাস্থ্যকর খাবারের খরচ বেড়েছে মাথাপিছু ২.৭৭ পিপিপি ডলার (প্রতিদিন) থেকে ৪.০৭ পিপিপি ডলার[27] (প্রতিদিন)। অর্থাৎ পুষ্টিকর সুষম খাবারের দাম কিন্তু বাড়ছে।
এখন সাধারণত, বিশ্বব্যাঙ্কের হিসেবে ১ পিপিপি $ ≈ ₹২০.৩৮, অর্থাৎ আমেরিকায় ১ ডলারে যা কিনতে পাওয়া যায়, ভারতে সেই একই জিনিস কিনতে লাগে ২০.৩৮ টাকা।
তাই জনপ্রতি, দিনপ্রতি ৪.০৭ পিপিপি ডলার ≈ ₹২০.৩৮ x ৪.০৭ ≈ ₹৮২.৯৫ জনপ্রতি, দিনপ্রতি।
আর তাই ৫ জনের একটি পরিবারে বাৎসরিক ওই সবচেয়ে সস্তা কিন্তু পুষ্টিকর খাবারটি কেনার খরচ = ₹৮২.৯৫ x ৫ x ৩৬৫ = ₹ ১,৫১,৩৮৩.৭৫।
এবং,
২. ২০২৪ সালে এ-দেশের জনসংখ্যার ৪০.৪ শতাংশের ওই সবচেয়ে সস্তার স্বাস্থ্যকর খাবারটাও কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নেই। সংখ্যার বিচারে সেটি ৫৮ কোটি ৬৫ লক্ষ মানুষ।[28]
এ তো গেল আন্তর্জাতিক সংস্থার হিসেব। এবার এই বিষয় নিয়ে ২০২০-তে করা একটি ভারতীয় গবেষণা একটু দেখে নেওয়া যাক। এমনিতে ভারতের মতো বিশাল দেশে যেখানে এতরকমের খাদ্যাভ্যাস বর্তমান, সেখানে গোটা দেশের জন্য একটি মাত্র সুষম, স্বাস্থ্যকর খাদ্য-বাস্কেট তৈরি করা মুশকিল। কিন্তু ২০২০-তে শিবানী কাচওয়াহা, পূর্ণিমা মেনন এবং আরও কয়েকজন দেশি-বিদেশি গবেষক মিলে উত্তরপ্রদেশের উন্নাও আর কানপুর-দেহাত জেলার ২৪টি গ্রামপঞ্চায়েতে মাতৃত্বকালীন পুষ্টিসংক্রান্ত একটি প্রকল্পের কাজের অংশ হিসেবে এই গবেষণাটি[29] করেন। Cost of the Diet (CotD) বা সুষম খাদ্যের খরচ জানতে জনগোষ্ঠীর, গর্ভবতী মহিলার, এবং তাদের পরিবারের খাদ্যাভ্যাস (কী খান আর কতবার খান), আর স্থানীয় বাজারে পাওয়া যায় এমন খাদ্যের জোগান আর চাহিদা নিয়ে গবেষণাটি করা হয়। গবেষণাটির উদ্দেশ্য ছিল—
১. পরিবারগুলি এবং পরিবারে গর্ভবতী মহিলাদের পুষ্টিকর পথ্যে (ডায়েট অর্থে) বিভিন্ন খাদ্যের ন্যূনতম দাম কত দেখা,
২. পরিবারগুলির সুষম খাদ্যের নাগাল পেতে অর্থনৈতিক বাধা কী কী আছে (আয়-সহ) দেখা, এবং
৩. বাড়িতে উৎপন্ন খাবার (কিচেন গার্ডেন) আর নানারকম খাদ্যসুরক্ষা বা সামাজিক সুরক্ষার স্কিমের মাধ্যমে পুষ্টির চাহিদা আর তার আর্থিক জোগানের যে ফাঁক তা কতটা ভরাট করা যায় তা মাপা।
আয়ের কত শতাংশ খাদ্য ছাড়া অন্য ভোগ্যপণ্যে ব্যয় হয়, সেটাও ছিল এই গবেষণায়— আয়ের কতটুকু খাবারে ব্যয় হয় সেটা বুঝতে। আয় বুঝতে ব্যবহার করা হয় জাতীয় নমুনা সমীক্ষার মাসিক মাথাপিছু ভোগ্যপণ্যের ওপর ব্যয়ের পরিমাণ— আর তার ওপর পরিবারগুলোকে ভাগ করা হয় চারটি ভাগে— অতি গরিব, গরিব, মধ্যবিত্ত আর উচ্চবিত্ত-তে। গড় পরিবারপিছু সদস্য সংখ্যা ধরা হয় ছয়। সুষম খাদ্য/পথ্যতালিকা, বাজারে উপলব্ধ কাঁচা খাবারের খাদ্যগুণ, পুষ্টিগুণ, বিভিন্ন বয়সী মানুষদের পুষ্টির চাহিদার আদর্শ কী হতে পারে— সে-সব মাপার জন্য ব্যবহার হয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, আর ভারতের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউট্রিশনের নানারকম গাইডলাইন। বাজারে পাওয়া ১৩৭টি[30] খাদ্যবস্তুর প্রত্যেকটির ১০০ গ্রাম ওজনে তাদের কী দাম হতে পারে সেটা ঠিক করা হয়। খাওয়ার ধরন বুঝে একটি খাদ্যাভ্যাসের স্কোরকার্ড তৈরি হয়। বাজারের দাম, খাওয়ার অভ্যাস, পরিবারের আয়তন, আর বয়স অনুযায়ী পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা বুঝে সর্বনিম্ন দামভিত্তিক চারটি আদর্শ খাদ্যতালিকা তৈরি করা হয়—
১. শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় ক্যালোরিটুকু পূরণ হবে, এমন একটি শুধু কার্বোহাইড্রেট-সম্বলিত দানাশস্যনির্ভর তালিকা;
২. শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় ক্যালোরি, প্রোটিন আর স্নেহজাতীয় চাহিদাটুকু পূরণ হবে এমন একটি ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট-সর্বস্ব তালিকা;
৩. প্রয়োজনীয় ক্যালোরি, প্রোটিন, স্নেহজাতীয় পদার্থ আর ১৩টি অনুপুষ্টি নিয়ে (মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট) একটি পুষ্টিকর খাদ্যের তালিকা; আর,
৪. খাদ্যের পছন্দ-অপছন্দ আর অভ্যাস ধরে নিয়ে সমস্ত ক্যালোরি, প্রোটিন, স্নেহজাতীয় পদার্থ আর ১৩টি অনুপুষ্টি নিয়ে একটি খাদ্যতালিকা।
গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, অতি-গরিব পরিবারগুলির আয়ের অর্ধেকের বেশি (৫৪.৮ শতাংশ) খরচ হয় শুধুমাত্র কার্বোহাইড্রেট-সম্বলিত দানাশস্যনির্ভর একটি ডায়েটের জন্য (ওপরের ১ নম্বর আদর্শ তালিকা)। ওপরের তিন নম্বর আদর্শ তালিকা মেনে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট আর মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট মিলিয়ে সার্বিক পুষ্টিকর একটি খাদ্যতালিকায় যেতে তাদের আয়ের আরও ২৯.৯ শতাংশ খরচ করতে হবে— যেটা একরকম অসম্ভব— কারণ এর মধ্যেই তাদের আয়ের ৩৯.৪ শতাংশ খরচ হয়ে গেছে খাবার নয় এমন জরুরি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী কিনতে। তাই আয়ের (৫৪.৮ + ২৯.৯) = ৮৪.৭ শতাংশ খাবারে ব্যয় করার সামর্থ্য তাদের নেই। গরিব এবং মধ্যবিত্ত পরিবারগুলিও দেখা যায় কোনওক্রমে ওই তিন নম্বর সার্বিক পুষ্টির আদর্শ তালিকা অনুযায়ী খাবার কিনতে পারে— খাদ্য নয় কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলি কেনার পরে। আর পছন্দ অনুযায়ী সার্বিক পুষ্টিসম্বলিত খাদ্যাভ্যাস প্রায় কারও আয়ত্তেই নেই। খেয়াল রাখতে হবে এই তালিকাগুলি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে এমন সবচেয়ে সস্তা খাবারগুলি নিয়েই কিন্তু তৈরি হয়েছিল। টাকার হিসেবে শুধুমাত্র ক্যালোরিসর্বস্ব কার্বোহাইড্রেট-সম্বলিত খাবারগুলি কিনে খেতে একটি ছয়জনের পরিবারে খরচ হয় বার্ষিক ২৭,৮৯২ টাকা। দু-নম্বর তালিকার শুধু ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট-সর্বস্ব তালিকা ধরে খাবার কিনে খেতে লাগে বার্ষিক ২৯,২৫৪ টাকা; তিন নম্বর তালিকার সার্বিক পুষ্টিকর খাদ্যতালিকা অনুযায়ী খেতে হলে খরচ বছরে ৪৩,১২৮ টাকা; আর চার নম্বর নিজের পছন্দ অনুযায়ী পুষ্টিকর খাবার কিনে খাওয়ার খরচ বছরে পরিবারপিছু ৬৪,২২৫ টাকা। অর্থাৎ চার নম্বর তালিকা মেনে খাওয়ার খরচ, শুধুমাত্র ক্যালোরিনির্ভর খাওয়ার খরচের থেকে ২.