মণিশংকর বিশ্বাস

ছটি কবিতা

 

ঘাতক

নেবে? আমার এটুকুও তুমি নিয়ে নেবে?
আমিও তো তোমাকে দিয়ে দিতেই পারি
কিন্তু তুমি যে আর এই ঋণ কিছুতেই শোধ করতে পারবে না!

 

একটি পুরনো কবিতা

রোজ রাতে মনে মনে আমি আমার ছোটবেলার ঘরখানা দেখে আসি
দেখি, ধুলোয় ভরে গেছে ঘর
আগে একটি লেখায় লিখেছিলাম, ঘরে যে ধুলো জমে
তার প্রায় ৭০ শতাংশ মৃত ত্বক, ছিন্ন ত্বক, ত্বকের ভগ্নাংশ
বুঝি, আমারই আত্মা আজও ওইখানে বাস করে, ঘুরে বেড়ায়
ওই ঘরে ঘুমায়, জানলা দিয়ে চাঁদ দ্যাখে কাঁঠালগাছের ফাঁকে
আমারই কচি আত্মার ছিন্নভিন্ন ত্বক, মৃত কোষকলা ঘরময় ওড়াউড়ি করে

ধুলো জমে আরও মলিন হয়— আমার ছেলেমানুষির ঘর।

 

কথা

মেয়েটি গল্প বলে চলেছে।
ছেলেটি শুনছে, কী চমৎকার গল্প!
প্রেম, দুঃখ, টেনশন, হরর, মেথিলিন ব্লু, আধখাওয়া চাঁদ,
আর সিঁড়ি ভেঙে নেমে আসা টর্চ, সব আছে।
ছেলেটির বিস্ময় লক্ষ করে
মেয়েটিও অবাক চোখে তাকায় ছেলেটির মুখের দিকে।
মেয়েটি বলে এ কিন্তু আমার গল্প নয়!
এ তোমার গল্প,
আমি তো তোমার গল্পের সামান্য একটা চরিত্র মাত্র!

আমাকে তোমার গল্প থকের ভূমিকা দিয়েছে

 

রূপা নন্দী ২

ভুত-প্রেতে বিশ্বাস না করেও তো মানুষ
ওসবে ভয় পায়—
ভয় পায় একা একা অচেনা অন্ধকারে যেতে
ঠিক সেরকম
তোমাকে যে আবার ফিরে পাব—
এই বিশ্বাস না করেও
মনে মনে তোমাকে ভালবেসে গেছি—

পুরোপুরি অন্ধকার হয়ে যেতে চাইনি বলে

 

হিজ মাস্টার্স ভয়েস

কুকুর ক্রমশ তার মনিবের মতো হয়ে যায়।
অথচ অনেকেই ভাবেন, কুকুর মানুষকে পড়তে পারে না!

একলা মানুষ একা একা চা খায়, টিভিতে নিউজ দ্যাখে।
ছাদের উপর দাঁড়িয়ে শোনে ট্রেনের হুইসিল, পাশের বাড়ির                                                                                                                     
যদুবাবু মারা গেছে

নিঃসঙ্গ মানুষ এইভাবে আরও নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে
আর ওই বাড়িটির কুকুর ক্রমশ নিঃসঙ্গ মানুষ

 

ব্রহ্মকমল

এত গভীর, এত স্বচ্ছ, যেন ভূতে পেয়েছে এইভাবে নেমে পড়ি মেয়েটির সৌন্দর্যের ভিতর। যেন গভীর ঘুমের ভিতর হেঁটে যাচ্ছি আত্মহত্যা করতে। দেখি গেটের পাশে বোগেনভিলিয়া, প্রায় ঢেকে দিয়েছে নেমপ্লেট। মোম আর মধু। লিটিল ম্যাগাজিনের ডাকসাইটে সমকামী কবি-দম্পতি। রাস্তায় নেমে আরও বেশি রাস্তা হারিয়ে ফেলি। আমাকে বরণ করে নেয়, চির অচেনা সব ফুলের গন্ধবর্ণরং। পথ আরও দূরে ডাকে। শহরের বাইরে এসে দেখি, আতপ গমক্ষেত। কচি গমের দুধ দুধ গন্ধ। আরও দূরে ক্ষেতের ভিতর মরে গিয়ে শক্ত হয়ে থাকা এক কাকতাড়ুয়ার সন্তান। ফিরে আসতে পারব না বলে আমি আরও দূরে যাই না…।

তবু মেয়েটির গভীর জলের ভিতর যে মোম জ্বলে আছে সেই ভিজে আলো এখন আমার শরীরে।

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4888 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...