Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

গেরুয়াধারী এক সাম্যবাদী সৈনিক

পুণ্যব্রত গুণ

 


লেখক চিকিৎসক, সমাজকর্মী, জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের কর্মী, প্রবন্ধকার

 

 

 

স্বামী অগ্নিবেশের সঙ্গে প্রথম পরিচয় যত দূর মনে পড়ে ১৯৮৯ সালে। লোকসভা নির্বাচনে মনসুর আলি খান পতৌদির বিরুদ্ধে ভোপাল থেকে দাঁড়িয়েছিলেন স্বামী অগ্নিবেশ। তার প্রচারে সাহায্য করার জন্য জিপ সহ তিনটে শ্রমিক প্রচারদল ছত্তিশগড় থেকে পাঠিয়েছিলেন কমরেড শঙ্কর গুহ নিয়োগী। সেই দলগুলোর ব্যবস্থাপক ছিলাম আমি।

আরও কাছে থেকে দেখা ১৯৯১ সালের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি। ভিলাই থেকে আন্দোলনরত শ্রমিকদের একটা বড় দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকপত্র জমা দিতে নয়াদিল্লি গেছিল নিয়োগীজির নেতৃত্বে। শ্রমিকরা ফিরে আসার পর দুদিন নিয়োগীজির সঙ্গে আমি থেকে গেছিলাম স্বামী অগ্নিবেশের ৭ যন্তরমন্তর রোডের অফিসে।

গেরুয়া পরা সন্ন্যাসী, বয়স বোঝা যায় না, আন্দাজ করলাম নিয়োগীর বয়সী হবেন। অবলীলাক্রমে সাফারি চালিয়ে আমাদের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যান, বাংলা বলেন মোটামুটি পরিষ্কার।

অফিসটা ছিল বন্ধুয়া মুক্তি মোর্চার। বন্ধুয়া শ্রমিকদের মুক্তির লক্ষ্যে কার্যরত সংগঠন। জনতা পার্টির সময় স্বামী অগ্নিবেশ মন্ত্রীও ছিলেন কিছুদিন।

শ্রমিকদের ন্যায্য আন্দোলনের পাশে তাকে দেখা যেত। এক হিন্দু সন্ন্যাসীর আবরণে তিনি ছিলেন আপাদমস্তক সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী এক মানুষ। স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের পতাকা তুলে ধরা এক মানুষ।

১৯৯১ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর নিয়োগীর হত্যার পর ভিলাই আন্দোলনের পাশে বারবার তাঁকে দাঁড়াতে দেখেছি। ১৯৯৫ সালে পশ্চিমবঙ্গে ফিরি। তারপর আর যোগাযোগ ছিল না। যেমন যোগাযোগ ছিল না ছত্তিশগড় মুক্তি মোর্চার আরেক বন্ধু জর্জ ফার্নান্ডেজের সঙ্গেও।

জর্জ বদলে গেছিলেন। স্বামী অগ্নিবেশ বদলাননি।

তিনি ছিলেন গেরুয়া পরিহিত এক স্বামীজি যিনি শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেন, শ্রমিক আন্দোলনের পক্ষে দাঁড়ান, সাম্প্রদায়িকতার বিরোধিতা করেন। স্বামী অগ্নিবেশের বয়স হয়েছিল, কিন্তু তাঁর মৃত্যু ভারতের গণআন্দোলনের জন্য একটা বড় ক্ষতি।

ক্ষতি আমার জন্য, ক্ষতি দেশের গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা— সবের জন্যই।