Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

অপমানিত জম্মু কাশ্মিরের সাধারণ মানুষ

মহম্মদ ইউসুফ তারিগামি

 


লেখক রাজনীতিবিদ, প্রাক্তন সাংসদ। বর্তমান লেখাটি ইংরাজিতে পিপলস ডেমোক্রেসি-তে গত ২রা আগস্ট প্রকাশিত।

 

 

 

 

 

জম্মু-কাশ্মিরের সাধারণ মানুষ মুসলিম পাকিস্তানের বদলে ধর্মনিরপেক্ষ ভারতবর্ষে থাকতে চেয়েছিল শুধুমাত্র তাঁদের অন্তর্ভুক্তিকরণের মূল আইনি ভিত অর্থাৎ ইনস্ট্রুমেন্ট অফ অ্যাক্সেশনের ভিত্তিতেই না, বরং তার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ সমষ্টিগত এক ধর্মনিরপেক্ষ ভারত নির্মাণের প্রতিশ্রুতির জন্য যেখানে তাঁরা বিশেষ গোষ্ঠীভুক্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি স্বায়ত্তশাসন পাবেন। সেইসব প্রতিশ্রুতিগুলি ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ নম্বর ধারা এবং জম্মু-কাশ্মিরের নিজস্ব সংবিধানের মধ্যেই ছিল। এগুলি ছিল সাংবিধানিক শর্ত, যেগুলি ছাড়া সেই ইনস্ট্রুমেন্ট অফ অ্যাক্সেশনই অর্থহীন হয়ে পড়ত।

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই সাংবিধানিক শর্তগুলি কয়েক দশকের মধ্যে ক্রমশ লঘু হতে থাকল যার পরিণামে জম্মু-কাশ্মিরের সাধারণ মানুষের মধ্যে বাকি ভারতবর্ষের থেকে একধরনের দূরত্ব তৈরি হয়ে গেল, যার সুযোগ নিয়ে ঘোলা জলে মাছ ধরতে শুরু করল সেইসব লোকজন যারা জম্মু-কাশ্মিরের ভারতে অন্তর্ভুক্তিকরণের বিরোধী ছিল।

এবং ১৯৯০ সাল থেকে কাশ্মির অসংখ্য হিংসা দেখে এসেছে যা প্রভূত ক্ষতি এবং মৃত্যু ডেকে এনেছে। এই সময়কালে রাজ্য বহু ট্রাজেডির সম্মুখীন হয়েছে। ১৯৪৭ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময়ে যখন উপমহাদেশ দাঙ্গার আগুনে জ্বলছিল, একটিও দাঙ্গার খবর কাশ্মির থেকে পাওয়া যায়নি। কিন্তু ১৯৯০ সাল থেকেই কাশ্মিরের ধর্মনিরপেক্ষতার গর্বিত ইতিহাস নষ্ট হয়ে গেল, যখন সংখ্যালঘু অংশের মানুষজন ভয়ে ঘর ছেড়ে চলে যেতে শুরু করলেন। এবং আজ পর্যন্ত, তাঁরা কেউই ঘরে ফিরে আসতে পারেননি।

তারপর থেকে এই বীভৎস রাজনৈতিক অস্থিরতাকে মোকাবিলা করতে কোনওরকম দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, যদিও স্তব্ধ গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল এবং ক্ষুণ্ণ হওয়া স্বায়ত্তশাসন পুনরায় বলবৎ করার জন্য সঙ্কল্প নেওয়া হয়েছিল। এছাড়াও রাজ্যে এবং আভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অংশে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো সমস্যাগুলিকে মেটাতে কিছু স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার জন্য বিশ্বাসযোগ্য বন্দোবস্ত করা হয়েছিল, যা দুর্ভাগ্যজনকভাবে পরবর্তীকালে আর সফল হয়নি।

যাই হোক, গত বছরের ৫ আগস্ট, এক বিশাল ধ্বংসলীলার মধ্যে দিয়ে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, অন্যান্য মন্ত্রী, আইনপ্রণেতা, সমাজকর্মী ইত্যাদিদের নিয়ে সমগ্র রাজনৈতিক নেতৃত্বকে গ্রেপ্তার করা হল এবং গোটা উপত্যকাটিকেই একটি ছোট জেলখানায় পরিণত করা হল। বড় বড় বাধানিষেধ জারি করা হল এবং সবরকম যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া হল। এবং এখানে সংসদে বিজেপি সরকার নির্লজ্জভাবে এবং অসাংবিধানিকভাবে সংবিধানের ৩৭০ নম্বর ধারা অনুযায়ী জম্মু কাশ্মিরের বিশেষ সুযোগসুবিধা তুলে দিল এবং পূর্বতন রাজ্যটিকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভেঙে ছোট করে দিল। ৩৭০ ধারার যা কিছু অবশিষ্ট থাকল সবই কেড়ে নেওয়া হল। জম্মু-কাশ্মির এবং লাদাখের মানুষের বিস্ময়ের মাঝেই রাজ্যটিকে জম্মু-কাশ্মির পুনর্গঠন আইন ২০১৯-এর দ্বারা ভাগ করে দেওয়া হল।

