বেলাশেষে

বেলাশেষে | প্রবুদ্ধ বাগচী

প্রবুদ্ধ বাগচী

 

–আপনার ফ্ল্যাটটা ঠিক কোথায় বলুন তো?
–বেলেঘাটা। সুভাষ সরোবর চেনেন তো?
–হ্যাঁ, খুব চিনি। ওখানে কোন জায়গাটায়?
–ওই যে ‘রাগিনী’ সিনেমা হলটা আছে না… ওটা পেরিয়ে কিছুটা এগিয়ে ডানদিকে।
–কতটা?
–বেশি না, মিনিট পাঁচেক।
–ডানদিকে একটা পুরনো কারখানা ছিল না?
–হ্যাঁ হ্যাঁ। ওটাই তো প্রোমোটিং হয়ে এখন হাউজিং হয়েছে। তাহলে এদিকে আপনার যাতায়াত আছে, বলুন!
–আছে নয়, ছিল। তিরিশ বছর আগে তো ওসব জায়গা তো একদম পোড়ো ছিল। লোকে যেতে ভয় পেত।
–হয়তো ঠিকই বলছেন।
–আপনি ওখানে কবে থেকে আছেন?
–আমরা… ধরুন বছর সতেরো-আঠারো…
–তার আগে?
–সল্টলেক। বাবা সরকারি চাকরি করতেন তো, প্রথমদিকে কোয়ার্টার পেয়েছিলেন ওখানে।
–তখন তো সরকারি কর্মীরা অনেকে জমি-টমিও পেয়েছিলেন শুনেছি। আপনার বাবা নেননি?
–না। আসলে আমরা সরকারি কোয়ার্টারে থাকলেও বাবা সল্টলেক জায়গাটা তেমন পছন্দ করতেন না। বলতেন, কেমন যেন সব ছাড়া-ছাড়া, সব উড়ে এসে জুড়ে বসা মানুষ।
–সেটা খুব ভুল বলতেন না। তবে কী জানেন, সেই সময় যারা এটা মেনে নিতে পেরেছিলেন তাঁরা আজ বিরাট দাঁও মেরে দিয়েছেন। এখন তো সল্টলেকই বলতে গেলে কলকাতার মেনল্যান্ড!
–তা ঠিক। তবে বাবার আদি পাড়াটা ছিল রাসমণি বাজার। ওখানে আমার ঠাকুরদা বেশ বড় বাড়ি করেছিলেন। তারপর যা হয় আর কি…
–হ্যাঁ, ভাঙাভাঙি, বাড়িতে জায়গা অকুলান। সবাইকে নিজের মতো ব্যবস্থা করে নিতে হয়।
–যা বলেছেন।
–তা এখনও সেই বাড়ি আছে নাকি? প্রোমোটার থাবা বসায়নি!
–না, এখনও আছে। তবে সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে। আমার জ্যাঠামশায়ের বড়ছেলে তিনতলাটায় ফ্যামিলি নিয়ে থাকে। একতলায় ভাড়া। আর দোতলাটা বন্ধই থাকে।
–এসব পুরনো বাড়ি মেনটেন করাও এক সমস্যা।
–একদমই তাই।
–আপনি যেখানটায় থাকেন বলছেন ওখানে ওই পাড়ায় আমার এক বন্ধু থাকত।
–কে বলুন তো?
–সৃজিত দেবনাথ। হাওড়া দীনবন্ধু কলেজে ইকনমিক্স পড়াত।
–না চিনতে পারলাম না। অবশ্য এখন সব আবাসন হয়ে গিয়ে তো আর সেই পাড়ার কালচারটা নেই। কেউই কাউকে চেনে না।
–যা বলেছেন। সৃজিতরা অবশ্য ওখানকার পুরনো বাসিন্দা। ওর বাবা নামী উকিল ছিলেন। অবশ্য সে কি আজকের কথা!
–হ্যাঁ, দেখতে দেখতে মেঘে মেঘে আমাদের সবারই বেলা হল…
–ঠিক। ঠিক।
–তবে আমাদের এই এলাকাটা যে আপনার একেবারেই অচেনা নয় এই খবরটা জানা হল। তা বন্ধুর বাড়িতে এখন আর আসা-টাসা হয় না?
–সৃজিত তো রিটায়ারমেন্টের পর ওর মেয়ের কাছে বেঙ্গালুরুতে থাকে। মাঝেমধ্যে হয়তো কলকাতা আসে। ইদানিং অনেকদিন আর যোগাযোগ নেই।
–বন্ধুর বাড়ি না হয়, আমার এখানেই না হয় একদিন আসুন না!
–হুম…
–কিছু বললেন না যে…
–ভাবছি।
–এর মধ্যে আবার এত ভাবার কী আছে?
–না, তা নয়। তবে ঘড়িতে দেখছি বেশ রাত হল। এত রাত অবধি একজন ভদ্রমহিলার সঙ্গে কথা বলা…
–কী যে বলেন!
–আজ বরং থাক। পরে একদিন কথা বলব।

 

দুই.

