মণিশংকর বিশ্বাস
দীর্ঘদিন ধরেই পদার্থবিদরা বুঝে এসেছেন যে, শুরুতেই কোথাও একটি অসমতা জন্ম নিয়েছিল। কোনও কিছু পদার্থকে প্রতিপদার্থের চেয়ে আলাদা আচরণ করতে বাধ্য করেছিল। সেই পার্থক্য, যদিও ক্ষুদ্র ছিল, তবুও পদার্থকে টিকে থাকার একটি সুযোগ দিয়েছিল। কোটি কোটি বছর ধরে এই ক্ষুদ্র অতিরিক্ত অংশই ধীরে ধীরে সবকিছুর ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু এতদিন পর্যন্ত স্ট্যান্ডার্ড মডেল যতটুকু পার্থক্য ব্যাখ্যা করতে পেরেছিল, তা এই বিপুল পরিমাণ পদার্থের অস্তিত্ব বোঝানোর জন্য যথেষ্ট ছিল না। সার্নের আবিষ্কার সেই শূন্যস্থান আংশিকভাবে হলেও পূরণ করে দেখিয়ে দেয় যে ব্যারিয়নের ক্ষয়ে একটি পরিমাপযোগ্য পার্থক্য রয়েছে, যা প্রাথমিক মহাবিশ্বের এই অসাম্যের পেছনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিল
মহাবিশ্বের আদৌ কেন অস্তিত্ব রয়েছে— এই প্রশ্নটি দর্শনচিন্তার প্রাচীনতম দিনগুলো থেকেই মানবতা বলতে যা বুঝি, তাকে প্রভাবিত করে এসেছে। বিজ্ঞানীরা এই প্রশ্নটির উত্তর খোঁজেন পদার্থবিজ্ঞান ও কসমোলজি বা সৃষ্টিতত্ত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে— বিশেষ করে এই প্রশ্নটির দিকে তাঁরা আলো ফেলেন যে, বিগ ব্যাং-এর ঠিক পরের মুহূর্তেই মহাবিশ্ব কেন নিজেকে ধ্বংস করে ফেলেনি। অন্যদিকে দার্শনিক ও আধ্যাত্মিক অনুসন্ধানীরা এই প্রশ্নের দিকে তাকান সৃষ্টির উদ্দেশ্য, অর্থ এবং অস্তিত্বের প্রকৃতি নিয়ে ভাবনার মাধ্যমে। উপরে উপরে এই দুই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা মনে হলেও, শেষ পর্যন্ত তারা এসে মিলিত হয় একটি কেন্দ্রীয় চিন্তায়: প্রাথমিক মহাবিশ্বে এমন কী অসাম্য ছিল যা পদার্থকে নিঃশেষ করে খাঁটি শক্তিতে পরিণত করেনি? যদি পদার্থ ও প্রতিপদার্থ (Antimatter) সমান পরিমাণে সৃষ্টি হত, তাহলে তাদের পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেত এবং ফলাফল হিসেবে কেবল বিকিরণই থেকে যেত। কিন্তু আজ এই চলমান মহাবিশ্ব বিদ্যমান— এই বাস্তবতা ইঙ্গিত দেয় যে সৃষ্টির প্রথম মুহূর্তগুলোতে পদার্থের টিকে থাকার পক্ষে একটি সূক্ষ্ম কিন্তু শক্তিশালী প্রবণতা কাজ করেছিল, যার উৎস দীর্ঘদিন পর্যন্ত রহস্যই থেকে গিয়েছিল।
সার্ন (CERN)-এ একটি নতুন আবিষ্কার এই প্রাচীন প্রশ্নে নতুন ভাবনার সঞ্চার করেছে। LHCb (Large Hadron Collider beauty) পরীক্ষায় কাজ করা বিজ্ঞানীরা লক্ষ করেছেন, পদার্থ ও প্রতিপদার্থের ব্যারিয়ন কণাগুলোর ক্ষয় (decay) প্রক্রিয়ায় একটি পার্থক্য রয়েছে। সংখ্যাগত দিক থেকে এই পার্থক্য খুবই ছোট, কিন্তু বৈজ্ঞানিক দিক থেকে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি প্রমাণ করে যে পদার্থ ও প্রতিপদার্থ একেবারে একই নিয়ম অনুসরণ করে না। মহাবিশ্ব যখন নবীন ছিল, তখন এই সামান্য পার্থক্যই মহাজাগতিক বিবর্তনের গতিপথ নির্ধারণ করে থাকতে পারে। যদি মহাবিশ্ব সম্পূর্ণ সমতার দ্বারা শাসিত হত, তবে তা সম্ভবত কেবল নিরাকার আলোর সমুদ্রের রূপ নিত। কিন্তু অল্প হলেও যদি একটি অসাম্য থাকে, তাহলে সেই মহাবিশ্বই গ্যালাক্সি, নক্ষত্র, গ্রহ এবং শেষপর্যন্ত সচেতন জীবনের জন্ম দিতে পারে। সার্নের এই নতুন ফলাফল সেই অসাম্যের প্রকৃতি নিয়ে একটি মূল্যবান সূত্র দেয়, এবং আধ্যাত্মিক বিশ্লেষণের সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে সৃষ্টিপ্রক্রিয়ার একটি গভীর কাহিনি প্রকাশিত হয়।
প্রথমে সার্নের আবিষ্কারের বৈজ্ঞানিক দিকগুলো দেখব, তারপর এর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য নিয়ে ভাবব, যে কীভাবে একটি মহাবিশ্ব ক্ষুদ্র ‘অসম্পূর্ণতা’ বা ‘ত্রুটি’ থেকে জন্ম নিতে পারে। এর মাধ্যমে আমরা দেখতে পাব যে বিজ্ঞান এবং আধ্যাত্মিকতা অনেক সময় একই ঘটনাকে ভিন্ন ভাষায় প্রকাশ করে।
সার্নের আবিষ্কারের গুরুত্ব বোঝার জন্য মহাবিশ্বের আদিম অবস্থার দিকে ফিরে তাকানো জরুরি। বিগ ব্যাংয়ের ঠিক পরেই মহাবিশ্ব ছিল অত্যন্ত গরম ও অতিঘন অবস্থায়। মহাবিশ্ব প্রসারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শক্তি ঘনীভূত হয়ে কণায় রূপ নেয়, এবং প্রতিটি পদার্থকণার সঙ্গে একটি করে প্রতিপদার্থকণাও সৃষ্টি হয়। এই দুটি কেবল ধারণাগতভাবে বিপরীত ছিল না; তারা ছিল চার্জ ও আচরণগত দিক থেকেও সম্পূর্ণ বিপরীত। যখন পদার্থ ও প্রতিপদার্থের মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে, তখন তারা একে অপরকে ধ্বংস করে বিপুল শক্তি নির্গত করে। প্রচলিত পদার্থবিজ্ঞানের মতে, যদি সমান পরিমাণে পদার্থ ও প্রতিপদার্থ সৃষ্টি হত, তবে তারা সম্পূর্ণ ভারসাম্যে একে অন্যকে ধ্বংস করে ফেলত।
যদি এই সম্পূর্ণ বিনাশ ঘটত, তাহলে মহাবিশ্বে কোনও পরমাণু, কোনও অণু, কোনও কিছুই থাকত না। তা রয়ে যেত কেবল বিশুদ্ধ শক্তির একটি অসীম মহাসমুদ্র হিসেবে, যেখানে জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় জটিলতা কখনওই সৃষ্টি হত না। অথচ জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ থেকে আমরা জানি, আজকের দৃশ্যমান মহাবিশ্ব প্রায় সম্পূর্ণরূপে পদার্থ দিয়েই গঠিত। অ্যান্টিম্যাটার কেবল অতি সামান্য পরিমাণে পাওয়া যায়, সাধারণত উচ্চ-শক্তির পরিবেশে— যেমন উচ্চ-গতিসম্পন্ন কণা-সংঘর্ষে বা কিছু বিশেষ মহাজাগতিক প্রক্রিয়ায়।
