সোমনাথ মুখোপাধ্যায়
বিনুর স্বপ্ন
আনন্দনগরী কলকাতার এক বাসিন্দা শ্রীমান বিনুবাবু একদিন ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখে রীতিমতো হুলুস্থূল কাণ্ড বাধিয়ে বসল। কী দেখল বিনু?
…চেয়ে দেখি, ঠোকাঠুকি বর্গা-কড়িতে,
কলিকাতা চলিয়াছে নড়িতে নড়িতে।
ইটে গড়া গণ্ডার বাড়িগুলো সোজা
চলিয়াছে দুদ্দাড় জানালা দরওয়াজা।
রাস্তা চলেছে যত অজগর সাপ,
পিঠে তার ট্রামগাড়ি পড়ে ধুপধাপ।…
সহজ পাঠে সঙ্কলিত রবি ঠাকুরের ‘একদিন রাতে আমি স্বপ্ন দেখিনু’ কবিতার সঙ্গে আমাদের পরিচিতি ছেলেবেলায়; মানে গুটিগুটি পায়ে পাঠশালায় হাজির হওয়ার সময় থেকে। রবীন্দ্রনাথের এই কবিতা রচিত হয়েছিল ১৩৩৬ বঙ্গাব্দের পৌষ মাসে, অর্থাৎ আজ থেকে নয় দশকেরও কিছু আগে। শহরের লাইন পাতা রাস্তার ওপর দিয়ে ততদিনে গড়গড়িয়ে চলা ট্রামগাড়ি পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। স্বপ্নে দেখা বিনুর ট্রামগাড়ি অজগর সাপের মতো আঁকাবাঁকা রাস্তায় ধুপধাপ আছড়ে পড়লেও কলকাতার মানুষ আজও ট্রামের নস্টালজিয়ায় আচ্ছন্ন। ধীরগতিতে চলতে চলতে নানান স্মৃতিতে নগরবাসী ক্যালকেশিয়ানদের মজিয়ে কলকাতার ট্রাম সার্ধশত বছরের দীর্ঘ পথ পরিক্রমার প্রহর অতিক্রম করল গত ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩। গণপরিবহন মাধ্যম হিসেবে কলকাতার ট্রামকে নানান উত্থানপতনের সাক্ষী থাকতে হয়েছে এই দীর্ঘ সময়ে। এশিয়ার প্রাচীনতম ট্রাম-পরিষেবা ব্যবস্থার কিছু অনুভবের কথা আলোচনার জন্যই আজকের এই প্রতিবেদন।
একদিন সবে মিলে ট্রামেতে চড়িনু…
আমাদের ছেলেবেলায় একালের মতো অ্যাপনির্ভর ভাড়ার গাড়ির দাপট ছিল না। তাই এদিক-ওদিক কোথাও যেতে হলে বাস-ট্রামের ওপরেই ভরসা করে থাকতে হত। হলুদ-কালো ট্যাক্সিও ছিল বটে, তবে তার স্বীকৃতি ছিল পয়সাওয়ালা বাবুদের গাড়ি হিসেবে। তখন ছুটিছাটার দিন হলে সপরিবারে আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে ঘুরতে যাওয়ার চল ছিল। নিদেনপক্ষের রবিবার একটু তাড়াতাড়ি খাওয়াদাওয়া সেরে কলকাতায় ঘুরে আসার মজা ছিল একেবারে আলাদা। ট্রামগাড়ির প্রতি একটা আলাদা অনুভূতির জন্ম এই রবিবাসরীয় ট্রামযাত্রার সূত্রেই। খাস কলকাতার বাসিন্দা না হওয়ার দরুন আমাদের আসতে হত বেলগাছিয়ায়। সেটা ছিল ট্রামের খুব বড় ঘাটি।
লাইনের ওপর দিয়ে গড়গড়িয়ে চলতে শুরু করলেই আমাদের বিস্ফারিত নয়ন আছড়ে পড়ত চলমান বহির্দৃশ্যের ওপর। প্রথমেই নজরে পড়ত পরেশনাথের মন্দির। শান্ত, পরিপাটি দৃশ্যপট সহজেই নজর টানত। দূর থেকে দেখে মনে হত বুঝি কোনও রূপকথার দেশ। ১৮৬৬ সালে রায় বদ্রীদাস বাহাদুর এই জৈন মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন। এরপর নজরে পড়ত আরজিকর হাসপাতাল। প্রখ্যাত চিকিৎসক ডঃ রাধাগোবিন্দ করের নামাঙ্কিত এই চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান স্থাপনা ১৮৮৬ সালে। যে সময়ের গল্প বলছি সেই সময় আরজিকর মেডিক্যাল কলেজের কলেবর আজকের মতন এত সুবিশাল হয়ে ওঠেনি। তবে আমাদের কচি, নরম চোখে তা পরম বিস্ময়কর ছিল। আমার বোনের জন্ম এই হাসপাতালে। এই কথা মায়ের মুখ থেকে শুনে পরম উৎসাহে কুতকুতে চোখ মেলে ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সেই বাড়িটিকে বারংবার দেখে নেওয়ার চেষ্টা করত সে। তাকে সোজা করে বসাতে বসাতে ট্রাম পৌঁছে যেত শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়।
