Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

ফ্রেমবন্দি গৃহলক্ষ্মী

স্রোতা দত্ত আচার্য

 



জেন্ডার-অ্যাক্টিভিস্ট, সাংবাদিক, প্রবন্ধকার

 

 

 

শিল্পবৃত্তে কৌমশিল্প বিষয়টি, ইংরেজিতে যাকে বলে ‘কমিউনিটি আর্ট’— চলনসই রকমের নতুন। এখানে শিল্প বস্তুটা ঠিক তুলি-শিল্পী-ক্যানভাস বা কাগজ-কলম-মনের তিন-ইয়ারি নয়। উৎসাহী শিল্পীরা স্থানীয় গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলাপে আলোচনায় এবং সহযোগিতায় গড়ে তোলেন অন্যতর যোগাযোগ। কৌমশিল্প ও কলকাতাপ্রেমী উৎসাহী জনাচারেকের এমনই এক অলাভজনক সংস্থা, ‘হমদস্তি’ (শব্দের বিস্তার শরিক থেকে কমরেড) কমিউনিটি আর্টকে মাধ্যম করে ২০১৩-১৪ নাগাদ হইহই করে দারুণ মজাদার ‘চিৎপুর লোকাল’ করে ফেলেছে www.hamdasti.com! চিৎপুর নিয়ে বহিরাগত পর্যটকদের উৎসাহে ঘৃতাহুতি হিসেবে মনগড়া ছায়া— বিয়ের আগে সম্বন্ধের জন্য মেয়েদের যে ছবি তোলা হয়, সে সব ছবি মেয়েদের নিয়ে কী বলে… মেয়েরা কী বলে… এবং এই ধরনের আরও কিছু বেয়াড়া লেজুড় প্রশ্ন জোটায় বিয়ের সম্বন্ধের ছবি নিয়ে নানা তথ্য জমতে শুরু করেছে। বেয়াড়া প্রশ্নগুলোর সঙ্গে ছায়াবাজি করতে হমদস্তির হাত ধরে ‘নয়া দওর’। ডিরেক্টর সুমনা চক্রবর্তী ভারী সহজে, সুন্দর বুঝিয়ে দিলেন, কৌমশিল্প কাহাকে বলে। সংস্থার ট্রাস্টি, রবীন্দ্রভারতীর ছাত্র, সবেতেই উৎসাহী নীলাঞ্জন দাস দিলেন নানাভাবে ‘দেখা’র সূত্র। দুর্দান্ত পপ-আপ মিউজিয়াম (ক্ষণস্থায়ী সংগ্রহশালা)-এর কিউরেটর বর্ষিতা খৈতানের (ট্রাস্টি) সঙ্গে রওনা হওয়া গেল স্টুডিওর সন্ধানে। সঙ্গে আর এক দোস্ত, মানস আচার্য।

 

ব্ল্যাক টাউন (নিউ)

ঔপনিবেশিক শিল্পকলার নূতনতম বন্দিশ, ক্যামেরা। ‘কলিকাতা’য় বিলিতি শিক্ষা ও কেতায় দুরস্ত, ‘বাবু কালচার’ ক্যামেরাকে আপন করতে বেশি সময় ব্যয় করেনি। প্রকাণ্ড দামি প্রতিকৃতি রাজারাজড়াদের কুক্ষিগত। কিন্তু ক্যামেরার কল্যাণে, আকার আয়তনে তো বটেই, এমনকী সময় ও টাকার নিরিখেও, ফোটোগ্রাফ (যার বাংলা আলোকচিত্র) বেশি সহজলভ্য (আদতে ক্যামেরাও ছিল ভারী যন্ত্রপাতি, কাপড়, তেঠ্যাঙা স্ট্যান্ড ইত্যাদির সমাহার)। তা বুঝে তৈরি হয়েছে নতুন বাজার। বিশ শতকের এক্কেবারে গোড়ার দিকে ফোটোগ্রাফির বাজারে মানুষের ‘চেহারা’র ধারণাটা কীভাবে তৈরি হতে শুরু করে? কলকাতার আদি ফোটোগ্রাফি চর্চার অন্যতম আদীশ্বর ঘটক লিখেছেন, “কোনও লোকের প্রতিমূর্তি (পাঠক, লক্ষ্যণীয়, টু-ডাইমেনশনাল ছবিতে ‘চেহারা’ তখনও প্রতিকৃতি নয়, ‘প্রতিমূর্তি’) উঠাইলেই তাহাকে চেহারা বলা যাইবে না, সেই প্রতিমূর্তিখানি যদি শিল্প শাস্ত্রানুযায়ী নিয়মাদির অনুকূল হয়, তবেই তাহা চেহারা বলিয়া গণ্য করা হইবে। এখন দেখা যাউক ভলো চেহারা কাকে বলে।…” লেন্স-এ সে চেহারা ‘দেখা’য় বিলিতি ছাপ স্পষ্ট। তবু নতুন চারুকলার ঢেউয়ে কি পক্কবিম্বাধরোষ্ঠা, তিলফুল জিনি নাসা, তপ্তকাঞ্চনবর্ণা, ত্বন্বী শ্যামা শিখরদশনারা কলাবতীর দেশে পাড়ি দিল? বিশেষত বিয়ের বাজারে? শুধু বাহ্যিক বিশেষণই নয়, শ্রীময়ী, গৃহকর্মনিপুণা, গৃহলক্ষ্মী-র মতো গড়ে তোলা ধারণার দামও এই বাজারে যথেষ্ট চড়া।

