Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি ২০২০— উচ্চশিক্ষায় বেসরকারিকরণের প্রথম ধাপ

ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি ২০২০— উচ্চশিক্ষায় বেসরকারিকরণের প্রথম ধাপ -- রাণা আলম

রাণা আলম

 


 লেখক প্রাবন্ধিক, অধ্যাপক

 

 

 

প্রথমেই বলে নেওয়া দরকার যে ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসির মত বিষয়ে একটি আর্টিকেলে আলোকপাত করাটা আচ্ছে দিনের অতই অবাস্তব। সুতরাং, চেষ্টা থাকবে ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসিতে বেসরকারিকরণের সম্ভাবনা নিয়ে কিঞ্চিৎ চর্চা করার। সময় এবং সম্পাদক মশাইয়ের প্রশয় পেলে পেলে পরের কিস্তিগুলো লেখার ইচ্ছে রইল।

এই মুহূর্তে কেন্দ্রে যারা সরকারে রয়েছেন তাদের ডেভেলপমেন্টাল প্ল্যানিং-এর জন্য একটা সংস্থা আছে, যার নাম নীতি আয়োগ (National Institution for Transforming India, NITI)। এর শীর্ষে আছেন অমিতাভ কান্ত। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে বাণিজ্য সংস্থা ফিকি-র সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন যে এইসব স্কুল, কলেজ চালিয়ে সরকারের লাভ হচ্ছে না। এগুলো বানিয়ে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া উচিত। তার মতে স্কুল, কলেজ ইত্যাদি চালানো সরকারের কাজ হতে পারে না। সুতরাং, সরকারের উচিত একটি এই সংক্রান্ত নীতি নির্ধারক সংস্থা তৈরি করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে হস্তান্তর করা।

অবশ্য বেসরকারিকরণের ঢেউ বর্তমান সরকারের আমলে এটাই প্রথম নয়। সরকার মৌলিক বিজ্ঞান গবেষণায় বাজেট যথেচ্ছ হারে কমিয়েছে গত পাঁচ বছরে। ২০১৫তেই কেন্দ্র সরকার রিসার্চ ইনিস্টিটিউটগুলিকে প্রয়োজনীয় ফান্ডিং-এর অন্তত অর্ধেক নিজেদের জোগাড় করতে বলেছিলেন। রাজস্থানে তখন বিজেপি ক্ষমতায়, মসনদে ছিলেন বসুন্ধরা রাজে। সেসময় তিনি রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলিকে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে চালানোর কথা ঘোষণা করেন। সেই মোতাবেক, পাইলট প্রোজেক্টে প্রথম দফায় তিনশো স্কুলকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হয়।

২০২০ সালে কেন্দ্রীয় সরকার তাদের নতুন শিক্ষানীতি (National Education Policy 2020 (NEP)) প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে। সরকারের মতে এই নতুন শিক্ষানীতিতে বৈপ্লবিক উন্নতিসাধন হবে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার। সেই যে সত্যযুগে দস্যু মোহনলাল ঘরের দরজা বন্ধ করে মটমট শব্দে অ্যাটম ভাঙতেন, ঠিক একইভাবে নতুন শিক্ষানীতি চালু হলেই দেশের প্রতিটি চায়ের ঠেক থেকে একজন করে নোবেল লরিয়েট বেরোবে (মাফ করবেন সার, চায়ের দোকান থেকে প্রধানমন্ত্রী বেরোতে পারলে, নোবেল লরিয়েটও বেরোতে পারে, এটুকু নিজের কষ্টকল্পনায় ঠাঁই দিন) ইত্যাদি ইত্যাদি।

এমনিতে দেশের যে শিক্ষা কমিশনগুলি মোটামুটিভাবে বাঙালি ভদ্রলোকের এক কথার প্রবাদের মতই ধ্রুবক। অর্থাৎ, স্বাধীনতার ঠিক পরের রাধাকৃষ্ণন কমিশনে যেসব লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছিল, তার একটা বড় অংশই এখনও সেই লক্ষ্যের জায়গাতেই অপরিবর্তিত হয়ে থেকে গেছে। সাধারণত, দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় খুব বড় প্রভাব ফেলেছিল ১৯৬৪ সালের কোঠারি কমিশন। তাদের অন্যতম প্রস্তাব ছিল শিক্ষাক্ষেত্রে জিডিপির ৬ শতাংশ খরচ করার। বাস্তবে, গত বাজেট অব্দি, ২০১৯ সালে সরকারি মন্ত্রী প্রকাশ জাভেড়করের বক্তব্য অনুযায়ী, সরকার জিডিপির ৪.৬ শতাংশ খরচ করতে পেরেছে। সুতরাং, দেশের শিক্ষাক্ষেত্রের প্রতি প্রত্যেক কেন্দ্রীয় সরকারের প্রেম সহজেই অনুমেয়।