তখনও ঘোড়সওয়ার নেতাজি পাঁচ সড়কের মোড়ে অধিষ্ঠিত হননি। তবে পাঁচদিক উজিয়ে ধেয়ে আসা গাড়ির দাপটে তখনও শ্যামবাজারের বিখ্যাত পাঁচমাথার মোড় রীতিমতো গমগম করত। লাল আলো সবুজ হতেই টংটং শব্দ তুলে ট্রাম ঢুকে পড়ত কর্নওয়ালিস স্ট্রিটে। এখন অবশ্য নাম বদলে এই ব্যস্তবাগীশ রাস্তাটি হয়েছে বিধান সরণি। এই রাস্তায় ঢোকার মুখেই পয়েন্টস-ম্যান হাতের লম্বাটে লোহার শিকটি দিয়ে লাইনটাকে ঠেলে দিতেন। এই অবসরে ট্রামের ড্রাইভারসাহেব কখনও কখনও দু-একটি কথা বিনিময় করতেন তাঁর সঙ্গে। ট্রাম আবার চলতে শুরু করতেই আমাদের গল্প নতুন করে শুরু হত।
কর্নওয়ালিস স্ট্রিট হল উত্তর কলকাতার বিনোদনক্ষেত্র। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইতিহাসের নানান অধ্যায়। রাস্তার দুপাশে অগণিত সিনেমা হল। দর্পণা, মিত্রা, মিনার, রূপবাণী, টকি শো হাউস… একেবারে জমজমাট বিনোদনের প্যাকেজ। হাতিবাগান পর্যন্ত ক্লান্তিহীন আসর পাতা রয়েছে। টিকিট কেটে ঢুকে পড়লেই হল। অসংখ্য মানুষের ভিড় ঠেলে, টং টং শব্দের ঝড় তুলে তারপর সেই ছোট্ট ট্রামগাড়ি এগিয়ে যেত থিয়েটারপাড়ার দিকে।
হাতিবাগান নামের সঙ্গে সত্যিসত্যিই যে বলদর্পী মাতঙ্গবাহিনির গভীর সম্পর্ক ছিল সে-কথা জেনেছিলাম এক ট্রামযাত্রার সূত্রেই। বাংলা পেশাদারি রঙ্গমঞ্চের আঁতুড়ঘর এই রাস্তা। নটী বিনোদিনীর স্মৃতিধন্য স্টার থিয়েটার থেকে শুরু করে রংমহল, বিশ্বরূপা, বিজন থিয়েটার, সারকারিনা, মিনার্ভা থিয়েটার— এতগুলো অভিনয়মঞ্চ একটা রাস্তার এপার-ওপার মিলিয়ে পৃথিবীর আর কোথাও আছে বলে মনে হয় না। ট্রামযাত্রার সুবাদেই সবকালের সেরা নটনটীদের নামগুলো— গিরীশ ঘোষ, শিশিরকুমার ভাদুড়ী, অহীন্দ্র চৌধুরী, অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফি, প্রভাবতী দেবী… আরও আরও অনেক নাম— মাথায় ঢুকে গিয়েছিল সেইকালেই।
বেলগাছিয়া ট্রাম এখন পৌঁছে গিয়েছে হেদুয়া। কথকঠাকুর পিতৃদেবের মুখে ‘হেদুয়া’ শব্দটি শুনেই বেশ মজা পেয়ে হেসে উঠি আমরা। ট্রামের বড় বড় জানালার ফাঁক দিয়ে পার্কের ভেতরে থাকা জলাশয়টিকে নজরবন্দি করার চেষ্টা করতেই বাবা বলে ওঠেন— হেদুয়া শব্দটি এসেছে সম্ভবত হ্রদ থেকে। হ্রদ থেকে হেদো, আবার তার থেকে হেদুয়া। অবশ্য আরেক দল পণ্ডিতের মতে হেদুয়া শব্দটি এসেছে ‘হয়দহ’ থেকে। এখানে কোনও এক কালে ‘হয়’ মানে ঘোড়াদের স্নান করানোর জন্য একটি জলাশয় খোঁড়া হয়েছিল। সেই হয়দহই পরবর্তীকালে হেদুয়া নাম নেয়। ইতিহাস জানার পর মনের ভেতর অন্যতর ভাবনার মন্থন শুরু হয়।