—আগের দিন তো আমার অনেক কথাই শুনলেন। আপনার কথা তো কিছুই শোনা হল না।
–বলুন কী জানতে চান?
–কাবেরী বলছিল, আপনি নাকি দমদমের দিকে থাকেন?
–হ্যাঁ, দমদম মানে মতিঝিল। নাগেরবাজারের একটু আগে।
–আমি ওদিকটা তেমন চিনি না অবশ্য।
–এদিকে বুঝি আসা হয় না?
–ওই দমদম রেল স্টেশন আর মেট্রো স্টেশনে কখনও কখনও গেছি। আপনার বাড়ি কি তার কাছেই?
–খুব কাছে নয়, আবার খুব দূরেও নয়। একটা অটোয় চাপতে হয়।
–ওদিকটা খুব ঘিঞ্জি শুনেছি।
–ভুল শোনেননি। তবে মতিঝিল জায়গাটা তেমন নয়। খুব পরিষ্কার আর নিরিবিলি। গাছপালাও আছে।
–ওখানে আছেন কতদিন?
–এই ফ্ল্যাটটায় বছর দশেক। তার আগে এয়ারপোর্টের দিকটায় থাকতাম।
–ও…
–আপনার বান্ধবী কাবেরী অবশ্য আমার এখান থেকে খুব দূরে থাকে না। ওর বাড়ি কখনও এসেছেন নাকি?
–হ্যাঁ, ওর বাড়ি তো কালিন্দী। অনেকদিন আগে একবার গিয়েছিলাম। পুরোটা মনে নেই, তবে খুব রাস্তা জ্যাম ছিল…
–আর বলবেন না। যশোর রোডের মতো রাস্তারও আর কোনও উন্নতি হল না। অবশ্য এখন কালিন্দী এলে আপনি আর কিছু চিনতে পারবেন না। সব বেবাক পাল্টে গেছে।
–আচ্ছা, এই যে আপনি ‘বেবাক’ কথাটা বললেন— বাই এনি চান্স আপনি কি ওপারের লোক নাকি?
–একেবারেই নয়। আমার ঠাকুরদা অবশ্য ময়মনসিংহতে চাকরি করতেন। রেলে। তবে পার্টিশনের অনেক আগেই এপারে চলে আসেন। সেই অর্থে আমরা দুপুরুষ এদিকেই। আমার বাবা কলকাতাতেই চাকরি করতেন। পোর্ট ট্রাস্ট। আপনারা বোধহয় বরাবরই বেলেঘাটারই, তাই না?
–হ্যাঁ, আমাদের সব বেলেঘাটাতেই।
–বাই দি বাই, একটা কথা মনে পড়ল। আগে একটা কথা খুব শুনতাম ‘যার নেই পুঁজিপাটা/ সেই যায় বেলেঘাটা’— হাঃ হাঃ হাঃ— কিছু মনে করলেন নাকি?
–কী যে বলেন। কথাটা আমিও শুনেছি একসময়। তবে আমার মনে হয় একসময় তো বেলেঘাটায় প্রচুর ওপার বাংলার মানুষ এসে ঘর বেঁধেছিলেন, হয়তো সেই থেকেই ওটা চালু।
–আমারও তাই মনে হয়। আমরা দুজনে কেউই সেই দলে পড়ি না। তা আর কী জানতে চান বলুন!
–আচ্ছা, কাবেরীর সঙ্গে আপনার পরিচয় তো অফিসে, তাই না?
–হ্যাঁ, ম্যাডাম। আমারও তো রেলের চাকরি ছিল। মালদা ডিভিশন থেকে যখন হাওড়ায় বদলি হয়ে এলাম, তখন ফেয়ারলি প্লেসের অফিসে আমরা একই সেকশনে বসতাম। সেই থেকেই আলাপ।
–কাবেরী আমার কলেজের বন্ধু। আমরা দুজনে একসঙ্গে বিদ্যাসাগর কলেজে পড়তাম।
–আপনি তো বোধহয় বিয়ের পর ঝাড়গ্রাম চলে গিয়েছিলেন, তাই না?
–হ্যাঁ, আমার প্রাক্তন স্বামী ওখানে ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টে চাকরি করতেন। আমিও ওখানকার একটা স্কুলে পড়াতাম।
–এখনও তো পড়ান বোধহয়?
–পড়াতাম। সল্টলেকের একটা স্কুলে। বছর খানেক আগে রিটায়ার করে গেছি।
–পড়ালে-টড়ালে দিব্যি সময় কেটে যায়, বলুন?
–কিছুটা হয়তো যায়। সবটা যদি যেত তাহলে কি আর আমরা এতক্ষণ ধরে ফোনে কথা বলতাম?
–এটা বড় খাঁটি কথা বললেন!
–এই বিষয়ে তো কাবেরীর সঙ্গে আপনার কথা হয়েছে…
–তা হয়েছে, কিন্তু…
–আবার কিন্তু কীসের মশাই?
–আসলে ফোনে ফোনে তো আর সব হয় না… বুঝতেই পারছেন…
–কে বলেছে আপনাকে ফোনেই সব বোঝাবুঝি মিটিয়ে নিতে?
–না, মানে সেইটাই…
–ঠিক করুন, আপনি একদিন আমার বাড়ি আসবেন নাকি আমি আপনার ওখানে চলে যাব? কোনটা আপনার সুবিধে?
–কোনওটাতেই আমার কোনও অসুবিধে নেই। তবে মুশকিল হল, আমার বাড়িতেও তো কেউ নেই, আর আমি ঠিক রান্নাবান্না পারি না…
–আমি কি আপনার বাড়ি নেমন্তন্ন খেতে যাব নাকি মশাই? ছেড়ে দিন, ওসব আপনাকে ভাবতে হবে না। আপনিই বরং একদিন আমার এখানে আসুন। আপনার চেনা পাড়া, দেখবেন ভালোই লাগবে। কবে আসতে পারবেন?
–আপনিই বলুন।
–আগামী রবিবার অসুবিধে আছে কি? আর আমার আপনার আবার শনি-রবিবার কী দরকার? রোজই তো আমাদের ছুটি…
–তাও ওই রবিবারটাই থাক। মনে হয় পারব।
–অবশ্যই পারবেন।