দীর্ঘদিন ধরেই পদার্থবিদরা বুঝে এসেছেন যে, শুরুতেই কোথাও একটি অসমতা জন্ম নিয়েছিল। কোনও কিছু পদার্থকে প্রতিপদার্থের চেয়ে আলাদা আচরণ করতে বাধ্য করেছিল। সেই পার্থক্য, যদিও ক্ষুদ্র ছিল, তবুও পদার্থকে টিকে থাকার একটি সুযোগ দিয়েছিল। কোটি কোটি বছর ধরে এই ক্ষুদ্র অতিরিক্ত অংশই ধীরে ধীরে সবকিছুর ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু এতদিন পর্যন্ত স্ট্যান্ডার্ড মডেল যতটুকু পার্থক্য ব্যাখ্যা করতে পেরেছিল, তা এই বিপুল পরিমাণ পদার্থের অস্তিত্ব বোঝানোর জন্য যথেষ্ট ছিল না। সার্নের আবিষ্কার সেই শূন্যস্থান আংশিকভাবে হলেও পূরণ করে দেখিয়ে দেয় যে ব্যারিয়নের ক্ষয়ে একটি পরিমাপযোগ্য পার্থক্য রয়েছে, যা প্রাথমিক মহাবিশ্বের এই অসাম্যের পেছনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিল।
সার্ন (CERN)-এর LHCb পরীক্ষাটি কোয়ার্কধারণকারী কণাগুলোর আচরণ পরীক্ষা করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা আশি হাজারেরও বেশি ল্যাম্বডা-বি (lambda b) ব্যারিয়নের ক্ষয় (decay) পর্যবেক্ষণ করেছেন। এই ব্যারিয়নগুলো হল তিনটি কোয়ার্ক দিয়ে গঠিত যৌগিক কণা, আর এদের বিপরীত রূপ— যাকে অ্যান্টিব্যারিয়ন বলা হয়— তিনটি অ্যান্টিকোয়ার্ক দিয়ে গঠিত। এই কণাগুলো যে হারে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, তা খুব সতর্কভাবে মেপে গবেষকরা একটি সুস্পষ্ট ধরন বা ধারা শনাক্ত করেছেন।
পদার্থ ব্যারিয়নগুলো এই ছোট কণাগুলোতে অ্যান্টিম্যাটার ব্যারিয়নের তুলনায় প্রায় পাঁচ শতাংশ বেশি হারে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে। দৈনন্দিন জীবনে পাঁচ শতাংশ পার্থক্য ছোট মনে হলেও, কণা-পদার্থবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিচ্যুতি। এই ফলাফলকে নিছক পরিসংখ্যানগত গোলমাল বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বরং এটি পদার্থ ও অ্যান্টিম্যাটারের মধ্যে একটি পরিমাপযোগ্য অস্তিত্বের পার্থক্যের দিকে ইঙ্গিত করে, যা আগে ব্যারিয়নের ক্ষেত্রে সরাসরি ধরা পড়েনি।
ব্যারিয়ন কোনও দুর্লভ বা অস্পষ্ট কণা নয়। পরমাণুর ভেতরে থাকা প্রোটন ও নিউট্রনই ব্যারিয়ন, অর্থাৎ মহাবিশ্বে যে দৃশ্যমান পদার্থ দেখা যায়, তার অধিকাংশই ব্যারিয়ন দিয়ে তৈরি। তাই এই আবিষ্কার বাস্তব জগতের একেবারে ভিত্তিকে স্পর্শ করে। যদি বিগ ব্যাংয়ের পরপরই ব্যারিয়ন ও অ্যান্টিব্যারিয়ন ভিন্নভাবে আচরণ করে থাকে, তবে সেই পার্থক্য পদার্থের টিকে থাকা এবং মহাবিশ্বের বিবর্তনের গতিপথ নির্ধারণে বড় ভূমিকা রেখেছিল।
