Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

সংযুক্ত শক্তি সমিতি

সংযুক্ত শক্তি সমিতি | অভি বিশ্বাস

অভি বিশ্বাস

 

এই ধরনের চিন্তা আসাটা যে ভুল, সেটা খুব ভাল করেই জানা আছে ব্রতীনের। নাঃ, ভুল ঠিক বলা যায় না, কারণ চিন্তার কোনও ঠিক-ভুল হয় না।

বলা ভাল চিন্তাটা খারাপ ধরনের।

আড়চোখে ল্যাপটপ স্ক্রিনের ডানদিকে নীচের কোণায় তাকাল ব্রতীন। ১২.০৮ এ-এম।

সম্পূর্ণা জেগে বসে আছে। ডিনার হয়ত করে নিয়েছে… সেটা বহু বছরের সাধ্যসাধনার পর একরকম মেনেই নিয়েছে। কিন্তু ঘুমোতে যায়নি। যাবে না, যতক্ষণ না ব্রতীন বাড়ি ফেরে।

বুবুন ঘুমিয়ে পড়েছে নিশ্চয়ই। ওর সঙ্গে আজকাল উইকেন্ড ছাড়া প্রায় দেখাই হয় না। উইকেন্ডে বুবুনকে নিয়ে লেকে ক্রিকেট কোচিং-এ যাওয়াটাও আজকাল মিস্‌ হচ্ছে মাঝেমাঝে।

তবুও ব্রতীন এটাই প্রেফার করে… যতই রাত হোক, অফিসের কাজ সেরেই ফিরবে। বাড়ি ফিরে আর ল্যাপটপ খুলতে ইচ্ছে করে না।

তেরোতলার অফিসে ওর কাচ-ঢাকা কেবিন ছাড়া আর শুধু একটাই আলো জ্বলছে।

দূরে, রিসেপশনে। নাইট শিফটের সিকিওরিটি গার্ড যেখানে বসে।

সামনের দিকে তাকাল ব্রতীন। কালো কাচের ওপর বাইরের কয়েকটা আলোর বিন্দুর সঙ্গে মিশে যাওয়া নিজের আবছা প্রতিবিম্ব ছাড়া আর কিছু দেখা যায় না। নিজের চেহারার মধ্যে নাকটা ওর খুব প্রিয়। নাকের মধ্যে একটা আভিজাত্যের ছাপ আছে, ও মনে মনে বিশ্বাস করে।

নাঃ।

চিন্তাটাকে ঝেড়ে ফেলা যাচ্ছে না কিছুতেই। সত্যি কথা বলতে চিন্তাটা নতুন কিছু নয়। আজ নয় নয় করেও মাস ছয়েক হল চিন্তাটা ওকে কুরে কুরে খাচ্ছে।

ওদের অফিসের ব্যবসাটার মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত ব্রতীন বোঝে। আঠারো বছর এই লাইনে আছে… প্রতিটা অ্যাঙ্গেল, প্রতিটা খুঁটিনাটি সম্পর্কে কোম্পানির কেউ ওর চেয়ে বেশি জানে না। কিন্তু তবু ও কোম্পানির কর্ণধার হতে পারবে না।

যতদিন মলয় খাসকেল বেঁচে আছে।

সবরকম চেষ্টা ও করে দেখেছে। বোর্ড মিটিঙে পুরনো চিন্তাধারা বদলে নতুন মার্কেট ক্যাপচার করার নতুন নতুন পন্থা দেখিয়েছে। দেশি, বিদেশি সব ক্লায়েন্ট যে ওকেই চেনে, আর ওর সঙ্গে রিলেশনশিপের জোরেই যে কাজ আসে, এসব কথা প্রতিষ্ঠিত করেছে।

কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি।

রিটায়ার করার বয়স পেরিয়ে প্রায় চার বছর হতে চলল, কাজের কাজ কিস্‌সু করে না, তাও এখনও মলয় খাসকেলের সই ছাড়া কোম্পানির খাতায় আঁচড় পড়বে না। সাতজন বোর্ড মেম্বারের মধ্যে চারজন খাসকেলের এক গেলাসের বন্ধু… তাই ব্রতীন শত চেষ্টা করলেও মেজরিটি ভোট পাবে না কোনওদিনও।

কোম্পানিতে বারো বছর দিয়ে ফেলার পর, ছেড়ে নতুন জায়গায় গিয়ে জিরো থেকে ফাইট শুরু করারও কোনও প্রশ্ন ওঠে না।

সুতরাং, অপেক্ষা করা ছাড়া কোনও উপায় নেই। অপেক্ষা…

এক যদি না…

গ্যাসের ব্যথাটা আবার চাগাড় দিচ্ছে। পিঠের দিক থেকে শুরু হয়ে ঘাড় অব্দি চলে আসছে আজকাল। ড্রয়ার থেকে বার করে একটা ড্রটিন ডি-এস খেয়ে মোবাইলে টাইপ করল— লিভিং ইন টেন মিনিটস… ওয়াই ডোন্ট য়ু গো টু স্লিপ … আই হ্যাভ মাই কিইস

লাভ নেই বলে, জানে। তবুও।

ল্যাপটপ হাইবারনেট করতে দিয়ে চশমা খুলে টেবিলে রেখে মাথাটা এলিয়ে দিল পেছন দিকে। সাধারণত দশ মিনিটেই কাজ করে ড্রটিন। ব্যথাটা একটু কমলেই বেরিয়ে পড়বে। নইলে এতটা রাস্তা ড্রাইভ করতে অস্বস্তি হয় প্রচণ্ড।

কাউকে নিজের শত্রু ভাবাটা ওর ন্যাচারালি আসে না, কিন্তু মানুষ পরিস্থিতির দাস।

কত লোকের তো কত কিছু হয়… ছাদ থেকে পড়ে যায়… রাস্তায় গাড়ি এসে ধাক্কা মারে… কিন্তু ওর ভাগ্যে সেসব কিছু নেই।

দা আয়রনি অফ লাইফ।

হঠাৎ করে খুব হতাশ লাগছে ব্রতীনের। নিজের সব সাফল্যগুলো কেমন তেতো লাগছে।

বাড়ি ফেরার পর যথারীতি সম্পূর্ণা কোনও প্রশ্ন করল না। টেবিলে খাবার রাখাই ছিল। টিভিটা সাইলেন্ট করে চালিয়ে দিয়ে প্লেট নিয়ে বসল ব্রতীন।

–অ্যানুয়াল হেলথ্‌ চেকআপটা কবে করাবে…
–অহহহ… প্লিজ… করাব!
–লাস্ট দু বছরে করাওনি। পিঠের ব্যথাটাও যাচ্ছে না…
–করিয়ে নেব…
–আর কোনও বিষয়ে কিছুই তো বলি না আমি…

টিভিতে আমেরিকান সুপারহিরোদের সঙ্গে সুপারভিলেন থানোসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলছে। আজকাল খুব ভায়োলেন্ট অ্যাকশন সিনেমা দেখতে ভাল লাগে ওর।

–পুটি, প্লিজ… নট নাও, ওকে?…

ফোনের স্ক্রিনটা জ্বলে উঠল।

ব্রতীন ফোনটা হাতে নিতেই সম্পূর্ণা বেডরুমের দিকে চলে গেল। ঘাড় তুলে একবার সম্পূর্ণার দিকে তাকিয়ে খাবারের প্লেটটা নামিয়ে রাখল সামনের টেবিলে।

অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ।

–ডিয়ার মিস্টার সোম, আমরা এস-এস-এস নামক একটি বিশেষ সংস্থা থেকে…

চাঁদা-ফাদা চাওয়ার তাল হবে। খাওয়া হয়ে গেছিল। টিভি অফ করে শুতে চলে গেল ব্রতীন।

ব্রাশ করতে করতে আগামীকালের মিটিঙের কথা ভাবছিল। কালকের প্রেজেন্টেশনটা বানিয়েছে সুচির জোশির জন্য। জোশিকে দিয়েই মনে হয় চিঁড়ে ভিজতে পারে। খাসকেলের ইয়ারদের মধ্যে একমাত্র ওই আছে, যার অভিমত নিজের দিকে টানতে পারে বলেই ব্রতীনের বিশ্বাস।

বালিশে মাথা দিয়ে আরেকবার ফোনটা হাতে নিতেই মেসেজটা আবার খুলে গেল।

–…ব্যক্তিগত সাক্ষাতের অনুরোধ করছি। আপনার নাম একটি পারস্পরিক পরিচিতির মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি। কোনও কিছু বিক্রির উদ্দেশ্য নিয়ে আপনার সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করছি না। আমাদের সংস্থা একটি বিশেষ ধরনের কাজ করে যা এই মেসেজে বোঝানো সম্ভব নয়, তবে সেটা জানতে পারলে আপনি সে সম্বন্ধে অত্যন্ত আগ্রহী হবেন বলেই আমাদের বিশ্বাস। রাজি থাকলে দেখা করার জায়গা আর সময় আমরা জানাব।

মেসেজের নিচে একটা গাঢ় বাদামী চৌকো নকশার ওপর লাল ব্রেনের ইলাস্ট্রেশন।

তার নিচে খুব ছোট সাদা অক্ষরে লেখা ‘সংযুক্ত শক্তি সমিতি’।

 

দুই.

