Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

সুখস্মৃতির কর্তৃত্ব না, মহীনেই বাঁচতেন খোঁড়া ঘোড়া— তাপস দাস (১৯৫৪-২০২৩)

সুমিত দাস

 


যাপনহীন, মগ্নতাহীন সুখস্মৃতি প্রশ্ন তুললেও, শ্রেণির ফারাক বুঝিয়ে দিয়েছে— বাপিদা জীবিত। সেই অন্তহীন মহীনের স্পিরিট। স্মৃতিকাতর প্রতিষ্ঠান হতে চাওয়া প্রবীণের দল মন খুলে দেখলেনই না— বাপিদা অসুস্থ শরীরে সভায় বা আয়োজনে নতুনের দিকে আঙুল তুলে বলছেন— "তুইও মহীন, আমরা সবাই মহীন।"

 

 

শিল্পকলা ও ব্যক্তিশিল্পীর সংঘাত নতুন নয়। শিল্পীর অবস্থান বদলায়। শিল্প তার অবস্থান নিয়ে, বিচ্ছুরণ ও সম্ভাবনা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ২০১১-পরবর্তী বাংলায় এ সংঘাত বারবার দেখা গেছে। দেখা গেছে, অ-সরকারি ব্যক্তি হয়ে উঠলেন প্রবল সরকারি।

বাপিদার মঞ্চে ফিরে আসার পেছনে একটা দ্বিমুখী তাগিদ ছিল। সে সময় যারা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, গান-কবিতা বা ভাবনাচিন্তা, তাদের জন্য ‘পক্ষ’ দরকার ছিল। যা এলিট নয়, গোছানো নয় এবং তথাকথিত ‘বিখ্যাত’ নয়। হারিয়ে যাওয়া গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের সহকর্মীদের তিন দশক পরের সঙ্গীরা তখন কেউ মহীনে বেঁচে নেই। বদলে গেছেন, স্বাভাবিক। সময় বদলালেও বদলালেন না বাপিদা। বা, বদলাতে পারেননি। যাদবপুর, প্রেসিডেন্সির একদল নতুনের কাছে— বাপিদা হয়ে উঠলেন ‘অন্তহীন মহীন’। সময়ের তাগিদ দু-প্রান্তে মিলল। গল্পে কথায় নেমে এল— হারানো দিন, আত্মগোপনের দিন, গোপন পত্রিকা ফেরি বা জেলখানার কথা।

আমাদের মতো, যাদের রাজনৈতিক পালাবদলে কিস্যু যায়-আসে না, পরান্নে খিদে মেটে না, তাদের কেউ কেউ বুড়ি ছোঁয়ার মতো ছুঁয়ে রইলাম বাপিদাকে। আর বাপিদা আমাদের।

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়। হিরণ মিত্র ও তাপস দাস। ২০১৩

 

দুই.

২০০২-০৩ সালে বাপিদা, মানে তাপস দাস যাদবপুর মেইন হস্টেলে বিলাসের ঘরে আসতেন। এই সময় ডি ব্লকের ছাদে মধ্যরাতে গানের আসর বসত। মহীনের গানে মিশে যেত জেমস-সহ বাংলাদেশের গান। হস্টেল ও বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে যাওয়া অনেকেই এই আসরে আসতেন।

সে সময় মহীন সম্পর্কে সবার যা ধারণা, আমারও তাই ছিল। অর্থাৎ, সুমন-পরবর্তী বাংলা গানের বাজারে মহীনের ঘোড়াগুলি সম্পাদিত অ্যালবাম দুটি দূর মফস্বলে দল বেঁধেই শুনেছি। ‘আবার বছর কুড়ি পর’ ও ‘মায়া’। এতে মহীনের নিজস্ব গানের সঙ্গে ছিল অরুণেন্দু দাসের গান। মজার বিষয় হল, নয়ের দশকের মাঝামাঝি নতুন করে মহীনের ঘোড়াগুলির গান রিলিজ হতেই নানান গল্প নতুন করে ফিরল। গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের ছাত্রজীবন, নকশালপন্থা, আত্মগোপন করা, জেলে যাওয়া ইত্যাদি। মহীনের ঘোড়াগুলি নামটির সঙ্গে এই গল্পগুলি একাত্ম হতে শুরু করল। অথচ, দেড় দশক আগে বন্ধ হয়ে গেছে দলটি।