 

তিন.

–আপনার ফ্ল্যাটের বারান্দাটা খুব সুন্দর তো। পাঁচতলার ওপর, বেশ হাওয়া-বাতাস আছে।
–তা বলতে পারেন। আসলে বাবা যখন কিনেছিল তখন বেশি লোকে এটার সন্ধান পায়নি, তাই আমরা কিছুটা নিজের পছন্দমতো পেয়েছিলাম। চা না কফি… কী খাবেন বলুন?
–এখন আবার ওসব কী দরকার… দুপুরে তো বেশ রাজকীয় ব্যবস্থা করেছেন নিশ্চয়ই!
–রাজকীয় আবার কী? আমাদের বয়সে কি আর ওসব রাজকীয়-টীয় হলে চলে? তারপর কিছু হলে ঠেলা সামলাবে কে?
–হ্যাঁ, সেদিক দিয়ে আমাদের দুজনেরই একই অবস্থা। তাহলে একটু লিকার চা হোক।
–অবশ্যই হবে। বসুন। করে আনছি।
–চিনি নয় কিন্তু।
–জানি, কাবেরী আমায় বলেছে… চিন্তা নেই।
–কাবেরীকে আজ আসতে বললে হত, কী বলেন মিসেস ঘোষ!
–অসুবিধে আর কী? তবে আমার আপনার সব কথা কি ওর উপস্থিতিতে হতে পারত বলে আপনার মনে হয়?
–ও হো… এটা ঠিক মাথায় আসেনি, বুঝেছেন!
–জানি মিস্টার ঘোষাল, সবকিছু সবসময়ে ছেলেদের মাথায় আসে না। সেইজন্যই তো…
–থেমে গেলেন যে…
–এর বেশি বলব না, তাই।

