Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

ওয়েরউল্ফ অথবা…

সায়নী ঘটক

“Twilight” কিংবা “underworld” সিরিজের সৌজন্যে ওয়েরউল্ফ নামটা প্রথম শোনা নয়। বিদেশে ওয়েরউল্ফ বহু চর্চিত বিষয়। এবং তাবড় তাবড় সিনেমা নেমে গেছে। “আমেরিকান ওয়েরউল্ফ ইন লন্ডন”, “হাউলিং”, “সিলভার বুলেট” যাই বলুন। আমাদের মহেশ ভাটও নামিয়েছিলেন রাহুল রয়ের “জুনুন”! ওয়েরউল্ফ আছে কি নেই সে এক তর্কসাপেক্ষ ব্যাপার।

মধ্যযুগের ইউরোপে “ওয়েরউল্ফ” কনসেপ্টটি প্রথম চালু হয়। বিভিন্ন লোককথায় ছড়িয়ে পড়ে ওয়েরউল্ফ-এর গল্প!

শুধু লোককথা নয়, প্রমাণ দলিল রয়েছে এমন একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা বলব আজ।

আমেরিকার জর্জিয়ার ইসাবেলা বার্টের গল্প!! গল্পটি বিশ্বাস না হলে তার সমাধি দেখে আসতে পারেন।
১৮০০ খ্রিস্টাব্দে জর্জিয়ার “ওয়েরউল্ফ” বহু মানুষের অনিদ্রার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ধনী বার্ট পরিবারের ইসাবেলা ছোটবেলা থেকেই শান্ত নম্র স্বভাবের। পিতৃবিয়োগের পর হোস্টেলে কিছু বছর কাটিয়ে সে যখন নিজের বাড়ি ফিরল তখন থেকেই এই গল্পের শুরু!

ক্রমশ ক্ষীণকায় হতে থাকা, অনিদ্রার বশবর্তী ইসাবেলাকে নিয়ে মার চিন্তার শেষ ছিল না। ক্রমশ ইসাবেলার মা বুঝতে পারেন, রাতে ইসাবেলা পাশের জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়। তিনি ইসাবেলাকে জিজ্ঞাসা করলেও সঠিক উত্তর পাননি, কারণ ইসাবেলার মনেই থাকত না।

ইসাবেলার চেহারায় পরিবর্তন শুরু হয়, দাঁত আরও তীক্ষ্ণ, শানিত, শরীরের সর্বস্থানে অবাঞ্ছিত রোম বেরোতে থাকে।

এই সময়তেই আর একটা ঘটনাও শুরু হয়, তা হল গ্রামের বিভিন্ন স্থানে গবাদি পশুর রহস্যজনক মৃত্যু। অনেক পরিকল্পনা করে দলবদ্ধভাবেও যখন গ্রামের মানুষরা সেই অজানা খুনি জীবটার কোনও সন্ধান করতে পারল না তখন তারা এক বৃদ্ধ কালা জাদুকরের শরণাপন্ন হল। তিনি সব দেখে শুনে বললেন, এ কোনও সাধারণ জন্তুর কাজ নয়, এ “ওয়েরউল্ফ”!

এক পূর্ণিমায় সমস্ত গ্রামবাসীরা ওই বৃদ্ধ কালা জাদুকরের পরামর্শ মতো রুপোর ক্রুশ গলিয়ে বুলেট বানিয়ে চলল ওই অধরা নরপশুটির সন্ধানে।

 

বেশ কিছুদিন নিষ্ফল চেষ্টার পর একদিন চাঁদনী রাতে তারা দেখতে পেল সেই পশুটিকে, মানুষের সমান লম্বা, দু’পেয়ে এক অদ্ভুত জীব। গুলিবিদ্ধ করা মাত্র যন্ত্রণায় লুটিয়ে পড়ে জঙ্গলের দিকে ছুট মারল।

চাষীরা যখন উৎসবে মত্ত সেই সময় এমিলির মা ঘুম থেকে থেকে উঠে পড়লেন। কন্যার শূন্য শয্যার রহস্য তিনি জানতেন, একটি লণ্ঠন নিয়ে চললেন জঙ্গলে। গুলিবিদ্ধ অচেতন রক্তাক্ত কন্যাকে দেখতে পেলেন, এবং রক্তপাত বন্ধ করবার ব্যবস্থা নিলেন। চিকিৎসকের বন্দোবস্ত করে সুস্থ করে তুললেন এমিলিকে। গ্রামে গঞ্জে ফিসফিসানি হলেও ধনী বার্ট পরিবারের বিরুদ্ধে যাওয়ার সাহস গ্রামবাসীদের ছিল না। এমিলিকে প্যারিসে পাঠিয়ে দেওয়া হল।

অবিশ্বাস্যভাবে সেদিন থেকেই কিন্তু উৎপাতের অবসান ঘটল। তার বহু বছর পর এমিলি ফিরে এসেছিলেন। জমিদারিও সামলেছিলেন, স্বাভাবিকভাবেই তার মৃত্যু হয়। গ্রামেই সমাধিস্থ করা হয়। তার সমাধি ফলক বলে “Thy form alone is all, thank God, That to the grave is given; For is known thy soul the better part, Is safe, yes safe, is heaven.”

প্রপিতামহ এই গল্প নাতি নাতনিকে শুনিয়ে শুনিয়ে বড় করতেন। সেইভাবেই কোনও এক সময় এই ঘটনা দেশকালের সীমানা অতিক্রম আমার কাছে এসে পৌছাল।

এই ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের ভার অনেকেই নিয়েছেন, কেউ কেউ বলেছেনও নেহাতই কোনও বন্য পশুর প্রকোপ ছিল, প্যারিসে এমিলি কোনও আত্মীয়ের কাছে গেছিলেন। এমিলির এই ঘটনা Nancy Roberts-এর “Georgia Ghosts”, Jim Miles-এর “Weird Georgia”, এবং Dr. Alan Brown-এর “Haunted Georgia” বইয়ে স্থান পেয়েছে।

তবে আমি একটাই কথা বলব, এমিলির সমাধি এখনও আছে। লোকমুখে প্রচলিত, এমিলি পূর্ণিমার রাতে এখনও “ওয়েরউল্ফ” রূপেই ঘুরে বেড়ায়। তার সমাধিস্থল দেখতে যেতেই পারো, কিন্তু সিলভার বুলেট নিতে ভুলো না!!