৫ গুণ বেশি। মনে রাখতে হবে এই দাম, আজ থেকে পাঁচ বছর আগের হিসেবে; এবং বিশ্বব্যাপী খাদ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী— তাই আজ এই খরচগুলি আরও বাড়বে বই কমবে না। বোঝা যাচ্ছে একদিকে যা দরকার, তা আয়ত্তাধীন নয়। অন্যদিকে যা আয়ত্তাধীন ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আছে সেগুলিতে সার্বিক পুষ্টি আসে না। দেখা যাচ্ছে মানুষ খাচ্ছেন বেশি দানাশস্য (কার্বোহাইড্রেট), তেল/স্নেহজাতীয় পদার্থ (ফ্যাট) আর শর্করা (চিনি)-জাতীয় খাবার। আর সবচেয়ে কম খাচ্ছেন পশুজাত প্রোটিন আর ডাল-বাদাম জাতীয় খাবার।
এই গবেষণাটি ভারতের উত্তরপ্রদেশে করা। কেউ এমন একেকটি গবেষণা দেশের অন্যান্য রাজ্য বা জেলাভিত্তিকও করে দেখতে পারেন। কিন্তু দেশের কৃষিনীতি, গণবণ্টনব্যবস্থা, পরিপূরক পুষ্টি প্রোগ্রামগুলি (আইসিডিএস, মিড-ডে মিল) এবং জীবিকা সম্প্রসারণের প্রকল্পগুলি একত্রে না ভাবলে, সঙ্গে বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণ, সার্বিক মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ না করলে, আর বাজারের প্রক্রিয়াজাত ক্ষতিকর খাবারের ওপর নিয়ন্ত্রণ না আনলে সার্বিক পুষ্টির চিত্রে খুব বেশি পরিবর্তন আসা কষ্টসাধ্য কাজ।
শেষকথা
২০২৩-এর শেষের দিকে ভারতের অনেকগুলি দৈনিক সংবাদপত্র (ইন্ডিয়া টুডে[31], দ্য হিন্দু[32]) চমকে দেওয়ার মতো একটা খবর প্রকাশ করে। যেখানে লেখা ছিল, কোভিড মহামারির পরপরই ২০২১-এ দেশের ১০০ কোটির ওপর জনসংখ্যা, মানে প্রায় ৭৪.১ শতাংশ মানুষের কাছে সঠিক পুষ্টি একটি বিলাসবহুল স্বপ্ন মাত্র! খবরটির উৎস, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার একটি অনলাইন রিপোর্ট— Asia and the Pacific – Regional Overview of Food Security and Nutrition 2023: Statistics and Trends[33]। এই রিপোর্টটি ডাউনলোড করার উপায় নেই— পড়তে হবে অনলাইনে। সেই রিপোর্টের চতুর্থ অধ্যায়ে আছে সেই ভয়ঙ্কর চিত্রটি— সেটি নিচে হুবহু তুলে দিলাম।
এই ৩ নম্বর রেখাচিত্রটি থেকে দেখতে পাচ্ছি এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্বাস্থ্যকর খাদ্যের নাগাল পাওয়ার সামর্থ্যের (কেনার ক্ষমতা) মধ্যে রয়েছে বিপুল আঞ্চলিক বৈষম্য, যা ২০২০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে কোথাও কোথাও সংকটাপন্ন হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারির অভিঘাত, মূল্যস্ফীতি এবং বৈশ্বিক খাদ্য সরবরাহে নানা বিঘ্ন সম্ভবত দায়ী এই বৈষম্য বাড়াতে। সামগ্রিক চিত্র থেকে এটা স্পষ্ট হচ্ছে যে খাদ্যাভ্যাসের সামর্থ্য কেবলমাত্র সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উপর নির্ভর করে না; বরং বৈষম্য, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা এবং বিশ্বব্যাপী ধাক্কার (global shock) প্রতি স্থিতিস্থাপকতার মতো উপাদানগুলো সমানভাবে এই সামর্থ্যের নির্ধারক।