পিঠের ব্যথাটা যাচ্ছে না প্রায় তিন মাস হতে চলল।

সকালে খাট থেকে উঠতেই যা কষ্ট হয়। ডাক্তার দেখাব-দেখাব করেও সময় হয়ে ওঠে না। ওর ফ্যামিলিতে এমনিতেই স্পন্ডিলসিসের ধাত।

ঘুম থেকে উঠেই কী জানি কেন রাতের মেসেজটার কথা মনে এল। এমনিতে এই ধরনের মেসেজ এলেই স্প্যাম মনে করে ডিলিট করে দেয়, কিন্তু এদের কথার মধ্যে কী যেন একটা আছে যাতে আরও জানতে ইচ্ছে করে।

গুগল খুলে টাইপ করল ‘সংযুক্ত শক্তি সমিতি’।

দু চারটে জিম আর বডি-বিল্ডিং গোছের সংস্থার লিঙ্ক, একটা সোলার আর উইন্ড পাওয়ার কোম্পানি… এ ছাড়া আর বিশেষ কিছু নেই।

ঠিক আছে— মনে মনে ভাবল ব্রতীন— দেখাই যাক না কী ব্যাপার…

উত্তরে লিখে দিল— আমি রাজি।

পর পর দুদিন কোনও উত্তর না পেয়ে ওর কৌতূহল খানিকটা কমে গেছিল। শুক্রবার অফিসে কাজের ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপারটা উড়েই গেল মাথা থেকে।

খাসকেল নতুন বাংলাদেশি ক্লায়েন্টকে নিয়ে ইন্টারনাল মিটিং ডেকেছে।

কনফারেন্স রুম-টেবিলে খাসকেলের একদম মুখোমুখি বসেছে ব্রতীন। ভুল করলেই সবার সামনে ধরিয়ে দেবে। একবার তো প্রায় বাগেই পেয়ে গেছিল, ডিজাইন ডিপার্টমেন্টের হেড সৌম্যদীপ ওকে শেষ মুহূর্তে সাপোর্ট করায় বেঁচে গেল। এই সৌম্যদীপ ছোঁড়া একবছর হল কোম্পানিতে ঢুকেছে, কিন্তু এরই মধ্যে নৌকো বেছে নিয়েছে। ঠিক আছে…

ঠিক এই সময় ফোনটা বেজে উঠল। সাইলেন্ট করতে ভুলে গেছে!

সরি… বলে কলটা কাটার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ওয়াটসঅ্যাপে একটা মেসেজ এসে ঢুকল। খানিকটা অভ্যাসবশতই আঙুলের চাপে খুলে গেল সেটা।

এইরকম একটা চাপা উত্তেজক মিটিঙের মধ্যেও ওর মনোযোগ গিয়ে পড়ল মেসেজটায়।

–গত কয়েকদিন সমূহ ব্যস্ততার কারণে যোগাযোগ করতে পারিনি বলে দুঃখিত। পরশু, রবিবার বেলা এগারোটা নাগাদ নিচের ঠিকানায় দেখা হবে। গাড়ি নিয়ে এলে নিজে চালাবেন, ড্রাইভার আনবেন না।

১১১ কোলবার্থ
হোবোকেন রোড
কলকাতা ৭০০০৮৮

নিচে সেই বাদামী নকশার ওপর লাল ব্রেনের ইলাস্ট্রেশন।

আরও দু-একটা ছোটখাট ক্লায়েন্ট প্রোপোজাল সাবমিট করার কথা পরের সপ্তাহে। সেগুলোর কাজ সারতে সারতে আটটা বেজে গেল।

শুক্রবার আটটার পর অফিস এমনিতেই ফাঁকা হয়ে যায়।

খাসকেল নামক কাঁটাটি ওর জীবন থেকে কবে যাবে ভাবতে ভাবতে গুগল করল ঠিকানাটা। জায়গাটা তারাতলা থেকে গার্ডেনরিচ যাওয়ার দিকে পড়ে, ম্যাপ বলছে। কিন্তু সঠিক লোকেশনটা বোঝা যাচ্ছে না।

মোবাইল খুলে মেসেজ করল— লোকেশন বুঝতে পারছি না। বলে ল্যাপটপ বন্ধ করে ব্যাগে ভরে বেরোনোর জন্য উদ্যত হল।

