![jamunas](https://i0.wp.com/www.4numberplatform.com/wp-content/uploads/2024/05/jamunas.jpg?resize=678%2C381&ssl=1)
যমুনা সরকার
চাষের টাকায় সারা বছর চলে না। আর সেই টাকাও আসে ধান ওঠার পর। ফলে ধারদেনা করতেই হয়। চাষ করার সময় সুদে টাকা ধার নিতে হয়। ধান উঠলে সেই টাকা আবার শোধ করা হয় সুদসমেত। কিন্তু আমাদের এলাকায় চাষের কোনও গ্যারান্টি নেই। ফলে সংসার চালানো দিন দিন কঠিন হচ্ছে
আমাদের বড় পরিবার। আমরা স্বামী-স্ত্রী, আমাদের তিন ছেলে, তাদের বৌ, নাতিপুতি সব মিলিয়ে আমাদের পরিবারে ১৪ জন লোক। বড় ছেলে শুধু ওর বৌ-বাচ্চা নিয়ে পৃথক খায়। আর বাকি সবাই একসঙ্গেই খাই। আমাদের বাড়ি সুন্দরবনের ঝড়খালিতে। কিছু জমিজিরেত আছে। ধান চাষ হয়। ওই জমিই আমাদের আয়ের একমাত্র উৎস।
আমি মূলত বাড়ির কাজকর্মই করি। কিন্তু কৃষকবাড়ির মেয়েদের মাঠের কাজে হাত লাগাতেই হয়। সেইগুলো তো আর টাকা দিয়ে মাপা হয় না। এই যেমন আমরা ছাগল-টাগল পুষি, সেগুলোর দেখভালও আমরা বাড়ির মহিলারাই করি। ওর থেকে সংসারের আয়ও হয়। কিন্তু আমাদের রোজগার ওরকম আলাদা করে কী করে মাপব! সেরকম আমাদের চাষের আয়েরও ওরকম মাসিক হিসেব করা যায় না। সারা বছরে যে ধানটা পাই, নিজেরা খেয়েদেয়ে ৫০-৬০০০০ টাকা মতন থাকে চাষ ঠিকঠাক হলে। এটাই আমাদের বাৎসরিক আয়।
এবার এতগুলো খাবার মানুষ। ওই টাকায় কি আর সারা বছর চলে? আর টাকাও তো আসবে ধান উঠলে, তবে। ফলে ধারদেনা তো করতেই হয়। চাষ করার সময় সুদে টাকা ধার নিতে হয়। ধান উঠলে সেই টাকা আবার শোধ করা হয় সুদসমেত। কিন্তু আমাদের এলাকায় চাষের কোনও গ্যারান্টি নেই। ফলে সংসার চালানো দিন দিন কঠিন হচ্ছে। পরিবারের লোকসংখ্যাও বেড়েছে। কিন্তু আয় কমেছে।
আয় কমেছে মানে আসলে আমাদের এই জমিগুলোতে আয়লার সময়ে নোনাজল ঢুকে চাষ পুরো বন্ধই হয়ে গেছিল। জমির সেই নোনাভাব কাটতেই অনেক বছর লেগে গেছে। এখন আবার একটু হচ্ছে। কিন্তু ওই সময়টাতে, মানে যে-সময়ে চাষবাস হত না, আমরা সবাই বাইরে খাটতে যেতাম। এই গ্রামের সবাই। লোকজন ছিলই না বললে হয়। করবে কী থেকে! এখন আবার চাষবাস শুরু হওয়ায় সব ফিরেছে টুকটুক করে। এই আমরা যেমন গেছিলাম ওডিশায়। তা বাইরে রোজগারটা একটু বেশি হত। তখন ছেলেপুলেদের সবার বিয়েথা-ও হয়নি, ফলে টাকা থাকত হাতে। সেই হিসেবেই বললাম আয় কমেছে।
আমাদের বাড়িতে দুজন অসুস্থ। রোগব্যাধির চিকিৎসাতেও একটা বড় খরচ হচ্ছে এখন।
পড়ুন, ইলেকশন এক্সপ্রেস ২০২৪
আমাদের রান্নার গ্যাস আছে। গ্যাসে সাবসিডি পাই। স্বাস্থ্যসাথী, খাদ্যসুরক্ষা, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার এগুলো সবই হয়েছে। জিরো ব্যালান্সের অ্যাকাউন্ট আছে একটা। এগুলোর মধ্যে খাদ্যসুরক্ষাটাই সবচেয়ে কাজে লাগে। খাবার চালটা পাওয়া যায়।
বাড়িতে টিভি আছে একটা। দেখি। কিন্তু টিভিতে খবরে পার্টিবাজির যা ব্যাপারস্যাপার দেখি— ভাল লাগে না। পার্টি-পার্টি নিয়ে এত দাঙ্গা-মারামারি কেন? যদিও এসব ভাবার সুযোগ হয় না। নিজেদের আর্থিক সমস্যা নিয়েই জেরবার হয়ে রয়েছি। ভোট আসছে, ও তো দিতে হয়, দেব…। কিন্তু অবস্থা পাল্টাবে কিনা সে তো ভবিষ্যতের ব্যাপার। সে কি বলা যায়!
*সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখিত। চার নম্বর প্ল্যাটফর্মের পক্ষে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিদ্ধার্থ বর্মন