Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

আনিসুজ্জামানের কাজের খোঁজে

আহমাদ মাযহার

 



লেখক প্রাবন্ধিক, গবেষক, শিশুসাহিত্যিক, অনুবাদক, সম্পাদক। সাংবাদিকতাও করেছেন কিছুকাল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় ঢাকা কলেজ থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে স্নাতক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর। শিক্ষা ও সংস্কৃতিধর্মী প্রতিষ্ঠান বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের গঠন যুগে দীর্ঘ ১৭ বছর কর্মরত  ছিলেন। বর্তমানে নিউ ইয়র্কবাসী।

 

 

 

বাংলাদেশের সাহিত্য-সংস্কৃতি-রাজনীতির ইতিহাসসূত্র, শ্রেণিকক্ষে আমার শিক্ষক আনিসুজ্জামান চলে গেলেন। তাঁর মৃত্যুতে জ্ঞানগত কারণে নির্ভরযোগ্য একটি উৎসের সঙ্গে ছিন্ন হয়ে গেল আমাদের যোগ। তাঁর মৃত্যুর খবরটা শোনার পর মুহূর্তেই স্যারকে নিয়ে অনেক স্মৃতি ভিড় করে এল মনে। তাঁর সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের প্রত্যক্ষ পরিচয়। প্রথম তাঁর সংস্পর্শে আসি ১৯৮৬ সালে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলাভবনের এমএ ক্লাসের ২০১৭ নম্বর শ্রেণিকক্ষে। ১৯৮৪ সেশনের ছাত্র হলেও সেশনজটে পড়ে প্রায় দুই বছর পিছিয়ে ছিলাম। আমাদের ক্লাস শুরু হবার মাত্র কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে এসেছিলেন আনিসুজ্জামান স্যার। আমার সৌভাগ্য, সরাসরি শ্রেণিকক্ষের ছাত্র হলাম তাঁর, আমার সে সময়ের নোটখাতায় দেখছি তাঁর সঙ্গে প্রথম ক্লাস ছিল ১৩ জানুয়ারি, ১৯৮৬।

আমরা ছিলাম সনাতন পদ্ধতির ছাত্র। ঢাকা কলেজ থেকে স্নাতক-সম্মান করে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই! আমাদের তিনি পড়িয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথের বলাকা আর বঙ্কিমচন্দ্রের দুর্গেশনন্দিনী, কপালকুণ্ডলামৃণালিনী উপন্যাস। এ কথা ঠিক যে, শ্রেণিকক্ষে অল্পকালের ছাত্রত্বে আমি স্যারের কাছ থেকে যতটা না নিতে পেরেছি তার চেয়ে বেশি নিয়েছি জীবনের বিচিত্র পর্বে। নব্বইয়ের দশকে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের নির্দেশনায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থেকে নানা ধরনের ছোট ছোট সেমিনারের আয়োজন করতাম আমরা। প্রায়শই স্যারকে আমন্ত্রণ জানাতে হত কথা বলবার জন্য বা সভাপতিত্ব করবার জন্য। সেই সূত্রেই তাঁর সাহচর্য পাওয়ার শুরু। পরে আরও নানা কাজে যুক্ত হয়েছি বা তাঁর কাছে গেছি। স্যারের সঙ্গে আমার সাম্প্রতিকতম কাজ রবীন্দ্র-সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ পর্ব। তাঁর নেতৃত্বেই বেসরকারি এই বিশ্ববিদ্যালয়টি সরকারি অনুমোদন পায়। অনুমোদন পাওয়া-পর্বের কাজগুলোর পুরোটাই আমি সমন্বয় করতাম স্যারের নির্দেশনায়।