এই নিবন্ধে মূলত আলোচনা করার চেষ্টা করব উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসির প্রভাব নিয়ে। এবং সেটা বলার আগে একটা ধারণা স্পষ্ট করে নেওয়া উচিত যে বিনামূল্যে শিক্ষা বিষয়টা সরকারের দয়ার দান নয়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ার সুবাদে শিক্ষা, স্বাস্থ্য আমাদের স্বাভাবিক অধিকারের মধ্যেই পড়ে। এবং সরকার যে আমাদের জন্য শিক্ষাব্যবস্থার পরিকাঠামো গড়ে তুলেছে তার প্রথম এবং প্রধান উদ্দেশ্য হল সুনাগরিক গড়ে তোলা যারা বিভিন্নভাবে দেশের উন্নতিতে অবদান রাখতে পারবে। সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে বেরোনো মেয়েটি যখন চাকরিতে ঢোকে, সে যেমন কন্ট্রিবিউট করে, ঠিক তেমনি কন্ট্রিবিউট করে আইটিআই থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ফিটার মিস্ত্রি ছেলেটি।

আমাদের দেশে সাম্প্রতিককালে সরকারি এবং বেসরকারি, দুরকম বিশ্ববিদ্যালয়ই সংখ্যায় বেড়েছে। তারপরেও সংখ্যাটা কিন্তু ভারতবর্ষের মত জনবহুল দেশের পক্ষে যথেষ্ট নয়। ২০১৭-১৮ অব্দি আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষায় গ্রস এনরোলমেন্ট রেশিও ওই সাতাশ শতাংশ মত। ২০৩৫-এর মধ্যে এটা নাকি ৫০ শতাংশ করার চেষ্টা হবে। কিন্তু কীভাবে, সেইটে শ্রডিঙ্গারের বেড়াল হয়ে রয়ে গেছে। আমরা, যারা সরকারি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি, তারা জানি যে খরচটা যৎসামান্য। এবং খরচ কম বলেই খুব নিম্ন আর্থিকবর্গের মানুষেরাও ইউনিভার্সিটি অব্দি ছেলেমেয়েকে পড়ানোর স্বপ্ন দেখতে পারেন। এই মুহূর্তে, আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে বেশ কটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে যেমন অ্যাডামাস, সিকম, টেকনো ইন্ডিয়া, সিস্টার নিবেদিতা, জেআইএস এবং অ্যামিটি। এগুলিতে গ্রাজুয়েশন পড়ার খরচ লাখ তিনেকের বেশি।

প্রশ্নটা হচ্ছে যে মানুষটি খড়দা স্টেশনে হকারি করে সংসার চালান তিনি কি এতটাকা খরচা করে নিজের সন্তানকে পড়াতে পারবেন?

আমরা জানি, তিনি পারবেন না। এবং তারজন্যেই সরকারি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় থাকার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

এবার আসা যাক নতুন শিক্ষানীতিতে। এতদিন অব্দি দেশে বেশকটি স্বতন্ত্র উচ্চশিক্ষার নিয়ন্ত্রক এবং নীতিনির্ধারক সংস্থা ছিল। নতুন শিক্ষানীতিতে এই সংস্থাগুলির প্রয়োজন ফুরিয়েছে। সবকটিকে একটি ছাতার তলায় আনা হচ্ছে যার পোশাকি নাম Higher Education Council of India (HECI)। এই সংস্থার অধীনে চারটি উইং থাকছে।

