Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

তারান্তিনো, সিজন দুই — তেইশ

প্রিয়ক মিত্র

 

পূর্ব প্রকাশিতের পর

–স্টিভ হ্যাজ এ ভেরি কলোনিয়াল মাইন্ডসেট! হি থিঙ্কস ইন্ডিয়ান নেটিভস আর নট এলিজিবল ফর দিস জব।

গা ঘিনঘিন করে উঠল মৌলিনাথের। স্টিভ এমন কথা ভাবতেই পারে না। হ্যাঁ, মাঝেমধ্যে রাগের মাথায় ও ইউ ইন্ডিয়ানস! বলে চিৎকার করে বটে, কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে এমন জাতিবিদ্বেষ ওর কখনওই কাজ করে না।

মৌলিনাথ বুঝল, একথা আসলে রিচার্ড বলছে, স্টিভের ঘাড়ে বন্দুক রেখে।

এবার রডরিগেজ হঠাৎ ওর কটা চোখদুটোকে স্থির করল মৌলিনাথের ওপর। সঙ্গে কণ্ঠস্বরে আশ্চর্য একটা উগ্রতা, অথচ ধীরে ভেসে এল কথাগুলো।

–আই নো হোয়াট ইউ আর আপ টু মিস্টার সেন। বাট ডু ইউ থিঙ্ক ইউএস স্পেস স্টেশন উইল বি দ্য রাইট প্লেস টু ডু সো?

মৌলিনাথ চমকে উঠল এক মুহূর্তের জন্য।

তারা আসলে ঠিক কী করতে যাচ্ছে, তা গার্ডনারও জানে না। এই লোকটা, রডরিগেজ, এত আত্মবিশ্বাস নিয়ে এই কথা বলছে কেন?

এর পরের কথাটা আচমকা শিরদাঁড়ায় ঠান্ডা স্রোত বইয়ে দিল মৌলিনাথের।

–ইউ নো দ্য টার্ম ইউফোলজি, রাইট?

কী বলতে চাইছে লোকটা?

এই আশঙ্কাই করেছিল মৌলিনাথ।

১৯৫৭ সালে ‘ফ্যান্টাসটিক ইউনিভার্স’-এর পাতায় প্রথম ‘ইউফোলজি’ শব্দটা ব্যবহার হয়েছিল। বিষয়টা খুবই সহজ, ইউএফও নিয়ে চর্চা। এখন ঘটনা হচ্ছে, এমন চর্চাকে মার্কিন দেশে তো বটেই, বিশ্বজুড়ে বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীরা বুজরুকি বলেই মনে করে এসেছেন। ১৯৬১ সালে ফ্র্যাঙ্ক ড্রেক নামে‌ এক নভোচর একখানা ইকুয়েশন নাকি নামিয়ে ফেলেছেন, যা থেকে এলিয়েনের অস্তিত্বের প্রোবাবিলিটি সম্পর্কে জানা-বোঝা যেতে পারে। যদিও সেই সমীকরণ এখনও কাজে লাগানো হয়নি। সম্প্রতি, এই মাসের গোড়ায়, ‘এলিয়েন’ নামে একখানা ছবি বেরিয়েছে, রিডলি স্কটের। তা নিয়ে বেশ হইচইও চলছে। লোকে রুপোলি পর্দায় যা দেখে, তা-ই সত্যি ভাবে। কিন্তু সাই-ফাই তো আর বিজ্ঞানের অনুসারী হয়ে থাকতে বাধ্য নয়। ওইজন্যই তা ফিকশন। মোদ্দা কথা, রডরিগেজ যে বিজ্ঞানের শাখার কথা বলছে, তার সঙ্গে মৌলিনাথদের কাজের ধারার কোনও সম্পর্কই থাকতে পারে না, কিন্তু বিশেষ একটি কারণে মৌলিনাথের কাজের সঙ্গে জুড়ে যাচ্ছে এমন তথাকথিত আজগুবি একটি বিষয়। তা আসলে সত্যি কি না, সত্যিই বিষয়টা এমন, না কি হেথা নয়, মহাকাশবিজ্ঞানের অন্য কোনওখানে লুকিয়ে আছে এবং উত্তর, তা জানতেই স্পেস স্টেশন রওনা দিতে চেয়েছিল মৌলিনাথ, শাহিদকে সঙ্গে নিয়ে।

কিন্তু এসব কথা রডরিগেজ জানল কী করে?

–হোয়াট দ্য হেল আর ইউ টকিং অ্যাবাউট?

তার নাম করে মৌলিনাথদের জাত তুলে খোঁচা দেওয়াটা তাও মেনে নিয়েছিল গার্ডনার। এই আশ্চর্য কথাটা শুনে চুপ করে থাকতে পারল না সে।

কিঞ্চিৎ হেসে রডরিগেজ বলল— আস্ক হিম অনলি!