–আপনার চা খুব ভাল হয়েছে কিন্তু।
–ধন্যবাদ।
–আসলে চায়ের সঙ্গে চা যিনি বানাচ্ছেন তার একটা সম্পর্ক থাকে, বুঝলেন মিসেস ঘোষ। যাকে বলে ব্যাটে বলে হওয়া…
–আচ্ছা! একেবারে ক্রিকেটে চলে গেলেন দেখছি!
–হাঃ হাঃ… এককালে ক্রিকেট খুব ভালবাসতাম, ম্যাডাম। সব স্কোর রেকর্ড মুখস্থ থাকত…
–একটু কথা ঘোরাচ্ছেন বোধহয়।
–না না, বলুন না কী বলবেন? আমি তো শুনতেই এসেছি।
–শুধু শুনতে? শোনাতে নয় বুঝি!
–তাও বলতে পারেন। তা আমরা কি এই বারান্দাতে বসেই কথা বলব নাকি ঘরে?
–আপনার আপত্তি না থাকলে বারান্দা খারাপ কী? এখন তো তেমন আর রোদ নেই। নভেম্বর পড়ে গেল। সন্ধের দিকে অল্প অল্প হিম পড়ে।
–হেমন্তকাল। এই ঋতুটাকে আজকাল আর তেমন টের পাওয়া যায় না তাই না?
–ঠিক বলেছেন। অথচ আমার কী মনে হয় জানেন এই ঋতুটা আসলে আমাদের মতো বয়সিদের জন্যই…
–কেন বলছেন?
–ওই যে রবীন্দ্রনাথের গানটা আছে না ‘আজি এল হেমন্তের দিন/ কুহেলিবিহীন, ভূষণবিহীন’…. পরের লাইনটা মনে পড়ছে না…
–আপনার তার মানে রীতিমতো গানের চর্চা ছিল…
–গড়পড়তা বাঙালি মেয়েদের যেটুকু থাকে তার থেকে এমন বেশি কিছু নয়। তারপর একদিন জীবনের নিয়মে সেই চর্চা ফুরিয়েও যায়। সেইরকমই আর কি।
–মিসেস ঘোষ, কাবেরী আমার বিষয়ে আপনাকে কতটুকু বলেছে, বলবেন? তাহলে মনে হয় আমাদের কথা বলতে সুবিধে হয়।
–বলব। তবে একটা অনুরোধ আছে। মিসেস ঘোষ নয়, আমার একটা নাম আছে। সেটা ধরে সম্বোধন করলে ভাল লাগবে।
–জানি। সুজাতা। সুজাতা ঘোষ।
–ঘোষ নয়, মিত্র। মিত্র আমার পারিবারিক পদবি। ডিভোর্সের পর থেকে আমি ওটাই ব্যবহার করি, ঘোষ নয়।
–সরি, এটা আমার জানা ছিল না।
–এইসব না-জানাগুলো জেনে নেওয়ার জন্যই তো এসেছন মিস্টার ঘোষাল। জানুন, সব জেনে নিন। আসুন আমরা দুজনে দুজনের কথা বলি।
–তবে তো আমারও একটা অনুরোধ আছে।
–নিঃসঙ্কোচে বলুন।
–সেই হিসেবে আমারও তো একটা পিতৃদত্ত নাম আছে, জানেন বোধহয়…
–হ্যাঁ। রুদ্রদেব। কাবেরী বলেছে তো।
–এরপরেও কি মিস্টার ঘোষালটা বাদ দেওয়া যায় না?
–আমরা কি ঠিক সমবয়সি?
–সেটা আপনি বলতে পারবেন। আমি গত মাসে তেষট্টি পেরিয়েছি।
–আচ্ছা, তাহলে আমি আপনার থেকে খুব বেশি পিছিয়ে নেই। মেরেকেটে বছর দুয়েক।
–তাহলে তো মিটেই গেল।
–কিন্তু একটা ব্যাপার কি জানেন, রুদ্র নামটার মধ্যে কেমন যেন একটা টাটকা যৌবনের ব্যাপার আছে… অথচ বয়স হলে তো আর নাম পাল্টে ফেলা যায় না! কেমন অদ্ভুত ব্যাপার তাই না?
–এটা তো আগে ভেবে দেখিনি, সুজাতা…
–মানে শব্দটা একই রয়ে গেল আর সেটাকে যে বহন করছে সে বুড়িয়ে গেল। অবশ্য বুড়িয়ে যাওয়া শব্দটায় আপনার আপত্তি থাকতে পারে।
–আমি যে ততটা বুড়িয়ে গেছি তা নয়, তবে একেবারে তাজা আছি তাই বা বলি কেমন করে? হার্ট, প্রেশার, সুগার এসব নিয়ে তো ওষুধ-বিশুধ খেতেই হয় আর বছরে দুয়েকবার ডাক্তারের কাছে গিয়ে অনেক সাবধানবাণী শুনে আসতে হয়।
–আমারও অবশ্য আপনাকে দেখে সেই কথাই মনে হয়েছে। বেশ তাহলে রুদ্রদেব বলে ডাকা যেতেই পারে। তবে দাদা টাদা বলতে পারব না আগেই বলে দিলাম।
–আমার মনে হয় ‘দেব’-টাও ছেঁটে দিন। রুদ্রটাই ভাল। অফিসে সবাই আমায় ওই নামেই ডাকত।
–বাহ এ তো অভয়বাণী পেলাম!
–কিন্তু সুজাতা, আপনার যে কীসব জানার ছিল, কই সেগুলো তো কিছু জিজ্ঞেস করছেন না!
–সবুর করুন। সব বিষয়ে অত তাড়াহুড়ো করতে নেই। এখন চলুন আমরা খেয়ে নিই। নিজেই দেখুন রাজকীয় কি না…
–তা মন্দ বলেননি।
–আসুন ভিতরে আসুন। আপনার ক্রিকেটের ভাষায় এখন মধ্যাহ্নভোজের বিরতি।

 

চার.