সত্যি কথা বলতে কী, প্রতিমূর্তি থেকে প্রতিকৃতি হয়ে বিয়ের জন্য তোলা ফোটোর কদর বাজারে ঠিক কবে পা রাখল, সে দিন নির্দেশের চেয়েও বেশি চিত্তাকর্ষক ভাঙাচোরা, ছিন্নমূল, স্বাধীনতা-উত্তর পাঁচের দশকের বাঙালি। মন্বন্তর, দাঙ্গা, পার্টিশন-বিধ্বস্ত, বিভক্ত বাংলা। সেই চারের দশকেই প্রথম ‘পাত্র চাই পাত্রী চাই’-এর মুদ্রিত বিজ্ঞাপন। ঢিমে হচ্ছে ঘটকালি। অন্যদিকে স্বাধীন ভারতে শুরু হচ্ছে সবুজ বিপ্লব, কারখানা, বিশ্ববিদ্যালয়, বাঁধ… গড়ে উঠছে নতুন বসতি, বেসাতিও। যৌথ পরিবার ভেঙে তৈরি হতে হচ্ছে ছোট মধ্যবিত্ত পরিবার, মফঃস্বল, টৌন, শিল্পশহর, ক্যালকাটা থেকে মেট্রপলিটান কলকাতার শিক্ষিত, মধ্যবিত্ত ভদ্রলোক সম্প্রদায়। সেই ভাঙাচোরা সময়ে এই ‘লক্ষ্মীশ্রী’তে রয়েছে, ১৯৫৯-এ নির্মিত অপুর সংসার-এ ছেঁড়া পর্দার বদলে ফুল ছাপ পর্দা লাগানো জানালা, আলানায় নিপাট ভাঁজের জামাকাপড়, হাতে সেলাই ফ্রক। গত শতকের পাঁচ থেকে সাতের দশকের কলকাতায় দাবি বেড়েছে ‘সুশ্রী, শিক্ষিতা, গৃহকর্মনিপুণা’র। পাঁচের দশকে আপার চিৎপুর এলাকায় চালু হয়েছে আরও বেশ কিছু বাঙালি মালিকানাধীন স্টুডিও। বাজার জাত চাহিদার সঙ্গে সমঝোতায়, মজ্জাঙ্গত বাঙালিয়ানা নিয়ে স্টুডিও ফোটোগ্রাফারের চোখে, হাতে তৈরি হচ্ছে বিশেষত্ব।

রাজা গুরুদাস স্ট্রিট যেখানে বিডন স্ট্রিটে মিশে তেকোনা তৈরি করেছে, সেই মোড়ের কোণে ভড় স্টুডিও (সাতের দশক থেকে বন্ধ)। মিনার্ভা থিয়েটার, চৈতন্য লাইব্রেরি, রবীন্দ্রকানন বাঁ হাতে রেখে রবীন্দ্রসরণী-বিডন স্ট্রিট চার মাথার মোড়ের হাতাতেই দ্য ডন স্টুডিও। তারপরে যাত্রাপাড়া থেকে নকল বিগ বেন (বি কে পাল মোড়) হয়ে সি. ব্রস। খান পাঁচেক স্টুডিও তো রয়েইছে। সব স্টুডিওর একটা কারিগরি darkroom পেরিয়ে রয়েছে গোপন প্রকোষ্ঠ। সেখানে রয়েছে ছবি তোলার ব্যাকরণ মেনে বিষয় (object/subject)-কে আরও ‘দৃষ্টিনন্দন’ করার পেশাদার দায়িত্ব।