২০০২ সালে করা Jammu and Kashmir Representation of the Peoples Act 1957-এর একটি সংশোধনের এবং সংবিধানের ৪৭ (৩) ধারার মাধ্যমে ২০২৬ সাল পর্যন্ত সমস্তরকম ডিলিমিটেশন বন্ধ করে দেওয়ার কথা ঘোষিত হলেও সেই প্রতিশ্রুতি ভেঙে মার্চ মাসে একটি ডিলিমিটেশন কমিশন গঠিত হল। এমনকী জম্মু-কাশ্মির বিধানসভা কর্তৃক এই ডিলিমিটেশনের ২০২৬ সাল পর্যন্ত স্থগিত রাখার নির্দেশ ২০১০ সালেও সুপ্রিম কোর্ট বলবৎ রেখেছিল। এই ডিলিমিটেশনকে রাজ্য থেকে বিধানসভা আসন কমিয়ে দেওয়ার একটি অস্ত্র হিসেবে দেখা হত।

যখন গোটা বিশ্ব, দেশ এবং জম্মু-কাশ্মির কোভিড ১৯ অতিমারির কোপে পর্যুদস্ত, তখন সরকার অত্যন্ত অগণতান্ত্রিক এবং বেপরোয়াভাবে এলাকাবাসীর ক্ষমতা কেড়ে দেওয়ার জন্য একের পর এক নতুন নতুন স্থানীয় আইন পাশ করতে থাকল। পূর্বতন রাজ্য জুড়ে এই নতুন বিলগুলি সম্বন্ধে বিশ্বাস জন্মে গেল যে, এগুলি আসলে অঞ্চলের ডেমোগ্রাফি বদল করার জন্য এবং এলাকাবাসীদের রাজনৈতিকভাবে, আর্থিকভাবে এবং সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে ক্ষমতাহীন করে দেওয়ার জন্য বিজেপি সরকারের এক একটি চাল।

যতক্ষণ পর্যন্ত জম্মু-কাশ্মির ৩৭০ ধারা অনুযায়ী বিশেষ সুযোগসুবিধাভুক্ত ছিল এবং ভাগ হয়ে যায়নি, ততক্ষণ পর্যন্ত সংবিধানের ৩৫ (ক) ধারা রাজ্য বিধানসভাকে জম্মু-কাশ্মিরের অধিবাসীদের সংজ্ঞায়িত করার অধিকার দিয়েছিল। একমাত্র জম্মু-কাশ্মিরের মানুষেরাই সে রাজ্যে চাকরি পাওয়ার এবং স্থাবর সম্পত্তি ভোগ করবার অধিকার পাবেন।

শুধুমাত্র উপত্যকার অধিবাসীরাই নন, জম্মু ও লাদাখের মানুষেরাও এই নতুন স্থানীয় আইনগুলি সম্পর্কে যথেষ্ট ভয়ের চোখে দেখছেন। জনসংখ্যার সবরকম অংশ থেকেই ক্রোধ এবং ভীতির এক গভীর বহিঃপ্রকাশ লক্ষ করা যাচ্ছে।

যখন জম্মু-কাশ্মিরে কেন্দ্রের জমি অধিগ্রহণ আইন বর্ধিত হল, তখন সেনাবাহিনী, বিএসএফ, সিআরপিএফ ইত্যাদির পক্ষ থেকে জমি কেনাবেচার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক থেকে একটি এনওসি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া ১৯৭১ সালের একটি সার্কুলারকে সরকার উঠিয়ে নিল। এই পদক্ষেপ অধিবাসীদের অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে দিল।

৩৭০ ধারার অবলুপ্তি এখনও পর্যন্ত একটিই কৃতিত্ব অর্জন করতে পেরেছে এবং তা হল জম্মু-কাশ্মিরের গণতন্ত্র সম্পূর্ণ ধ্বংস করা এবং অধিবাসীদের নাগরিক এবং গণতান্ত্রিক অধিকারের অবিবেচনাপ্রসূত বিলোপ করা। ইউএপিএ, পাবলিক সেফটি অ্যাক্টস ইত্যাদি প্রাগৈতিহাসিক আইনকে বিবেচনাহীনভাবে ব্যবহার করে অধিবাসীদের বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের জীবনযাপন অসহনীয় করে তোলা হল। এই পদক্ষেপগুলি এবং দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর এতটা নির্ভরতা আসলে জম্মু-কাশ্মিরের সাধারণ মানুষ এবং বাকি ভারতবাসীর মধ্যে সম্পর্ককেই এক দিক থেকে ছিন্নভিন্ন করে দিল।