—আপনি তাহলে বিয়ের পর থেকে ঝাড়গ্রামেই ছিলেন?
–আমার প্রাক্তন স্বামী ওখানেই ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টে কাজ করতেন। বিয়ের তিন বছরের মাথায় আমার একটি মেয়ে হয়, কিন্তু এক বছর বয়স হওয়ার আগেই সেই বাচ্চাটা মারা যায়।
–ও হো!
–তারপর থেকেই ফ্যামিলিতে গোলমাল আরম্ভ হয়। সেসব অনেক কাহিনি…
–না না সুজাতা, ওসবে আমার কোনও আগ্রহ নেই। আমরা আজ অতীত নিয়ে কিছু বলব না।
–মেয়ে হওয়ার আগেই আমি ওখানকার স্থানীয় স্কুলে একটা চাকরি পেয়েছিলাম। ডিভোর্সের পর আমি স্কুলের কোয়ার্টারে চলে যাই। তারপর কলকাতায় চলে আসি।
–তখন কি এখানকার চাকরিটা পেয়ে গেছেন?
–হ্যাঁ। বাবা খুব চাইছিলেন আমি এখানে ফিরে আসি। ততদিনে আমার একমাত্র ভাই চাকরি নিয়ে চেন্নাই চলে গেছে।
–সেই থেকে এখানেই?
–একদম। ভাই চেন্নাইতেই ওর অফিসের এক সহকর্মীকে বিয়ে করে ওখানেই সেটলড। মা চলে গিয়েছিলেন আগেই। তারপর বছর দশেক হল বাবাও চলে গেলেন। তার আগে উনি অবশ্য এই ফ্ল্যাটটা আমায় দিয়ে যান।
–যদি কিছু মনে না করেন, একটা প্রশ্ন করব?
–বলুন না…
–বিয়ের অল্প সময়ের মধ্যেই ডিভোর্স… আবার সংসার করার কথা ভাবেননি কখনও?
–ইচ্ছে করেনি। বাবা মা অনেক চেষ্টা করেছিলেন। কী হবে বলুন তো?
–না, আমি কোনও ব্যাখ্যা চাইছি না সুজাতা। এমনিই জিজ্ঞেস করলাম।
–বুঝেছি। আচ্ছা রুদ্রবাবু, আপনি একটানা কথা বলে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন না তো? আমার বাড়িতে একটা গেস্টরুম আছে, চাইলে সেখানে একটু বিশ্রাম করে নিতে পারেন।
–না, না। আপনি ব্যস্ত হবেন না। এই তো দিব্যি গপ্পো করে সময় কেটে যাচ্ছে।
–কথায় কথায় কিন্তু আস্তে আস্তে বেলা পড়ে আসছে, দেখছেন।
–হেমন্তের বেলা। হুট বলতেই ফুরিয়ে যায়।
–ঠিক।

 

পাঁচ.