এই হেদুয়ার দুপাশে থাকা দুই ঐতিহ্যশালী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান— স্কটিশ চার্চ কলেজ (১৮৩০) এবং বেথুন কলেজ (১৮৭৯)— নবীন চোখে সম্ভ্রম জাগাত। ট্রামে বসে কলকাতার অতীত খুঁজে দেখার অপার আনন্দ আমাদের উদ্বেল করত। এই দুই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে দুই স্মরণীয় ইউরোপীয় শিক্ষাব্রতী মানুষের নাম— রেভারেন্ড আলেকজান্ডার ডাফ এবং জন ইলিয়ট ডিঙ্কওয়াটার বেথুন। চলমান ট্রাম বর্তমানের সঙ্গে সুদূর অতীতকে এক বন্ধনহীন গ্রন্থিতে বেঁধে ফেলে। ট্রাম এসে পৌঁছয় কলকাতার সিমলে পাড়ার মুখে। এখানেই জন্মেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। সেই ঐতিহাসিক বাস্তুভিটের দিকে নজর করতে করতেই আরও একটা চওড়া সড়ক পার হয়ে ট্রাম এসে হাজির হয় কর্নওয়ালিস স্ট্রিটের অবশিষ্ট প্রান্তভাগে। টংটং শব্দে পথচারীদের সচকিত করে সে গড়াতে থাকে তার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।
বেলগাছিয়া থেকে ট্রাম ছেড়েছে অনেকক্ষণ। মুখের লবণচুষগুলো খানিকটা মিঠা স্বাদের স্মৃতি রেখে বিগলিত হয়ে জঠরকুম্ভে ঠাঁই নিয়েছে কোন কালে! আমাদের করুণ পিপাসার্ত মুখের দিকে তাকিয়ে বাবা হেসে বলে উঠতেন— ‘আর তো চিন্তা নাই রে! ওই দেখা যায় কপিলা আশ্রম।’ কথাগুলো বেশ রহস্যময় লাগে— পিপাসা… শুকনো মুখ… কপিলা আশ্রম— এরা কীভাবে সম্পর্কসূত্রে বাঁধা তা ভাবতেই বাবা আঙুল উঁচিয়ে একটা শ্রীহীন দোকানের দিকে আমাদের নজর ফেরানোর চেষ্টা করেন। একটা ছোট্ট ঘুপচি দোকান আমাদের চাতকমনকে কীভাবে শান্ত করবে? ‘এটা হল কলকাতার এক বিখ্যাত শরবতের দোকান। ১৯০৭ সালে হৃষীকেশ শ্রীমানী মশাই এই দোকান শুরু করেন। একেবারে চেনা ঘরোয়া উপাদান যেমন জিরেগুঁড়ো, পুদিনাপাতা, কাঁচা আমপোড়ার ক্বাথ, হিং, দই, গোলমরিচগুঁড়ো আর কিছু অজানা মশলার সংমিশ্রণে পাথরের বয়ামে কাঠের তৈরি মন্থনদণ্ড ঘুরিয়ে তৈরি হয় জাদু শরবত। স্বাদে, গন্ধে এর তুলনা মেলা ভার। আহা…!’ বাবা যেন এক চুমুকে শরবতের আস্বাদ গ্রহণ করে পরম তৃপ্ত হলেন। আমরা ভাইবোনেরা আর কী করি! লোভাতুর মুখগহ্বর রসনা স্পর্শে সিক্ত হয়ে উঠতেই আমরাও আ-হা শব্দে বাঙ্ময় হয়ে উঠি! ট্রাম এগিয়ে চলে।
ডানদিকের এই বাড়িটি হল ব্রাহ্মসমাজের উপাসনা মন্দির যা স্থাপন করেছিলেন ভারতপথিক রাজা রামমোহন রায় আর প্রধান আচার্য ছিলেন দ্বারকানাথ ঠাকুর। ১৮২৮ সালের ২০ আগস্ট এর প্রতিষ্ঠা। একালে ব্রাহ্ম ধর্মের প্রাধান্য কমেছে। তবে কালের গৌরবকে পাথেয় করে এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে এই উপাসনাগৃহটি তার অপরূপ স্থাপত্যমহিমা নিয়ে।
এই দেখার পর্ব মিটতে না মিটতেই ট্রামের ঠনঠন ঘন্টার আওয়াজ জানিয়ে দেয় আমরা এখন ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি। একটু আগে ছেড়ে এসেছি আরেক ঐতিহ্যশালী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মেট্রোপলিটান ইনস্টিটিউশন ও বিদ্যাসাগর কলেজ। এই শিক্ষপ্রতিষ্ঠানটি হল দেশের অন্যতম প্রথম বেসরকারি কলেজ। পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মশাই ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে এর স্থাপনা করেন। কোনও এক কালে এই অঞ্চল এমনই সব বরেণ্য মানুষের পদধূলিধন্য হয়েছিল।