এই ফলাফলটি যদিও পদার্থ-প্রতিপদার্থের রহস্যের সম্পূর্ণ সমাধান নয়, তবুও এটি একটি বড় ধরনের অগ্রগতি। এটি নিশ্চিত করে যে পদার্থ ও প্রতিপদার্থ একেবারে একই নিয়ম মেনে চলে না, যা এই ধারণাকে সমর্থন করে যে, সৃষ্টির সূচনাকালেই আদিম মহাবিশ্বের প্রাকৃতিকভাবেই পদার্থকে টিকিয়ে রাখার দিকে একটি ঝোঁক বা পক্ষপাত ছিল। LHCb পরীক্ষায় যত বেশি তথ্য সংগ্রহ করা হবে, বিজ্ঞানীরা আশা করেন যে আরও পার্থক্য ধরা পড়বে, যা স্ট্যান্ডার্ড মডেলে এখনও অন্তর্ভুক্ত না হওয়া নতুন কণা বা নতুন বলের ইঙ্গিত দিতে পারে।
যখন পদার্থবিদরা ক্ষয়ের হার পরিমাপ এবং গাণিতিক তত্ত্ব যাচাইয়ে মনোযোগ দেন, তখন আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি একটি পরিপূরক ব্যাখ্যা হাজির করে। বহু দর্শন ও ঐতিহ্যে সৃষ্টিকে এক থেকে বৈচিত্র্যে রূপান্তরের একটি প্রক্রিয়া হিসেবে বর্ণনা করা হয়। সম্পূর্ণ সাম্য বা ভারসাম্যকে অনেক সময় স্থবিরতার সঙ্গে যুক্ত করা হয়, আর সৃষ্টির জন্ম, গতি, টানাপোড়েন ও অসাম্য থেকে।
সার্নের আবিষ্কার এই ধারণাকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে শক্তিশালী করে। যদি প্রাথমিক মহাবিশ্ব সম্পূর্ণরূপে সমতাপূর্ণ হত, তবে পদার্থ ও প্রতিপদার্থ একে অপরকে ধ্বংস করে দিত এবং কিছুই সৃষ্টি হত না। কিন্তু বাস্তবতা হল, মহাবিশ্বে একটি সামান্য বিচ্যুতি, একটি ক্ষুদ্র অনিয়ম ছিল, যা জগতের সম্পূর্ণ বিনাশ ঘটতে দেয়নি। এই অনিয়মই পদার্থকে টিকে থাকতে সাহায্য করেছে এবং ধীরে ধীরে আজ আমরা যে বিশ্বজগৎ দেখি, তার জন্ম দিয়েছে। এই অর্থে, বৈজ্ঞানিক ফলাফলটি একটি গভীর আধ্যাত্মিক সত্য প্রতিফলিত করে: প্রকৃতির অসম্পূর্ণতা কোনও ত্রুটি নয়; বরং তা সৃষ্টিশীলতার একটি মূল নীতি। মহাবিশ্ব টিকে থাকতে পেরেছে ও বিকশিত হতে পেরেছে, কারণ এটি পুরোপুরি ভারসাম্যপূর্ণ ছিল না।
এই দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের অস্তিত্বকে আরও সামগ্রিকভাবে ভাবতে আহ্বান জানায়। মহাবিশ্ব হয়তো অন্ধ দৈবতার ফল নয়, বরং এমন গতিশীল শক্তির ফল, যা স্বাভাবিকভাবেই বৈচিত্র্য, জটিলতা ও অভিজ্ঞতার জন্ম দেয়। বিজ্ঞান এই শক্তিগুলোকে বর্ণনা করে কণা ও ক্ষয়ের হারের মাধ্যমে। আধ্যাত্মিকতা এগুলোকে বর্ণনা করে মহাজাগতিক অভিপ্রায় বা প্রসারমান চেতনার প্রকাশ হিসেবে। এই দুই দৃষ্টিভঙ্গি পরস্পরের বিরোধী নয়; বরং একসঙ্গে মিলে তারা সৃষ্টির একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র উপস্থাপন করে।
চেতনার ওপর এই আবিষ্কারের প্রভাব নিয়ে ভাবলে আরেকটি গভীর সম্পর্ক স্পষ্ট হয়ে ওঠে। চেতনা গড়ে ওঠে পার্থক্যের উপর। সচেতনতা মানে ভিন্নতা, বৈপরীত্য এবং পরিবর্তন। যদি সব অভিজ্ঞতা এক রকম হত, তাহলে মন বা আত্মসচেতন জীবনের কোনও বিকাশই ঘটত না। প্রতিপদার্থের ওপর পদার্থের টিকে থাকা, এই নীতিরই প্রতিফলন। একটি ক্ষুদ্র পার্থক্য, বিশাল এই জাগতিক বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের জন্ম দিয়েছে। সেই ছোট অসাম্য থেকেই পরমাণুর সৃষ্টি হয়েছে। পরমাণু থেকে অণু, অণু থেকে কোষ, কোষ থেকে জীব, আর জীব থেকে এমন এক মন বা সচেতনতা, যা ভাবতে পারে, কৌতূহল অনুভব করতে পারে এবং বুঝতে পারে।