প্রথমটির পোশাকি নাম National Higher Education Regulatory Council (NHERC)। এর কাজ হল টিচার এডুকেশনের ক্ষেত্রে নির্ধারকের ভূমিকা গ্রহণ করা। মেডিক্যাল এবং আইনি শিক্ষাকে এর আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। হেকি-র অধীনে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা হল National Accreditation Council (NAC), যার কাজ হল বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেওয়া। তৃতীয় সারিতে আছে Higher Education Grants Council (HEGC), এটি দেশজুড়ে থাকা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্নরকম ফান্ডিং এবং আর্থিক দিকগুলি দেখবে। চতুর্থ পর্যায়ে থাকছে General Education Council (GEC), যা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির লার্নিং আউটপুটের নীতি নির্ধারণ করবে এবং এর অন্যতম কাজ হল একটি National Higher Education Qualification Framework (NHEQF) গঠন করা।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বহু আগেই সমস্ত রক্ত মুখমণ্ডলে সঞ্চিত হবার কথা লিখে গেছিলেন। স্বাধীনতার এতবছর পরেও আমাদের শহরকেন্দ্রিক উন্নয়ন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দিল্লিকেন্দ্রিক আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণের ধারণা থেকে আমরা মুক্ত হতে পারছি না।

হেকি-র কার্যসম্পাদনের ক্ষেত্রে ডিজিটাইজেশনের কথা ঢাকঢোল পিটিয়ে বলা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, আমরা, যারা শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত আছি, তারা সম্ভবত প্রত্যেকেই একমত হব যে করোনা সংক্রমণ জনিত লকডাউন পিরিয়ডে অনলাইন এডুকেশনের নামে যেটা চালানো হচ্ছে সেটা আদতে একটি বড়সড় ধাপ্পা ছাড়া আর কিছু নয়। আইনজীবি কৃত্তিকা গর্গ তার প্রবন্ধে বলছেন যে ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকস দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী গ্রামীণ ভারতবর্ষে সাকুল্যে ১৪.৯ শতাংশ বাড়িতে ইন্টারনেট সংযোগ আছে। শহরাঞ্চলে এই সংখ্যাটা ৪২ শতাংশ। এই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে যে ১৯.৬ শতাংশ গ্রামীণ মানুষ জানেন যে কীভাবে কম্পিউটার চালাতে হয়। গ্রামীণ ভারতবর্ষে ২৫.৬ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন, শহরের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা হল ৭৩.৬ শতাংশ। এ তথ্য থেকে স্পষ্ট যে সরকার যতই শিক্ষায় ডিজিটাইজেশনের ঢাক পেটাক, আসলে উপযুক্ত পরিকাঠামোবিহীন শিক্ষাক্ষেত্রে এই ডিজিটাইজেশনের জয়ধ্বজা আমাদের দেশ ভারতবর্ষের আরবান-রুরাল বিভাজনকে স্পষ্টতর করে তুলছে।

অবশ্য, দিল্লির কর্তাব্যক্তিরা বরাবরই ক্ষুধার্ত অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর মুখে ক্যাডবেরি গুঁজে চকচকে ছবিতে উন্নয়ন মাপতে চেয়েছেন, তাদের কাছে অন্য কিছু আশা করাটাই অন্যায়।

নতুন শিক্ষানীতিতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে দেশে ক্যাম্পাস গড়তে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। যদিও খাতায় কলমে তাদের অ্যাডমিশন ফি, গরীব ছাত্রদের সুযোগ ইত্যাদি বিষয়ে সরকারি নিয়ম নীতি মেনে চলার কথা বলা হচ্ছে, তবু আমাদের দেশে নিয়ম নীতি ভাঙার ক্ষেত্রে কর্পোরেটদের উপর সরকার ঠিক কতটা সদয় তা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির ঋণখেলাপির লিস্টের দিকে তাকালেই স্পষ্ট হবে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে যে এগুলি হবে ‘পাবলিক স্পিরিটেড’।

ওই শীর্ষেন্দু লিখেছিলেন ‘নটেশাকের ক্যাশমেমো’, সেটাই একমাত্র এর সঙ্গে তুলনীয়।

এই প্রসঙ্গে একটি পুরনো ঘটনা উল্লেখ করা যায়। হরিয়ানার সোনেপত এলাকায় ২০১২ সালে ৯টি গ্রামের ২০০৬ একর ঊর্বর কৃষিজমি তৎকালীন রাজ্য সরকার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেয়। তখন বাজারদর ছিল একর প্রতি এক কোটি টাকা। রাজ্য সরকার কৃষকদের দিয়েছিল ওই সাড়ে-বারো লাখের সামান্য বেশি টাকা।