পার্কিং লটে এসে সবে গাড়িতে উঠেছে, উত্তর এল—

–আপনি হাজরা থেকে আসবেন তো, হাজরা মোড় থেকে আলিপুরের দিক নেবেন। একটা জায়গায় দেখবেন সোজা আর যাওয়া যাচ্ছে না, সোজা রাস্তাটা উল্টোদিক থেকে ওয়ান ওয়ে। সেখান থেকে বাঁদিক নেবেন। ওটা বর্ধমান রোড। ওটা ধরে একটু এগোলে রাস্তার মাঝখানে একটা ফাউন্টেন পড়বে। তার ডানদিক ঘুরে একটু এগোলেই ডায়মন্ড হারবার রোড। রাস্তা ক্রস করে প্রথমে ডানদিক তারপর বাঁদিক নেবেন, রেমাউন্ট রোড পড়বে। বাকিটা ম্যাপ দেখে চলে আসবেন, অসুবিধে হবে না। আপনার গাড়িতে জিপিএস আছে তো।

ওর সম্বন্ধে অনেক কিছুই জানে এরা। কোথায় থাকে, কী গাড়ি, গাড়িতে জিপিএস আছে সেটাও জানে।

–আপনাদের কাজের সম্বন্ধে একটা ধারণা পেলে সুবিধা হত— আবার লিখল ব্রতীন।

উত্তর এল— আমরা কোনও চ্যারিটি সংস্থা নই, এটুকু বলতে পারি। কিছু বিক্রিও করি না, আগেই বলেছি। বলতে পারেন আমরা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, আমাদের বর্তমান সদস্যসংখ্যা হাজার অতিক্রম করেছে।

–কিন্তু কোনওদিন আপনাদের নাম শুনিনি। আর খুঁজেও পাওয়া যায়নি আপনাদের।
–পাবেন না। সেটাই আমাদের বৈশিষ্ট্য। সামনাসামনি কথা হলেই সব বুঝতে পারবেন।
–ওকে।

কৌতূহল উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। ব্যাপারটার শেষ না দেখে ও ছাড়বে না।

 

তিন.

রেমাউন্ট রোডে ঢুকেই চারদিক কেমন অপরিচিত লাগছিল ব্রতীনের।

চারিদিকে আলগা ধুলোর আস্তরণ। যার মধ্যে দিয়ে সবকিছু কেমন অস্পষ্ট দেখায়। সূর্যের তেজও যেন কিছুটা কম। এ যেন বহুযুগ আগেকার কলকাতা।

জায়গাটা রেসিডেন্সিয়াল নয় মোটেই, আবার দোকান-বাজার অফিস-কাছারিও নেই। ইংরেজ আমলের লাল ইটের বাড়ি পরপর, এক-একটার আশেপাশে অনেকটা করে ফাঁকা জায়গা। বাগান ছিল হয়তো এককালে, এখন আগাছা আর জংলা গাছ-গাছালিতে ভরা। এদিকসেদিক বড় বড় লোহার বিম, পুরনো মেশিনারির ভগ্নাংশ পড়ে রয়েছে।

যেতে যেতে রেলের লাইন পড়ল। এদিক দিয়ে এখনও ট্রেন যায় কিনা কে জানে। হয়তো পরিত্যক্ত।

লাইন পেরিয়ে রাস্তাটা একবার ডাইনে, আবার বাঁয়ে, আবার ডাইনে ঘুরে গেল। দুধারে খুব উঁচু দেওয়াল, ভেতরে কী আছে বোঝা যাচ্ছে না।

কলকাতায় এপ্রিল মাস, তাও কেমন যেন শীত শীত করছে।

রাস্তা পাকা, কিন্তু ধুলোর পরিমাণ বেড়েই চলেছে। ওর ঝকঝকে, ওয়াইন কালারের হুন্ডাই অ্যাক্সেন্ট গাড়িটা তামাটে হয়ে গেছে এতক্ষণে।

হঠাৎ গাড়ি থামিয়ে দিল ব্রতীন।

সামনে বিরাট উঁচু আর লম্বা একটা ট্রাক ব্যাক করে ডানদিকের গেট দিয়ে ঢুকছে। ভেতরে তাকিয়ে দেখল বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বিভিন্ন রঙের বড় বড় লোহার বাক্স তিন-চার-পাঁচ তলা সমান উঁচু করে পর পর সারি দিয়ে রাখা আছে।

ব্রতীন বুঝল এটা ডক অঞ্চল।

এইখানে কেউ কেন দেখা করার জন্য বলবে মাথায় এল না।

গুগল ম্যাপ যেখানে এসে “য়ু হ্যাভ রিচ্‌ড য়োর ডেস্টিনেশন” বলে থেমে গেল, সেখানে আশেপাশে প্রায় কিছুই নেই। রাস্তার একদিকটা কাঁচা মাটির, অন্যদিকে উঁচু দেওয়াল।