–বুঝলেন রুদ্রবাবু, আপনি আগের দিন আমার বাড়ি থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়ে ভালই করেছিলেন?
—কেমন?
–এই যে আজ তাই আপনার বাড়ি আমার আসা হয়ে গেল।
–কী যে বলেন সুজাতা। আপনি নিজেই সেদিন আসার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। আমার সৌভাগ্য।
–ঠিকই তো, নিজেরা কে কোথায় থাকি এটা চোখে দেখে নিতে হবে না!
–এই কথাটার মধ্যে মনে হচ্ছে অন্য একটা মানে আছে?
–সে আপনি যেমন খুশি ধরুন। তবে আপনার পাড়াটা বেশ নিরিবিলি। বড় রাস্তাটা ওই রকম ঘিঞ্জি আর জ্যাম অথচ সেটা এখানে এলে মনেই হয় না।
–আসলে বাসের জায়গাটা একটু নিরালা না হলে বড় মুশকিল। সবসময় হল্লা ভাল লাগে না।
–তা আপনার কাজের মেয়েটা আজ আসবে তো? নইলে আমায় আপ্যায়ন করবেন কী দিয়ে? কী একটা যেন নাম বলেছিলেন তার?
–রুবি। ওসব আপনাকে ভাবতে হবে না। ও ঠিক সময়ে এসে যাবে।
–বলুন তো, আমিও হাত লাগাই।
–কী যে বলেন আপনি, সুজাতা!
–যাক, আমার গল্প তো সেদিন শুনলেন। এবার আপনার বলার পালা। অবশ্য কিছু কিছু যে কাবেরী আমায় বলেনি তা নয়।
–কী বলেছে?
–এই যেমন কলেজজীবনে আপনি একটি মেয়েকে ভালবেসেছিলেন, তারপর আপনারা দুজনেই চাকরি পান। আপনি রেলে, তিনি ব্যাঙ্কে। আপনাদের বিয়ের যখন সব ঠিকঠাক তখনই একটা রোড অ্যাকসিডেন্টে আপনার বান্ধবী মারা যান। তারপর আপনি চাকরিতে দূরে পোস্টিং নিয়ে চলে যান জলপাইগুড়ি। কী ঠিক বললাম তো?
–হ্যাঁ, প্রথমে জলপাইগুড়ি তারপরে কাটিহার হয়ে মালদা।
–আমায় সেদিন যে প্রশ্নটা করেছিলেন আজ যদি সেটা আপনাকে করি?
–কী?
–বিয়ে করলেন না কেন?
–আপনি সেদিন আমায় যে জবাব দিয়েছিলেন, আমিও ঠিক সেটাই বলব।
–ইচ্ছে করেনি, তাই তো?
–হুঁ।
–এখন কি আফসোস হয়?
–ভেবে দেখিনি কখনও।
–আপনার নিজের লোক বলতে তাহলে…
–আমার এক দিদি আছেন। বিবাহসূত্রে কানপুরে থাকেন। জামাইবাবু বছর দুয়েক গত হয়েছেন। একমাত্র ভাগ্নে ওখানেই চাকরি করে। দিদি ওর কাছেই থাকে।
–কলকাতা আসেন না?
–মাঝেমধ্যে আসত। তবে ইদানিং দিদির শরীর ভাল যায় না, খুব একটা বেরোয় না। যেটুকু যা যোগাযোগ ওই ফোনে ফোনে।
–তাহলে তো রুদ্রবাবু, আপনি বেশ সমস্যায় আছেন দেখছি!
–কেন? কীসের সমস্যা দেখলেন আপনি?
–এই যে আপনি একদম একা থাকেন… কাছেপিঠে নিজের লোক বলতে কেউ নেই…
–সে তো আপনারও নেই।
–তবু ছেলেদের একা থাকা আর মেয়েদের একা থাকা…
–কী যে বলেন… এখন আর ছেলেমেয়েতে কোনও তফাত আছে নাকি?
–সেটা আপনি বলতেই পারেন রুদ্রবাবু, তবে একটা কিছু পার্থক্য আছেই…
–বরং একটা বয়স অবধি মেয়েরা একা থাকলেই নানা কথা ওঠে। অবশ্য এখন শহর বাজারে এসব আকছার হচ্ছে। অন্য একটা কথা বলি?
–নিশ্চয়ই।
–আমার নামের পরে আর ‘বাবু’ যোগ না-ই করলেন! আগের দিন তো এমন কথা ছিল না।
–আপনার অনুরোধ ভেবে দেখব নিশ্চয়ই।
–একটু চা করে আনি। ওটা আমি নেহাত খারাপ করি না কিন্তু…
–একা থাকার মতো ওটাও অভ্যাস হয়ে গেছে বলতে চান?
–হতেও পারে। ভেবে দেখিনি।
–মাঝেমাঝে একটু ভাববেন। ভাবা ব্যাপারটা কিন্তু খারাপ নয়…
–তা ঠিক।
–জানেন রুদ্রবাবু, আমার মনে হচ্ছে, আমার তো কিছুটা হলেও দাম্পত্যজীবনের স্মৃতি আছে, আপনার তো সেটুকুও নেই।
–আপনার স্মৃতি তো বিষাদের, সুজাতা। অন্তত নিজের মেয়ের অকালমৃত্যু… এইসব স্মৃতির সঙ্গে ঘর করা যায়?
–সে তো আপনারও। যাকে ঘিরে স্বপ্ন দেখলেন সেই চিরকালের মতো হারিয়ে গেল…
–বাইরে অল্প অল্প ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে দেখছেন… আবার বৃষ্টি নামবে না তো?
–এই শীতের মুখে মাঝেমাঝে বৃষ্টি হয়। তবে তেমন হলে কিন্তু আমি আর বসব না। বৃষ্টি একবার এসে গেলে আটকে যাব।
–একদিন না হয় আটকেই গেলেন, আমার ফ্ল্যাটে…
–………
–তাছাড়া রুবিও তো এখনও এল না, একটু কিছু তো মুখে দিতে হবে আপনাকে…
–সেটা নাহয় আরেকদিন হবে, রুদ্রবাবু। এই তো আমাদের আসাযাওয়া শুরু হল। সব একদিনে ফুরিয়ে ফেলে কী দরকার?
–আটকাব না। চলুন আপনাকে বড় রাস্তা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসি।
–সেই ভাল। অন্তত কিছুটা পথ একসঙ্গে হাঁটা হবে…

 

ছয়.

