Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

অজিত দাশ

অজিত দাশ | আটটি কবিতা

আটটি কবিতা

 

বোধিচিত্ত

এক মুঠো ধূলিকণা হয়ে বালিঘড়ির মতো চুইয়ে পড়ছে আমার ‘আমি’ কোনও এক সুড়ঙ্গপথে। বিবশ পিঁপড়ে— চিনির দানা মাথায় নিয়ে জপ করছি তোমার নাম। এত শব্দহীন তরঙ্গের স্পর্শ গলে পড়ছে টেবিলে— ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে সে ধূলিকণা। তোমার নামে ক্ষয়ে যাচ্ছে— হাওয়া, জল, বায়ু আর বৃহদ্রথের আত্মতত্ত্ব। আমি এখন নাবালক! দুঃখরোধী জ্যাকেট পরে ভাসছি জগতের ঘর-দোরে। আমার দুপাশে পা গলিয়ে ডুবে যাচ্ছে মাটির পুতুল, পৌষের নদী। অথচ এক ভঙ্গুর ভালবাসার শহরে কয়েকশো অনিশ্চয়তা ঠেলে আমি প্রস্তুতি নিচ্ছি বোধিচিত্তের।

 

ভৈরবী

আমার দুঃখগুলো ফিরিয়ে দেওয়ার আগেই
ওদের ছুঁয়ে ফেলবে বধ্যভূমির ফুল

সবকটা প্রশ্নের উত্তর নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে তুমি
এদিকে, বোকা ফুলগুলোর পাপড়ি খসে গেলে

আমি একটা ভাঙা এস্রাজে রাগ ভৈরবী হতে চাইব

 

মায়া

পুরনো প্রেমিকের কথা ভাবতে ভাবতে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলে। নিয়ন্ত্রিত, পলকা অনুভূতিগুলো আরও সযত্নে গুছিয়ে রাখি নিজের মধ্যে। কোথাও একটানা গাড়ির হর্ন বাজে। চায়ের লিকারের গন্ধ ভুলে গিয়ে আপাদমস্তক এক পুরুষ, অশ্বত্থের লাল ফলের দিকে তাকিয়ে ভুলতে চায় পাখির অভ্যাস থেকে ফিরে আসা জীবন। তখনই সে দৃশ্যমান হয়। তাঁর মাথার উপর থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে গড়িয়ে পড়ে পূর্ণিমার চাঁদ। আধো আলো অন্ধকারে আমাকে গ্রাস করে মায়া। ভিজিয়ে দেয় অগোছালো। নিজেই নিজেকে পাঠ করি, আর ছিঁড়ে ফেলি। জানি, এভাবেই লিখতে হয়। অথচ কিছুই জানা হল না ভেবে শূন্য হয়ে বসে থাকি দুঃখের ডালপালায়।

 

বৈষ্ণব বেদনা

গাছের শরীর থেকে ঝরে পড়া
প্রতিটি হলুদ চোখ এখন তোমার বিছানায়
বাতাসে ছড়িয়ে পড়ার নিজস্ব গতিটুকু দেখতে
না-পারার বৈষ্ণব বেদনা, অনামিকার খাপে মৃত
নগরীর ছায়াকে ঢেকে ফেলছে এইবেলা
অ্যাপসে বন্দি জীবন, এই শহরে ছুরির মতো
দু-ভাগ করছে আমাদের বৃষ্টির নেশা
তাচ্ছিল্যের খিলখিলে ঢেউয়ের চেয়েও নিম্নগামী
ওয়াইফাই তরঙ্গ একটি ঋতুকে দুমড়ে মুচড়ে
ফুঁৎকারে উড়িয়ে দিয়ে যায় আমাদের চোখের সামনে

 

হলুদ বিকেলে

মায়ের শাঁখা ভেঙে তৈরি স্বপ্ন। স্বপ্ন গড়িয়ে যায়
ভাঙা চৌকির দিকে।

আমাদের ফেলা আসা জোড়পুকুরে
পিতলের ঘটি ডুবে গেলে— এক জোড়া
চোখের পরিতাপে ঝুলে থাকি হলুদ বিকেলে

একটা শবযাত্রার হরিবোলে ধাক্কা খেয়ে
পথ হারিয়ে ফেলা কোনও ঠুমরী— বুকের ভেতর
হেলান দিয়ে দাঁড়াতেই স্মৃতির দেওয়াল ভাঙে।

 

সিঁকি

আত্মগোপনের কালে
অসহায় ইমোজিগুলি মিথ্যা,
কেবল মিথ্যা।

আয়ুর মৃত কষ্টিপাথর ঘষে ঘষে
একটা ব্যথানিরোধক সিঁকিও বলে যায়—

এ জীবন বর্ষায় বিনা বৃষ্টিতে করুণ ঝরে পড়া।

 

অপেক্ষা, পালক…

যেসকল অপেক্ষাতে তুমি আস
সারারাত ধরে তারার পালক খসে যায়।

কাঁচের শার্সি বেয়ে এগিয়ে আসে
হাড়জোড়া লতা

অপেক্ষা, পালক…

তারার আলোয় অন্ধকারে যেখানে বাঁক,
হারিয়ে ফেলা চাবি—
শূন্য-বিভোরে ধূধূ করা মাঠ
আর তাতে পড়ে আছে— অক্ষরের কাঁটাতারে ঘেরা
মুখোমুখি দাঁড়ানোর সমস্ত রহস্য।

 

ফুলের শিল্প

কীবোর্ডে হাত রাখতেই উড়ে যাচ্ছে
সবগুলো বাটন
আঙুলের যে সীমানায় অক্ষর চিনেছি
তার ওপাশে বাইনারি সঙ্কেতে
আমারই আঁকাবাঁকা ছায়া
দেখতে-দেখতে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে সব
আমাদের খুবলানো পথটুকু এইমাত্র,
দীর্ঘশ্বাস হয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে গেলে
তোমার চোখের মার্বেলে
ফুটে উঠে আশ্চর্য ফুলের শিল্প!