Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

বিন্ধ্য : এক উচ্চতার গল্প…

চার নম্বর নিউজডেস্ক  

 

ওরা এবং আমরা। এই বিভেদ চিরন্তন। প্রতিবন্ধকতাযুক্ত ব্যক্তিদের সহানুভূতির নজরে দেখতেই আমরা অভ্যস্ত। কিন্তু সমকক্ষ হিসেবে দেখার কথা ভাবি কতজন? ভাবলেও, সেদিকে কোনও পদক্ষেপ নেওয়ার সাহস কতজনের থাকে?

থাকে। আলো, সাহস কোথাও না কোথাও লুকিয়ে থাকে। বেঙ্গালুরুর এক দম্পতি, পবিত্রা এবং অশোক, গত বারো বছর ধরে তাঁদের বিপিওতে এইরকম প্রতিবন্ধকতাযুক্ত মানুষদের চাকরির সংস্থান করে চলেছেন। শুধু চাকরি নয়, এই দম্পতি তাঁদের কোম্পানির কর্মচারীদের দিয়ে চলেছেন সম্মানের সাথে বেঁচে থাকার উপায়। ২০০৬ সালে দুটি কর্মচারী থেকে শুরু করে, আজ প্রায় ১৬০০ লোক কাজ করে বিন্ধ্য এন্টারপ্রাইজের অফিসে। এদের মধ্যে ৬২% প্রতিবন্ধকতাযুক্ত মানুষ। বিন্ধ্য এন্টারপ্রাইজ। পুরো নাম বিন্ধ্য ই-ইনফোমিডিয়া। রাজাজিনগর ইন্ডাস্ট্রিয়াল টাউন। বেঙ্গালুরু। আজ অবধি প্রায় ৯০০ এই ধরনের মানুষকে কর্মসংস্থান দিয়েছে এই বিন্ধ্য এন্টারপ্রাইজ। পবিত্রা নিজে নারীদের অবস্থাটাও জানেন। বোঝেন। প্রতিবন্ধকতাযুক্ত কর্মচারীদের এই হিসেবটা ছাড়াও আরেকটি আলোর দিক, বিন্ধ্যর ৭০ শতাংশই মহিলা। নারীশক্তি। বিন্ধ্য নামটাও তো পবিত্রা এবং অশোকের মেয়ের নামে রাখা।

শুরুটা? কষ্টে, চোখের জলে, সুখে মনে করতে পারেন দম্পতি। পবিত্রার কাছে এক যুবক তার হুইলচেয়ারে বসে চাকরির খোঁজে আসে। বিন্ধ্যর অফিস ছিল ফার্স্ট ফ্লোরে। ছেলেটি কাজের কথা বলে চলে যাওয়া ছাড়াও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল অন্য একটি ব্যাপারে। সিঁড়ি দিয়ে সে দোতলায় উঠেছিল পবিত্রার কোনওরকম সাহায্য ছাড়াই। “দেখবেন ম্যাডাম, মনের জোরটাই আসল। যদি উঠতে কষ্ট হয়, মুখের সামান্য বিকৃতি হয়, বলবেন আমায়।” পবিত্রা অসম্ভব বিস্ময় আর আবেগে দেখেছিল ছেলেটি একফোঁটাও কাঁপেনি। তার কথা শুনে এবং তার অদম্য মনোবলে অনুপ্রাণিত হয়ে এই দম্পতি তখনই এই অভিনব সিন্ধান্ত নেন। অবশ্য শুরুতেই অশোকের ইচ্ছে ছিল স্থিতিশীল কোনও এক ব্যবসায় নামা। আর পবিত্রার নজর ছিল সামাজিক উন্নয়ন। ছেলেটি আসার পর মিলে গেলেন দম্পতি। ব্যবসাও হবে, সমাজও গড়বেন তাঁরা। বিন্ধ্য উচ্চতা বাড়াল। শুরুর দিকে? কোনও কষ্ট? লড়াই? ক্লায়েন্ট আসত না। দম্পতি বললেন কর্মচারীরা কেউ ছাড়েনি বিন্ধ্যকে। বলেছিল, শুধু মাথা খোঁজার ঠাই দিন, তাহলেই চলবে। কনফারেন্স রুম সন্ধে সাতটার পর থাকার জন্য ব্যবহৃত হল। যাদের কাছেই বাড়ি, তারাও খাবার, দরকারে ওষুধ দিতে রাতে চলে আসত বিন্ধ্যর অফিসে। এভাবেই হাঁটা। কিন্তু ক্লায়েন্ট কোথায় শুরুতে? কে চেনে বিন্ধ্যকে? মেলের পর মেল। লেগে থাকা। জেদ। একদিন উইপ্রোর নজরে। তারপর পিছু ফেরার গল্প শেষ। একে একে ভিডিওকন, সেনেইডার। আলো, আলো, আরও আলো।

আমাদের দেশে প্রতিবন্ধকতাযুক্ত ব্যক্তির সংখ্যা ২.৬৮ কোটি। কিন্তু তাঁদেরকে চাকরি দেওয়ার লোকের সংখ্যা নগণ্য। পবিত্রা বা অশোক সে দলে পড়েন না। তাঁদের কাছে তাঁদের সংস্থা আসলে একটি বিশাল সুখী পরিবার, যেখানে প্রত্যেকে প্রতি মুহূর্তে চেষ্টা করে চলেছে একে অপরকে আত্মবিশ্বাস ও সম্মানের সঙ্গে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকতে সাহায্য করতে। ন্যূনতম যোগ্যতা কী বিন্ধ্যতে ঢুকতে? “কিচ্ছু না, মানসিকতা। অ্যাটিচিউড। ট্রেনিং করে, পড়ে, ওরা তো নিজেরাই ওদের তৈরি করে নেবে।” দম্পতির কথায়। কঠিন কথা কত সহজে বলা।

হায়দ্রাবাদের ১০ একরের আইটি ক্যাম্পাস খুলছে বিন্ধ্য, যার ষাট-সত্তর না, একশ শতাংশই হবে প্রতিবন্ধকতাযুক্ত মানুষদের নিয়ে। পুনেতেও। অশোকের হিসেবে সব ক্যাম্পাস মিলে ২৫০০ ছাড়াবে কর্মচারী সংখ্যা।

আলো, উচ্চতা, জেদ, সাফল্য। বিন্ধ্য পথ দেখাক বাকিদের…

ঋণস্বীকার :

বিজনেস লাইন, দ্য হিন্দু