পকেট থেকে মোবাইল বার করে টাইপ করছে, হঠাৎ দেখে দেওয়াল ফুঁড়ে একটা লোক বেরিয়ে এসেছে। ভাল করে তাকিয়ে দেখে দেওয়ালের গায়ে একটা ছোট লোহার দরজা। দেওয়ালের রং আর দরজার রং মোটা ধুলোর আস্তরণে এক হয়ে গেছে।

লোকটা সোজা ওর সামনে এসে হাসিহাসি মুখ করে বলল— আসুন। গাড়ি এখানেই থাক।

ভেতরে আরেকটা বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে নানারকমের বিশাল বিশাল লোহার কন্টেনার রাখা। সেগুলোর মাঝখান দিয়ে একটা সরু আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে লোকটার পেছন পেছন হাঁটতে হাঁটতে ব্রতীন একটু গলা তুলে জিজ্ঞেস করল— আপনিই আমাকে মেসেজ করেছিলেন?

–না, উনি ভেতরে আছেন। আসুন।

গোলকধাঁধার মধ্যে দিয়ে অনেক্ষণ হাঁটার পর হঠাৎ একটা ছোট ফাঁকা জায়গায় এসে পড়ল ওরা। তার একদিকে দেখে একটা এক কামরার অফিসঘর।

এই পর্যন্ত এসে লোকটা অফিসের দিকে আঙুল তুলে দেখিয়ে পেছন ফিরে আবার ওই লোহার বাক্সগুলোর মধ্যে হারিয়ে গেল।

অফিসে একটা বড় ডেস্কের পেছনে একজন ষাটোর্ধ ভদ্রলোক বসে। আর কেউ নেই। ভদ্রলোকের মুখে অমায়িক হাসি।

উঠে দাঁড়িয়ে সামনের চেয়ারটা দেখিয়ে বললেন— প্লিজ হ্যাভ আ সিট, মিস্টার সোম।

–আপনার ব্যস্ত সময়সূচির ভেতর থেকে সময় বার করে আপনি যে আসলেন, আমার খুব ভাল লাগল। আশাকরি এটুকু বুঝতে পারছেন, যে এইখানে কোনও সমাজসেবামূলক কাজ করার জন্য বা কিছু বিক্রি করার জন্য আপনাকে আমি ডাকিনি।
–শুনে আস্বস্ত হলাম। বলে চেয়ারে বসল ব্রতীন।

ভদ্রলোক একটু হাসলেন।

–দেখুন, যে বিষয়টা নিয়ে কথা বলতে চাই, সেটা এমনই ব্যক্তিগত ধরনের যে বাধ্য হয়েই আপনাকে এরকম একটা জায়গায় দেখা করতে বলতে হল।

ভুরু কুঁচকে সম্মতিসূচক মাথা নাড়ল ব্রতীন।

ভদ্রলোক ডেস্কের নিচের ড্রয়ার থেকে একটা স্টেপল করা কাগজের তাড়া বের করে ডেস্কের ওপর রেখে বললেন— সমিতি আমাদের মৌলিক দর্শন সম্বন্ধে এই পাণ্ডুলিপি ছেপেছে। কিন্তু সেটা পড়িয়ে আপনাকে বিরক্ত করব না। আমি সরাসরি আমাদের বক্তব্যের কেন্দ্রবিন্দুতে যাচ্ছি।

–বেশ…
–শুরুতেই বলে রাখা ভাল, আপনি আমাদের নীতির সাথে একমত নাও হতে পারেন। যদি তাই হয়, তাহলে বিরাট উত্তেজনার কোনও প্রয়োজন নেই, আমার লোক আবার আপনাকে আপনার গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে আসবে।
–কিসের নীতি… ?”

একটা লম্বা নিঃশ্বাস টেনে ভদ্রলোক বললেন— সংযুক্ত শক্তি সমিতির সদস্যরা মনে করে এই পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ আছে, যারা না থাকলেই ভাল হয়।

বলেই হেসে উঠে একটু ঝুঁকে টেবিলের ওপর আলতো চাপড় মেরে বললেন— আমাদের কিছু সদস্য আমার এই ডাইরেক্ট অ্যাপ্রোচের উপর বিশ্বাস রাখেন না, জানেন। ওদের মতে আরও ইনিয়েবিনিয়ে বলা উচিত। তবে প্রকৃতপক্ষে, আমি এই সরাসরি পদ্ধতিতে দুর্দান্ত ফলাফল পেয়েছি… সো মিস্টার সোম, আমি যা বললাম সেই সম্বন্ধে আপনার কি মনে হয়?

