Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

কোভিড-১৯: ভারত কি আদৌ প্রস্তুত?

ইন্দ্রিতা সাহা, সুব্রত রানা

 




লেখকদ্বয় অধ্যাপক ও গবেষক।

 

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যখন ১১ই মার্চ, ২০২০ তে করোনা ভাইরাস রোগ ২০১৯ (কোভিড-১৯) কে অতিমারি হিসাবে চিহ্নিত করে, ভারতে তখন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ-এর তথ্য অনুযায়ী আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৫০, আর বিশ্বব্যাপী সেই সংখ্যা ছিল প্রায় ১.২৬ লক্ষ। এই ১.২৬ লক্ষ জনের মধ্যে প্রায় ৬৮ হাজার জন হয় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছিল। ৪ হাজার ৬২৮ জন মারা গিয়েছিল আর বাকী প্রায় ৫৩ হাজার জন চিকিৎসাধীন ছিলমোট আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে আরোগ্য হওয়ার হার ছিল ৫৪.১২% এবং মৃত্যুর হার ৩.৬৭%। তারপর মাত্র ২০ দিনের মধ্যে (৩০ শে মার্চ, ২০২০) বিশ্বব্যাপী প্রায় ৭.৮৪ লক্ষ লোক সংক্রামিত হয়, যার মধ্যে মাত্র ২৫.৮৯% কেস পরিণতি পায় আরোগ্য বা মারা যাওয়ার মধ্যে দিয়ে। মৃত্যুর হার বেড়ে হয় ৮.৩৩% এবং আরোগ্য হওয়ার হার কমে হয় ২১.০৮%। কোভিড-১৯-এর প্রথম ঘটনা ধরা পড়ে ১৭ই নভেম্বর ২০১৯-এ, চিনের উহান শহরে। এরপর ২৪শে জানুয়ারি, ২০২০-তে আক্রান্তের সংখ্যা হয়ে দাঁড়ায় হাজার। সেই সংখ্যা এক লক্ষ পৌঁছাতে ৬ই মার্চ পর্যন্ত সময় লাগে, তারপর সেই সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তেই থাকে। ১৮ই মার্চ তা হয়ে দাঁড়ায় দু লক্ষ, ২৪শে মার্চ চার লক্ষ এবং ৩১শে মার্চ সেই সংখ্যা হয়ে যায় ৮ লক্ষ ৫৮ হাজার।

নভেল করোনো ভাইরাস-এর সংক্রমণে কোভিড-১৯ রোগটি হয় এবং এই রোগ অত্যন্ত দ্রুততার সাথে ছড়িয়ে পড়ে। চিনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথমে এই রোগ দেখা দেওয়ার পর তা ছড়িয়ে পড়ে থাইল্যান্ড, জাপান সাউথ কোরিয়া, তারপর এশিয়ার গণ্ডি পেরিয়ে পৌঁছে যায় ইতালি, স্পেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত উন্নত দেশে। এখনও পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তারপর ইতালি, স্পেন যা চিনকেও ছাপিয়ে গেছে। এখানে দ্রষ্টব্য যে ইউরোপীয় দেশগুলি ভয়ঙ্করভাবে আক্রান্ত হচ্ছে এবং মৃতের সংখ্যা সারা পৃথিবীর মধ্যে সর্বোচ্চ এই দেশগুলিতে। বর্তমানে কোভিড-১৯ সারা বিশ্বের ২০৩টি দেশ এবং দুটি আন্তর্জাতিক যাত্রীবাহী জাহাজে নিজের থাবা বসিয়েছে।

কোভিড-১৯ ভাইরাস চিন থেকে বাকি বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্য দিয়ে। উহানের ইন্সটিটিউট অফ ভাইরোলজির তিন জন ভারতীয় শিক্ষার্থী যখন দেশে ফিরে আসে, তারাই প্রথম এই দেশে সংক্রমণটি বয়ে নিয়ে আসে। কেরল রাজ্যের ওই তিন জনের সংক্রমণ ধরা পড়ে যথাক্রমে ৩০শে জানুয়ারি, ২রা এবং ৩রা ফেব্রুয়ারি। তারপর ধীরে ধীরে বিদেশ থেকে ফেরা ভারতীয় এবং বিদেশি পর্যটকদের মাধ্যমে ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলিতেও করোনা পৌঁছে যায়। এখানে পরবর্তী ঘটনা ধরা পড়ে ২রা মার্চ (২টি), ৩রা মার্চ (১টি) এবং ৪ঠা মার্চ (২২টি)। এই কারণে ২০২০ সালের ৩রা মার্চ থেকে বিমানবন্দর গুলিতে স্ক্রিনিং শুরু হয় এবং বেশ কিছু দেশের ভিসা বন্ধ করা হয়। ২৩শে মার্চ ভারত আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে। শুধু তাই নয় ভারত সরকার এই সংক্রামক ব্যাধির দ্রুত সংক্রমণের হাত থেকে দেশবাসীকে বাঁচানোর স্বার্থে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য ২৫শে মার্চ থেকে সম্পূর্ণ দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করেছে, কারণ এই রোগের কোনও চিকিৎসা এখনও পর্যন্ত নেই। বাঁচার একমাত্র উপায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং সংক্রমণ আটকানো।