মাকালীর নাম ঠনঠনিয়া শুনেই এক প্রস্থ হেসে উঠেছি আমরা। ঠনঠনিয়া শব্দের ঝঙ্কৃত ব্যঞ্জনায় আমরা যুগপৎ পুলকিত ও প্রশ্নমুখরিত হই। মায়ের উদ্দেশ্যে সসম্ভ্রমে প্রণাম জানিয়ে ঠনঠনিয়ার সিদ্ধেশ্বরী মায়ের মাহাত্ম্যকথা শুরু করেন বাবা। ‘সে অনেককাল আগের কথা। এসব অঞ্চল জুড়ে বনজঙ্গলের দাপাদাপি। ডাকাত আর ঠ্যাঙাড়ে বাহিনির লোকজন ছাড়া জনমনিষ্যির পা পড়ে না। এমনই একজন গা-ছমছম পরিবেশে হঠাৎ এসে হাজির হন এক ভবঘুরে শক্তিসাধক। নাম উদয়নারায়ণ। নিজের হাতে এক মৃন্ময়ী মূর্তি তৈরি করে তিনি শুরু করেন তাঁর তন্ত্রসাধনা। নিরালা নির্জন প্রান্তে অবস্থিত মন্দিরের ঠন ঠন ঘন্টাধ্বনি থেকেই এই মন্দির ঠনঠনিয়ার কালীমন্দির হিসেবে ভক্তজনের মধ্যে বিপুল পরিচিতি লাভ করে। ১৮০৩ সালে এই অঞ্চলের বিত্তবান ব্যবসায়ী শঙ্কর ঘোষ সিদ্ধেশ্বরী মায়ের পাকা মন্দির তৈরি করে দেন। সনাতনী ঐতিহ্য মেনে আজও মৃন্ময়ী মূর্তিতেই মায়ের প্রতিদিনের পুজো করা হয়।’ আমাদের ভাবাবিষ্ট দশা যখন খানিকটা কাটে তখন আমাদের বাহন ট্রাম এসে হাজির হয় হ্যারিসন রোডের ক্রসিঙে।
জোড়াসাঁকোর কবি ঠাকুর ‘বিনুর স্বপ্ন’ কবিতায় সেকালের হ্যারিসন রোডকে হাওড়া ব্রিজের পিছে চলা এক রাস্তা হিসেবে তুলনা করেছিলেন। এই রাস্তা পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ট্রাম উত্তর কলকাতার সীমানা ছাড়িয়ে মধ্য কলকাতার সীমানায় ঢুকে পড়ে। নাম বদলে মহাত্মা গান্ধি রোড হলেও এ-রাস্তার কৌলিন্য কিছুমাত্র কমেনি। ট্রাম এখন কলেজ স্ট্রিটে। খুব ব্যস্ত রাস্তা, তবে আজ রবিবার বলে ভিড়ভাট্টা একটু কম। আমাদের কথকঠাকুরের এখন বেশ নাজেহাল দশা। ট্রামলাইনের ডায়ে-বাঁয়ে এত কিছু দ্রষ্টব্য যে তিনি কোনটা ছেড়ে কোনটার প্রতি আমাদের নজর আকর্ষণ করবেন তা ঠাওর করতে পারেন না।
‘এই হল অ্যালবার্ট হল, এপাশে প্রেসিডেন্সি কলেজ, এপাশে হিন্দু স্কুল, তার পেছনে পেছনে সংস্কৃত কলেজ, এপাশে হেয়ার স্কুল, ওপাশে গোলদীঘি।’ নিরন্তর ঘাড় ঘোরাতে ঘোরাতে আমরাও ক্লান্ত হয়ে পড়ি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ দেখতে দেখতে আমরা যখন বৌবাজারের মোড়ে তখন টের পাই আর এক নতুন পাড়ায় প্রবেশ করতে চলেছি। পরতে পরতে জমে থাকা ইতিহাস এই এক ট্রামযাত্রায় নেড়েচেড়ে চাক্ষুষ করা সম্ভব হবে না বুঝতে পেরে বাবা বলেন— আবারও একদিন আসা যাবে। ট্রামের টংটং ঘন্টার আওয়াজ যেন সেই প্রস্তাবে সায় দিয়ে বলে ওঠে— ঠিক, একদম ঠিক। টিপু সুলতান শাহি মসজিদকে ডানদিকে রেখে আমাদের ট্রাম পৌঁছে যায় তার গন্তব্যের চরম লক্ষ্য এসপ্ল্যানেড। মনভরা বিস্ময় আর খুশি নিয়ে আমরাও নেমে পড়ি আমাদের বাহন থেকে। ‘কোনটা তোর সবচেয়ে ভাল লাগল রে দাদা?’— আমার বোনের প্রশ্ন। একটু সময় নিয়ে উত্তর দিই— ‘শরবতের দোকান আর কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়া।’ বোন মৃদু হেসে ঘাড় নাড়ে। এবারও টং টং ঘন্টার শব্দ তুলে ট্রাম সায় দেয়— ঠিক ঠিক ঠিক!