পূর্ব এশিয়ায় চিন, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় স্বাস্থ্যকর খাদ্যের নাগালের বাইরে মানুষের হার অত্যন্ত কম, যেখানে মঙ্গোলিয়ায় তা ৬৪.১ শতাংশ (২০২১-এ)— অঞ্চলের মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড় ব্যতিক্রম। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলেও একই বৈপরীত্য দেখা যায়: অস্ট্রেলিয়ায় এ-হার ১ শতাংশের নিচে, অথচ ফিজিতে তা ২০২১-এ ৬০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে (৬৩.৭ শতাংশ)।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার চিত্র কিছুটা মিশ্র— থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে ২০২১-এ এটি যথাক্রমে ১৮ আর ২১ শতাংশ, কিন্তু ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মায়ানমার ও ফিলিপিন্সে এই হার ৭০ থেকে ৭৪ শতাংশের মধ্যে, যেখানে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও খাদ্যবিতরণ ব্যবস্থার দুর্বলতা বোধহয় প্রধান বাধা।
সবচেয়ে সংকটজনক পরিস্থিতি দেখা যায় দক্ষিণ এশিয়ায়। ভারতে এ-হার ৭০ শতাংশেরও বেশি (৭৪.১ শতাংশ, ২০২১-এ), যা পাকিস্তান ও নেপালের (প্রথমটি ৮০ শতাংশের ওপরে; দ্বিতীয়টি ৭৫ শতাংশের ওপরে) সঙ্গে মিলে এই অঞ্চলের সবচেয়ে খারাপ অবস্থান তৈরি করেছে।
এটি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ ভারতের দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বহুবিধ পুষ্টি-সংক্রান্ত কর্মসূচি— যেমন, সমন্বিত শিশু উন্নয়ন পরিষেবা (ICDS), বিদ্যালয়ে মধ্যাহ্নভোজ কর্মসূচি এবং জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন (NFSA)— সত্ত্বেও অধিকাংশ মানুষ এখনও স্বাস্থ্যকর খাদ্যের নাগাল পাচ্ছেন না। কাঠামোগত দারিদ্র্য, আয়-বৈষম্য ও গ্রাম–শহরে বিভাজন এর মূল কারণ। প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্যের মূল্যস্ফীতি, খাদ্যাভ্যাসের বৈচিত্র্যের অভাব এবং আইসিডিএস-এর মতো কর্মসূচিতে সরকারি বিনিয়োগের হ্রাস, পরিস্থিতিকে আরও গুরুতর করেছে। এর সঙ্গে জাতপাত ও লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য যোগ হয়ে নারীদের ও শিশুদের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করছে। ভারতের এই বৈপরীত্য— উচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি পুষ্টিগত বঞ্চনার বিস্তার— প্রমাণ করে যে অন্তর্ভুক্তিমূলক সামাজিক নীতি ও শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া কেবলমাত্র অর্থনৈতিক উন্নয়ন, খাদ্য-সামর্থ্যকে নিশ্চিত করতে পারে না। ভারতের ভেতরেও বিভিন্ন রাজ্যের পুষ্টিসূচকে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে— কিছু রাজ্যে শিশুখর্বাকৃতির হার সাব-সাহারান আফ্রিকার অনগ্রসর অঞ্চলগুলোর চেয়েও বেশি। