Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

লাইব্রেরি, রং খেলো

তৃষ্ণা বসাক

 

লাইব্রেরি, পান করো।
শীত গেছে, এবার বসন্তকে পান করো।
তোমার সমস্ত বই পাঠ্য, কিন্তু অপেয়।
তুমি বসন্তকে পান করো,
ওর অধরে যে লীলা জমেছে, এক চুমুকে তুলে নাও।
তোমার বইগুলো পলাশ চেনে না, কুসুম চেনে না।
ব্লাউজের বুকে গুঁজে রাখা কলম চেনে না…

 

আগেও ওরা অনেক লাইব্রেরি পুড়িয়ে দিয়েছে, এখনও পোড়াচ্ছে, ভবিষ্যতেও পোড়াবে,
আমি এর মধ্যে অনেক কষ্টে একটা অদাহ্য লাইব্রেরি খুঁজে পেয়েছি।
বইগুলো কেউ হ্রদ, কেউ নদী, কেউ বা সমুদ্র – কিছুতেই আগুন ধরে না,
আমি যখন ইচ্ছে ঝাঁপ দিতে পারি,
এ ভারী মজার লাইব্রেরি,
যেখানে আসার সময় ব্যাগে সুইমিং কস্টিউম নিয়ে আসতে হয়।
আমি ভাসতে ভাসতে পড়ি
ডুবতে ডুবতে পড়ি
সাঁতারের চিৎ, উপুড়, প্রজাপতি, এমনকী প্রণয়-রুদ্ধ ভঙ্গিমাও আমার শেখা হয়ে যায়।
লাইব্রেরিতে তো লোকে শেখার জন্যই আসে, আমিও এসেছি।
এতটাই নতশির যে প্রবেশের দরজাই প্রথমে খুঁজে পাচ্ছিলাম না,
তারপর দেখি, কোনও দরজাই নেই
এটা একটা ওপেন লাইব্রেরি,
সবুজ সিরাপের মতো ছোট ছোট বনবীথি দিয়ে ঘেরা
তাই অনেকেই প্রথমে ঢোকার রাস্তা খুঁজে পায় না,
আমি পেয়েছি।
আমি অনেক দূরের এক গ্রহ থেকে হাঁটতে হাঁটতে
এখানে এসেছি পাঠ করে তৃপ্ত হব বলে,
আমাকে নেবে না, লাইব্রেরি?

 

লাইব্রেরি, রং খেলো
শরীর, শরীর সাজিয়েছি,
প্রতিটি গাছের ডালে 
ঝুলিয়েছি অব্যর্থ নিশানা,
একবার ছুড়ি যদি, মুহূর্তে অন্ধ হয়ে যাবে,
একবার ছুড়ি যদি, জানু পেতে চাও সমর্পণ,
ডালে ডালে ঝোলে শাড়ি
হলুদে হলুদ হয়ে যায়,
বনময় এ হলুদে আমাদের কী-ই বা যায় আসে?
আমরা খেলতে আসি রং খেলা,
বইয়ের শরীরে
সামিল গোলাপ ফুল, চাপা পড়া পাতা
ফেলে দিয়ে রং দেব,
অক্ষরের চোখের নীচে জমা কালি, উৎকীর্ণ বেদনা,
সব আজ ঢেকে দেব রং দিয়ে, চোরাটান দিয়ে 
বসন্তের নৃত্য খেলো, লাইব্রেরি —
তোমার প্রতিটি ধাপ,
ভোরের আগেই আজ ভরে আছে, হলুদ, হলুদ।