এই শহরে ট্রামের ইতিকথা
ট্রামে চড়ে কলকাতার এক প্রান্তের ইতিহাসের সঙ্গে পরিচিত হলেও এ-শহরে ট্রামের আবির্ভাব ও রাজত্ব বিস্তারের পর্বটিও খুব আকর্ষণীয়। আমাদের আনন্দনগরীতে একটি গণপরিবহন মাধ্যম হিসেবে সার্ধশত বছর টিকে থাকার গৌরব তো নেহাত কম নয়। এদেশে নিজেদের আধিপত্য দস্তুরমতো কায়েম হতেই ইংরেজ সরকারের নজর পড়ল পরিকাঠামোর উন্নয়নে। ১৮৬২ সালে শিয়ালদহ স্টেশনের পত্তন হল। অবশ্য এর কিছুকাল আগে ১৮৫৪ সালে ভাগীরথীর অন্য পাড়ে হাওড়া স্টেশনের প্রতিষ্ঠা হয়েছে। যাত্রী আর পণ্যসমাগমে একটু একটু করে জমজমাট হয়ে উঠছে কলকাতা। কিন্তু শহরের গণপরিবহন ব্যবস্থা তখনও একান্তভাবেই পালকি আর ফিটনগাড়ি-নির্ভর। এ-ব্যবস্থা যে মোটেই পরিবর্তিত সময়ের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার উপযুক্ত নয় তা মনে করেই ভারত সরকার শহরের বুকে ট্রাম চালানোর কথা ভাবতে শুরু করে। ১৮৬১ সালের মার্চ মাসে লন্ডন শহরের মার্বেল আর্চ ও নটিং হিল গেটের মধ্যে প্রথম ঘোড়ায় টানা ট্রাম চলাচল শুরু হয়। এদেশের বুকেও তেমন ব্যবস্থা কায়েম করার একটা ইচ্ছে হয়তো মনের মধ্যে নাড়াচাড়া করছিল। যাই হোক, ইংরেজ সরকারের এই পরিকল্পনা রূপায়ণের দায়িত্ব দেওয়া হল কলকাতা পুরসভার ওপর। পুরসভার নিয়ামক জাস্টিস কমিটির অনুমোদনক্রমে শিয়ালদহ স্টেশন থেকে গঙ্গাপাড়ের আর্মেনিয়ান ঘাট পর্যন্ত লাইন পাতার কাজ শুরু হল। প্রাথমিকভাবে এই কাজের জন্য এক লক্ষ টাকা খরচ ধরা হলেও, অনুমিত বরাদ্দ ছাপিয়ে দেড় লক্ষ টাকা ব্যয়ে লাইন পাতার কাজ সম্পন্ন হল ১৮৭৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। শুভস্য শীঘ্রম আপ্তবাক্যকে মাথায় রেখে ১৮৭৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি শিয়ালদহ থেকে ট্রাম-ট্রেন তার যাত্রা শুরু করে। ট্রাম টানার জন্য সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা হয়েছিল হৃষ্টপুষ্ট বলিষ্ঠ ওয়ালার ঘোড়া। স্টেশনে উপস্থিত বিপুল সংখ্যক মানুষের জয়ধ্বনির মধ্যে কলকাতার ট্রাম প্রথম যাত্রা শুরু করল।
কেমন ছিল সেদিনের সেই যাত্রা? এক প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ থেকে আমরা জানতে পারি—
সেদিন শেয়ালদা স্টেশন থেকে পরপর দুটি ট্রাম-ট্রেন ছাড়ে, প্রথমটিতে ছিল তিনটি গাড়ি— একটি প্রথম শ্রেণীর ও দুটি দ্বিতীয় শ্রেণীর। দ্বিতীয়টিতে ছিল দুটি গাড়ি— একটি প্রথম শ্রেণীর, আরেকটি দ্বিতীয় শ্রেণীর। … প্রথম ট্রাম-ট্রেনটিকে ৬টি ঘোড়ায় টেনেছিল, দ্বিতীয়টিকে ৪টি ঘোড়ায়।
পূর্ববঙ্গ রেলের ৯টা ১৫ মিনিটের ট্রেনটা যেই শেয়ালদা স্টেশনে পৌঁছাল অমনি ট্রাম-টিকিটের জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে গেল, আর দেখতে দেখতে দ্বিতীয় শ্রেণীর গাড়ি দুটির ভেতর ও ছাদ পর্যন্ত যাত্রীতে এমনভাবে ভরে গেল যে সর্দিগর্মি হবার উপক্রম। কিন্তু প্রথম শ্রেণীতে মাত্র পাঁচটি লোক চাপল— তিনটি ইউরোপীয় ও দুটি দেশীয় ভদ্রলোক। … ৯টা ৩০ মিনিটে রওনা করার সঙ্কেত করা হল। প্রথম শ্রেণীর গাড়িটা অনায়াসেই স্টেশন থেকে রওনা হয়ে গেল। কিন্তু যখন তার পরের গাড়িটাকে ছাড়বার জন্য সঙ্কেত দেওয়া হল দেখা গেল, অমন তাগড়া ঘোড়াদুটো প্রাণপণ শক্তিতে টানাটানি করে গলদঘর্ম হয়ে গেল, কিন্তু গাড়ি যেখানকার সেখানেই রইল, এক ইঞ্চিও নড়ল না, এত লোক তাতে চেপেছিল। এই দেখে পূর্ববঙ্গ রেলের ট্রাফিক সুপারিন্টেন্ডেন্ট মিঃ ব্যান্ডার ঘোড়াদুটোর গায়ে সপাৎ সপাৎ করে কয়েক ঘা চাবুক কশে দিল, তবুই নট-নড়ন-চড়ন-নট-কিচ্ছু। তারপর একদল ট্রাম-কর্মচারীর চেষ্টায় ট্রাম চালু হল।
এ তো গেল প্রথম ট্রামের হাল। দ্বিতীয় ট্রামটিকে ঘিরে তৈরি হল নতুন বিসংবাদ। কী লিখছেন সেই প্রত্যক্ষদর্শী?