দ্য ডন স্টুডিও
সি. ব্রস

কৌমশিল্পের ছুঁচে ছেঁড়া কাপড় জুড়তে জুড়তে ফুটতে শুরু করল নকশা। তবে তা মৌখিক। কোম্পানি আমলের এক্কেবারে প্রথম দিকে ফিরিঙ্গিরা গঙ্গার পাড়ের এক ‘গ্রেট ট্রি’কে ল্যান্ডমার্ক, ঠাউরেছিল। কালক্রমে তা বর্ণবিপর্যয় ঘটিয়ে গ্রে স্ট্রিট থেকে ডালপালা মেলে একদিকে শোভাবাজার স্ট্রিট। অন্যদিকে অরবিন্দ সরণী (তথ্যসূত্র— সমর চট্টোপাধ্যায়, সি. ব্রস)। পেশাদার, স্টুডিও-র মতো বারমহল হয়ে, রোয়াক, সদর পেরিয়ে গন্তব্য অন্দরমহল। এক এক করে খুলতে লাগল বেনিয়েটোলা স্ট্রিট (বেনিয়ার হিন্দি শব্দ কী পাঠক?)-এর এডওয়ার্ড’স টনিক খ্যাত শোভাবাজার স্ট্রিটের পাল বাড়ির দরজা। বিডন স্ট্রিটের ভড় স্টুডিও, কাগজ গলির ভটচাজবাড়ি, চারু দত্তের বাড়ি। অবশ্য সে দিক থেকে দেখতে গেলে, কলকাতার ফটোগ্রাফি চর্চার সঙ্গে এঁরা কেউই সরাসরি যুক্ত নন তবু ধারণা করা যায়, পাঁচ থেকে সাতের দশকের শেষ পর্যন্ত স্টুডিওতে তোলা ছবি, শিক্ষিত-মধ্যবিত্ত-ভদ্রলোক নাগরিক সম্প্রদায়ের কাছে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক চিহ্নক তো বটেই সেই সঙ্গে আধুনিকতা এবং শৌখিন বিত্তেরও প্রতীক। তাই পেশাদার আলোকচিত্রীর পাশে আলোকচিত্রশিল্পীর বয়ানেও ফ্রেমবন্দি হচ্ছে ‘আধুনিক গৃহকর্মনিপুণা’।

পালবাড়ি

 