–কেমন আছেন রুদ্রবাবু? মাঝে অনেকদিন কথা বলা হয়নি।
–ব্যস্ত ছিলেন নাকি?
–ব্যস্ত বলতে… আমার পুরনো স্কুল থেকে একটু ডাকাডাকি করছিল।
–আবার পড়াতে শুরু করলেন নাকি?
–না, তেমন কিছু নয়। হেডমিস্ট্রেস খবর পাঠালেন ওকে কয়েকটা কাজে একটু অ্যাসিস্ট করার জন্য, এই আর কি…
–আমার তো মনে হচ্ছে, বড্ড ব্যস্ত ছিলেন। একটা বিষয় ভেবে দেখবেন কথা দিয়েছিলেন, এখনও বোধহয় সময় করে উঠতে পারেননি, তাই না?
–মনে আছে।
–যাক, তাও ভাল।
–আপনার কাজের মেয়েটা কদিন ছুটি নেবে বলেছিলেন, কী করলেন ওই সময়টা?
–বাঃ রে, আপনার দিব্যি মনে আছে দেখছি। তবে জানেন তো, এই যাত্রা বেঁচে গেলাম। রুবি শেষ পর্যন্ত আর ছুটি নেয়নি।
–দেখলেন তো, আমি সব মনে রাখি!
–সেই তো দেখছি… মাই প্লেজার!
–থাক, আমার সঙ্গে আর অত ফর্মালিটি করতে হবে না।
–মনে থাকবে।
–আজকাল সকালের দিকে হাল্কা ঠান্ডা পড়ছে, গায়ে একটা চাদর বা সোয়েটার রাখছেন তো?
–চাদর সোয়েটার কিছুই তো বার করা হয়নি এখনও…
–সে আবার কী কথা? নতুন ঠান্ডা লেগে গেলে কী হবে!
–সেটা ঠিক। আমার আবার জ্বর হলে খুব তাড়াতাড়ি উঁচুতে উঠে যায়…
–তাহলে তো আপনার আরও বেশি সাবধান হওয়া দরকার রুদ্রবাবু!
–হুম… দূর থেকেও আমার খেয়াল রাখছেন, তাহলে…
–আসলে আপনার মতো মানুষদের মাঝেমাঝে সবই একটু মনে করিয়ে দিতে হয়।
–তাহলে তো সুজাতা, আমাকেও একটা কথা বলতে হয়।
–কী?
–আপনার শোওয়ার ঘরের উত্তরদিকের বড় জানলাটা রাতে বন্ধ করছেন তো?
–এটাও দেখছি আপনি মনে রেখেছেন। তার মানে আপনিও দূর থেকে আমার খেয়াল রাখছেন!
–আসলে ঠান্ডা লাগলে আপনার পা-কোমরের ব্যথাও তো বেড়ে যাবে। আমার দিদিরও তাই হয় শুনেছি।
–সত্যি সত্যি ব্যথা বেড়ে গেলে আর আপনার বাড়ি যেতে পারব না। আপনার বাড়িটা আমার অবশ্য বেশ লেগেছে। শুধু কেমন যেন অসম্পূর্ণ…
–একটা ফাঁকের কথা বলছেন কি?
–হ্যাঁ ফাঁক। তবে তার মধ্যে কি একটা প্রতীক্ষাও নেই, রুদ্র?
–আপনিই তো বলেন, মেয়েরা ছেলেদের থেকে সবই একটু বেশি বুঝতে পারে।
–তা তো ঠিকই। কাবেরীর থেকে আমার ফোননম্বর পেয়ে আপনিই প্রথম আমায় ফোন করেছিলেন।
–সুজাতা, খুব গুছিয়ে ভেবেচিন্তে যে ফোন করেছিলাম এমন নয়…
–সবকিছুই গোছাতে একটু সময় লাগে, রুদ্র…
–জানেন সুজাতা, আজকাল মাঝেমাঝে একটা স্বপ্ন দেখি— বালিয়াড়িতে দাঁড়িয়ে পড়ে আসা সূর্যের দিকে তাকিয়ে আছি… আবছা স্বপ্ন, দেখা দিয়েই মিলিয়ে যায়…
–একা দাঁড়িয়ে আছেন?
–ঠিক বুঝতে পারি না। কখনও মনে হয় সঙ্গে কেউ আছে বোধহয়…
–পড়ন্ত সূর্য কেন?
–স্বপ্নের কি কোনও কেন হয়, সুজাতা?
–আমার তো মনে হয় ভোরবেলার নরম হাওয়ায় প্রথম সূর্যের আলো গায়ে মেখে নিই।
–আপনার বারান্দাটায় পুবের আলো আসে, তাই না?
–না রুদ্র, আমি বারান্দার কথা বলিনি। আপনার পড়ে আসা সূর্য কি আপনি নিজের ঘর-বারান্দা থেকেও দেখতে পান না… কই সেগুলোর কথা তো আপনার স্বপ্নে নেই!
–সুজাতা, আমি বলেছি একটু বড় মাপের কিছু। বালিয়াড়ি… সমুদ্র… ঝাউবন…
–আমি বলছি পাহাড়… জঙ্গল… নদী… মোহনা…

 

সাত.