আমার সাহিত্যচর্চাকেও আনিসুজ্জামান প্রভাবিত করেছেন নানারকম দায়িত্ব দিয়ে। বন্ধু মোহাম্মদ শাকেরউল্লাহ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ২০০৪ সালে আমি যখন হুমায়ুন কবিরের নদী ও নারী উপন্যাস নিয়ে একটি সমালোচনা-প্রবন্ধ লিখি তার পরপর ২০০৬ সালে ছিল হুমায়ুন কবিরের জন্মশতবর্ষ। তাঁর জন্মশতবর্ষ উদযাপনের জন্য দেশের বিদ্বৎসমাজের একটি উদযাপন কমিটি গঠনের কথা ভাবা হয়। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাভাবিকভাবেই আনিসুজ্জামান স্যারেরই এইসব উদ্যোগে থাকবার কথা। হুমায়ুন কবিরের ভ্রাতুষ্পুত্রী খুশী কবির তাঁর ওপরই নির্ভর করেছিলেন উদ্যোগটি বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য। স্যার ঐ কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আমার নাম প্রস্তাব করেন। ঐ কমিটির সবচেয়ে প্রবীণ সদস্য ছিলেন কবি আবুল হোসেন আর কনিষ্ঠতম ছিলাম আমি। সবচেয়ে প্রবীণ ও হুমায়ুন কবিরের ঘনিষ্ঠদের মধ্যে জীবিত কবি আবুল হোসেনকে সবাই মিলে সভাপতি নির্বাচন করেন। স্যারের প্রস্তাবে আমাকে দেওয়া হয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব। শুধু তাই নয় হুমায়ুন কবিরকে নিয়ে একটি স্মরণিকা সম্পাদনা ও প্রকাশের দায়িত্ব সহ তাঁকে নিয়ে মূল প্রবন্ধ লেখার দায়িত্বও স্যারের প্রস্তাবে দেওয়া হয় আমাকেই। সে আয়োজন পালিত হয়েছিল অত্যন্ত সফলভাবে। অনেক পরে, ২০১৬ সালের দিকে রবীন্দ্র-সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে তাঁর সঙ্গে কাজ করার সময় একদিন তিনি আমাকে জানিয়েছিলেন হুমায়ুন কবিরকে নিয়ে আমার লেখাটি বেশ ভালো হয়েছিল। আমি নিউইয়র্কে চলে আসার পর কবি মারুফুল ইসলামের সৌজন্যে প্রতি ফেব্রুয়ারিতে দেশে গেলে তাঁর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। এবারও ২ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমির অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্যার সভাপতিত্ব করলেন। আমি উপস্থিত ছিলাম সেখানে। পরে ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ক্লাবে তাঁর সঙ্গে দেখা হল, কথাও হল সামান্য। সেটাই ছিল শেষ দেখা।

বছরদুয়েক আগে তাঁর একটি কর্মপঞ্জি রচনা করেছিলাম। স্যার নিজে দেখেছিলেন সেটা। পরে তাঁর নির্দেশনায় দু-একটি তথ্য সংশোধনও করে নিয়েছিলাম। সেই কর্মপঞ্জিকে আরও একটু হালনাগাদ করে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি!