যেহেতু কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর মধ্যে বয়স্কদের মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি, তাই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির তুলনায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলি অনেক বেশি ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছে। দক্ষিণ-এশিয়ার দেশগুলির মত ভারতেও তরুণ জনসংখ্যার পরিমাণ অনেক বেশি। ইতালি এবং স্পেনে ৬৫-ঊর্ধ্ব জনসংখ্যার পরিমাণ যথাক্রমে ২২.৭৫ এবং ১৯.৩৮ শতাংশ। যদিও ভারতে এই অনুপাত মাত্র ৬.১৭ শতাংশ, তবে সেই সংখ্যাটা নেহাত কম নয়, তা প্রায় ৮ কোটি ৩৫ লাখ, যা ইতালির মোট জনসংখ্যার (৬.০৫ কোটি) চেয়েও বেশি। সুতরাং অনুপাত খুব একটা বেশি না হলেও, সংখ্যার দিক থেকে এই প্রবীণ জনগোষ্ঠী সুবিশাল। ভারতের সামাজিক কাঠামোতে একান্নবর্তী পরিবারের আধিক্য দেখা যায়। ইতালিতে যেখানে একটি পরিবারে গড়ে ২.৫৮ জন থাকে, সেখানে ভারতে একটি পরিবারে থাকে গড়ে ৪.৮৩ (২০১১) জন। আবার, মালিকানাধীন বা ভাড়া যাই থাকুন না কেন ভারতীয় জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ একক ঘরে বসবাস করেন। অর্থাৎ, সম্পূর্ণ গৃহবিচ্ছিন্নতা বা নিখুঁত পৃথকীকরণ এই ৪০ শতাংশ জনসংখ্যার জন্য কল্পনার বাইরে। হু সুপারিশ করে যে কোনও দুটি ব্যক্তির মধ্যে কমপক্ষে ১ মিটার (৩ ফুট) দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। ২০১৩ সালে প্রকাশিত ৬৯তম ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে অফিস (এনএসএসও)-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রামাঞ্চলে, জীবনধারনের প্রয়োজনীয় সমস্ত চাহিদার জন্য ৮০ শতাংশ দরিদ্র পরিবারের জনপ্রতি কেবলমাত্র ৯৪ বর্গফুট জায়গা উপলব্ধ এবং শহরাঞ্চলে, দরিদ্রতম পরিবারের ৬০ শতাংশের জন্য সেই অঙ্কটাই ৯৩ বর্গফুট।

ভারত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক বিমানবন্দরগুলিতে ১৫ লক্ষেরও বেশি যাত্রী কোভিড-১৯-এর জন্য স্ক্রিন করেছে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থার যাত্রীদের সংখ্যার রাজ্য-স্তরের বিতরণের তুলনা করে দেখা গেছে, যেসব রাজ্যে সর্বাধিক সংখ্যক যাত্রী রয়েছে তাদের কোভিড-১৯-এ আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। তবে, ২০২০ সালের ২০ শে মার্চের মধ্যে সংক্রামিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা লোকজন সহ মোট ১৪,৫১৪টি পরীক্ষা করা হয়েছিল। এই পরীক্ষা করার হার কিন্তু ভারতের জন্য অনেক কম। ইতালি ২০শে মার্চ হিসাবে প্রতি লক্ষে ৩৫০টি পরীক্ষা করেছে, চিনের গুয়াংডং প্রদেশ প্রতি লক্ষে ২৮২টি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতি লক্ষে ৩১টি পরীক্ষা করেছে। ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত ভারতে এই সংখ্যাটি ১ জন প্রতি লক্ষে। যদিও ২০শে মার্চ, ২০২০ থেকে ইতালিতে এবং ১৫ই মার্চ, ২০২০ থেকে স্পেনে কঠোর লকডাউন ঘোষণা হয়েছে, তবুও এই রোগ ছড়িয়ে যাওয়ার তৃতীয় পর্যায়ে পৌঁছানোর কারণে এই দেশগুলি সঙ্কট মোকাবিলা করা অত্যন্ত কঠিন বলে মনে করছে। এখন অবধি, কোভিড-১৯-এ ইতালিতে সংক্রমণের হার প্রতি লক্ষে ১৭৫, মৃত্যুহার প্রতি লক্ষে ২১ জন, আর স্পেনে সংক্রমণের হার প্রতি লক্ষে ২১৯, মৃত্যুহার প্রতি লক্ষে ১৯ জন। ২০২০ সালের ২৪শে মার্চ, ভারতের সংক্রমণের দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রবেশের আগে লকডাউনের সিদ্ধান্ত এই রোগের বিস্তারকে আটকানোর ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।