মাঝের দীর্ঘ সময়ে কলকাতার মতই দূর মফস্বল ও গঞ্জে গিটার বেড়েছে। ‘আবার বছর কুড়ি পর’ বা ‘মায়া’ প্রকাশের পর সে গান গাওয়ার লোক বেড়েছে রোজ। নানা আলোচনা ও গল্পে ‘বেহালা চৌরাস্তা’ বা ‘নগর ফিলোমেল’-এর নাম ও গান ফিরে আসছে, কেউ কেউ গাইছে। শেষমেশ, ক্যাসেট যুগের শেষপ্রান্তে ‘মহীনের  গান’ গান হিসেবে তরুণদের কাছে জায়গা করে নিল মহীনের ঘোড়াগুলির সম্পাদিত গান।

 

তিন.

২০১২ সালের বর্ষায় রাণু ঘোষের তথ্যচিত্র ‘কোয়ার্টার নাম্বার ৪/১১’ প্রদর্শনের আয়োজন করেছিলাম আমরা কয়েকজন। সাউথ সিটি মলের নির্মাণ, শ্রমিক শম্ভু সিংয়ের মৃত্যু পর্যন্ত নাছোড় লড়াই— টানা এক দশক রেকর্ড করেছিলেন রাণুদি। ম্যাক্সমুলার ভবনের সে আয়োজনে নিমন্ত্রিতের তালিকায় উপরের দিকে ছিল তাপস দাস ও সুতপা ঘোষের নাম। পরে জেনেছিলাম, ১৯৯৩ থেকে গৌতম চট্টোপাধ্যায় মানে মণিদা, তাপস দাস মানে বাপিদা, সুতপাদি-রাণুদিদের নিয়মিত-অনিয়মিত আড্ডা হত। শুনেছি, গান শেষে গৌতম বলতেন “মিউজিক মাস্ট গো অন।” প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালে প্রয়াত হন গৌতম চট্টোপাধ্যায়।

ম্যাক্সমুলার ভবনে সেদিন ‘কোয়ার্টার নাম্বার ৪/১১’ দেখার পর ক্ষোভে ফুঁসছিলেন নবারুণ ভট্টাচার্য। কোমর ভেঙে দীর্ঘকাল অসুস্থ থাকা বাপিদা লাঠি হাতে এসেছিলেন। প্রদর্শনীর পর বাপিদাকে বলেই ফেললাম— ‘তোমাদের গল্প বলবে, শুনতে চাই!’ নবারুণদা সহ বাকিরাও এ প্রস্তাবে বেশ আস্কারাই দিলেন। বাপিদার সঙ্গে এদিনের পর ঘনিষ্ঠতা বাড়ল। বেহালায় সুতপাদি আর বাপিদার একচিলতে ফ্ল্যাটে রাতবিরেতে যাওয়া শুরু হয়ে গেল আমার।

 

চার.

২০১২-১৩ র শীত। কলকাতা বইমেলা। তখন মিলন মেলা প্রাঙ্গণ। বাপিদা ‘মহীনের অপ্রকাশিত ও অপ্রচলিত গান’ প্রকাশ করবেন বলে দিনক্ষণ ঠিক হল। উদ্বোধক— নবারুণ ভট্টাচার্য। প্রস্তুতি যখন শেষ, তখন কপিরাইট, পরিবারের অধিকার ইত্যাদি প্রসঙ্গ উঠল। বিবাদ বাড়ায় বাতিল হল অ্যালবাম প্রকাশ। গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের পরিবার থেকেই প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে অসম্ভব বিরক্ত হয়েছিলেন নবারুণ ভট্টাচার্য।

 

পাঁচ.