দেখবে বলে করেছে পণ

ফোটো হাতে নিয়ে কেউ দেখছে ব্রোচ, গলার হার, চশমার ফ্রেম, কানের দুল। সে দেখা ব্যক্তিগত। কিন্তু সামাজিক বাটখারায় পরিমাণ ওজনের পর আসে ছবির সত্যতা যাচাইয়ের প্রশ্ন। ছবি যতটা উজ্জ্বল, আদতেও কি তাই? গায়ের রং, খাঁজ, টোল, চাউনি…। ‘দর্শনীয়’ কী কী, তা মহাভারতের কাল থেকে বহমান। দীর্ঘ চিকুর না হয় হয়েছে ‘এক ঢাল চুল’। কমললোচনা— ‘পটলচেরা চোখ’। ছবি হিসেবে দেখলে দশক অনুযায়ী চশমা, ঘড়ি-সহ, ঘড়ি-হীন, গয়না, কাজল, ব্লাউজের হাতা, শাড়ির ধরন, দেহভঙ্গিমা বদলাচ্ছিল। সেই সঙ্গে স্টুডিওর আসবাব— ব্যাগ, বই… ফুল ইত্যাদিও। অন্তত বিবাহযোগ্যা অনুঢ়ার ক্ষেত্রে অন্তত সে সব পেরিয়ে আরও একটা বাস্তব, ছবি সত্যি কথা বলছে কিনা, তার অনুসন্ধান প্রয়োজন। তার সন্ধানে বার-বাড়ি পেরিয়ে অন্দরমহলে। নগরী তিলোত্তমা হতে পারে। কিন্তু ঘরণী তিলোত্তমা? প্রবচন বলে ‘অতি বড় সুন্দরী না পায় বর/ অতি বড় ঘরণী না পায় বর।’ তাই রীতা ফারিয়া নয়, দরকার কুলস্ত্রী। বেনেটোলা স্ট্রিটের পালবাড়ির পুষ্পমাসিমা আর কল্পনামাসিমা (তাঁরা সম্পর্কে জা) মত দিলেন। পুষ্প পাল লিখলেন, “মেয়ের বিয়ের সম্বন্ধ স্থির করতে গেলে প্রয়োজন হত সর্বাঙ্গসুন্দর একটি ফোটোর যেটা ঘটক কিংবা অন্য কোনও যোগাযোকারীর মাধ্যমে পাঠানো হত। ফলে সেই ফটোটির ব্যাপারে অনেক সতর্কতা থাকত। প্রত্যেক পিতামাতাই চাইতেন ফটোর মাধ্যমে তাদের কন্যাকে যেন অপরূপ সুন্দরী দেখায়।” চারু দত্তের বাড়ির গিন্নি, প্রকৃতি দত্ত লিখলেন, “… নববধূ যখন গৃহে আসছে তখন বাড়ী লক্ষ্মীশ্রীতেই ভরে উঠুক। তার জন্য অপরূপা হবার প্রয়োজন তো নেই— সে হোক শ্রীময়ী অর্থাৎ লক্ষ্মীস্বরূপা।”

 

আগে দর্শনধারী

‘বলিষ্ঠ ব্যক্তিদিগকে যন্ত্র’ থেকে কতটা দূরে ‘একহারা ব্যক্তিদিগকে’ কীভাবে বসাতে হবে, ‘যাদের মুখ অধিক গোল বা মুখবিবর প্রশস্ত. নাসিকা অল্পায়ত ও ক্ষুদ্র’ তাদের ভঙ্গি কেমন হবে এমনকী ফোটোগ্রাফিতে কী রঙের কাপড় মানানসই তাও ১৯১৭-১৮-র বাংলায় চর্চিত। বাস্ট বা আবক্ষ চিত্র হলে চোখের তারা বা পাতায় ফোকাস। আর ‘সম্পূর্ণ মূর্ত্তির চিত্র, অর্থাৎ আপাদমস্তক পর্যন্ত’ হলে ফোকাস কোথায়, সে বিষয়েও রয়েছে নির্দেশ। জানা গেল ফোটোগ্রাফির গোড়ার নন্দনতত্ত্ব মেনেই শ্যামবর্ণাকে উজ্জ্বল শ্যামবর্ণা করার কারসাজি। দ্য ডন স্টুডিওতে জানা গেল, পাত্রীর গড়নের রকমফেরে শাড়ির প্রকারভেদের প্রয়োজন। রকমফেরের মাপক কী আর মাপ-টাই বা কী? এক ফোটোগ্রাফার জানালেন, “ক্যামেরা আর আলোর কারসাজিতে বেঁটে মেয়েকে লম্বা করে দেওয়া যায় বটে তবে তা নীতিগত হবে না।” তাছাড়া ক্রেতারা ধরে ফেলবে সত্য কী আর মিথ্যাই বা কী! তাতে আখেরে ব্যবসায়ে ক্ষতি। মজা হল, লেখক/শিল্পীর হাতে প্রতিকৃতির নন্দনতত্ত্বে মনের মাধুরী মিশতে পারে কিন্তু শেষ পর্যন্ত যন্ত্র বলেই, ক্যামেরা বাস্তব তুলে ধরে। যদিও একেবারেই ছিল না তা-ও নয়। তবু ছবিতে ‘সত্য’-এর অপলাপের সুযোগ সে সময়ে বিশেষ ছিল না। তবু ঘটকালির মর্যাদা অর্জন করেছিল ফিল্মে তোলা সাদা কালো ছবি।