এখানে কয়েকটি সম্ভাব্য ও আকর্ষণীয় দৃশ্যপট রয়েছে। এক সম্ভাবনা হল, এমন কিছু এখনও-অনাবিষ্কৃত কণা থাকতে পারে, এমনভাবে ক্রিয়া করে, যা আমরা এখনও শনাক্ত করতে পারিনি। এই কণাগুলোই হয়তো আদিম মহাবিশ্বে পদার্থকে প্রাধান্য দিয়েছিল। আরেকটি সম্ভাবনা হল, একটি গোপন বা অদৃশ্য শক্তি পদার্থ ও প্রতিপদার্থের ওপর ভিন্ন ভিন্নভাবে কাজ করছে। এই শক্তি আজকের পরীক্ষায় হয়তো খুব সূক্ষ্ম এবং শনাক্ত করা কঠিন, কিন্তু প্রাথমিক মহাবিশ্ব গঠনে এটি গভীর প্রভাব ফেলে থাকতে পারে। তৃতীয় সম্ভাবনা হল, মহাবিশ্বের গভীর কাঠামোর মধ্যে এমন সব সাম্য বিদ্যমান, যা মহাবিশ্ব বিবর্তিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে যায়। সেই ক্ষেত্রে, যে অসাম্য আমরা দেখি, তা আসলে আমাদের প্রত্যক্ষ উপলব্ধির ঊর্ধ্বে থাকা এক বৃহত্তর নকশার প্রতিফলন।
এই বৈজ্ঞানিক ধারণাগুলো এমন সব অধিবিদ্যাগত (মেটাফিজিকাল) ধারণার সঙ্গে সুর মেলায়, যা বাস্তবতাকে বহু স্তরযুক্ত বলে বর্ণনা করে। বহু আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যে ভৌতজগৎকে একটি গভীর, আরও ঐক্যবদ্ধ বাস্তবতার আংশিক প্রকাশ হিসেবে দেখা হয়। যে বিষয়গুলোকে অসম্পূর্ণতা বা অসামঞ্জস্য (asymmetry) বলে মনে হয়, সেগুলো হয়তো এমন এক জগত বা ডাইমেনশনগুলির সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার প্রতিফলন, যা সাধারণ পর্যবেক্ষণের বাইরে বিদ্যমান। বিজ্ঞান যেখানে যন্ত্রপাতি ও সমীকরণের মাধ্যমে এই সম্ভাবনাগুলো অনুসন্ধান করে, আধ্যাত্মিকতা সেখানে অন্তর্দৃষ্টি ও অন্তর্জ্ঞান দিয়ে সেগুলো অন্বেষণ করে। উভয় পথই এই ধারণার দিকে ইঙ্গিত করে যে বাস্তবতা বাহ্যিকভাবে যতটা দেখা যায়, তার চেয়ে সেটা অনেক বেশি সমৃদ্ধ ও আন্তঃসংযুক্ত।
সার্নের (CERN) এই আবিষ্কার মহাবিশ্ব কেন অস্তিত্বশীল— এই রহস্যের সম্পূর্ণ সমাধান দেয় না, তবে এটি একটি অত্যন্ত শক্তিশালী সূত্র প্রদান করে। এটি দেখায় যে পদার্থ ও প্রতিপদার্থ নিখুঁত বিপরীত নয়। তাদের আচরণ পরিমাপযোগ্যভাবে ভিন্ন, এবং সেই ভিন্নতাই প্রাথমিক মহাবিশ্বের পরিণতিকে রূপ দিয়েছে। এটি একটি বৃহত্তর ধারণাকে সমর্থন করে যে, মহাজাগতিক সূত্রগুলি স্বাভাবিকভাবেই জগৎ সৃষ্টির দিকেই ঝুঁকে থাকে, ধ্বংসের দিকে নয়।
তথ্যসূত্র:
- Barter, William. New discovery at Cern could hint at why our universe is made up of matter and not antimatter. The Conversation. Jul 17, 2025.