এক বছরের মধ্যেই, এই ঘটনাগুলি এলাকার উন্নয়ন সংক্রান্ত মোদি এবং শাহ-এর দাবিগুলিকে মিথ্যেয় পর্যবসিত করল। বিজেপি সরকার দাবি করেছিল যে ৩৭০ ধারা জম্মু কাশ্মিরের উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কেউ জিজ্ঞেস করতেই পারেন, তারপর থেকে ঠিক কী কী উন্নয়ন হয়েছে? তাঁরা যেসব দাবি করেছিলেন, সেইসমস্ত বিনিয়োগ বা কর্মসংস্থানই বা কোথায়?

উন্নয়ন বা নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগের কথা ছেড়েই দিলাম, হাজার হাজার দিনমজুর, অসংগঠিত শ্রমিক, বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করা শ্রমিক এবং আরও অনেক মানুষ মাসের পর মাস দৈনিক রোজগারটাই পাচ্ছেন না। বিজেপি সরকার, যারা গত ছ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে, এবং জম্মু কাশ্মিরে উন্নয়নের কথা ফলাও করে বলেছিল, তারা রাম্বান থেকে রামসু পর্যন্ত জাতীয় সড়কের উপর তৈরি হওয়া ক্ষতও এখনও মেরামত করে উঠতে পারেনি। জম্মু-কাশ্মির প্রশাসন মানুষকে মৌলিক সুযোগসুবিধে দিতেই চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছে।

বিজেপি সরকারের ৫ আগস্টে করা কাজকর্মগুলির পর থেকে আর্থিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রভাব সাংঘাতিক হয়েছে। লকডাউনের এক বছরের সময়সীমায়, Kashmir Chamber of Commerce and Industries (KCCI)-এর লস অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট অনুযায়ী উপত্যকা আর্থিকভাবে মোট ৪০০০০ কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এই সময়ে, জম্মুর অর্থব্যবস্থাও বিরাট ক্ষতির মধ্যে পড়ে। বেসরকারি ক্ষেত্রে লাখের উপর কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটেছে এই সময়ে। একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, জম্মু-কাশ্মিরের বেকারত্বের হার গোটা দেশের প্রায় দ্বিগুণ।

আগস্ট ২০১৯-এর পর ওয়ার্কিং ডেজ বা কর্মক্ষম দিনের সংখ্যা হাতে গোনা ছিল। অর্থব্যবস্থার সবকটি ক্ষেত্রই সাংঘাতিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। বিশেষ করে পর্যটন শিল্প, যোগাযোগ ব্যবস্থা, হস্তশিল্প এবং কৃষি ও হর্টিকালচার সেক্টর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এইসব ক্ষেত্রগুলির সঙ্গে যুক্ত লাখ লাখ মানুষ আর্থিক দুরবস্থার মধ্যে পড়েছেন।

পর্যটন ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত মানুষজনেরা যন্ত্রণার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। সমস্ত হোটেলমালিক-কর্মী, হাউসবোটকর্মী ও মালিক, শিকারাওয়ালা, দোকানদার, পনিওয়ালা, টুরিস্ট গাইড এবং এজেন্টরা আর্থিকভাবে শেষ হয়ে গেছেন এবং কাজ হারিয়েছেন। জম্মুর তীর্থস্থানীয় পর্যটন একপ্রকারে ধূলিসাৎ হয়ে গেছে এবং জড়িত মানুষজনের জীবিকা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে।

৫ আগস্ট থেকে হাজার হাজার হস্তশিল্পীরা কাজ হারিয়ে বসে আছেন। যোগাযোগ ব্যবস্থার স্তব্ধতা ও সামগ্রিক লকডাউন এবং পরিণতিস্বরূপ উপত্যকায় বেড়াতে আসা পর্যটক সংখ্যার হ্রাস শেষমেশ হস্তশিল্প ক্ষেত্রে পড়েছে এবং আগস্টের পর থেকে শিল্পীরা কর্মহীন হয়ে পড়ে আছেন। কৃষির পরে হস্তশিল্পই জম্মু কাশ্মিরের অর্থনীতিতে দ্বিতীয় ধাপে ছিল। হস্তশিল্প সেক্টর থেকে করা তাঁদের একটি সমীক্ষা বলছে, প্রায় ৪ লাখ মানুষ এই হস্তশিল্পের সঙ্গে জড়িত যার মধ্যে ২ লাখ সরকারি হস্তশিল্প সেক্টরে সরাসরি নাম নথিভুক্ত করে আছেন।