দ্বিতীয় ট্রামে প্রথমটার চেয়েও বেশি মানুষ বোঝাই ছিল। সেইজন্য দ্বিতীয় শ্রেণীর গাড়িটিকে আগে আর প্রথম শ্রেণীটিকে পেছনে রাখা হল। তাতে প্রথম শ্রেণীর ইউরোপীয় যাত্রীরা চটে গেল। শেষে অবশ্য বুঝিয়ে-সুঝিয়ে দুপক্ষকেই রাজি করানো গেল। দুটি গাড়িই এরপর ধীরে ধীরে ডালহৌসি স্কোয়ারে পৌঁছল। বিপুল জনতা সেদিন আগাগোড়া সমস্ত পথটার ধারে দাঁড়িয়ে এই নতুন গাড়ি চলা দেখেছিল। বৈঠকখানা রোড-বৌবাজার স্ট্রিটের মোড়ে লোকে লোকারণ্য হয়েছিল।
কলকাতার রাস্তায় ট্রামগাড়ির প্রবর্তন এক নতুন নাগরিক আভিজাত্যের জন্ম দিল। কপাল পুড়ল সাবেক পালকি আর গরুর গাড়ির গাড়োয়ানদের। নতুন সময়ের প্রতিযোগিতায় একটু একটু করে অদৃশ্য হতে হতে একসময়ে তারা বিলকুল লোপাট হয়ে গেল। শহরের পরিসর বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গণ পরিবহন ব্যবস্থার সম্প্রসারণের প্রয়োজন হয়ে পড়ল। তবে ঘোড়ায় টানা ট্রাম এক্ষেত্রে যে কার্যকর মাধ্যম হবে না তা টের পেতে খুব বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি। আয়ের তুলনায় ব্যয়ের পরিমাণ অনেকগুণ বেশি হওয়ায় জাস্টিস অফ পিসের সিদ্ধান্তকে হঠকারী বলে দেগে দেওয়া হল, ফলে ভারত সরকারের সঙ্গে রীতিমতো দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে গেল। নতুন জনপদকে ঘিরে ব্যবসাবাণিজ্যের বিপুল সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ীদের অনেকেই পরিবহন-ব্যবসায় বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠল। নানান টানাপোড়েনের পর ডিল্যুইন-রবিনসন জুটিকেই বেছে নেওয়া হল কলকাতায় দ্বিতীয় দফায় ট্রাম পরিষেবা চালানোর জন্য। গঠিত হল ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ কোম্পানি। ১৮৮০ সালে তৈরি করা হল ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ অ্যাক্ট। এই আইনের নির্দেশিকা অনুসারে ট্রামপরিষেবাকে আরও কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া হল। নতুন নতুন রাস্তায় ট্রাম চালানোর তোড়জোড় করা হল। ট্রাম নিয়ে কলকাতার জনমানসে নানান ভাবনা, রোমান্টিকতা জন্ম নিচ্ছিল একটু একটু করে। সাহিত্যের পাতাতেও ঠাঁই পেতে থাকে নানা জল্পনা রসালাপ। ১৩০৫ বঙ্গাব্দে দুর্গাদাস দে লিখিত ‘শ্রীমতী’ প্রহসনের মুখ্য চরিত্র ধিনির বয়ানে একটি রসভাষণ দিয়ে এই পর্বের আলোচনা শেষ করব। বিরহকাতর ধিনি বলছে— “প্রিয়ে, তুমি আমার হিয়ে, এই যে পাঁচ পয়সা নিয়ে ট্রাম দিয়ে আসব বল্লে, কই এখনও তো এলে না! ট্রাম কি তবে আউটরেল হল?… বিরহ বারবার একখানা ট্রাম নিয়ে আসছেন!” আজকের দিনের প্রেমিকপ্রবরদের কাছে এমন অনুভব অচিন্ত্যনীয়।
কলকাতার ট্রাম ও এক বিয়োগান্তক স্মৃতি
ট্রামের লাইনের পথ ধরে হাঁটি:
এখন গভীর রাত
কবেকার কোন সে জীবন যেন টিটকারি দিয়ে যায়
তুমি যেন রড ভাঙা ট্রাম এক— ডিপো নাই,
মজুরির প্রয়োজন নাই
কখন এমন হয়ে হায়!