বইমেলা কাণ্ডের রেশ ছিলই। এরপর ২০১৩-র মাঝামাঝি বাপিদার বাড়ির আড্ডায় শুনলাম, লন্ডন থেকে অরুণেন্দু দাস আসছেন ছুটিতে। ‘আচ্ছা, ওঁর গান সামনে বসে শুনিনি, আয়োজন করলে কেমন হয়!’— আমার প্রস্তাবে বাপিদা রাজি, বাপিদার প্রস্তাবে অরুণেন্দুবাবু। প্রসঙ্গত অরুণেন্দুবাবুর কথায় এই আয়োজনই বড়সড় শ্রোতার সামনে তাঁর প্রথম উপস্থাপনা। ইন্দুমতী সভাগৃহে ‘হৃদয়ে ঝরা সময়’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে মঞ্চ আলো করলেন হিরণ মিত্র, সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়, কল্লোল দাশগুপ্ত, তাপস দাসরা। গান গাইলেন নবীন ও প্রবীণরা। উপচে পড়া ইন্দুমতী সভাগৃহ থেকে আরও আয়োজনের দাবি উঠল। যাদবপুর থেকে অনুষ্ঠানের রেশ ছড়িয়ে পড়ল প্রেসিডেন্সিতে।

এর আগে, ইন্দুমতীর অনুষ্ঠানের জন্য কয়েকজনকে নিমন্ত্রণ করতে গিয়ে বিব্রত হয়েছি৷ ‘বাপিদা কেন? সে মহীনের কে?’ ইত্যাদি, প্রভৃতি। এক্ষেত্রে প্রশ্ন বা আপত্তি যারা করলেন, নয় তারা গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের পারিবারিক সদস্য, বা নয়ের দশকে মহীনের গান রেকর্ড করা কোনও শিল্পী।

তাপস দাস ও অরুনেন্দু দাস। ইন্দুমতী সভাগৃহ, ২০১৩

 

ছয়.

গত ২৫ জুন, ২০২৩। বৃষ্টিময় সন্ধ্যায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গড়িয়া শ্মশানের পথে চলল গান-মিছিল। মিছিলের মাঝে শবদেহবাহী গাড়ি। হাঁটতে হাঁটতে মনে হচ্ছিল— কেন এই গান? কেন এই তরুণেরা হাঁটছেন? হয়তো সেদিন বৃষ্টি না হলে ভিড় অনেক অনেক বেড়ে যেত! কী এমন ঘটালেন বাপিদা! ম্যাজিক, নাকি এই স্বতঃস্ফূর্ত গানশ্রদ্ধার যথাযথ কারণ আছে! শুনেছি, কোনও কোনও নিন্দুক বা প্রবাহের বাইরের মানুষ বলেছেন— “সব আলো নিয়ে চলে গেল বাপি”। কিন্তু আলো তো জ্বালিয়ে রাখতে হয়, প্রবল ঝড়ে আগলে রাখতে হয় শেষ প্রদীপের শিখা।

এই তো সেদিন, বাপিদার চিকিৎসার জন্য আয়োজিত অনুষ্ঠানে এক ঘোড়া বলেই ফেললেন— “মিথ্যা বলিস না বাপি।” আসলে ২০২৩ বইমেলায় বাপিদার জীবনী ‘Reincarnation of The Dark Stallion’ প্রকাশ পেয়েছে। বইমেলায় যখন বই প্রকাশ হচ্ছে, বাপিদা পিজিতে চিকিৎসাধীন। এ সময় এও শুনেছি, এই একই ব্যক্তি বইটির লেখিকা ঋষিতা দে-কে বকাবকিও করেছেন। ‘কেন বাপির জীবনী?’ জীবনী থেকে গানমিছিল— উত্তর আছে, কিন্তু তা গ্রহণে প্রশ্ন-তোলা মন সক্ষম কিনা জানি না।

যাদবপুর-প্রেসিডেন্সি হয়ে ২০২৩, বাপিদার বিদায়ের দিন পর্যন্ত কে বা কারা প্রশ্ন তুলে গেলেন— বাপি কে, বাপি কেন? অথচ, সাতের দশক থেকে মহীনের ঘোড়াগুলির অনুরাগীদের অনেককেই বলতে শুনেছি— দীপক মজুমদার, গৌতম চট্টোপাধ্যায়কে মরমে পেয়েছে তাপস দাস। যাদবপুরের বা প্রেসিডেন্সির সভায় গানপাগল সেসব অনুরাগীরা ফিরে এসেছেন বারবার। যেমন আসতেন নগর ফিলোমেলের ইন্দ্রজিৎ সেন, বা বাপিদার একান্ত অনুরাগী প্রয়াত সুজিত সেন।

 

সাত.