গার্ডনার অবাক বিস্ময়ে তাকাল মৌলিনাথের দিকে।

মৌলিনাথ এই রডরিগেজ লোকটাকে আপাদমস্তক অপছন্দ করছে। ও এই লোকটার কোনও প্ররোচনায় পা দেবে না।

মৌলিনাথ সোজা গার্ডনারের দিকে তাকিয়ে বলল— আই ডোন্ট নো হোয়াট হি ইজ টকিং অ্যাবাউট!

রডরিগেজের চোখ লহমায় জ্বলে উঠল দপ করে। মৌলিনাথের এই আচরণটাকে একরকম বেয়াদবি বলেই ধরে নিল সে। কথায় সেটা বোঝাতে দিল না যদিও। স্মিত হেসে বলল— সি সেন, আই ডোন্ট কনসিডার দ্যাট অ্যাজ সিউডোসায়েন্স।

–হাউ ইজ দ্যাট ইভেন রেলিভ্যান্ট?

মৌলিনাথের প্রশ্নকে প্রায় গুরুত্ব না দিয়ে বলে চলল রডরিগেজ,

–আই নো ইউ লস্ট ইওর পার্টনার, বাট ইফ ইউ রিয়েলি ওয়ান্ট টু পারসু হোয়াট ইউ ওয়ান্ট টু ডু, হিয়ার ইজ মাই কার্ড!

মৌলিনাথের হাতে কার্ডটা ধরিয়ে দিয়ে আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা করল না রডরিগেজ। বাই স্টিভ— বলে নেভা পাইপে আগুন ধরিয়ে গটগট করে হাঁটতে হাঁটতে বেরিয়ে গেল। শেষ অংশটা এতটাই ঝড়ের মতো ঘটল, যে ওজর-আপত্তির সুযোগও পেল না মৌলিনাথ বা স্টিভ। মনে হল, রডরিগেজের যা বলার বলা হয়ে গেছে। তাই সে আর অপেক্ষা করতে রাজি নয়।

স্টিভ শূন্যদৃষ্টিতে তাকাল মৌলিনাথের দিকে।

মৌলিনাথ বেগতিক বুঝেও শান্ত রইল। ধীর কণ্ঠে বলল— আই অ্যাম নট ডুয়িং এনিথিং, হুইচ ইজ নট রিলেটেড টু আওয়ার সায়েন্টিফিক এম। আই থরোলি আন্ডারস্ট্যান্ড ইওর কনসার্ন, বাট আই অ্যাম অ্যাসিওরিং ইউ, আই অ্যাম নট ডিলিং উইথ এনি এক্সট্রা টেরেস্ট্রিয়াল স্টাফ।

–ইউ বেটার ডু।

এককথায় উত্তরটা দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল স্টিভ। মৌলিনাথের গবেষণা নিয়ে আর কোনও মন্তব্য বা প্রশ্ন করল না সে। পিছনের সেলার থেকে স্কচের বোতল এবং গ্লাস নামিয়ে মদ ঢালতে শুরু করল। মৌলিনাথ বুঝল, তার আর এই ঘরে থাকা ঠিক নয়।

স্টিভের ঘর থেকে বেরিয়ে নিজের ঘরের দিকে যেতে যেতে একটা খচখচানি চলতে লাগল মৌলিনাথের মনে।

‘ইউ লস্ট ইওর পার্টনার!’

লস্ট? কেন এই কথা বলল রডরিগেজ? কী বোঝাতে চাইল সে? শাহিদকে প্রায় মৃত বানিয়ে ছাড়ল সে? শাহিদ কোথায় গেছে, কী করছে, সেসব এই লোকটা জানে না কি?

সবচেয়ে বড় কথা, লোকটা কী করে জানল ওদের গবেষণার কথা?

না। এলিয়েনদের নিয়ে বা ইউফোলজি নিয়ে চর্চা করছে না মৌলিনাথ। হ্যাঁ, মৌলিনাথ আর শাহিদ রিসেপ্টরে এমন কিছুর আভাস পেয়েছিল, সৌরজগতে যার অস্তিত্ব সম্পর্কে ওরা ততটা ওয়াকিবহালই ছিল না। কিন্তু সেকথা এই লোকটা কোথা থেকে জানবে, কেনই বা জানবে।

লোকটাকে কোনওমতেই সুবিধের মনে হচ্ছে না মৌলিনাথের।

মৌলিনাথ যখন এইসব ভাবছিল, ঠিক সেই সময় ল্যাবরেটরির বাইরে বেরিয়ে নিজের ঝাঁ চকচকে কালো গাড়িতে উঠে বসল রডরিগেজ।

চালকের আসনে একটা লোক।

লোকটার পরনে কালো কোট, চোখে কালো চশমা, সেই চশমার আড়ালে চোখদুটো আদৌ আছে কি না বোঝা যায় না, মনে হয়, সেখানে রয়েছে কোনও গভীর ক্ষত বা কৃষ্ণগহ্বর।

 

(আবার আগামী সংখ্যায়)