Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

এলা বোস

তিনটি কবিতা

 

অনুমতি

দ্যাখো, তোমার অনুমতি নেব বলে
কেমন 
পথের মাঝখানে এসে দাঁড়িয়ে আছি
ওই দিকে হিজল পাতায় ছাওয়া 
ঘোমটা মাথায় আমার একরত্তি ঘর
আর এদিকে তোমার খুলে রাখা চটি 
আর কয়েকটা ভিজে সন্ধে
চোখে চোখে অনুমতি নামলে আমিও 
আমার চটি জোড়া বাইরে রেখে
হিজলের গন্ধে মিশে যাব
অন্যদিকে বেপরোয়া হাওয়া…দুরন্ত সম্ভাবনায় 
পাড় ভাঙছে যখন তখন 
এতকিছু শুধুই কি অঞ্জলি চিহ্ন?
বোঝাবুঝি নয় বলছ?

সেই ছোট্টটি থেকে,
বাইরের লোক খেতে বললেও 
মার চোখে অনুমতি চাইতাম…
কাউকে না বলে 
এক পা ও বাড়ি থেকে না- বেরোনো মেয়ে আমি 
কারুর অনুমতি না নিয়ে কক্ষনো সরে দাঁড়িয়েছি?
যতদূর দেখা যায়, চেয়ে থেকে বলেছি,
এবার তবে আসি?
সেই মেয়ে কি আর, তোমায় না বলে যেতে পারে?
এখনও সমুদ্রের গর্জনে কান পেতে
অবেলায় ছেঁড়া ঘুড়ির রাজ্যে দাঁড়িয়ে আছি
অনুমতি দাও যদি,
নেমে যাব দ্বীপে অথবা কোলাহলে ।।

 

কথামালা

কথা ১

অনুবাদ করব না অসুস্থতার
অবশ মনের সমস্ত দুর্বলতা জুড়ে পড়ে আছো তুমি
যা আসন্ন তার জন্য খোলা আছে দ্বার
পাখির নির্জীব পাখনার মতো নির্বাক নিরাকার

কথা ২

আরও আশ্চর্য হই, না দেখেও যখন
আরও বেশি দেখি
না শুনেও শুনি
উত্তর না পেয়েও বারবার চিঠি লিখি
পাওয়া শব্দটাই বড় বাড়াবাড়ি,
তবু এমন ভেসে যাই উল্টো স্রোতে
বয়সের খোলস ত্যাগ করে……
ইচ্ছে তো করে আগের মত পরিপূর্ণ এক
দাম্ভিক নারী হতে
সেই থেকে দেয়ালের দিকে ফিরে রাতভোর …

কথা ৩

কেউ কোত্থাও নেই
রাত একা জেগে আছে পূর্ণিমা দেখবে বলে
জমকালো বৃষ্টির কালো মাখে আকাশ
এসব দিনে অপরিনত মনে হয় নিজেকে
খুব চাই মাথায় কেউ হাত বুলিয়ে দিক,
জানলার পাল্লাটা টেনে, চাদরটা টেনে দিক
পরম মায়ায়
আমার আর ঈশ্বরী হয়ে ওঠা হল না এ জীবনে…

কথা ৪

বয়স বাড়ছে
এত দিক বদলের হাওয়ায় স্থবিরতা আসে
একটু হেঁটে ছাতিমতলায় জুড়োই
সান্ত্বনাহীন উদ্যমবিহীন একটা গতি
পুনঃ পুনঃ শূন্য থেকে শুরু

কথা ৫

হৃদয় জাগে এখনো মধ্যরাতে
স্পষ্ট আলোয় দেখব বাধা বিপত্তি ফাটলের দাগ
সরে যেতে বাধা নেই,
এখানে মহাশূন্য ওঁত পেতে আছে
কতদূরে যেতে পার কতবার
আমিও তো দেখি …

নিথর

এখন একটু বসে জিরিয়ে নেব।
ঘাড় শক্ত হয়ে আছে।
রগের শিরা দপদপ করছে।
বাইরে গনগনে রোদ
ছেলেবেলা তো দেখতাম
মেঘলা দিন আমার শত্রু
অথচ
রাগ পড়ছে না 
“খেলা খেলা সারা বেলা ……”
অথচ
এমনটা মোটেও কথা ছিল না
“কথা” কি আদতে কিছুই ছিল?
………

দড়ি কলসী জোটে না তোর?
কোথায় নামালি নিজেকে?
সুড়ঙ্গ জানে পোড়ো বাড়ির রাস্তা
কিন্তু, সুলক্ষণা হাওয়া ইশারা না করলে
তার পথ দেখানো চলে না
কাজেই
দড়ি কলসীর কাছে ফিরে যাচ্ছে রাগ।