Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

ভারতের ব্যাঙ্কিং সঙ্কট ও কর্পোরেট ঋণ

শঙ্খশুভ্র বিশ্বাস

শঙ্খশুভ্র বিশ্বাস

 




লেখক ছাত্র আন্দোলনের কর্মী।

 

 

 

ইয়েস ব্যাঙ্কের সঙ্কট সারা ভারতকে বিস্মিত করেছে। ২০০২ সালে আড়ম্বরপূর্ণ যাত্রা শুরু করে সফলতার মিথ তৈরি করা নয়া-উদারবাদের এই পোস্টার বয় ২০২০ সালের মার্চ মাসে মুখ থুবড়ে পড়ে। মার্চের শুরুর দিকে জনগণের কাছে পরিষ্কার হয় ইয়েস ব্যাঙ্কের সাফল্যের গল্পের সঙ্গে বাস্তবের পার্থক্য ততটাই যতটা পার্থক্য স্বর্গ ও মর্ত্যের মধ্যে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার ঘোষণা থেকেই পরিষ্কার হয় যে এই ব্যাঙ্কটিকে পুনরুজ্জীবিত করার মত কোনও বিশ্বাসযোগ্য পরিকল্পনা ব্যাঙ্ক পরিচালকদের হাতে নেই এবং প্রত্যেকদিনের টাকা তোলার সীমা ৫০,০০০ টাকায় নামিয়ে আনার মধ্যে দিয়ে ব্যাঙ্কের সঙ্কটমুক্তি ঘটানোর গল্প আসলে মূল সমস্যা থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর জন্য কুমিরছানা দেখানো ব্যতীত অন্য কিছু নয়। এর আগে একটি লেখায় সাথী সুশোভন ধর তাঁর লেখার মধ্যে দিয়ে বিস্তারিতভাবে দেখিয়েছেন কীভাবে ইয়েস ব্যাঙ্কের পলিসিগত ও প্রশাসনগত অপদার্থতার কারণে সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে। কিন্তু সেই লেখার পরেও পাঠকের মনে একটি সাধারণ প্রশ্নের উদ্ভব হয়— শুধুই কি ইয়েস ব্যাঙ্ক, নাকি অন্য ব্যাঙ্কগুলির অবস্থাও একইরকম?

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে একটু ইতিহাসচর্চা করা যাক, দেখা যাক বর্তমান সময়ের মধ্যে ঘটে যাওয়া সব থেকে বড় অর্থনীতিক সঙ্কটের অবস্থা। ২০১৬ সালের প্রথম নরেন্দ্র মোদি সরকারের নেওয়া নোটবন্দির সিদ্ধান্তের সপক্ষে একাধিক যুক্তির পসরা সাজিয়ে হাজির হয়েছিল সরকার ও সরকারের প্রিয় মিডিয়া চ্যানেলগুলি। কিন্তু বাস্তবের সঙ্গে সেই গল্পের কোনও সম্পর্ক নেই। সরকারের বক্তব্য অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল— ১. কালো টাকার পরিমাণ কমাতে, ২. জাল টাকার সংখ্যা কমাতে এবং ৩. কাশ্মিরে সন্ত্রাসবাদ কমাতে। তৃতীয় পয়েন্টটি যে বাস্তবে কাশ্মিরের মানুষের স্বাধীনতার লড়াইকে ছোট করার পরিকল্পনা বাদে অন্য কিছু নয় তা পরিষ্কার। যাই হোক এবার যদি বাকি দুটি বিষয়কে খেয়াল করি তাহলে বলা যায় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার তথ্য অনুযায়ী ২০১৬ সালের আগে অর্থাৎ ২০১২ সালের পর থেকে ভারতে কালো টাকা বা জাল টাকার পরিমাণ কমছিল, ফলে আচমকা কালো টাকা বা জাল টাকা কমাতে এই ধরনের সিদ্ধান্তের কোনও বাস্তবিক প্রয়োজন ছিল না। তাহলে কেন এই সিদ্ধান্ত?

নোটবন্দির সময় বাজার থেকে তুলে নেওয়া টাকার থেকে পরবর্তী একমাসের জন্য মোট ছয় লক্ষ কোটি টাকা মার্কেট স্টেবিলাইজেশান স্কিমে (Market Stabilisation Scheme a.k.a MSS) গচ্ছিত রাখা হয় এবং তার পরের ছয় মাসের জন্য এই স্কিমে মোট এক লক্ষ টাকা গচ্ছিত রাখা হয়। এছাড়াও এই সময়ে হঠাৎ করেই ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (Cash Reserve Ratio a.k.a CRR) অর্থাৎ মোট পুঁজির যে অংশ সিকিউরিটি হিসেবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়াকে জমা রাখতে হয় তাঁর পরিমাণ এবং স্ট্যাচুটারি লিকুইডিটি রেশিও (Statutory Liquidity Ratio a.k.a SLR) অর্থাৎ ব্যাঙ্কের দৈনন্দিন কাজ চালাতে মোট পুঁজির যে অংশ ব্যাঙ্কে রাখতে হয় তার পরিমাণ সব ব্যাঙ্কের জন্যই হঠাৎ করে বাড়িয়ে দেওয়া হয়।

নরেন্দ্র মোদির বক্তব্য অনুযায়ী জাল টাকা, কালো টাকা বা সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে MSS, SLR ও CRR-এর কি আদতেই কোনও সম্পর্ক আছে? এই স্কিমগুলির সঙ্গে কোনও সম্পর্ক আছে কিনা সে সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করার আগে দেখে নেওয়া যাক এই স্কিমগুলোর কাজ কী।

CRR বা SLR কি তা প্রবন্ধের আগেই বলেছি, ফলে দুই ক্ষেত্রে টাকা জমা রাখার পরিমাণ বাড়িয়ে দিলে ব্যাঙ্কের ঋণপ্রদান ক্ষমতা কমে যায় কারণ ব্যাঙ্কের ঋণপ্রদান করার ক্ষমতা = [মোট পুঁজি – (CRR+SLR)]। ফলে এই দুই ক্ষেত্রে টাকার পরিমাণ বাড়িয়ে দিলে ঋণ দেওয়া যেমন কঠিন হয়ে যায় তেমনই বাজারে কাঁচা টাকার পরিমাণ কমে যায় কারণ বাজারে কাঁচা টাকার পরিমাণ নির্ভর করে ব্যাঙ্কের দেওয়া ঋণের সঙ্গে। এর ফলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায়। এছাড়াও মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কা যখন বাজারকে গ্রাস করে তখন বাজার থেকে টাকা তুলে নেওয়া হয় এবং সেই টাকাই গচ্ছিত রাখা হয় MSS স্কিমে। ফলে এই স্কিমগুলির কাজ থেকে এটা স্পষ্ট যে এই স্কিমগুলির সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ, কালো টাকা বা জাল টাকার কোনও সম্পর্ক নেই। আসলে ২০১৬ সালের শেয়ার বাজারে হয়ে যাওয়া ক্রাইসিসের ফলে এক ভয়ানক মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। ফলে সেই অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে বাঁচতে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল।

এই সঙ্কটের সময় ভারতের বড় বড় শিল্পপতিরা বিরাট আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয় এবং বর্তমানেও সেই ক্ষতির প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারেনি। যদিও কর্পোরেটবন্ধু সরকার কর্পোরেটদের পছন্দসই বাজেট, কর ছাড় সহ একাধিক উপায় নিয়ে হাজির হয়েছিল যথাসময়েই। তাছাড়াও সরকার বড় শিল্পের যথা মাইনিং, বিমানশিল্প, গাড়িশিল্প সহ ইত্যাদি অনেক ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (Foreign Direct Investment a.k.a FDI) করার ছাড় অবধি দিয়েছে। যদিও পৃথিবীর অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে  ১০০ শতাংশ FDI সেই দেশের ছোট ও মাঝারি শিল্পকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে এবং কোটি কোটি মানুষ যাদের জীবিকা ছোট ও অসংগঠিত ক্ষেত্রের শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিল তাঁরা চাকরি হারিয়েছে। ভারতের মত দেশে যেখানে মোট শ্রমিকের ৯৩% অসংগঠিত ও ছোট শিল্পের সঙ্গে যুক্ত, তাঁরা প্রত্যেকেই বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এবং শেষ ছয় বছরে ভারতে মোট নয় মিলিয়ন চাকরি উধাও হয়েছে। এই সময়ের মধ্যের বিপুল পরিমাণে কর্পোরেট ট্যাক্স ছাড় দেওয়ার জন্য ভারত সরকার মোট ফিস্কাল ডেফিসিট অর্জন করতে অনুত্তীর্ণ হয়েছে এবং এর ফলে পুঁজিপতিরা বিপুল পরিমাণে সম্পত্তি নিজেদের করায়ত্ত করে। ফলে ভারতে শ্রেণিদ্বন্দ্ব শিখরে পৌঁছায়। উদাহরণস্বরূপ একটা হিসাব দেওয়া যায়। ২০১৭ অর্থনৈতিক বছরে প্রত্যেক দু দিনে একজন বিলিওনিয়র তৈরি হয়; এবং একটি প্রধান সারির কোম্পানি যে টাকা বছরে উপার্জন করে সেই সমপরিমাণ টাকা উপার্জন করতে সরকার কর্তৃক অনুমোদিত ন্যূনতম বেতন পাওয়া একজন শ্রমিকের মাত্র ৯৪১ বছর লাগে।