আকাশে নক্ষত্র পিছে অন্ধকারে
কবেকার কোন্ সে জীবন ডুবে যায়।
কবি জীবনানন্দ দাশের ফুটপাথ কবিতার কাব্যময় আখরগুলো এভাবে যে তাঁর জীবনের শেষ মুহূর্তের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে তা ভাবলে অবাক হতবাক হতে হয়। কবির অস্বাভাবিক মৃত্যুর সঙ্গে এভাবে জড়িয়ে যাবে ট্রাম তা কেউই ভাবতে পারেনি। ১৯৫৪ সাল। ১৪ অক্টোবর। সকালবেলা। আনমনা এক পদাতিক মানুষ রাসবিহারী এভিনিউর কাছে রাস্তা পার হচ্ছেন। এমন সময় ডাউন বালিগঞ্জ রুটের একটা ট্রাম এসে ধাক্কা মারল সেই অজ্ঞাত পথচারী মানুষটিকে। নিমেষে লুটিয়ে পড়লেন মানুষটি। অবিরাম ঘন্টা বাজিয়ে ট্রামচালক বারংবার সতর্ক করতে চেয়েছেন তাঁকে, তারস্বরে চিৎকার করে সরে যেতে বলেছেন, ব্রেক কষেও থামানো যায়নি বেলাগাম যানটিকে। রাস্তার ওপরে পড়ে থাকা রক্তাক্ত, অচৈতন্য দেহটিকে তুলে নিয়ে অপরিচিত দরদি মহানাগরিকেরা ছুটলেন হাসপাতালে। শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে টানা সাতদিন ধরে চলল আহত মানুষটিকে প্রাণবান রাখার প্রাণান্তকর প্রয়াস। সমস্ত চিকিৎসাকে ব্যর্থ করে দিয়ে ২২ অক্টোবর, ১৯৫৪ চলে গেলেন হাজার বছর ধরে পথ হাঁটা সেই মানুষটি— কবি জীবনানন্দ দাশ। হাসপাতালের ক্লান্ত উঠোন জুড়ে তখন ইতিউতি লাট খাচ্ছিল চাঁদের আলোর হাহাকার, হিমেল বাতাসের গন্ধে তখন ছাতিমফুলের করুণ বেদনার সুর। আর সেই ট্রাম? স্বজন হারানোর দুঃখ সইতে না পেরে একদিন অগ্নিদহনে নিজেকে নিঃশেষ করে দিল এই ধরণীর মায়াভরা রজকণায়।
ট্রাম যখন রাজনৈতিক আন্দোলনের হাতিয়ার
১৯৫৩ সাল। ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় তখন এ-রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। ব্রিটিশ পরিচালক কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে দ্বিতীয় শ্রেণির ট্রামের ভাড়া এক পয়সা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। আজকের এই চরম মূল্যবৃদ্ধির যুগে এই সিদ্ধান্ত খুবই স্বাভাবিক বলে মনে হলেও সেকালে এই সিদ্ধান্তকে ঘিরেই এক প্রবল জনবিক্ষোভের সৃষ্টি হল। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে এক তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলল। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন জ্যোতি বসু, হেমন্ত বসুর মতো বাম নেতৃবৃন্দ। আগ্রাসী আন্দোলনের জেরে কলকাতার রাস্তায় প্রায় একশো ট্রামে আগুন লাগানো হয়। এই আন্দোলনের সূত্র ধরে বহুধাবিভক্ত বাম রাজনৈতিক দলগুলি এক ছাতার তলায় সমবেত হল। বিধানচন্দ্র রায় গিয়েছিলেন সুদূর ভিয়েনায় চোখের অপারেশনের জন্য। তড়িঘড়ি রাজ্যে ফিরে এসে বর্ধিত ভাড়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেন। আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেওয়া হল। এই আন্দোলন এ-রাজ্যে বাম-আন্দোলনের ইতিহাসে এক মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে যা পরবর্তীকালে ১৯৬৭ সালের প্রথম যুক্তফ্রন্ট সরকারের স্থাপনার পথ সুগম করেছিল। যদিও ততদিনে কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে ভেঙে গিয়ে (৭ নভেম্বর, ১৯৬৪) দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে।
শেষ কথা