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও শিশুপুষ্টির সম্পর্ক জটিল এবং প্রায়ই সরলরৈখিক নয়— এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি সামাজিক ও মানবিক উন্নয়ন এবং প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তাকে সামনে আনে। কেরল ও তামিলনাড়ু উদাহরণ হিসেবে প্রমাণ করে যে ব্যক্তি, পরিবার ও সম্প্রদায়ের সমন্বিত সম্মিলিত পদক্ষেপের মাধ্যমে ভালো পুষ্টিগত ফলাফল সম্ভব, অন্যদিকে গুজরাতের বৈপরীত্য থেকে দেখতে পাই একটি অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ রাজ্যেও শিশু অপুষ্টির হার উচ্চ এবং বৈষম্য প্রবল হতে পারে।
বাংলাদেশ, ভুটান ও শ্রীলঙ্কাও যথেষ্ট উচ্চমাত্রার ক্রয়ক্ষমতার সমস্যার মুখোমুখি হলেও তা ভারতের তুলনায় কম। ২০২১-এ পাকিস্তান ও নেপাল সবচেয়ে সংকটজনক অবস্থানে। বিপরীতে, মালদ্বীপ ও ইরানে এ-হার তুলনামূলকভাবে অনেক ভালো, ইরানে ৩০ শতাংশ আর মালদ্বীপে মাত্র ১.২ শতাংশ।
ইতিমধ্যে ২০১৯-এ বেরিয়ে গেছে, Food in the Anthropocene: the EAT-Lancet Commission on healthy diets from sustainable food systems[34]। ষোলোটি দেশের সাঁইত্রিশজন বিজ্ঞানীদের নিয়ে তৈরি এই কমিশন তৈরি করেছেন আগামী দিনের কৃষি আর পুষ্টির রূপরেখা— এই বিপুল জন-বিস্ফোরণ, ভূদূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন, বিবর্তনবাদী জীববিজ্ঞান, ভূ-জীববিজ্ঞান, প্রযুক্তি আর সুস্থায়ী উন্নয়নকে মাথায় রেখে ভাবতে হচ্ছে নতুন রকমের কৃষি উৎপাদন। ভাবতে হচ্ছে ২০৫০ সালে অন্নসংস্থান করতে হবে এই গ্রহের ১০ বিলিয়ন বা এক হাজার কোটি মানুষের জন্য। মনে রাখতে হচ্ছে এই মুহূর্তে পৃথিবীর বিরাশি কোটিরও বেশি মানুষ ভুগছে নানারকম অপুষ্টিতে। সভ্যতার যুগান্তকারী আবিষ্কার কৃষিকাজ সেই আদিম যুগ থেকে আজ অবধি প্রবাহিত হয়ে এলেও, কৃষিপ্রযুক্তি পৃথিবীর প্রদূষণের জন্য ভীষণভাবে দায়ী— গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের কারণে, নতুন জমির চাহিদায় অরণ্য ধ্বংসের জন্যে, শস্য উৎপাদনে মিষ্টি জলের ভাণ্ডার উজাড় করে ব্যবহারের ফলে, মাটির তলার জল নিষ্কাশনের কারণে, অজৈব সারের যথেচ্ছ ব্যবহারে, আর সেই কারণে নাইট্রোজেন, ফসফরাস নদীতে, মাটিতে মিশে যাওয়ার ফলে, রোজ নতুন নতুন জীববৈচিত্র্য আর বাস্তুতন্ত্র ধ্বংসের কারণে আর এই সবের ফলে মাটির উর্বরতা দ্রুত কমে আসার কারণে। তাই কৃষি আর পুষ্টির চিন্তা শুধু মানবকুলের জন্য নয়, ভাবতে হবে এই গ্রহের সুস্বাস্থ্যের জন্য, সামগ্রিকভাবে। আর তাই হয়তো, বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে আনতে হবে খাদ্যাভ্যাসের আমূল পরিবর্তন[35]। সেই আদর্শ প্ল্যানেটারি ডায়েটে আছে আরও সবুজ গাছপালা-নির্ভর খাদ্যের নিদান— পশুমাংস, শর্করাযুক্ত খাবার দ্রুত কমানোর নির্দেশ, গোটা দানাশস্য এবং আরও ফল-সব্জি খাওয়ার পরামর্শ। নচেৎ ‘যা চলছে চলুক’ ব্যবস্থায়, ২০৫০-এ গিয়ে ফেরার পথ বন্ধ! আর এই সবের জন্য চাই আন্তর্জাতিক, বহুজাতিক আর জাতীয় স্তরে অঙ্গীকার, পরিকল্পনা আর তার রূপায়ণ, কৃষি উৎপাদনকে করতে হবে সুস্থায়ী উন্নয়নমুখী, খাদ্য উৎপাদনকে হতে হবে আরও নিবিড়, জমি-জল-সারের ব্যবহার হতে হবে আরও সাবধানী, গুরুত্ব দিতে হবে জীববৈচিত্র্যকে, নদী আর সাগরের ওপর আনতে হবে আরও কড়া নিয়ন্ত্রণ, আর অর্ধেকেরও বেশি কমিয়ে আনতে হবে খাদ্যের অপব্যবহার আর অপচয়।
এদিকে পৃথিবীর বেশ কিছু উন্নত রাষ্ট্রের মতো ভারতেও গত কয়েক বছর ধরে শুরু হয়েছে জনবিন্যাসে আর তার বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন— দেশে গড় আয়ু বাড়ছে, চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নতি হচ্ছে; আর তাই বাড়ছে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা আর শতাংশ, দুটোই। পরিণত বয়সে তাদের পুষ্টির চাহিদাটাই অন্যরকম (কম বা মাঝবয়সীদের থেকে)। অন্যদিকে দেশে বাড়ছে রক্তে শর্করাজনিত রোগ, হৃদযন্ত্রের রোগ, মেদাধিক্য আর স্থূলতা। বাজারজাত চটজলদি খাবারের বাড়তি প্রবণতা বিপদ বাড়াচ্ছে আরও। এবং আগের সমস্যাগুলিও মেটেনি— ক্ষুধাজনিত অপুষ্টির প্রবণতাও রীতিমতো বিদ্যমান।
সর্বশেষ কয়েকটি গবেষণা বলছে, আমরা হয়তো আরও দূরে সরে যাচ্ছি সার্বিক সেই সুপুষ্টির ভাবনা থেকে, প্ল্যানেটারি ডায়েটের থেকে। যা নিয়ে ভেবে ফেলা উচিত ছিল গতকালই।
[1] Press Release. NITI Aayog. Jan 15, 2024.
[2] MULTIDIMENSIONAL POVERTY IN INDIA SINCE 2005-06 – A DISCUSSION PAPER. NITI Aayog.
[3] ০-৫৯ মাসের শিশুদের জন্য বয়স অনুপাতে উচ্চতা (স্টান্টিং) আর বয়স অনুপাতে ওজন দুইরকম পুষ্টির কথা বলা হয়েছে।
[4] নারী ও পুরুষদের জন্য Body Mass Index (BMI) 18.5 kg/m2-এর কম হলে তাকে অপুষ্ট ধরা হয়েছে।
[5] INDIA: NATIONAL MULTIDIMENSIONAL POVERTY INDEX – A PROGRESS REVIEW 2023. NITI Aayog.
[6] Sustainable Development Goals. UNDP.
[7] মোট ২৫১-টি, ২০২৫-এর হিসেবে (গ্লোবাল ইন্ডিকেটর ফ্রেমওয়ার্ক, ২০২৫)।
[8] Department of Economic and Social Affairs – Statistics Division. United Nations.
[9] ২০২৩ থেকে ডাবলিন ইউনিভার্সিটি প্রেস; ২০২৫ থেকে যোগ হয়েছে এসডিজি ট্রান্সফর্মেশন সেন্টার।
[10] সাল অনুযায়ী এসডিজি সূচক রিপোর্টগুলি:
- SDG INDEX AND DASHBOARDS REPORT 2018
- SDG INDEX AND DASHBOARDS REPORT 2019
- SDG INDEX AND DASHBOARDS REPORT 2020
- SDG INDEX AND DASHBOARDS REPORT 2021
- SDG INDEX AND DASHBOARDS REPORT 2022
- SDG INDEX AND DASHBOARDS REPORT 2023
- SDG INDEX AND DASHBOARDS REPORT 2024
- SDG INDEX AND DASHBOARDS REPORT 2025
[11] Undernourished people in the world. WORLDOMETER.
[12] SDG Dashboards and Trends. SDR.
[13] Understanding the malnutrition crisis in India. Feeding India. Dec 1, 2022.