—কী করছেন সুজাতা?
—আরে রুদ্র? এমন অসময়ে?
–বিরক্ত হলেন নাকি?
–কী যে বলেন! দুপুরে খাওয়ার পর একটু শুয়েছিলাম। তারপরে উঠে এখন বসে বসে ম্যাগাজিনের পাতা ওলটাচ্ছিলাম…
–আপনার ওই সুন্দর বারান্দাটায় বসে?
–কী করে ধরে ফেললেন বলুন তো?
–কী জানি, মনে হল। আচ্ছা বলুন তো আমি কোথায়?
–আমার বাপু অত দূরদৃষ্টি-টৃশটি নেই!
–তাও… একটা অনুমান?
–নিজের ঘরের বিছানায়? মিলল?
–মিলল মানে! খাপে খাপে মিলে গেল তো…
–কেউ যখন কারও কথা ভাবে তখন তাদের মধ্যে সূক্ষ্ম একটা তরঙ্গ যোগাযোগ হয় শুনেছি। এটা মানেন?
–এটা ঠিক মানার বিষয় নয়, সুজাতা। আসলে মানুষের অনুভূতিগুলো তো একেকটা তরঙ্গই— সেগুলোর নিশ্চয়ই একটা চলাচলের পথ আছে।
–আর সেগুলো কখন কোন পথে কীভাবে এগোবে তার ওপর আমাদের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই মোটেও।
–ব্যাপারটা ভাল না খারাপ বুঝতে পারি না।
–কোন ব্যাপারটা?
–এই যে আপনার সঙ্গে হঠাৎ কথা বলতে ইচ্ছে হল!
–রুদ্র, আমরা দুজনেই বোধহয় ভালমন্দের বয়সটা পেরিয়ে এসেছি, তাই না?
–সেটা ভুল নয়।
–তবে আর এত ভাবাভাবি কীসের? ইচ্ছে হয়েছে, ফোন করেছেন। তবে কী জানেন, হঠাৎ আপনার ফোনটা পেয়ে আমারও খুব ভাল লাগছে। ভাবিনি এসময়ে আপনি কথা বলবেন।
–আসলে কী জানেন সুজাতা, কথা জমে উঠলে সেগুলোকে বার করে না দিতে পারলে দমবন্ধ লাগে। মনে হয়, আর হয়তো কথাগুলো বলাই হয়ে উঠবে না কোনওদিন।
–আপনার জমানো কথাগুলো কী, রুদ্র?
–আপনি কেমন আছেন, সুজাতা?
–এটা একটা প্রশ্ন হল? কেমন আবার থাকব? যেমন থাকার কথা। আপনি এসে তো দেখেই গেছেন আগের দিন। এর বেশি আর কী থাকব!
–না, তাই ভাবছি। আমাদের থাকাগুলো একটা জায়গায় এসে কেমন যেন ফুরিয়ে যায়… যেন তারপর আর কিছু নেই…. কিছু থাকতে নেই…
–আপনার কথাটা খুব কঠিন হেঁয়ালির মতো ঠেকছে, রুদ্র…
–আসলে জীবনটাই তো খুব কঠিন একটা হেঁয়ালি… তার সমাধান করতে করতেই আয়ু ফুরিয়ে আসে।
–রুদ্র, আপনার এমন কিছু বয়স হয়নি যে আপনি এরকম সব কথা বলবেন। তেষট্টিতে আজকাল মানুষ টাটকা যুবক থাকে।
–আর একষট্টি ছুঁয়ে আপনিও কি খুব এলোমেলোভাবে বুড়িয়ে গেছেন নাকি? মোটেও না।
–জানেন তো রুদ্র, মাটিতে এলিয়ে পড়া গাছ সামান্য একটা কিছু আঁকড়ে নিতে পারলেই আবার তরতর করে সতেজ হয়ে যায়।
–জানি।
–কিচ্ছু জানেন না।
–কেন সুজাতা?
–সব কেন-র উত্তর চাইতে নেই। বুঝতে হয়।
–একটু একটু ধরতে পারছি বোধহয়।
–ভালই তো। চেষ্টা করলে একদিন পুরোটাই বুঝতে পারবেন।
–তাতে বেশি দেরি হয়ে যাবে না তো!
–আচ্ছা রুদ্র, আমরা কি সঠিক কোনও সময়ে কোথাও পৌঁছানোর কথা ভেবেছি কখনও?
–সত্যিই, আমাদের সামনে যেন এক অনন্ত অবসর, যেন কোনও তাড়া নেই কোথাও…
–এতে আসলে সময়ের কেবল অপচয়ই ঘটে যায়, রুদ্র…
–ঠিক বলেছেন সুজাতা। আমাদের অনেকটা অপচয় হয়ে গেছে, হাতে যা আছে তা অল্পই।
–এই দেখুন রুদ্র, কথা বলতে বলতে রোদ পড়ে এল বারান্দায়। এখুনি আলো কমে আসবে।
–তাহলে বারান্দা থেকে উঠে পড়ুন, সুজাতা। ঘরের উত্তরদিকের জানলাটা বন্ধ করে দেবেন, ঠান্ডা ঢুকবে।
–হ্যাঁ উঠব এইবার। রুদ্র, আপনিও এবার একটা কিছু গায়ে দিন। ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4659 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...