আমাদের কৈশোরোত্তীর্ণ বয়স থেকেই বাংলাসাহিত্য-গবেষণার ক্ষেত্রে যে দু-একজনের নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত হতে শুনেছি তাঁদের মধ্যে আনিসুজ্জামান একজন। তিনি কেবল সাহিত্য-গবেষকই নন, বাংলাদেশের মধ্যবিত্তীয় নাগরিক-সংস্কৃতি ও সামাজিক ইতিহাসের একজন অংশী, সাক্ষী এবং বিশ্লেষক। একদিকে তিনি সাংস্কৃতিক-আন্দোলনের তাত্ত্বিক ও কর্মী, শ্রেণিকক্ষে সাহিত্যের শিক্ষক আর অন্য দিকে শ্রেণিকক্ষের বাইরে সামাজিক এলিট। সামগ্রিক দৃষ্টিতে আনিসুজ্জামানের সত্তাকে আরও নির্দিষ্ট করতে চাইলে বলা যায় তাঁর ব্যক্তিত্বের এই দুই মাত্রার একটি বিদ্যায়তনিক, অন্যটি সামাজিক। দুই ক্ষেত্রেই তিনি বাংলাদেশে এতটাই অনিবার্য ছিলেন যে তাঁকে ছাড়া প্রায় চলতই না। বিদ্যায়তনিক কাজে যদি তিনি নিবিষ্ট থাকতে পারতেন তাহলে হয়তো বাংলার সাহিত্য-ইতিহাসের অনেক জটিল প্রশ্নের মীমাংসা ঘটত। আবার সামাজিক ক্ষেত্রে তাঁর মতো পরিমিত, সংস্কৃত, সময়ানুবর্তী, বিবেচক ও ভারসাম্যময় মানুষের এতটাই অভাব যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে দাবি জন্মেছে তাঁর ওপর। তাঁর এই দুই সত্তার গুরুত্ব মেনে নিয়েও অনেককে এই বলে খেদোক্তি করতে শুনেছি যে, বিদ্যায়তনিক ক্ষেত্রে অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের কাছ থেকে আরও অনেক কিছু পাওয়া সম্ভব ছিল; এই ক্ষেত্রে তাঁর উপেক্ষা আমাদের বঞ্চিত করেছে। সামাজিক দায় মেটাতে গিয়ে বিদ্যায়তনিক ক্ষেত্রে যোগ্যতার তুলনায় সময়াভাবে প্রায় কিছুই করতে পারলেন না তিনি।

আনিসুজ্জামান সরাসরি শ্রেণিকক্ষে আমার শিক্ষক ছিলেন মাত্র অল্পদিনের জন্য। কিন্তু শ্রেণিকক্ষ পরবর্তীকালেই তাঁকে আমি শিক্ষক হিসেবে বারবার পাই। সামাজিক নানা ভূমিকার সূত্রে কখনও তাঁর ভূমিকা হয় আমাদের ভাবনানুকূল, কখনও-বা হয় আমাদের প্রত্যাশার বাইরে। কিন্তু তাঁর সিদ্ধান্তের পক্ষে-বিপক্ষে গিয়ে আমরা আমাদের চিন্তাকে যে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি সেটাই আমার মনে হয় শিক্ষক হিসেবে তাঁর কাছে আমার প্রাপ্তি। শিক্ষক হিসেবে, লেখক হিসেবে, সামাজিক মানুষ হিসেবে তাঁর ভূমিকা বিচিত্র। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক স্বীকৃতিও তিনি পেয়েছেন। কিন্তু সেগুলো তাঁর নামকে গণমাধ্যমের কাছে যতটা প্রিয় করে তুলেছে ততটা তাঁর কাজ সম্পর্কে সমাজকে অবহিত করতে পারেনি। তাঁর অতি প্রিয় নিকটজনের সঙ্গে কথা বলেও দেখেছি বাংলাদেশের জ্ঞানগত ক্ষেত্রে তাঁর অবদান কতটা সে সম্পর্কে সামান্যই অবহিত। অন্তত তাঁর সম্পর্কিত প্রাথমিক তথ্যগুলো জানার উপায় থাকলে কেউ তাঁকে গভীরতরভাবে অনুধাবন করতে চাইলে তা করা যাবে বলে আমার ধারণা। এই রচনায় তাঁকে মূল্যায়ন করার চেষ্টা করা হয়নি। কেবল যেসব তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তাঁকে ভবিষ্যতে মূল্যায়ন করা হতে পারে তার কিছু সূত্র এখানে ধারণ করার মধ্য দিয়ে তাঁর কর্ম সম্পর্কে অবহিতির একটি ধাপ রচনা করার চেষ্টা করা হল মাত্র।