–জানি না। এই বিষয়ে কখনও ভাবিনি।
–মৃত্যুদণ্ড সম্পর্কে আপনার কি মতামত?
–বিশ্বাস করি। খুনি, ধর্ষণকারী, টেররিস্ট, সমাজের প্যারাসাইট… এরা কোনওমতেই বেঁচে থাকার যোগ্য নয়।
–আহ! তার মানে মৌলিকভাবে আপনি আমাদের নীতির বিরুদ্ধে নন, প্রশ্নটা হল কী ধরনের কিছু মানুষ না থাকলেই ভাল হয়।
–বলতে পারেন…
–বেশ। এইবার আপনাকে এইখানে ডেকে আনার মূল উদ্দেশ্য যা, সেটা বলি। ব্যক্তিগতভাবে আপনি কি কখনও চেয়েছেন যে বিশেষ কোনও একজন মানুষ না থাকলেই ভাল হয়?

ব্রতীনের হঠাৎ খুব অস্বস্তি লাগতে শুরু করেছে।

একবার অফিসঘরটার ভেতর চোখ বুলিয়ে দেখল, উল্লেখযোগ্য কিছুই নেই। অতি সাধারণ অফিসঘর।

কিন্তু উপস্থিত যে জায়গাটায় ও আছে, সেটার কথা মনে করে একটু ভয় ভয় লাগতে শুরু করেছে।

–আপনার মতে এমন কেউ কি আছে যাকে এই পৃথিবী থেকে অপসৃত করা হলে উপকার হয়?
–আপনারা কি পেশাদার খুনি সংস্থা?? গলা তুলে বলে ওঠে ব্রতীন।

চওড়া হাসি হেসে খুব অমায়িক গলায় ভদ্রলোক বলে উঠলেন—

–একেবারেই না মিস্টার সোম, একেবারেই না। আমাদের লক্ষ্য বা পদ্ধতির কোনও অপরাধমূলক দিক নেই। স্বীকার করছি আমরা একটি গুপ্ত সংস্থা, কিন্তু আপনি আমাদের সদস্যদের সম্পর্কে জানলে আশ্চর্য হবেন। বিশিষ্ট আইনজীবী, চিকিৎসক, খেলোয়াড়, প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও আছেন আমাদের মধ্যে।

আমি বরং আপনাকে বলি, আমাদের সংস্থার শুরু হয়েছিল কীভাবে…

তিনজন ব্যক্তিকে জড়িয়ে এর সূত্রপাত। তাদের নাম আমি বলতে পারব না, আমাকে মাফ করবেন। আজ থেকে বছর সাতেক আগে এক চাঞ্চল্যকর মামলায় এই তিন ব্যক্তি জড়িত ছিলেন। একজন ছিলেন মামলার পাবলিক প্রসেকিউটার, একজন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ আর তৃতীয়জন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। একটি ছোট শিশুর বিরুদ্ধে জঘন্য এক অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল। অপরাধী নিঃসন্দেহে দোষী ছিল, কিন্তু অস্বাভাবিক চতুর বিপক্ষের উকিল এবং এক প্রায় ঘুমন্ত বিচারকের জঘন্য সংমিশ্রণে সে মুক্তি পেয়ে যায়। ওই তিনজন, যাঁরা সহকর্মী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধুও ছিলেন, ওই রায়ে গভীরভাবে শোকাহত হন, এবং প্রতিজ্ঞা করেন এই বিষয়ে কিছু করবেন।

এদের মধ্যে ওই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ লোকটি দেশ-বিদেশের গুপ্ত সম্প্রদায়ের চর্চা করা অনেকরকম পদ্ধতির কথা জানতেন। এদের মধ্যে বিশেষত হাইতির একটি ভুডু পদ্ধতির কথা তিনি বলেন।

ব্রতীন উঠে দাঁড়িয়েছিল। পুরো ব্যাপারটা কমপ্লিট ওয়েস্ট অফ টাইম লাগছিল ওর।

–আরে আরে মিস্টার সোম, বসুন, বসুন। আপনি যদি ভাবেন যে আমাদের সংস্থা পুতুলে পিন ফোটানোর মতো কোনও ভুডু পদ্ধতি অনুশীলন করে, আর তাই নিয়ে আমি আপনাকে বলতে চলেছি, তা একেবারেই না। ওই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ লোকটি বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারায় বিশ্বাসী, তাই উনি এর যুক্তিসঙ্গত দিকটাই তুলে ধরেন।

ভুডু পুরোহিত যখন কারও নামে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে, সেটি সেই অভিপ্রেত ব্যক্তির নিজস্ব বিশ্বাস-অবিশ্বাসের ওপর কাজ করে।

সেই বিশ্বাস থেকে ভয়, আর ভয় থেকে মানসিক এবং শারীরিক অসুস্থতা, এবং তাই থেকেই মৃত্যু। কখনও হয়তো দুর্ঘটনা-জনিত মৃত্যু, যে দুর্ঘটনাটি গোপন বিশ্বাস দ্বারা প্ররোচিত যে যাকে একবার অভিশাপ দেওয়া হয়েছে, তাকে মরতেই হবে।

সেই চিন্তারই প্রসারস্বরূপ আমরা ভাবতে পারি, যে ক্বচিৎ-কদাচিৎ একজন লোকের ইচ্ছাশক্তি দিয়ে যদি এটা ঘটানো সম্ভব, তাহলে একসঙ্গে দুশো, পাঁচশো কিংবা হাজারজনের সম্মিলিত ইচ্ছাশক্তির প্রয়োগে কী করা সম্ভব?