রাজকন্যা ‘মোতির ফুল’-এর মেঘবরণ কেশ? ‘চারুলতা’-র বঙ্কিম ভ্রুযুগল? গজেন্দ্রগামিনী? খড়ম পা? ছবির বাইরে আরও একটা ছবি আছে। তা অন্য ‘দেখা’। হাতের আঙুল, গোড়ালির গোছ, পায়ের ডিম দেখার মতোই সমান জরুরি ঊর্বরতার সম্ভাবনার মোটামুটি সঠিক আন্দাজ। অবশ্য সব তো আর বেপর্দা হয়ও না! এ সব ছবির ক্ষেত্রে অন্তত তাই ছবির সত্যতার বাইরও একটা ‘সত্য’ যাচাইয়ের পরিসর আপাত উহ্য থেকে যায়। ছবির সঙ্গে মিলিয়ে নিতে মেয়েদের আত্মমর্যাদার তোয়াক্কা না করেই পাত্রপক্ষ কন্যার চুলের ঘনত্ব মেপে নিতে পারে। ভিজে পায়ে হাঁটিয়ে দেখে নেওয়া হয় খড়ম পা নাকি লক্ষ্মীর পা। পান সাজার আপাত আবদারে থাকে পাত্রীর পরিমিতি বোধের পরীক্ষা।

 

আরে দেখো রে দেখো রে দেখো…

প্রায় দেড় বছর ধরে কথ্য-কথায় চোখের সামনে এক এক করে ছবি-গল্প সরে সরে যেতে লাগল। একক ছবি হিসেবে তার ঠাঁই অ্যালবাম বা কুড়াদান যেখানেই হোক না কেন, সার্বিকভাবে এ তো সেই ছেলেবেলায় দেখা পিপ শো বক্স-এর মতো! চারকোনা, পাঁচকোনা, কাঠের বাক্সে অ্যালুমিনিয়াম-এর ঢাকাওয়ালা কৌটোর তলা কেটে বড় গোল কাঁচ লাগানো ঘুলঘুলি। ঝনাৎ করে ঢাকা সরিয়ে চোখ লাগিয়ে দেখা যেত, সরে সরে যাচ্ছে ইন্ডিয়া কা মহশুর তাজমহল, বাবা বিশ্বনাথ কা মন্দির, নিজাম প্যালেসের স্থিরচিত্র। একটু ফাটাফুটা, ক্যানভাসে আঁকা। দু-একটা ছাপা, ঝকঝকে। বম্বে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অমিতাভ বচ্চন, মিঠুন চক্রবর্তী, বিনোদ খান্না। কেউ দেখছে নায়কের রঙিন ঠোঁট, চওড়া কলারওয়ালা শার্টের ফাঁকে রোমশ বু্ক, কেউ দেখছে চোখের আগুন। কেউ দেখছে দু পা ফাঁক করে দাঁড়ানোর ভঙ্গিটা ঠিক কতটা পুরুষালি! মজাটা হল, পিপ শো বক্সে এই ব্যক্তিগত দেখার সঙ্গে সঙ্গে চলছে সমবেত দেখাও। সম্বন্ধের ছবি দেখাটাও খানিকটা সেরকম। পাত্র, পাত্রের মা, কাকা, ঠাকুমা, মামিমা, পিশেমশাইয়ের দেখনভঙ্গি যাচাইয়ের ধরন আলাদা। এ ক্ষেত্রে মানসপটে ক্যালেন্ডারের লক্ষ্মী আদর্শ হলে পুরোটা নয়। তার আলতা পরা পা প্রণামের জন্য। তবে কখনওই দ্বিতীয় আঙুল প্রথম আঙুলকে ছাপিয়ে বড় নয়। গৃহলক্ষ্মী যাচাইয়ে এটা যেমন একটা মাপক তেমনই আবার লক্ষ্মী প্রতিকৃতির খোলা চুল, ছবি তুলতে যাওয়ায় সুবিধার জন্যে কবরীবন্ধে বাঁধা। যুগের সঙ্গে আপস করে এ ধরনের ছবি তৈরি করছে শুধু নারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ভাষ্য। তবে সে বিজ্ঞাপনের নারী নয়। নয় দূর্বা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তা হল, আধুনিকা গৃহলক্ষ্মীর ধাঁচায় ফেলা এক আলোকচিত্রীয় নির্মাণ।

পিপ শো বক্স

 

কৃতজ্ঞতা স্বীকার