আনিসুজ্জামানের জন্ম ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের ১৮ ফেব্রুয়ারি, কলকাতার পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগণা জেলার বসিরহাটে। তাঁর বাবা এটিএম মোয়াজ্জেম ছিলেন বিখ্যাত হোমিও চিকিৎসক। গৃহিণী হলেও মা সৈয়দা খাতুন লেখালেখি করতেন। পিতামহ শেখ আবদুর রহিম ছিলেন বিখ্যাত লেখক ও সাংবাদিক। তাঁর পিতামহ সম্পর্কে শুধু এটুকু বলাই যথেষ্ট নয়। তাঁকে বাঙালি মুসলিম সমাজের রেনেসাঁসের প্রাথমিক পর্যায়ের অন্যতম প্রতিভূ বলাই সঙ্গত হবে। আমি নিজে আনিসুজ্জামানের নাম জানার আগেই তাঁর পিতামহ সম্পর্কে জেনেছিলাম বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত শেখ আবদুর রহিম গ্রন্থাবলির একটি খণ্ডের সূত্রে। ঐ খণ্ডে হযরত মুহম্মদ (স.)-এর একটি জীবনীধর্মী বই সঙ্কলিত হয়েছিল। পরে খোঁজ করে দেখেছি যে আমি শেখ আবদুর রহিমের ‘হজরত মুহম্মদ স.: জীবনচরিত ও ধর্মনীতি’ বইটি পাঠ করেছিলাম। উল্লেখ্য যে, কোনও বাঙালির লেখা এটিই হজরত মুহম্মদের প্রথম জীবনী। একজন বড় মাপের লেখক ছিলেন শেখ আবদুর রহিম। তাঁর নাতির তো আরও বিখ্যাত হয়ে উঠবারই কথা। আনিসুজ্জামান সম্পর্কে জানবার পর এমন একটা প্রত্যাশাও আমাদের মনে জেগে ওঠা স্বাভাবিক।

আনিসুজ্জামান বাংলার মুসলিম আধুনিকতামুখী মধ্যবিত্ত সমাজের প্রথম প্রজন্মের উত্তরাধিকার বহন করছেন। তাঁর বড় বোনও নিয়মিত কবিতা লিখতেন। এ থেকেও বোঝা যাচ্ছে, পরিবারে আধুনিকতার হাওয়া বেশ প্রবল হয়ে উঠেছিল। শিল্প-সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যসমৃদ্ধ এই রকম পরিবারের পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি তিন বোনের ছোট, ভাইদের মধ্যে সবার বড়।

আনিসুজ্জামানের শিক্ষাজীবন বর্ণাঢ্য। তৃতীয় থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত কলকাতার পার্ক সার্কাস হাইস্কুলে পড়েছেন। দেশভাগের পরে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হন খুলনা জেলা স্কুলে। পরের বছরই পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় এসে প্রিয়নাথ হাইস্কুলে (পরে নাম বদলে হয় নবাবপুর গভর্নমেন্ট হাইস্কুল) ভর্তি হন। এখানেই পড়েন ১৯৫১ সালে প্রবেশিকা বা ম্যাট্রিক পাশ করা পর্যন্ত। এরপর তিনি জগন্নাথ কলেজ থেকে ১৯৫৩ সালে আইএ পাস করেন। ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্স এবং ১৯৫৭ সালে একইভাবে এমএ পাস করেন। ১৯৫৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলা একাডেমির প্রথম গবেষণা বৃত্তি পান। কিন্তু এক বছর পরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে বাংলা একাডেমির বৃত্তি ছেড়ে শিক্ষক হিসেবে সেখানে যোগ দেন। এর আগে ‘নীলকান্ত সরকার’ বৃত্তি লাভ করেন সম্মান পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার কৃতিত্বস্বরূপ। পরে পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের গবেষণা বৃত্তি পান। ‘ইংরেজ আমলের বাংলা সাহিত্যে বাঙালি মুসলমানের চিন্তাধারা ১৭৫৭-১৯১৮’ বিষয়ে ১৯৫৮ সালে গবেষণা শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬২ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। পোস্ট-ডক্টরাল ফেলো হিসেবে বৃত্তি নিয়ে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে যান ১৯৬৪ সালে। ডিগ্রি সম্পন্ন হয় ১৯৬৫-তে। গবেষণার বিষয় ‘উনিশ শতকের বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাস: ইয়ং বেঙ্গল ও সমকাল’।