ভারতে জনঘনত্ব এবং কোভিড-১৯ পজিটিভ কেসগুলি

ভারতে পরীক্ষাকেন্দ্র এবং কোভিড-১৯ পজিটিভ কেসগুলি

বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দেশ, বিশ্বের জনসংখ্যার এক-ষষ্ঠেরও বেশি জনসংখ্যার সমন্বিত দেশ ভারত। যেহেতু চিনে বা অন্যান্য দেশে কঠিন স্বাস্থ্যসঙ্কট দেখা গেছে এবং এটিও পরিলক্ষিত হয়েছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি এবং স্পেনের মতো প্রথম-বিশ্বের দেশগুলি কীভাবে মহামারিটির মোকাবিলায় মুখ থুবড়ে পড়েছে, তাই ভারতে কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবের মডেল তৈরি করা অত্যাবশ্যক। ইতিমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি এবং স্পেনের সংখ্যা ও মৃত্যুর সংখ্যা চিনের তুলনায় অনেক বেশি। অর্থনীতির পতন রোধ করতে এবং আরও গুরুত্বপূর্ণভাবে এই রোগের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য, নীতিগত হস্তক্ষেপের জন্য অধ্যয়নটি সর্বাধিক গুরুত্ব বহন করে।

ভারতের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং জনসংখ্যার কাঠামো এটি সুস্পষ্ট করে তোলে যে লোকেরা লকডাউন এবং বাড়ির কোয়ারানটাইন পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠলেও ভারতে সম্পূর্ণরূপে কার্যকর পৃথকীকরণ সম্ভব নয়। বেশিরভাগ লোকের কর্মক্ষেত্রে দৈনিক যাত্রা তাদের কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। সংক্রামিত হওয়ার পরেও সংক্রমণের লক্ষণগুলি প্রকাশ পেতে ১০-১৪ দিন সময় নিতে পারে, তবে, সংক্রামিত ব্যক্তি সংক্রামিত হওয়ার ২ দিন পর থেকেই এটি ছড়াতে শুরু করে। বেশিরভাগ রাজ্যের অপর্যাপ্ত কোভিড-১৯ পরীক্ষাকেন্দ্র সংখ্যা আর কম সংখ্যক পরীক্ষার কিটগুলির কারণে মোট সংক্রামিতের সংখ্যা প্রকাশ পায় না, অপরীক্ষিত থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে। অতএব, অপরীক্ষিত অপ্রকাশিত অথচ সংক্রামিত ব্যক্তিরা প্রায়শই কার্যকর পৃথকীকরণের সীমাবদ্ধতা এড়িয়ে গিয়ে বিশাল সংখ্যায় সংক্রমণ ছড়িয়ে দেয়।

ভারতের বিদ্যমান জনসংখ্যার ঘনত্বের সাথে, উচ্চ ঘনত্বযুক্ত রাজ্যগুলিতে সংক্রমণের আরও বেশি সম্ভাবনা থাকা উচিত ছিল, উদাহরণস্বরূপ, বিহার, উত্তরপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ যেখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব এবং এছাড়াও দৈনিক কর্মসূত্রে যাতায়াত করা মানুষের সংখ্যা যথেষ্ট পরিমাণে বেশি। তবে কেরল ও মহারাষ্ট্র রাজ্যে এর বেশি সংখ্যক সংক্রমণ দেখা গেছে। এখানে লক্ষ করা জরুরি যে, যে রাজ্যে বেশি সংখ্যক পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে, সেখানে সংক্রামিত ব্যক্তির সংখ্যা বেশি। সুতরাং, পরীক্ষামূলক কেন্দ্রগুলির উচ্চতর সংখ্যা রোগের দ্রুত সনাক্তকরণ এবং প্রারম্ভিক প্রতিক্রিয়ার গতি বাড়িয়ে দেশে সংক্রমণের হার  হ্রাস করতে সাহায্য করবে।