নতুন শিক্ষানীতিতে দেশে তিন ধরনের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকবে— রিসার্চ ইউনিভার্সিটি, টিচিং ইউনিভার্সিটি এবং কলেজ। রিসার্চ ইউনিভার্সিটি এবং টিচিং ইউনিভার্সিটির ক্ষেত্রে ছাত্রসংখ্যা হবে কমপক্ষে পাঁচ হাজার। প্রত্যেকটি জেলায় অন্তত একটি করে এই ধরনের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকবে। স্বভাবতই, এইরকম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিপুল পরিমাণ জমি এবং পরিকাঠামোজনিত ফান্ডিং দরকার। সাড়ে-চার শতাংশ জিডিপিতে সেটা কোথায় থেকে আসবে, সেইটে অবশ্য পরিষ্কার নয়। সেক্ষেত্রে, ঘাটতি মেটাতে সরকার স্বাভাবিকভাবেই বেসরকারি পুঁজি আহ্বান করবে। এই রাস্তাটাই বকলমে খোলা রাখা হচ্ছে। তাছাড়া রিসার্চ এবং টিচিং, এই দুটো আলাদা করলে, এটাও একধরনের বৈপরীত্যের জন্ম দেবে।

যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকার নির্ধারিত এক্সেলেন্সের মাপকাঠি স্পর্শ করতে পারবে না, তাদের কী হবে সেই প্রশ্নটাও সমানভাবে থাকছে। প্রান্তিক পুরুলিয়ার কলেজ কলকাতার ব্রেবোর্নের সঙ্গে কোনওদিনই পাল্লা দিতে পারবে না। এদের পরিকাঠামোজনিত উন্নয়নে অর্থ কীভাবে আসবে তাও স্পষ্ট করে বলা হচ্ছে না নতুন শিক্ষানীতিতে। যেসব কলেজে ছাত্রসংখ্যা নির্ধারিত মানের থেকে কম হবে তাদের হয় ‘অটোনমাস’ করে দেওয়া হবে নইলে অন্য ইউনিভার্সিটির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হবে। বলা হচ্ছে নির্ধারিত মান অর্জন করতে অক্ষম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে বন্ধ করে দেওয়া হবে। কিন্তু নির্ধারিত মান আর তা অর্জনের পদ্ধতি দুইই এখনও স্পষ্ট করার কষ্ট সরকারি কর্তারা করে উঠতে পারেননি।

এই ‘অটোনমাস তকমার মধ্যেও একধরনের ধোঁকা লুকিয়ে আছে। অটোনমাস মানে বেশিরভাগ ফান্ডিং সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিজেকেই যোগাড় করতে হবে। তাতে ছাত্রস্বার্থ এবং পরিকাঠামো, দুইই বিঘ্নিত হবার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। এমনিতেই গত কয়েকবছর ধরে উচ্চশিক্ষার রিসার্চ ফান্ডিং খুবই কমে গেছে।

সরকার তার বেসরকারিকরণের ধ্বজা ওড়াতে পারছে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির বেহাল দশার জন্য। সার্ভে করলে দেখা যাবে অধিকাংশ সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক তার নিজের ছেলেমেয়েকে সরকারি স্কুলে পারতপক্ষে পড়ান না। কারণ, বাকিদের মত তাঁরাও বিশ্বাস করেন যে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া হয় না। আমরা, শিক্ষকেরা যেভাবে পে কমিশন আর ডিএ নিয়ে সোচ্চার হই, তার ভগ্নাংশও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিকাঠামোজনিত উন্নয়ন নিয়ে ভাবি না।

স্বভাবতই, শাসক যদি দেখাতে পারেন যে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি কোয়ালিটি এডুকেশন দিতে ব্যর্থ হচ্ছে, তাহলে তা বেসরকারি হাতে তুলে দিতে কোনও সমস্যা থাকবে না। নীতি আয়োগের শীর্ষ কর্তা অমিতাভ কান্ত তার বক্তব্যে এই কথাই তুলেছেন যে স্কুল, কলেজ চালিয়ে সরকারের কোনও লাভ হচ্ছে না। প্রকারান্তে, আমরা নিজেরাই সরকারের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেসরকারিকরণের ভাবনাকে সমর্থন দিয়ে চলেছি। মুশকিল হচ্ছে নিজের ঘরে আগুন লাগার আগে অব্দি আমরা বিপদ বুঝতে পারিনা। চোখের সামনে বিএসএনএলকে শেষ হতে দেখেও আমরা শিখছি না।

যে দেশে এখনও শিক্ষা, স্বাস্থ্যের থেকে মন্দিরের দাবী অধিক গুরুত্ব পায়, সেখানে সরকারের দিকে আঙুল তোলার সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরও আয়নায় মুখ দেখার প্রয়োজন আছে।