আনিসুজ্জামান ছিলেন ঢাকা ও চট্টগ্রাম দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী শিক্ষক। মাত্র ২২ বছর বয়সে ১৯৫৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা জীবনের শুরু। ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষ অনুষ্ঠানের তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণকারী। ১৯৬৯ সালের জুন মাসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন বাংলা বিভাগের রিডার হিসেবে। ১৯৭১ সালের ৩১ মার্চ ভারতে যান মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে। প্রথমে দায়িত্ব পালন করেন শরণার্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক হিসেবে। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মুজিবনগর সরকারের নানা দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা ১৯৫০ থেকে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হন। এর পর ১৯৭৪-৭৫ সালে কমনওয়েলথ অ্যাকাডেমি স্টাফ ফেলো হিসেবে তিনি গবেষণা করেন লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ বিভাগে (SOAS)। জাতিসঙ্ঘ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা-প্রকল্পে অংশ নেন ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম থেকে তিনি আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসেন। সেখান থেকে অবসর নেন ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে। পরে আবার যুক্ত হন সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক হিসেবে। তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের প্রফেসর এমেরিটাস, ছিলেন মওলানা আবুল কালাম আজাদ ইনস্টিটিউট অফ এশিয়ান স্টাডিজ (কলকাতা), প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় এবং নর্থ ক্যারোলাইনা স্টেট ইউনিভার্সিটির ভিজিটিং ফেলো। এছাড়াও তিনি নজরুল ইনস্টিটিউট ও পরে আমৃত্যু বাংলা একাডেমির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৮ সালের ১৯ জুন বাংলাদেশ সরকার তাঁকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়। সূচনা থেকেই তিনি বেঙ্গল ফাউন্ডেশন প্রকাশিত শিল্পকলা বিষয়ক ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘যামিনী’ এবং আমৃত্যু বাংলা মাসিকপত্র ‘কালি ও কলম’-এর সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তাঁর জীবনকালে সবগুলো জাতীয় আন্দোলনে যথা মহান ভাষা আন্দোলন, রবীন্দ্র-উচ্ছেদ বিরোধী আন্দোলন, রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন এবং ঐতিহাসিক অসহযোগ আন্দোলনে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন।

আনিসুজ্জামান রচিত বইয়ের সংখ্যা বেশি নয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও যদি জানতে চাওয়া হয় কী কী বই তিনি লিখেছেন তাহলেও ঠিকঠাক মতো এর জবাব সংগ্রহ করা বেশ কঠিন মনে হতে পারে। মোটামুটি সম্পন্ন তথ্যের জন্যও হয়তো চোখের মাথা খেয়ে তাঁরই শরণাপন্ন হওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না! তথ্য সংরক্ষণে তাঁর শৃঙ্খলাবোধ শিক্ষণীয়। এত ব্যস্ততার মধ্যেও তাঁকে কোথায় কোন অনুষ্ঠানে যেতে হবে তার তথ্য যেমন তিনি রক্ষা করতেন তেমনি কোথায় কী করলেন সে তথ্যও তিনি সবসময় হালনাগাদ করে রাখতেন। বাংলাদেশের সারস্বত সমাজের মানুষের টেলিফোন নম্বর সংরক্ষণের জন্য যেমন তাঁর নিজস্ব তথ্যপুস্তক আছে তেমনিভাবে ভারতীয় সারস্বত ব্যক্তিবর্গের জন্য রয়েছে আলাদা খাতা; তেমনটিই রয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের বাইরের ব্যক্তিবর্গের জন্যও। এই যে সুশৃঙ্খল তথ্যবিন্যাসের অনুশীলন এটি তাঁর গবেষকসত্তারই একটি দিক। তাঁর কাছ এটিও এক শিক্ষণীয় বিষয়। দৃষ্টান্ত হিসেবে এই রচনার পাঠকদের মনে করিয়ে দিই যে, তাঁর সংরক্ষিত তথ্যের সুশৃঙ্খল উপস্থাপনাই কালে এমন একটি গ্রন্থের রূপ পেয়েছে যা এখনও বাংলাদেশের বিদ্যোৎসাহী অনেকের কাছেই প্রাথমিক আকরগ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত। আমি তাঁর রচিত মুসলিম বাংলার সাময়িকপত্র বইটির কথা বলছি। এটি তাঁর ‘ইংরেজ আমলের বাংলা সাহিত্যে বাঙালি মুসলমানের চিন্তাধারা ১৭৫৭-১৯১৮’ শীর্ষক গবেষণার বিবর্তিত রূপ মুসলিম মানস ও বাংলাসাহিত্য রচনার উপজাত তথ্যাদির সুশৃঙ্খল উপস্থাপনা। প্রসঙ্গত সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য বলা যায় যে তাঁর কাল নিরবধি বা বিপুলা পৃথিবী বইয়ে যতগুলো ঘটনার উল্লেখ আছে এবং তাতে তাঁর অংশগ্রহণের তথ্য এমন নৈর্ব্যক্তিক ও নিখুঁতভাবে উপস্থাপন করা আছে যে বিস্মিত হতে হয়। এর মধ্য থেকে আনিসুজ্জামানের ইতিহাসচেতন মনের পরিচয় পাওয়া যায়।