যেভাবে ছড়ায় কোভিড-১৯

একটি সংক্রামক রোগের বেসিক রিপ্রোডাকশন রেট বলতে বোঝায় একজন সংক্রামিত ব্যক্তি গড়ে কতজন ব্যক্তির মধ্যে এই সংক্রমণ ছড়িয়ে দিতে পারে। বেশ কিছু গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে এই কোভিড ১৯ রোগের বেসিক রিপ্রোডাকশন রেট সার্স (২০০২) রোগের থেকে বেশি যা অন্তত ২.৫ থেকে ৩.৫-এর মধ্যে থাকতে পারে কিন্তু দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার উপর নির্ভর করে এই সংখ্যা কম বেশি হতে পারে। ভারতের জন্য সম্ভবত এই রেট ২.৭৫-এর আশেপাশে থাকবে, যা এখনই সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়। উপরের চিত্রে আমরা দেখতে পাচ্ছি কীভাবে একজন আক্রান্ত ব্যক্তি অনেকের মধ্যে এই রোগ ছড়িয়ে দিতে পারে।

তবে ভারতে মোট সংক্রামিতের সংখ্যার পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে, চারটি পৃথক অবস্থার তুলনা করা হয়েছে। সংক্রামিত ব্যক্তিদের মধ্যে ১০০ শতাংশ কোয়ারানটেইনড, ৮০ শতাংশ কোয়ারানটেইনড, ৬০ শতাংশ কোয়ারানটেইনড এবং ৪০ শতাংশ কোয়ারানটেইনড। যদিও নীচের চিত্রে শুধুমাত্র ১০০ এবং ৪০ শতাংশ কোয়ারানটেইনড-এর তুলনা করা হয়েছে।

গাণিতিক মডেল থেকে দেখা যাচ্ছে, প্রাথমিক কয়েক দিনের জন্য সংক্রামিত ব্যক্তির সংখ্যা খুব বেশি গতিতে বাড়ছে না, যদিও একটা সময়ের পর সেটা খুব দ্রুত গতিতে বাড়ছে। ভারতে সংক্রমণের পূর্বাভাস ১লা এপ্রিল, ৭ই এপ্রিল, ১৪ই এপ্রিল, ২১শে এপ্রিল এবং ৩০শে এপ্রিল, ২০২০তে যথাক্রমে ১৮৮১, ৪৬৯৮, ১৩৬৬৪, ৩৯৭৪২ এবং ১৫৬৬৬২ যা ১০০ শতাংশ কোয়ারানটেইনড থাকলে হতে পারে। নয়তো সেই সংখ্যা ৪০ শতাংশ কোয়ারানটেইনড-এর ক্ষেত্রে পৌঁছে যেতে পারে যথাক্রমে ১৯২৫, ৫১৯১, ১৬৭৮০, ৫৪৪০৯ এবং ২৪৬৪৭০-তে। সুতরাং আংশিক কোয়ারানটাইন অর্থাৎ সমস্ত সম্ভাব্য সংক্রামিত ব্যক্তি নিজেদের আলাদা করে রেখে সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখলে তার ফল ধ্বংসাত্মক হতে পারে। তাই সংক্রামিত ব্যক্তিদেরকে শীঘ্রই সনাক্ত করতে হবে এবং তাদের সঙ্গে যোগসূত্র আছে এমন সমস্ত মানুষকে পৃথকীকরণের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রতিদিন যুক্ত হওয়া নতুন রোগীদের সংখ্যা যে হারে দিন দিন বাড়ছে এবং বাড়বে, তা আটকানোর একমাত্র উপায় হল নতুন সংক্রমণের সম্ভাবনাকে ধীরে ধীরে শূন্যে নামিয়ে আনা। যেহেতু একজন সংক্রামিত ব্যক্তির উপসর্গ দেখা যায় ১০-১৪ দিন পর, কিন্তু সে সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করে সংক্রামিত হওয়ার ২-৩ দিনের মধ্যে, তাই সম্ভাব্য সমস্ত সংক্রামিত ব্যক্তি এবং সমস্ত সুস্থ ব্যক্তিও যদি সম্পূর্ণভাবে পৃথকীকরণের মাধ্যমে এবং নিজেদের ঘরবন্দি রেখে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ানোকে আটকাতে পারে, তবেই একমাত্র আর দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর থেকে নতুন সংক্রমণের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাবে। যাইহোক, এটি একটি মৌলিক অনুমানের উপর দাঁড়িয়ে আছে যে দেশের সমস্ত সংক্রামিত ব্যক্তিকে সনাক্ত করা হবে এবং যথাযথ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, যা সংক্রমণ ছড়িয়ে দেওয়ার শৃঙ্খলা ভেঙে দেবে এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার তৃতীয় পর্যায়ের সংক্রমণ হারকে হ্রাস করবে। এবার এটাই এখন দেখার বিষয় যে ভারতের বর্তমান সামাজিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মুখে দাঁড়িয়ে যেখানে অনেক মানুষের নিজেদের খাবার জোগানোর জন্যই তাদের প্রতিদিন রাস্তায় বেরনোটা অনিবার্য, সেখানে প্রশাসন কী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে।