Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

আমেরিকাতে কালো বিদ্বেষ! আমরা পিছিয়ে নাকি?

পারভেজ খান

 

এখানে বসে আমেরিকায় ঠিক কি হচ্ছে পুরোটা বোঝা বেশ কঠিন। সংবাদপত্রের শিরোনাম দেখে মনে হচ্ছে অনেক জটিল। কালো মানুষ হত্যা ও তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ফুঁসছে সে রাষ্ট্রের বহু মানুষ। শোনা যাচ্ছে প্রায় দাঙ্গা পরিস্থিতি, আর কিছু সুবিধাবাদী অতি উত্তেজিত মানুষ প্রতিবাদীদের দলে ভীড়ে গিয়ে দোকান বাড়ি এসব লুটপাট চালাচ্ছে। এগুলো তখন সম্ভব যখন আন্দোলোনে নেতৃত্ব সবার হাতে চলে যায়! এ অবস্থায় এটা আরো বেশি করে প্রমাণ করা সম্ভব হয় যে কালো মানুষেরা দাঙ্গাবাজ! সেটা ছড়ানো ও মানুষের মনে বসিয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট হয়। আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ব্যহত হয়। কিন্তু আসলেই হয়ত আন্দোলনের বৃহৎ অংশের মানুষ ওই ঘটনা গুলো করে থাকেন না, সমর্থন ও করেন না। ভারতে ঘটে চলা বিভিন্ন আন্দোলনের পরিপেক্ষিতেও এই কথাগুলি একইরকম সত্য।

মার্টিন লুথার কিং এর কথা মনে পড়ছে।নোবেলজয়ী মানবাধিকার কর্মী।কালো চামড়ার মানুষের অধিকার নিয়ে যিনি বরাবর লড়াই করে এসেছিলেন। যিনি নিজের হত্যা হতে পারে আন্দাজ করেও অধিকার রক্ষার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। দু বছর আগে তার হত্যার ৫০ বছর ছিল, সেটাকে স্মরণ করে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করা হয় সে দেশে, কিন্তু একটা রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৩-২০১৯ অবধি ৭৬৬৬ জন কে হত্যা করা হয়, শুধু জর্জ নয়। মাত্র ১৩% মোট কালো মানুষের বাস হলেও, তাদের পুলিশি অত্যাচারে মৃতের সংখ্যা সাদা চামড়ার মানুষের থেকে প্রায় ২.৫ গুণ বেশি। কিছু কিছু অঞ্চলে আরো বেশি, যেমন মিনেসোটাতে যেখানে জর্জের বাড়ি সেখানে ৪ গুণ।

শুধুই কালো বিদ্বেষ? সারা পৃথিবী এসময় উগ্র, নগ্ন জাতীয়তাবাদীদের উত্থানের গল্প বলছে। প্রায় সব রাষ্ট্রনায়করা নিজ নিজ রাষ্ট্রে কোনো এক এক জাতির শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে ব্যস্ত। এক দিয়েই নিজেকে চেনানোর সুব্যবস্থা। আমরা ফেসবুকে যখন এই পোস্ট লিখছি তখন কি আমরা স্মরণ করছি- যখন কলকাতাতে উত্তরপূর্ব ভারতের মানুষ কে চীনা বলে নিগ্রহ করার ঘটনা কে? দিল্লি পড়তে যাওয়া আসাম, মনিপুর, মিজোরামের মানুষদের নিগ্রহ করা নতুন ঘটনা নয়! এমনকি খোদ দার্জিলিং কালিম্পং কার্শিয়াং এ বসবাসকারী দের কে চিংকি বলা কি থামিয়েছি? উত্তর একটা বড় “না”!আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে যারা এখানে আসে বিভিন্ন কারণে, তাদের উপর জনরোষ নেমে এসেছে বারবার, হ্যা এখানেই- এই ভারতেই।

রেসিজম কি? সংজ্ঞা বলছে- এটি একটি বিশ্বাস যা আমার থেকে ভিন্ন দেখতে বা ভিন্ন আচরণ যুক্ত কেউ হলে তাকে অন্যরকম মনে করা এবং সে বা তারা অন্যরকম ক্ষমতার অধিকারী ধরে নেওয়া। তার থেকেই আসে ভয় আর তা থেকে আক্রমণ, নিগ্রহ, পিটিয়ে মারা প্রভৃতি। তবে এর শিকড় অনেকটাই গভীরে- হয়তা বা পরিবার থেকেই এবং তা আরও মদত পায়, রাষ্ট্রযন্ত্র সেটাকে কিভাবে দেখে ও পরিচালনা করতে চায় তার উপর। রাষ্ট্রযন্ত্র যখন কোনো একটি গোষ্ঠী কে সুপ্রিম মনে করে। একটা গোটা দেশ বলতে একটা গোষ্ঠীর প্রাধান্য বোঝাতে চেষ্টা করে তখন সেই রাষ্ট্রে বসবাসকারী বাকিদের উপর অত্যাচার নামে, শুধু সরকারি যন্ত্রে নয়, সায় পাওয়া সাধারণ মানুষের তরফ থেকেও। একটা বিশ্বাস গেঁথে দেওয়ার চেষ্টা হয় অতি জাতীয়তাবাদ এর হাওয়ায়।

অপরাধ প্রমাণ না হওয়া অবধি কেউ ই অপরাধী নয়। আবার ব্যক্তিগত অপরাধ, অন্যায় কে আমরা গোষ্ঠীর অপরাধ হিসেবে দাগিয়ে দিতেও সময় নিই না। যেমন কালোর বিরুদ্ধে অভিযোগ মানে তাকে অপরাধী ধরে নেওয়া, মুসলিম মানেই সেই অপরাধী নিশ্চই ইত্যাদি ইত্যাদি।

যাই হোক আরও একটু আপন করে কালি মাখি-অঞ্জন দত্তের সেই বিখ্যাত গান ম্যারিয়ান, সবাই শুনেছেন, তাতে একটা লাইন ছিল “বাঙালির ছেলে তাই বৌ হতে হবে ফর্সা”- তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করা, জনপ্রিয় আর সত্যি বলা একটা কথা যা বুঝিয়ে দেয় আসলে আমাদের পরিবার গুলোর চিন্তা ভাবনা। পাত্র-পাত্রী চাই এর বিজ্ঞাপনেও তা উজ্জ্বল। আমরা নিজেরা নিজেদের সুন্দর দেখতে চাই? না চাই না, দেখাতে চাই আর ধরে নিয়েছি ফর্সা মানেই সুন্দর! সাত দিনে ফর্সা হওয়ার ক্রিম বিক্রি হয়, আমরা ট্যাক্স দিয়ে কিনে বুঝিয়ে দিই কালো হতে কেউ চাইনে! তাহলে আর ফেসবুকিয় গল্প ফেঁদে লাভ কি!