Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

স্বাতী ব্যানার্জীর লেখা

স্বাতী ব্যানার্জী

 

এ চিরাগ বুঝ রহা হ্যায়

 

২০১৭ মাধ্যমিক চলছে। দুর্গাদির আজ তেরো নম্বর ঘরে গার্ড। জলের বোতল আর পেন নিয়ে সহকর্মীর সাথে নির্দিষ্ট ঘরে ঢুকেই মেয়েদের বললেন ব্যাগ বাইরে রেখে আসতে। মোবাইল ফোন আনা বারণ ইত্যাদি। প্রথমে পনেরো মিনিট ছাত্রীরা প্রশ্ন পড়ে। তারপর খাতা দিলে লেখা শুরু হয়। অ্যাডমিট, রেজিস্ট্রেশন দেখে সই করছিলেন দুর্গাদি, থার্ড বেঞ্চে এসে বুকটা ধক করে উঠল, বেলা না? বেলা ততক্ষণে প্রণাম করে জিজ্ঞেস করছে, “দিদি ভালো আছেন?” একবুক শান্তি আর আশীর্বাদ নিয়ে দুর্গাদি বললেন, “ভালো আছি রে, তুই ভালো করে পরীক্ষা দে মা।” বেলা ব্যস্ত হয়ে পড়ে লেখায়। হলে কথা বলা বারণ। শুধুই লেখার খসখস শব্দ। পায়চারী করতে করতে বছর চারেক আগের এক পরীক্ষার কথা মনে পড়ে যায় দুর্গাদির।

সেদিন ছিল অ্যানুয়াল পরীক্ষা। ক্লাস সেভেন আর এইটের ছাত্রীদের বসানো হয়েছে এক নম্বর রুমে। গার্ড দিচ্ছেন দুর্গাদি আর বীণাদি। সেভেনের বেলা অনেকক্ষণ চুপ করে বসে আছে। কিছুই লিখছে না। মুখটা লাল। দুর্গাদি ভাবলেন মেয়েটি বোধহয় কিছুই পারছে না। কেন যে এরা সারাবছর পড়ে না। পায়চারি করতে করতে পিছন দিকে যেতেই হঠাৎ এক অমানুষিক হুঙ্কার আর অন্য মেয়েদের ভীত সন্ত্রস্ত চিৎকার। বেলা উঠে দাঁড়িয়ে প্রচণ্ড কাঁপছে, মুখ লাল এবং এক অপ্রাকৃতিক হুঙ্কার তার মুখে। একটি এইটের মেয়ে চিৎকার করে বলল বেলাকে নাকি ভুতে ধরেছে। এইটুকু উস্কানিই যথেষ্ট ছিল। প্রায় আশি জন মেয়ে সামনের দরজা দিয়ে সব ফেলে বেরোতে চাইল। তাদের হুড়োহুড়িতে অনেকেই পড়ে গেল, দুর্গাদি আর বীণাদিও। অন্যরা তাদের গায়ের উপর দিয়েই চলে গেল। সবাই বেরিয়ে যেতেই দুর্গাদি ধুলো ঝেড়ে, ব্যথাকে পাত্তা না দিয়ে উঠে দৌড়ে গিয়ে বেলাকে জাপটে ধরলেন। হয় হিস্টিরিয়া নয় মৃগী। দুম করে পড়ে গেলে মাথায় চোট পেতে পারে। বেলা তখন সম্পূর্ণ অপ্রকৃতিস্হ, মুখে গোঁ গোঁ শব্দ, দেহে অমানুষিক বল। দুর্গাদির হাত ধরে মুখ লাগায় সে। ছাত্রীরা চিৎকার করতে থাকে যে ডাইনি দিদিকে খাচ্ছে। বীণাদি ভয়ে চোখ বুজে মা রক্ষাকালীকে ডাকতে থাকেন। ইতিমধ্যে বেলা হাতের সমস্ত মাদুলী আর তাবিজ ছুঁড়ে ফেলে। মাত্র কয়েকটা মিনিটেই এত কিছু ঘটে যায়। দুর্গাদি একা বেলাকে ধরে রাখতে পারেন না। এইসময় খবর পেয়ে ছুটে আসেন ববিতাদি, সঞ্চয়িতাদি, তৃপ্তিদি। সবাই মিলে জাপটে ধরে বেলাকে দুটো জোড়া লাগানো বেঞ্চে শুইয়ে জলের ঝাপটা দেন। ততক্ষণে বেলা অজ্ঞান। দাঁতে দাঁত লেগে গেছে। ববিতাদি জোর করে মুখে একটা চামচ ঢুকিয়ে দেন। বাড়ির লোক আর ডাক্তারকে খবর দেওয়া হয়।

ডাক্তার বলেন হিস্টিরিয়া। নিয়মিত চিকিৎসা হলে নিরাময় হবে। কিন্তু গ্রামের কুসংস্কারাচ্ছন্ন বাবা মায়ের মতে ওকে ভুতে/ডাইনিতে ধরেছে। অনেক বোঝানো, অনেক উদাহরণ, ডাক্তার এবং সব দিদিমণিদের বোঝানোর পরেও নিজেদের মতে অনড় বেলার বাড়ির লোকজন। তারা ওকে বীরভূমের এক পীরবাবার কাছে নিয়ে যাবেন। তিনি ঝাঁড়ফুক করে ওই ভুত/ডাইনিকে তাড়াবেন। তারা জমি বিক্রি করে পুজোর খরচ জোগাড় করবেন। দুর্গাদি সহ সব দিদিরা অনেকবার বোঝালেন, সব ব্যর্থ।

বেলা আর স্কুলে আসে না। অন্য মেয়েদের কাছে খবর পাওয়া যায় ঝাঁড়ফুকে কোনও লাভ হয়নি, বরং রোগ আরও বেড়েছে। এখন বেলাকে গ্রামের মন্দিরে শেকলে বেঁধে রাখা হয়। রাতে মায়ের সাথে সে মন্দিরেই শোয়।

আর সহ্য করা যায় না। স্কুলের দিদিরা যোগাযোগ করেন স্হানীয় থানার ওসি আর বিডিওর সাথে। গ্রামের লোক পুলিশ বিডিওর কথা শোনে কারণ নানা সুবিধা পাওয়া যায়। তারা বাড়ির লোকজনকে বোঝালেন। একটু ভয়ও দেখাতে হল। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী এক NGO-র সহায়তায় বেলার চিকিৎসা চলছিল।

সেই বেলা অন্য স্কুলে ভর্তি হয়ে আজ মাধ্যমিক দিচ্ছে। এ আনন্দ দুর্গাদি কোথায় রাখবেন? পরীক্ষার পর বেলা স্টাফরুমে অন্য সব দিদিদের প্রণাম করতে এল। সবাই খুব খুব খুশি। বেলা জানাল সেরে ওঠার পরেও বন্ধুরা তাকে ডাইনি বলে ক্ষেপাত। তাই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সে একটু দূরের স্কুলে ভর্তি হয়। কিন্তু নিজের স্কুলেই সিট পড়বে মাধ্যমিকের তা সে ভাবেনি। খুশিতে ঝলমল করে বেলার মুখ। মন থেকে আশীর্বাদ করেন সব দিদিরা, “মানুষ হও।”

3% of India’s population is mentally retarded.

Among them 33% are children.

In most of the rural schools and some urban areas many of mild and moderate borderline cases of mental retardation are bypassed as dull students or possessed.

14.24 -15 Million children in India need special educational help.

0.75-1 Million children need custodial care that offers habit training and simple socialising experience.

তথ্যঋণ – নেট।
ঘটনা – সত্য।