ফলে সরকারের এই কর্পোরেটপ্রেমী সিদ্ধান্তগুলি কর্পোরেটদেরও বাঁচাতে অসফল হয় এবং ব্যাঙ্কগুলিরও Non Performing Asset (NPA)-এর পরিমাণ দ্রুত হারে বাড়তে শুরু করে।

নোটবন্দির পরবর্তী সময়ে সীমিত সময়ের জন্য জমা সমস্ত টাকা জমা যা ২০১৮ সালের ৩১শে মার্চ প্রাপককে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা ছিল তাঁর ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে পড়ে যায়। এমনকি ২০২০ সালে মোট প্রদেয় ঋণের ৪০ শতাংশ ইতিমধ্যেই খেলাপি ঋণ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং তারা তাদের ঋণের সুদ পর্যন্ত ফেরত দিতে পারেনি। ভারতের প্রধান শিল্প যেমন টেলিকমিউনিকেশান, ধাতু, শক্তি, বস্ত্র সহ খাতগুলি মোট ঋণখেলাপের মধ্যে ৬০ শতাংশের জন্য দায়ী। শেষ ১৫ বছরে ঋণখেলাপের পরিমাণ দ্রুত হারে বেড়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার তথ্য অনুযায়ী ২০০৫-০৬ সালে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৫০,০০০ কোটি টাকা এবং ২০১৯-২০২০ সালে এই পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০.৩৫ লক্ষ কোটি টাকা। যদিও এই সমসয়ার সমাধান করতে করতে সরকার জনস্বার্থবিরোধী Finance Resolution and Deposit bill সংসদে পেশ করলেও বিপুল জনরোষের কারণে আইন প্রণয়ন করতে অসফল হয়। যদিও এই অসফলতার মধ্যে দিয়েই বোঝা যাচ্ছিল যে ব্যাঙ্কগুলিকে সাময়িকভাবে পুনরুজ্জীবিত করতে এবার একাধিক ব্যাঙ্কের সংযুক্তিকরণের পথে হাঁটবে।

যে সমস্ত ব্যাঙ্কগুলির সংযুক্তিকরণ হবে তাঁর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ও মোট পুঁজিতে শতাংশের হিসেব:

Bank Gross NPA (INR) Percent of NPA
পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক ৭৮,৪৭২.৭০ ১৫.৫
ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া ৪৮,৭২৯.১৫ ১৪.৯৮
ওরিয়েন্টাল ব্যাঙ্ক অফ কমার্স ২১,৭১৭.০৭ ১২.৬৬
সিন্ডিকেট ব্যাঙ্ক ২৪,৬৮০.৩৭ ১১.৩৭
কানাড়া ব্যাঙ্ক ৩৯,২২৪.১২ ৮.৮৩
এলাহাবাদ ব্যাঙ্ক ২৮,৭০৪.৭৮ ১৭.৫৫
ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্ক ৮২০ ৭.৩৭
অন্ধ্র ব্যাঙ্ক ৯০৯১.৪০ ১৬.২১
কো-অপেরেশান ব্যাঙ্ক ২০৭২৩.৬৮ ১৫.৩৫
ইউনিইয়ন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া ৪৮৭২৯.১৫ ১৪.৯৮

 

ফলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দেখেই বোঝা যাচ্ছে এই সাময়িক পুনরুজ্জীবন সিদ্ধান্ত কোনওভাবেই ব্যাঙ্কগুলিকে বাঁচাতে পারবে না।

অর্থনৈতিক বছর ২০১৭-১৮ সালে বিভিন্ন রাজ্য সরকারগুলি সর্বমোট মাত্র ১,৮৪,০০০ কোটি টাকা কৃষি ঋণ মকুব করে নিজেদের কৃষকদরদি হিসেবে প্রমাণ করতে চাইলেও বাস্তবটা হচ্ছে বর্তমানে ভারতের প্রথম ১০ জন কর্পোরেটের খেলাপি ঋণের পরিমাণ মকুব করা কৃষি ঋণের চার গুণ এবং মোট খেলাপি ঋণের ১৫ শতাংশের জন্য দায়ী এই ১০ জন কর্পোরেট। ঋণ খেলাপ করা এবং সরকার মেনে নেওয়ার ফলে কর্পোরেটরা বিপুল পরিমাণে সম্পত্তি নিজের হস্তগত করেছে।

যদিও এই ঋণের সংখ্যাগুলি আমাদের হাতে আছে তবুও ব্যাঙ্ক ঋণ উদ্ধার করার জন্য সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে না। কারণ কর্পোরেটদের শক্তিশালী রাজনৈতিক যোগাযোগ। বর্তমানের সরকারে ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টিকে মোটা টাকা দেয় ভারতের সব চেয়ে বড় ঋণখেলাপিরা। 