 

আনিসুজ্জামানের প্রকাশিত গ্রন্থাবলি

গবেষণা ও প্রবন্ধ

মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য (১৯৬৪),
মুসলিম বাংলার সাময়িকপত্র (১৯৬৯),
মুনীর চৌধুরী (১৯৭৫),
স্বরূপের সন্ধানে (১৯৭৬),
Factory Correspondence and other Bengali Documents in the India official Library and Records (১৯৮১),
Social Aspects of Endogenous Intellectual Creativity (1983),
আঠারো শতকের বাংলা চিঠি (১৯৮৩),
পুরোনো বাংলা গদ্য (১৯৮৪),
মোতাহের হোসেন চৌধুরী (১৯৮৮),
Creativity, Reality and Identity (১৯৯৩),
Cultural Pluralism (1993),
Identity, Religion and Recent History (১৯৯৫),
আমার একাত্তর (১৯৯৭),
মুক্তিযুদ্ধ এবং তারপর (১৯৯৮),
আমার চোখে (১৯৯৯),
বাঙালি নারী: সাহিত্যে ও সমাজে (২০০০),
পূর্বগামী (২০০১),
কাল নিরবধি (২০০৩),
বাঙালি সংস্কৃতি ও অন্যান্য (২০১২),
ইহজাগতিকতা ও অন্যান্য (২০১২) [কলকাতা],
সংস্কৃতি ও সংস্কৃতি সাধক (২০১৩),
বিপুলা পৃথিবী (২০১৫),
বাঙালি ও বাংলাদেশ (২০১৬) [কলকাতা],
তাঁর সৃষ্টির পথ (২০১৬)।

এর মধ্যে কলকাতা থেকে প্রকাশিত বইদুটি এবং আরও দু-একটি বই তাঁর পূর্বপ্রকাশিত বই থেকে নির্বাচন করা রচনার বিষয়ভিত্তিক নতুনতর উপস্থাপনা। বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত এ ধরনের আরও দুই-একটি বইয়ের নাম এখানে উল্লিখিত না হয়ে থাকতে পারে।

ছোটদের জন্য লেখা

মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (১৯৮৩),
কত কাল ধরে (২০০০),
আবদুল্লাহ আল মুতী (২০১০),
কথার কথা (২০১৭)।