হর্টিকালচার সেক্টরের সঙ্গে জড়িত লাখের উপরে মানুষের জীবনজীবিকা সঙ্কটের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। এলাকার কর্মসংস্থানের একটা বিশাল অংশ এই হর্টিকালচারের সঙ্গে জড়িত। গত নভেম্বরে অকাল তুষারপাতের জন্য হর্টিকালচার সাংঘাতিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। জম্মু কাশ্মিরের জাতীয় সড়কগুলির প্রায়শ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে উৎপাদিত দ্রব্যের স্বাভাবিক বাজারীকরণে সমস্যা হয়ে গেছে। জম্মুতে বাসমতী এবং সবজি বিক্রেতারা ভারী বৃষ্টিপাত এবং বাজারে যেতে না পারার জন্য বিরাট ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

ছাত্রাছাত্রীরা ফোর জি ইন্টারনেট ব্যবস্থার একটানা বন্ধের জন্য সমস্যার মধ্যে পড়ে গেছেন, যা তাঁদের মানসিক সমস্যা ডেকে আনছে। অন্য রাজ্যগুলিতে শিক্ষাব্যবস্থা যেখানে অনলাইন ব্যবস্থায় ভর করে চলছে সেখানে জম্মু-কাশ্মিরের সরকার এমন ভাব করছেন যেন তাঁরা দ্রুত ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধের ব্যাপারে কিছু জানেনই না। এবং এই ইন্টারনেট বন্ধ এমন একটা সময়ে হচ্ছে যখন প্রধানমন্ত্রী ট্রান্সফরমিং ইন্ডিয়ার কথা এবং ডিজিটাল ইন্ডিয়া পদক্ষেপের মধ্যে দিয়ে ডিজিটাল ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বলে আসছেন।

গত জুনে নেওয়া নিউ মিডিয়া পলিসি বাকস্বাধীনতা খর্ব করার অন্যতম প্রচেষ্টা যা জম্মু-কাশ্মিরের সাংবাদিকদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পলিসিটি সরকারকে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা কেড়ে নিতে একটি খোলা অস্ত্র দেওয়ার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে। সাংবাদিকদের নিজেদের লেখা নিজেদেরই সেন্সর করতে এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু কণ্ঠ স্তব্ধ করতে কর্তৃপক্ষ থেকে হেনস্থা, ভীতিপ্রদর্শন, নজরদারি এবং অনলাইন তথ্য নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

নিহত স্থানীয় বিদ্রোহী কাশ্মিরিদের পরিবারদের তাঁদের প্রিয়জনের দেহ সৎকার করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে, বরং নাম-না জানা কবরখানায় সেসব দেহ পুঁতে ফেলা হচ্ছে, যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। প্রয়াত প্রিয়জনের দেহ সৎকারের অধিকার সব মানুষেরই আছে। নিজের নিজের ধর্মের প্রথা অনুযায়ী সৎকারের জন্য মৃতদেহ পাওয়ার অধিকার দেশের আইনি অধিকারগুলির মধ্যেই পড়ছে।

৩৭০ ধারা বিলোপের সঙ্গে সঙ্গে কাশ্মিরে বিদ্রোহ থেমে যাবে, বিজেপি সরকারের এমন দাবিও বাস্তবের সঙ্গে মিলছে না। স্থানীয় বিদ্রোহীদের ক্রমাগত নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটার ফলেও তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা দলে দলে তাঁদের শূন্যস্থান পূরণ করছেন। অনুপ্রবেশের ঘটনাও ক্রমশ ঘটেই চলেছে। নিয়ন্ত্রণরেখাতেও একইরকম সমস্যা লেগেই আছে।

বাস্তব হল, গত বছরের ৫ আগস্ট, জম্মু কাশ্মিরে যা কিছু করা হয়েছে, তা আসলে হিন্দু রাষ্ট্র গড়ে তোলার জন্য আরএসএস-এর বৃহত্তর লক্ষ্যের একটা অংশ। আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের উদ্দেশ্যের বিরুদ্ধে এই দৃষ্টান্তহীন ধাক্কার বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক অংশকে এই গভীর বিপদকে অবশ্যই বুঝতে হবে এবং সেইমতো পদক্ষেপ নিতে হবে।