 

চার.

গলা শুকিয়ে গেছিল ব্রতীনের।

–একটু… জল…
–নিশ্চয়ই, বলে ভদ্রলোক পাশ থেকে নিজের জলের বোতলটা সামনে এনে রাখলেন।

ঢক ঢক করে অনেকটা জল খেয়ে সোজা হয়ে বসল ব্রতীন ।

–সেই বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি তখন প্রস্তাব দিলেন, তাঁর তত্ত্ব সেই বেকসুর খালাস অপরাধীর ওপর প্রয়োগ করে দেখা যাক। তাঁরা তখন গিয়ে সেই লোকটার সঙ্গে দেখা করলেন। করে সোজাসুজি তাঁদের অভিপ্রায় জানালেন। তাঁরা ব্যাখ্যা করলেন যে কীভাবে এবং কেন তাঁদের ইচ্ছাটি বাস্তবে পরিণত হবে।

শুনে লোকটা ওদের পাগল মনে করে মুখের ওপর হো হো করে হাসল।

কিন্তু তার চেহারায় কোথায় যেন একটা কুসংস্কার-জনিত ভয় তাঁরা লক্ষ করেছিলেন। তাঁরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে প্রতিদিন তাঁরা দিনের একটি বিশেষ সময়ে একসঙ্গে একাগ্রচিত্তে তার মৃত্যুকামনা করবে, আর কিচ্ছু না।

গা শিরশির করে উঠল ব্রতীনের। ঘাড়ের কাছে চিনচিনে ব্যথাটা যেন ওঁত পেতে ছিল।

–ধুর এরকম কিছু হয় নাকি…
–অপরাধী লোকটা তার মাস চারেকের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকে মারা যায়।
–আমি জানতাম! আপনি ঠিক এইরকমই কিছু বলবেন…
–আমাদের সেই তিন বন্ধুও কিন্তু ব্যাপারটায় পুরোপুরি সন্তুষ্ট হননি। ঘটনাটা যে নিছক কাকতালীয় নয়, সেটা পরীক্ষা করার জন্যে তাঁরা আবার চেষ্টা করেন।
–আবার?
–হ্যাঁ, আবার। লক্ষ্য কে ছিল সেটা আর বলছি না, কিন্তু এবার তাঁরা আরও তিনজন ব্যক্তির সাহায্য নেন।
–অর্থাৎ আরও তিনজন এদের সাথে যোগ দেয়?
–ঠিক তাই। আর এই ছয়জন সদস্যই হচ্ছেন আমাদের সমিতির কেন্দ্রস্থল।
–আর আপনি বলতে চাইছেন আজ আপনারা হাজারেরও বেশি?
–হ্যাঁ, গোটা দেশ জুড়ে। একটা গোপন সংস্থা, যা বাস্তবে বিদ্যমান নয়, খুঁজলে পাওয়া যায় না। সদস্যরা সবাই সবার নামও জানে না। কিন্তু আছে। আর দিন দিন বাড়ছে। এমন একটা সংস্থা যাদের কাজ একসঙ্গে কারও মৃত্যুকামনা করা।
–নতুন লোক কীভাবে বাছেন?
–প্রথম প্রথম লোকে স্বেচ্ছাকৃতভাবে যোগদান করেছে। এখন একটা সিস্টেম আছে। প্রতিটি নতুন সদস্য একজন সম্ভাব্য ব্যক্তির নাম জমা দেওয়ার ভিত্তিতে যোগদান করেন। উদ্দিষ্ট ব্যক্তি যথার্থ দাবিদার কিনা খতিয়ে দেখে সমিতি। কেস যদি জেনুইন হয়, সব সদস্য মিলে সম্মিলিত ইচ্ছাশক্তির প্রয়োগ করে। যদি সফল হয়, তাহলে নতুন সদস্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় যে ভবিষ্যতের সমস্ত সম্মিলিত ক্রিয়ায় অবশ্যই অংশগ্রহণ করবেন। এছাড়া একটা সামান্য বার্ষিক ফি আছে।

ব্রতীন সোম এতক্ষণে নড়ে চড়ে বসল।

–কত ফি?
–পাঁচশো টাকা বছরে।
–হাজার দিয়ে গুণ করলে কত দাঁড়ায়?
–আপনি বিশ্বাস করুন, আমাদের সংস্থা লাভ দ্বারা চালিত নয়। টাকাটা সমিতির কার্যকলাপ, খরচাপাতি, রিসার্চ এইসব কাজে লাগে। আজকের দিনে এক হাজার সদস্য মিলিয়ে অঙ্কটা যে যৎসামান্য তা কি আপনি মানেন না, মিস্টার সোম?