বিদেশি সাহিত্য অনুবাদ

অস্কার ওয়াইল্ড। অস্কার ওয়াইল্ডের An Ideal Husband-এর বাংলা নাট্যরূপ ‘আদর্শ স্বামী’ (১৯৮২),
আলেক্সেই আরবুঝুভের An Old World Comedy-র বাংলা নাট্যরূপ ‘পুরনো পালা’ (১৯৮৮)।

একক ও যৌথ সম্পাদনা গ্রন্থ

রবীন্দ্রনাথ (১৯৬৮),
বিদ্যাসাগর-রচনা সংগ্রহ (যৌথ, ১৯৬৮),
Culture and Thought (যৌথ, ১৯৮৩),
মুনীর চৌধুরী রচনাবলী ১-৪ খণ্ড (১৯৮২-১৯৮৬),
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড (যৌথ, ১৯৮৭),
অজিত গুহ স্মারকগ্রন্থ (১৯৯০),
স্মৃতিপটে সিরাজুদ্দীন হোসেন (১৯৯২),
শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মারকগ্রন্থ (১৯৯৩), নজরুল রচনাবলী ১-৪ খণ্ড (যৌথ, ১৯৯৩),
SAARC: A People’s Perspective (১৯৯৩),
Creativity, reality, and identity (১৯৯৩),
শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের আত্মকথা (১৯৯৫),
মুহম্মদ শহীদুল্লাহ রচনাবলী (১ ও ৩ খণ্ড, ১৯৯৪-১৯৯৫),
নারীর কথা (যৌথ, ১৯৯৪),
ফতোয়া (যৌথ, ১৯৯৭),
মধুদা (যৌথ, ১৯৯৭),
আবু হেনা মোস্তফা কামাল রচনাবলী (১ম খণ্ড, যৌথ ২০০১),
ওগুস্তে ওসাঁর বাংলা-ফরাসি শব্দসংগ্রহ (যৌথ ২০০৩),
আইন-শব্দকোষ (যৌথ, ২০০৬),
Bangladesh: Six Decades 1947-2007 (যৌথ, ২০১০),
মুক্তির সংগ্রাম (২০১২),
সার্ধশতবর্ষে রবীন্দ্রনাথ: বাংলাদেশের শ্রদ্ধাঞ্জলি [বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ কলকাতা থেকে প্রকাশিত] ২০১২,
প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম (পরিমার্জিত সংস্করণ, ২০১২),
জ্ঞানতাপস আবদুর রাজ্জাক স্মারকগ্রন্থ (২০১২),
Festivals Of Bangladesh (যৌথ, ২০১৬),
বাংলাভাষার প্রয়োগ অপপ্রয়োগ (যৌথ, প্রথম মাটিগন্ধা সংস্করণ, ২০১৬, বইটির প্রথম সংস্করণ বাংলা একাডেমি থেকে নব্বইয়ের দশকে প্রকাশিত হয়েছিল)।

অ্যাডর্ন পাবলিকেশনের সাহিত্যকীর্তি গ্রন্থমালার আওতায় তাঁর পরিকল্পিত ২৪টি বইয়ের মধ্যে ২০ বইয়ের ভূমিকা লিখতে সক্ষম হয়েছিলেন। সেই ২০টি বই নিম্নরূপ:

টেকচাঁদ ঠাকুরের আলালের ঘরের দুলাল (২০০৯),
প্যারীচাঁদ মিত্রের হুতোম প্যাঁচার নকশা (২০০৯),
ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কল্পতরু (২০০৯),
ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের কঙ্কাবতী (২০০৯),
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের শকুন্তলা (২০০৯),
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কৃষ্ণকান্তের উইল (২০০৯),
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গোরা (২০০৯),
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের শ্রীকান্ত (২০০৯),
কাজী ইমদাদুল হকের আবদুল্লাহ (২০০৯),
মোহাম্মদ নজিবর রহমানের আনোয়ারা (২০১২),
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালী (২০০৯),
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদ্মানদীর মাঝি (২০০৯),
তারকনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বর্ণলতা (২০১২),
রমেশচন্দ্র দত্তের বঙ্গবিজেতা,
কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুক্ষুধা (২০১১),
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর লালসালু (২০১২),
বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের নীলাঙ্গুরীয় (২০১২),
প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের রত্নদ্বীপ (২০১২)।