২০১৩-য় যাদবপুরে ‘হৃদয়ে ঝরা সময়’ আয়োজন থেকে পাক্কা এক দশক পর এখন মনে হয়, বাপিদা আসলে অন্তহীন মহীন। ১৯৯৯ সালে গৌতম চট্টোপাধ্যায় মারা যাওয়ার পর, মহীনের ঘোড়াগুলির একমাত্র সদস্য যিনি ক্রমাগত সময়ের সঙ্গে কথা বলেছেন, সামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েছেন, শিলিগুড়ি টু সোনারপুরের নতুন ব্যান্ডকে আস্কারা দিয়েছেন— তিনি বাপিদা। নানা আয়োজনে গান ধরার আগে-পরে শুনিয়েছেন— কৈশোরে মণিদাকে কাছে পাওয়ার গল্প। পারিবারিক পরিচিতি, সাংস্কৃতিক বা অর্থনৈতিকভাবে চ্যাটার্জিবাড়ির তুলনায় পিছিয়ে থাকা বাপি হয়ে উঠলেন মণির আত্মজন। রেশনের দোকানের কর্মচারী বাপি মারফত গোপন ঠিকানায় নিষিদ্ধ দেশব্রতী পত্রিকা পাঠিয়েছেন মণি। সুন্দরবনের গোপন ডেরায় সঙ্গী সেই বাপি। জেলের দিনগুলিতে বিড়ি ও গিটার পৌঁছতেন সেই বাপিই। এ ছায়া, এ সখ্যতা, এই বন্ধুত্ব চিনতে সারল্য দরকার। মহীনের নির্মাণে এই যাত্রা সহায়ক। গানে গানে সময়ের প্রশ্ন ও জিজ্ঞাসা আঁকা। মণির সঙ্গী বাপি এসব জানতেন। মরার আগের দিন পর্যন্ত যা থেকে বের হতে পারলেন না। মহীনের বাকি সদস্যরা নতুন পেশাজীবনে অভ্যস্ত হয়েছেন নিজেদের যোগ্যতায়। মহীনের গান গাওয়া ও শোয়ের দিনগুলি তাঁদের কাছে সুখস্মৃতি। বাপিদার কাছে উল্টো। যেন নিজেই নিজেকে বলছেন “মিউজিক মাস্ট গো অন।”

 

আট.

স্বাধীনতার আন্দোলন বা সত্তর দশক হোক বা সমকাল, আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতি করার দায় কম না। এক সন্তান গোপন রাজনীতিতে গেলে (বা গোল্লায় গেলে), পরের সন্তানটিকে সুরক্ষিতভাবে বড় করার প্রবণতা বাড়ে। মহীনের ঘোড়াগুলির গৌতম চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর সহযোগী তাপস দাস ছাড়া কেউ রাজনীতির লোক ছিলেন না। দল ভাঙার পর, বাপিদা ছাড়া সকলেই পেশাসফল। সত্তরের সুখস্মৃতি ও যাপনে স্বাভাবিক ফারাক আছে। নানা অনুষ্ঠানে ওঠা প্রশ্ন ও বিতর্কে আমি এই ফারাকটুকুই দেখেছি।

আকৈশোর মণিদাকে হিরো হিসেবে পাওয়া, তাঁর গানের মুহূর্ত, আত্মগোপনের দিন, জেলের দিনগুলি— সবকিছু যেন মঞ্চে বসে দেখতে পেতেন বাপিদা। তাঁর মণিদা, তাঁর মহীন আসলে অন্তহীন। স্রেফ পারিবারিক বা জীবনের পাঁচটা-দশটা বছর নয়। আসরে বসলে, জড়ো হলে, সুর ধরলে— তাঁর মহীন জাগ্রত হত। মিশে যেত সত্তর বা সমকাল। জীবনানন্দের শব্দবন্ধ, হিরণ মিত্রের ছবি, সঙ্গে গোনাগুনতি কিছু গান, যা দুই বাংলার স্পিরিট হয়ে উঠেছে, গত একদশক বাপিদা সেই স্পিরিটে জুটিয়েছেন অন্তরঙ্গতা। অজস্র তরুণের সঙ্গে জুড়ে থেকেছেন।