আস্তে আস্তে সম্মতিসূচক মাথা নাড়ল ব্রতীন।

–আপনার মনে যদি প্রশ্ন থাকে আমাদের সাফল্যের ভাগ কত, তাহলে বলি, আজ পর্যন্ত দুশো তিয়াত্তরজন সম্ভাব্য ব্যক্তির নাম সমিতি অনুমোদন করেছে। তার মধ্যে একশো বিরানব্বইজন মৃত। যে ভয় পায় না, তার ক্ষেত্রে খাটে না।

চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে ঘরের মধ্যে পায়চারি করতে করতে ব্রতীন বলে উঠল— অবিশ্বাস্য! আমি এক্ষুনি যদি সবাইকে আপনাদের কথা জানিয়ে দিই?

–কী জানাবেন? আমাদের তো কোনও উপস্থিতিই নেই। আপনি বড়জোর দু-চারটে লোক নিয়ে এখানে আসতে পারেন। এসে কী দেখাবেন? কী বলবেন? আমি আপনাকে এইসব বলেছি বলবেন? আপনি তো আমার নামও জানেন না!

ব্রতীনের আবার হঠাৎ ঘাড়ের কাছটায় অসহ্য ব্যথা করতে শুরু করেছে। বেশ গরমও লাগাতে সে দরজার কাছে গিয়ে দরজাটা খুলে দিল। সেই লোকটা যে ওকে গাড়ি থেকে নিয়ে এসেছিল, দূরে ছায়ায় দাঁড়িয়ে আছে।

–ছেলেমানুষি করবেন না, মিস্টার সোম।

না, এ অবাস্তব! কিন্তু ও দেখতে পাচ্ছে এটা কীভাবে কাজ করতে পারে। এক হাজার মানুষ একসঙ্গে প্রতিদিন মৃত্যুকামনা করছে জানতে পারলে যে কারও হাড় হিম হয়ে যাবে।

ভগবান! মনে মনে ভাবল ব্রতীন। যদি সত্যিই এমন হয়…

ওর নিজের চিন্তাগুলো তো একান্তই ওর নিজের, লুকিয়ে রাখা… যেখানে কেউ কোনওদিন উঁকি দিতে পারবে না। কিন্তু এদের পন্থা তো আরও বেশি কার্যকর, আরও ভয়াবহ।

মৃত্যুর একাগ্র চিন্তায় জ্বলতে থাকা হাজার মন যেন সে দেখতে পাচ্ছে… উদ্দিষ্ট লোক প্রথমে ব্যঙ্গচ্ছলে উড়িয়ে দিচ্ছে… তারপর আস্তে আস্তে একটা ছোট্ট বিশ্বাসের বীজ মনে ঢুকছে, আর দেখতে দেখতে তা প্রলয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে তার সমগ্র সত্তাকে আতঙ্কের আচ্ছাদনে ঢেকে ফেলছে…

হঠাৎ মুখের সামনে খাসকেলের চেহারাটা ভেসে উঠল।

ততক্ষণে ভদ্রলোক ওর পেছনে এসে দাঁড়িয়েছেন।

তার দিকে ফিরে ব্রতীন জিজ্ঞেস করল— কিন্তু উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে নিশ্চয়ই ব্যাপারটা জানাতে হবে, রাইট?

–অবশ্যই। পুরো বিষয়টার খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা দিক আপনি তুলে ধরেছেন। উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে আমাদের জানাতেই হয়, আর আজ ঠিক সেই কাজটাই আমি করলাম।
–তার মানে?

কথাটা বলে ভদ্রলোক নিজের বাঁহাতের কব্জিতে বাঁধা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন— আজ বেলা ঠিক বারোটার সময় আপনার মৃত্যুকামনা শুরু হয়েছে। সমিতি তার কাজ শুরু করে দিয়েছে। আই অ্যাম ভেরি সরি আই হ্যাড টু গিভ য়ু দ্য ব্যাড নিউজ।

বলে হাত তুলে সেই দূরে দাঁড়ানো লোকটাকে ইশারায় ডাকলেন।

তারপর ছোট্ট একটা নড্‌ করে বললেন— গুড বাই, মিস্টার সোম।