তাঁর রচিত ও যৌথভাবে সম্পাদিত আরও কোনও কোনও বইয়ের নাম বাদ পড়ে যাওয়ার কথা; কয়েকটি সিরিজ গ্রন্থ তিনি সম্পাদনা করেছেন সেগুলোর কথাও যেমন এখানে উল্লেখ করা সম্ভব হয়নি তেমনি তাঁর রচিত কোনও কোনও সেমিনারপত্রের নামও বাদ পড়ে যাওয়া সম্ভব।

স্মারক বক্তৃতা

এশিয়াটিক সোসাইটিতে (কলকাতা) ইন্দিরা গান্ধি স্মারক বক্তৃতা ১৯৯১,
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শরৎচন্দ্র স্মারক বক্তৃতা,
নেতাজী ইনস্টিটিউট অফ এশিয়ান অ্যাফেয়ার্সে নেতাজী স্মারক বক্তৃতা,
অনুষ্টুপের উদ্যোগে সমর সেন স্মারক বক্তৃতা এবং
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁ স্মারক বক্তৃতা  প্রদান (১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫)।

পুরস্কার ও সম্মাননা

নীলকান্ত সরকার স্বর্ণপদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৫৬),
স্ট্যানলি ম্যারন রচনা পুরস্কার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৫৮),
দাউদ পুরস্কার (১৯৬৫),
বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭০),
অলক্ত পুরস্কার (১৯৮৩),
একুশে পদক (১৯৮৫),
অশোককুমার স্মৃতি আনন্দ পুরস্কার (১৯৯৪),
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডি.লিট (২০০৫),
ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল পুরস্কার-২০১২ (বাঙালি সংস্কৃতি ও অন্যান্য বইয়ের জন্য),
পদ্মভূষণ পদক (২০১৪),
স্বাধীনতা পুরস্কার ২০১৫,
আনন্দ পুরস্কার ১৪২৩ (২০১৭),
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগত্তারিণী পদক (২০১৮),
শিক্ষাক্ষেত্রে অনন্য অবদানের জন্য খান বাহাদুর আহছানউল্লা স্বর্ণপদক (২০১৯),
সার্ক কালচারাল সেন্টারের সার্ক সাহিত্য পুরস্কার ২০১৯।

তাঁর প্রাপ্ত পুরস্কারের যথাযথ তালিকা প্রস্তুত করাও এক সাধনার ব্যাপার। এখানে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি মাত্র পুরস্কারের উল্লেখ করা সম্ভব হল।

আনিসুজ্জামানের একটি সংক্ষিপ্ত তথ্যপঞ্জি প্রণয়ন করতে গিয়ে বর্তমান লেখককে হিমসিম খেতে হয়েছে। লেখকের অনুভবে এ বোধ জন্মেছে যে এটি নিতান্তই অসম্পূর্ণ। কত অনুষ্ঠানে তিনি সভাপতিত্ব করেছেন তার সন্ধানও একটা কঠিন গবেষণার ব্যাপার। সকলের সামনে থাকা তাঁর মতো দীপ্যমান একজন মানুষের একটি চলনসই জীবনতথ্যের সংকলন প্রণয়ন করাও যে কত কঠিন তা আমার উপলব্ধিতে এসেছে। মনে হয়েছে এমন সক্রিয় ও কৃতি মানুষদের সংক্ষিপ্ত জীবনী সবসময় হালনাগাদ করার দায়িত্ব কোনও-না-কোনও প্রতিষ্ঠানের থাকা উচিত। এই বোধ সর্বদা জাগ্রত রাখবার জন্যই অব্যাহত রাখা উচিত আনিসুজ্জামানের মতো মানুষদের জীবনী রচনা।

 

তথ্যসূত্র