কোম্পানি ঋণের পরিমাণ (কোটিতে)
আদানি পাওয়ার লিমিটেড ৩৭,৩৭৪
অনিল আম্বানি ৬৮০ মিলিয়ন ডলার
পুনিত গোয়েঙ্কা ১৩,৫০০
সুভাষ ছচন্দ্র (জী লিমিটেড) ২,০০০
ডি এইচ এফ এল ৪২,০০০
মুকেশ আম্বানি ২,৮৮,০০০

ঋণখেলাপিদের ভারতীয় জনতা পার্টিকে দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ২০১৯ লোকসভা ভোটের আগে

কোম্পানি প্রদেয় চাঁদা
ভারতী এয়ারটেল ৬৭,০০,০০০,০০
হিরো গ্রুপ
ডি এইচ এফ এল
ট্রিআম্ফ ইল্যেকটোরাল ট্রাস্ট ৫,০০,০০০,০০
আই টি সি ২৩,০০,০০০,০০
নির্মা ৫,০০,০০০,০০
প্রগতি গ্রুপ ৩,২৫,০০০,০০
মাইক্রো ল্যাব ৩,০০,০০০,০০
বি জি শিরকে কন্সট্রাকশান টেকনোলজি ১৫,০০,০০০,০০
যে ভি হোল্ডিংস ৫,০০,০০০,০০
সোমা ডিস্টিলারস ৪,২৫,০০০,০০
অনিল আম্বানি ২০,০০,০০০,০০
এসেল গ্রুপ ৪০,০০,০০০,০০
ডি এইচ এফ এল ১৯,৫০,০০০,০০

ইয়েস ব্যাঙ্ক সঙ্কটের কারণ হিসেবে যে সমস্ত ঋণখেলাপির নাম প্রধানত উঠে আসে তাঁরা হলেন অনিল আম্বানি, এসেল গ্রুপ, রেডিয়াস ডেভেলপারস, ক্যাফে কফি ডে ইত্যাদি এবং এরাই বিজেপিকে সবচেয়ে বেশি চাঁদা দেয়। যদিও সব জানা সত্ত্বেও সিবিআই এদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করতে পারেনি। আইনের শাসন থেকে সুরক্ষিত থাকার ফলে ভারতে প্রতিদিন NPA-র পরিমাণ বেড়েই চলেছে এবং প্রথম সারির সরকারি ব্যাঙ্কগুলির গড় স্ট্রেস ইনডেক্স ৮.১-এ পৌঁছে গেছে। বলে রাখি, এই স্ট্রেস ইনডেক্স ৬-এর বেশি থাকলে বোঝা যায় ব্যাঙ্ক যেকোনও সময় নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করতে পারে।

যদিও শুধু NPA না বর্তমানে ভারতের ভেঙে পড়া অর্থনীতির পেছনে অন্যতম গুরত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হল ননব্যাঙ্কিং ফিনান্সিয়াল সেক্টরগুলির মুখ থুবড়ে পড়া। ভারতের বর্তমানে উপস্থিত NBFCগুলি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পগুলিকেই প্রধানত ধার দিত। নোটবন্দি এবং জিএসটি-র ফলে সেই ক্ষুদ্র ও অসংগঠিত ক্ষেত্রগুলি ভেঙে পড়েছে, ফলে তারা ঋণ নেওয়া টাকা ফেরত দিতে পারছে না। এর ফলে বাজারে ক্রেডিটের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এছাড়াও গৃহনির্মাণ শিল্প ও ইনফ্রাস্ট্রাকচার ক্ষেত্রগুলি থেকে এক বিশাল সংখ্যক NPA তৈরি হচ্ছে। ফলে NBFCগুলির ভেঙে পড়ার মধ্য দিয়ে ভারতের অর্থনীতি আরও লবেজান হয়ে যাচ্ছে।

আমরা এগুলির থেকে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে বর্তমানে সরকারি ব্যাঙ্কগুলি এক মহা সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে এবং ইয়েস ব্যাঙ্কের এই ক্রাইসিস ডুবো পাহারের চূড়া মাত্র। এই সঙ্কট থেকে বাঁচতে ব্যাঙ্কের বৃহত্তর শেয়ারহোল্ডারদের অবিলম্বে বাজেয়াপ্ত, সমস্ত ক্ষেত্রে ছড়িয়ে থাকা ঋণখেলাপিদের সম্পত্তি বিনা ক্ষতিপূরণে অধিগ্রহণ, এবং সঞ্চয়, বিমা ও ঋণ প্রদানকারী ব্যবস্থা সহ সম্পূর্ণ ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার সামাজিকীকরণ করতে হবে। নতুবা সারা ভারতের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়বে।