[14] সারণি-১ দ্রষ্টব্য।
[15] Press Release. Ministry of Statistics & Programme Implementation. Jul 2, 2025.
[16] SURVEY ON HOUSEHOLD CONSUMPTION EXPENDITURE: 2022-23. Ministry of Statistics & Programme Implementation
[17] যদিও এই মাথাপিছু আয়ের গড়ে গণ্ডগোল আছে অনেক— বিশেষ করে গরিব মানুষের অল্প আয় কতিপয় অতি-ধনীর বিশাল আয়ে ঢাকা পড়ে যায়, এবং তাদের খাদ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা বাজার থেকে কেনার অসুবিধেগুলি ধরা পড়ে না।
[18] Database on Indian Economy or Handbook of Statistics on the Indian Economy.
[19] GDP per capita (constant 2015 US$) – India. World Bank Group.
[20] Deaton, Angus and Dreze, Jean. Food and Nutrition in India: Facts and Interpretations. Economic & Political Weekly, Vol XLIV No 7. Feb 14, 2009.
[21] Patnaik, Utsa. The Republic of Hunger. Social Scientist, 32(9-10). Sep-Oct, 2004. p 9-35.
[22] Patnaik, Utsa. Neoliberalism and Rural Poverty in India. Economic & Political Weekly, 42(30). Jul 28, 2007. p 3132-50.
[23] Sen, Pronab. Of Calories and Things: Reflections on Nutritional Norms, Poverty Lines and Consumption Behaviour in India. Economic & Political Weekly, 40(43). Oct 22, 2005. p 4611-18.
[24] Table A1.1 Annex 1A. Statistical Tables to Chapter 2. THE STATE OF FOOD SECURITY AND NUTRITION IN THE WORLD. FAO. 2025. Pg 108.
[25] খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ২০২৪ সালের প্রতিবেদনটি থেকে: “A healthy diet comprises four key aspects: diversity (within and across food groups), adequacy (sufficiency of all essential nutrients compared to requirements), moderation (foods and nutrients that are related to poor health outcomes) and balance (energy and macronutrient intake).” দ্রষ্টব্য, টীকা ২৪, Chap-2, Page 23 – The State of Food Security and Nutrition in the World (2024): Financing to End Hunger, Food Insecurity and Malnutrition in all its forms.
[26] এই সস্তা কিন্তু স্বাস্থ্যকর, সুষম হেলদি ডায়েট বাস্কেট, আন্তর্জাতিক খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (২০২৫) তৈরি করেছে এভাবে— যেহেতু পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে খাদ্যাভ্যাস নানারকম, তাই (প্রায়) প্রত্যেক দেশে একটি করে সুষম খাদ্যের গাইডলাইন আছে। তাকে বলে food-based dietary guidelines (FBDGs)। পৃথিবীর দশটা প্রতিনিধিত্বমূলক এলাকা থেকে এইরকম ১০-টি FBDG নিয়ে তৈরি হয়েছে গোটা পৃথিবীর জন্য একটি স্ট্যান্ডার্ড Healthy Diet Basket বা HDB। এতে ধরা হয়েছে প্রতিদিন একজন মানুষের গড়ে ২৩৩০ কিলোক্যালোরি এনার্জি লাগে, আর তার জন্য খাবার নেওয়া হয়েছে ছটি ফুড-গ্রুপ থেকে— ক. প্রধান খাদ্য যেমন চাল, গম, বাজরা, রাগী ইত্যাদি; খ. শাক-সব্জি; গ. ফল; ঘ. পশু-প্রোটিন; ঙ. ডাল, কলাই, বাদাম জাতীয়; এবং চ. তেল আর স্নেহপদার্থ। ধরা হয়েছে চাল, গম, বাজরা বা দানাশস্যের থেকে পাওয়া যাবে ১১৬০ ক্যালোরি, শাক-সব্জি থেকে ১১০ ক্যালোরি, ফল থেকে ১৬০ ক্যালোরি, পশুজাত প্রোটিন মাছ, মাংস, ডিম থেকে ৩০০ ক্যালোরি, ৩০০ ক্যালোরি ডাল-বাদাম থেকে আর ৩০০ ক্যালোরি তেল বা স্নেহজাতীয় পদার্থ থেকে। এরপর ওই স্ট্যান্ডার্ড Healthy Diet Basket ধরে সেই দেশে পাওয়া যায় এমন সবচেয়ে সস্তা ১১টি খাবার বাছা হয়েছে ওই ৬টি ফুড-গ্রুপ থেকে— দুটো দানাশস্য থেকে, তিনটে শাকসব্জি থেকে, দুটো ফল থেকে, দুটো পশুজাত প্রোটিন থেকে, একটা ডাল-বাদাম থেকে আর একটা তেল-স্নেহজাতীয় পদার্থ থেকে। এবার সবচেয়ে সস্তা সুষম খাবারের দাম বের করা হয়েছে ওই ১১টি খাবারের মধ্যে কী খাব, কতটা খাব (HDB মেনে খেতে হলে), সেই হিসেবে।
[27] পিপিপি ডলার [purchasing power parity (PPP) dollars per person per day] বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন মুদ্রায় কেনা একই জিনিসের দামের/মূল্যের তুলনা করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক মূল্যমান।
- ধরা যাক আমেরিকাতে আপনি ১ ডলার ব্যয়ে এক কাপ কফি কিনতে পারেন
- ভারতে সেই এক কাপ কফির দাম ২০ টাকা
- সেক্ষেত্রে পিপিপি ডলারে ₹২০ = ১ পিপিপি $ (আসলে আমেরিকান $ আর ভারতীয় ₹-র মধ্যে বিনিময় হার যাই হোক না কেন)
- এবার ধরা যাক ভারতে কেউ প্রতিদিন ₹২০০ (টাকা) রোজগার করে
- সেটা বাজারে ডলার-টাকার বিনিময় হারে হবে, $২.৫০ প্রতিদিন ($১ = ₹৮০)
- কিন্তু সেটা পিপিপি ডলারের বিনিময় হারে হবে ১০ পিপিপি $ প্রতিদিন (₹২০ = ১ পিপিপি $ হারে)
[28] দ্রষ্টব্য, টীকা ২৪। Table A1.6, Page 149.
[29] Kachwaha, Shivani et al. Assessing the Economic Feasibility of Assuring Nutritionally Adequate Diets for Vulnerable Populations in Uttar Pradesh, India: Findings from a “Cost of the Diet” Analysis. Oxford University Press on behalf of the American Society for Nutrition. Nov 13, 2020.
[30] ১৩৭টি খাদ্যবস্তু যা স্থানীয় বাজারে পাওয়া গেছিল তার মধ্যে ১২ রকম দানাশস্য (সিরিয়াল), ৬ ধরনের সাদা মূল আর কন্দ জাতীয় খাবার (আলু, মুলো, মিষ্টি আলু ইত্যাদি), ১৪ রকমের ডাল, ৬ রকমের বাদাম ও বীজ-জাত খাদ্য, ৬ রকমের দুগ্ধজাত খাদ্য, ১৭ রকমের মাছ, মাংস, ৩৩ রকমের শাক-সব্জি, ১৮ রকমের ফল, ৫ রকমের তেল-স্নেহজাতীয় খাবার, ৪ রকমের মিষ্টি বা অন্য মুখরোচক খাবার আর ১৬ রকমের স্বাদবর্ধক খাবার (মশলা, আচার, সস, কেচাপ ইত্যাদি) ছিল।
[31] Sharma, Samrat. Nutrition is a luxury in India, over 100 crore people can’t afford healthy food. India Today. Jul 17, 2023.
[32] Jigeesh, A. M. 74.1% of Indians unable to afford a healthy diet: FAO Report. The Hindu. Dec 16, 2023.
[33] Asia and the Pacific – Regional Overview of Food Security and Nutrition 2023: Statistics and Trends, Chapter 4, Section 4.1, Figure 26. FAO. Updated December 2023.
[34] Willet, Walter et al. Food in the Anthropocene: the EAT–Lancet Commission on healthy diets from sustainable food systems. The Lancet. Feb 2, 2019.
[35] সেই জন্য বিপুল সমালোচনাও জুটছে এই কমিশনের কপালে— এত দেশের এত জনগোষ্ঠীকে এক করে, স্থানীয় বৈচিত্র্যময় খাদ্যাভ্যাসকে গুরুত্ব না দিয়ে সকলের জন্য একই আদর্শ রূপরেখা তৈরি করা একরকম অসম্ভব।