দেড়শো বছর ধরে পথ হেঁটে হেঁটে কলকাতার ট্রাম আজ এক ক্লান্ত পথিক। ৩৭টি রুটে শাখাপ্রশাখা বিস্তৃত পরিবার আজ ছোট হতে হতে একালের অণু পরিবারের চেহারা নিয়েছে। এটুকুও টিকে থাকবে কি না তা নিয়ে হাজারো প্রশ্ন আর জিজ্ঞাসা। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নাগরিক শ্রেণিমানসের আমূল পরিবর্তন হয়েছে। ট্রামযাত্রা আভিজাত্যের স্মারক হিসেবে আজ আর মান্যতা পায় না। ফলে ট্রাম আজ উন্নয়নমুখী ব্যস্ত জনপদে নিতান্তই বেমানান। গণ পরিবহন ব্যবস্থার পরিবর্তে আজ ব্যক্তিবাহন ব্যবস্থার রমরমা। অ্যাপ-নির্ভর ভাড়ার গাড়ির উত্তুঙ্গ প্রাধান্যের দিনে রাস্তার একপাশ দিয়ে সকলের নজর এড়িয়ে সসঙ্কোচে চলা ট্রাম আজ আর তেমন পছন্দের বাহন নয়। এই প্রজন্মের নাগরিকেরা আর ট্রামে চড়তে চায় না। এমনই এক নেতি-আবহে ট্রামের টিকে থাকার লড়াই খুব কঠিন হয়ে পড়ছে। সরকারও চাইছে না ট্রামপরিষেবা ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে। ইতোমধ্যেই ঘোষণা করা হয়েছে মাত্র চারটি রুটে ট্রাম চলাচল করবে। বাকি রুটগুলোকে বন্ধ করে দেওয়া হবে। এমন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে নানা মহল থেকে প্রতিবাদ করা হয়েছে। ট্রাম সচল রাখার সপক্ষে সবচেয়ে বড় যুক্তি হল— ট্রাম পরিবেশ দূষণ করে না, ট্রামে মাথাপিছু পরিবহন ব্যয় সবচেয়ে কম। যুক্তি-পাল্টা যুক্তি চলছে চলুক। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকব আমরা।
ট্রাম হয়তো সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে একসময় বিদায় নেবে শহরের বুক থেকে চিরকালের মতো,তবে তার ইস্পাতের সমান্তরাল চলনরেখার স্মৃতিকে বুকে জড়িয়ে আমরা নস্টালজিক হয়ে থাকব আরও কিছুদিন।
সোমনাথ মুখোপাধ্যায় আমার একজন প্রিয় লেখক। ট্রামে চড়ে সময় ভ্রমণ অসাধারণ। একদিকে ইতিহাস, একদিকে কলকাতার ভূগোল – নবীন চোখের আল্পনা – খুব ভাল লাগল।
ট্রাম স্বাধীনতা পূর্ববর্তী ভারতের এক অন্যতম প্রধান যাতায়াত মাধ্যম।একে ঘিরেও যে এক অসাধারণ ইতিহাস থাকতে পারে তা ভাবতেই পারিনি।অজানা বহু তথ্য সংগ্রহ করলাম এই লেখাটি থেকে। খুব ভাল লাগল লেখাটি পড়ে। 🙏🙏🙏
Somnath da was one of my teachers and thus I am aware about his magical story telling capability. Same is reflected here …memory reloaded about romantic tram rides
Somnath da is The Teacher……..Amader School Dum Dum Kishore Bharati r Teacher jader amra Dada bole daktam……sotti e uni Sikhok na Dada ki bolbo janina…….Onake asangkha dhanyabad j uni akhan likhchen karon amra to onake sei kabe theke jani…….onar lekhar doulate abar jara onake age school life a miss kore gechen tarao onar asamanya lekhar swad paben……..Dada Apni Likhe jan amra porte thaki🙏🏻!
সুপাঠ্য সাবলীল লেখনী। সহজ ভাবে কলকাতার ট্রাম যাত্রার গল্প শুনিয়েছেন। রবিবারের কলকাতা ভ্রমন বাড়তি পাওনা।
ইতিহাস যে এত সুন্দর মনোগ্রাহী আর তথ্যপূর্ণ হতে পারে তা সোমনাথ দা র লেখা পড়েই বোঝা যায়।সময়ের দলিল।অনবদ্য
জামাই বাবু দারুণ লিখেছে।অনেক ট্রাম চড়েছি
ছেলের ও মেয়েদের চুড়াতে পারলাম না।
কথায় বলে পুরনো চাল ভাতে বাড়ে। একই ভাবে পুরনো লেখা হলেও আজও পাঠকদের মন টানে। আজকের সংবাদপত্রে কলকাতা থেকে ট্রাম পাকাপাকি ভাবে তুলে দেবার সরকারি সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে।
এই লেখাটি ভবিষ্যতে ফেলে আসা দিনের এক মূল্যবান সম্পদ হয়ে থাকবে বলে মনে করি।
এই মুহূর্তে কলকাতার ট্রামের বিদায় নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় বেশ কিছু নিবন্ধ পড়লাম, তবে এই লেখাটিতে প্রাণের পরশ অনেক অনেক বেশি। সত্যিই এই নিবন্ধটি হারিয়ে যাওয়া সময়ের এক উজ্জ্বল দলিল হয়ে থাকবে।