যাপনহীন, মগ্নতাহীন সুখস্মৃতি প্রশ্ন তুললেও, শ্রেণির ফারাক বুঝিয়ে দিয়েছে— বাপিদা জীবিত। সেই অন্তহীন মহীনের স্পিরিট। স্মৃতিকাতর প্রতিষ্ঠান হতে চাওয়া প্রবীণের দল মন খুলে দেখলেনই না— বাপিদা অসুস্থ শরীরে সভায় বা আয়োজনে নতুনের দিকে আঙুল তুলে বলছেন— “তুইও মহীন, আমরা সবাই মহীন।”

 

নয়.

আসলে এ এক অতি সাধারণ, সরল, ফূর্তিবাজ মানুষের গল্প। সম্ভবত একমাত্র বাপিদাই বলতে পারতেন, তাঁর ‘পেশা মহীন’। না, এর বাইরে তাঁর শেষমেশ কিছু করার ছিল না। এটুকু করতে, নতুনদের সঙ্গে মিশতে, উজাড় হতে— গত একদশক বাপিদা ছাড়া মহীনের আর কাউকে দেখিনি। ২৫ জুন, তাঁর সেই সারল্য, প্রবহমান থাকাকেই গানে-গানে সাজালেন তাঁরই বন্ধুরা। এই গান-মিছিল ‘বাপিদার একান্ত অর্জন।’ হিরণ মিত্র সঠিকই বলেছেন— “বাপি একটা ঘটনা। যে সম্মান ও ভালবাসা বাপি পেল, তা অনেকের ঈর্ষার কারণ। ওকে প্রমাণ ছাড়া মিথ্যাবাদী বলা সহজ কিন্তু যেভাবে ও মহীনের মশাল তুলে ধরল, তার বিরোধিতা সহজ না।” আমি অবশ্য হিরণ মিত্রের কথার রেশ ধরে বলব, যারা বাপিদাকে মিথ্যাবাদী বলছেন, মানে যাঁরা সুখস্মৃতি, মানে যাঁরা থেমে গেছেন কয়েক দশক আগেই, তারা আদতে প্রবাহের বাইরে।

হিরণ মিত্র ও তাপস দাস

 

দশ.

এ লেখা লিখতে লিখতে তাপস দাস মানে বাপিদার স্মরণে কলকাতার রবীন্দ্রসদন, বর্ধমানের কার্জন গেট, আসানসোলের রবীন্দ্র ভবনে বাপিদার স্মরণে জমায়েত হয়েছে। তাঁর চিকিৎসায় সাহায্যের জন্য ঢাকার আয়োজন স্মরণানুষ্ঠানে বদলে গেছে। কলকাতায় আরও আয়োজনের প্রস্তুতি শুনতে পাচ্ছি। নতুন ঘটনা তো বটেই! ওই তো হাতে গোনা কয়েকটা গান— কেমন নিজের মতোই উজ্জ্বল! কবেকার মহীনের ঘোড়াগুলির গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের মত সহকারী, সহযোগী, বন্ধু তাপস দাসও উজ্জ্বল! কেন? কেন?

বাপিদার স্মরণে জমায়েত। বর্ধমান।

মহীনের ঘোড়া মানে প্রশ্ন করা, অনেক কিছু বদলের স্বপ্ন, হিসেব ভাঙার আস্কারা, সাবলীল ‘না’ বলতে পারা। দল করুন বা কোম্পানি, কৃষ্টি ভদ্রলোকের হোক বা অভদ্রজনের, গান-সম্পত্তি পারিবারিক হোক বা সমষ্টির, মহীনের ঘোড়াগুলি জনমানসে যা, তা হয়ে উঠতে গেলে বাপিদাও হতে হয়। পক্ষ নিতে হয়। সব থেমে গেলে, বড় বেয়াকুব সময়ে মনে করিয়ে দিতে হয়— “মিউজিক মাস্ট গো অন”।

বাপিদা লাল সেলাম। হ্যাঁ, বাপিদার শেষ যাত্রায় নানা গানের ভিড়ে কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনালও ছিল। বুকে ছিল লাল শালু।