Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

সৈয়দ হাসমত জালাল

তিনটি কবিতা

দাঁড়ের মর্মর

অদূরবর্তী জলের প্রস্বর শুনি, তাতে অস্তগোধূলির
                              আলো লেগে আছে
আমাদের শতসহস্র তরঙ্গবিধুরতা থেকে
                  শব্দ ওঠে ছলচ্ছল..ছলচ্ছল..
অন্যপারে ঘনছায়া, রাত্রিদেশ, ক্রম-অগ্রসরমান –
আমাকে পেছনে ফেলে এরকম যে-দিনগুলি যায়,
                 দ্রোহ নেই, শস্যগানহারা
অফলপ্রসূ, অন্ধ আকাশের নিচে
তারা আজ মানুষের বুকভরা নীরবতা, নক্ষত্রকুহক
একটি নির্জন পথ তাদের অস্পষ্ট আলোধ্বনি শোনে
                                  স্থির তীরভূমি
আর অন্ধকারে দাঁড়ের মর্মর শুধু, ছলচ্ছল…ছলচ্ছল শব্দে জাগে
                              আকাশের রাত্রিচরাচর

মৃতবৎসা

হত্যার ধ্বনির ভেতর জেগে আছে গ্রামদেশ,
আমাদের অন্যজন্ম থেকে জলের কলকল স্মৃতি ছিঁড়ে
                            উঠে আসা ধানক্ষেত
মৃতবৎসার মতো আজ নিঃসাড় কোল বিছিয়ে রেখেছে –
সেখানে দিনান্তে আষাঢ় ঘনায়, মেঘে মেঘে, বোমায় বারুদে…
শ্রাবণের বুকের ভেতর তবে এমন আগুন
      পাখির ডানার নিচে লুকোনো অস্ত্রের ফিসফাস
কর্ষণরেখা বেয়ে উঠে আসে আমাদেরই কাটা মুণ্ডের
                                হা-হা প্রতিশোধ…
রাত্রি এখানে কালো প্রেতছায়া, ভোর মানে
                          রক্তস্নাত একটি আকাশ
যার নিচে উড়ে যায় একঝাঁক আগুনমরালীর গ্রীবা…

প্রাণ

রৌদ্র জ্বলছে, একটি বিশাল চিতা – সাজিয়ে রেখেছে
                        ভরা শরতের নীলাকাশ
পুড়ে যাচ্ছে আমাদের চামড়া ও চুল, সবুজ পতাকার মতো ধানক্ষেত
পাখিদের ডানা থেকে যে স্ফুলিঙ্গ ঝরছে, তারাই গড়েছে
দীর্ঘ ফিতের মতো আগুনের পথ, যার প্রান্ত ধরে
                   উঠে আসছে জন্ম-জন্মের সবুজ ক্ষুধামর্মর

এ তবে মহামৃত্যুর দিন, তবু মাটি ছেড়ে কোথাও যাবো না
অঞ্জলি ভরে যদি জল তুলে আনি, তৃষ্ণার্ত গ্রীবা তুলে
                এগিয়ে আসবে পশু ও পাখিদের কঙ্কাল
মৃত্যু জ্বলছে, অশ্রুর শীতলতা দিয়ে তাকে কি নেবানো যাবে!
হাড়ের ভেতরে যে অনিঃশেষ বাতাসের চলাচল
তারা শোকের গুঞ্জন হয়ে ঘুরে ঘুরে উঠছে অনন্তে
যেখানে ভরাদুপুরের আর্ত পৃথিবী এক বিশাল ভ্রমর হয়ে
                        খুঁজছে মর্মমধু, গহন কুসুমপ্রাণ