Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

মুশিরুল হাসান — একটি ব্যক্তিগত স্মৃতিতর্পণ

সৈয়দ-আলি নাদিম রেজাভি

 

লেখাটি সৈয়দ আলি নাদিম রেজাভি'র ব্লগ Rezavi’s Blast From The Past থেকে লেখকের অনুমতিক্রমে নেওয়া এবং অনুদিত। মূল ইংরাজি লেখাটি নিচে দেওয়া হল।

প্রফেসর মুশিরুল হাসানের মৃত্যুসংবাদ যেন স্মৃতির ওপর জমে থাকা অনেক মাকড়সার জাল সরিয়ে আমাকে নিয়ে ফেলল অর্ধশতাব্দী পেছনে– এমন এক অতীতে যখন আমাদের দুই পরিবারের মধ্যে শুধু আলঙ্কারিক অর্থেই নয়, আক্ষরিক অর্থেও ছিল নৈকট্য। সেই সময় আমাদের ঠিকানা ছিল দেশভাগের সময় পরিত্যক্ত আজহার মঞ্জিল নামে একটা বেশ পুরানো কোঠি, যার ঠিক পেছনেই ছিল একটা বড়সড় দীঘি— হাতিডুবা। লোকে বলত আস্ত হাতিও ডুবে যায়, ঐ দীঘি এত গভীর।

বাড়ির সামনে বেশ খানিকটা পোড়ো জমি, আর তার ওপর দণ্ডায়মান একটা বাড়ির কঙ্কাল। তার পরিচয় ছিল ‘ভুত বাংলা’– সে বাড়ির ছাদ বা দেয়াল মেরামত করতে গেলেই না কি মৃত্যু অবধারিত। তার মালিক এম সি চাগলা ছিলেন নামডাকওয়ালা মানুষ, যিনি নিজে থাকতেন সদ্যনির্মিত চণ্ডীগড় শহরে। ঐ বাড়ি পেরিয়ে একটু কোণা চেপে গিরিমাটি রঙের বিরাট ছড়ানো-ছেটানো হামিদ লজ–নবাব হামিদ আলি খানের (আমি ডাকতাম হামিদ চাচা) বসতবাড়ি। চোখে চশমা, দীর্ঘকায়, রোগা, ঢেউখেলানো ধবধবে দাড়িওয়ালা মানুষটির গলার আওয়াজ ছিল বেজায় জোরালো। আমার স্মৃতি অনুযায়ী সবসময়েই তাঁর পরণে থাকত শেরওয়ানি আর হাতে রূপোর মুঠওলা ছিপছিপে এক ছড়ি।

হামিদ লজের সামনের লনের ধার ঘেঁষে রাস্তা সোজা চলে গেছে চৌরাহার দিকে। চৌরাহাতে যে গুটিকয় দোকান তার বেশিরভাগই দর্জির। একটা কি দুটো হরেকরকম মালের। একটা ছোটমত বেকারিও ছিল। এই বাজার এলাকাটার নাম পরে হয় আমির নিশান– চৌরাস্তার একটা বাড়ির নামে।

একদিকে চৌরাহা, অন্যদিকে হামিদ লজ ছুঁয়ে কোঠি, সেটাই হায়দার ভিলা, একসময় যার মালিক ছিলেন সলমন হায়দারের বাবা (এবং আবদুল্লাহ গার্লস কলেজের ফাউন্ডার প্রিন্সিপাল মুমতাজ আপার স্বামী)। তাঁর থেকে জনৈক মিস্টার সেমুরের হাতফেরত এই কোঠি কেনেন মুশিরের বাবা ডঃ মুহিবুল হাসান, কলকাতা থেকে ফিরে এসে।

সেই সময়কার আলিগড় শহর–ছড়ানো ছেটানো কোঠি, এন্তার খালি জায়গা। সেই শহরের বাসিন্দা আমাদের দুই পরিবারের মাঝে পড়শি হওয়া ছাড়াও অন্য সম্পর্ক ছিল। দেশভাগের আগে আমার বাবা ছিলেন মাহমুদাবাদ এস্টেটের প্রধান লাইব্রেরিয়ান এবং মাহমুদাবাদের শেষ রাজা মহম্মদ আমির আহমেদ খানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এই পরিবারের সাথে আত্মীয়তা ছিল মুহিবুল হাসান সাহেবের।

মুশিরের মা আমার মায়ের বন্ধু ছিলেন, তাই আমরা ওনাকে খালা আর ওনার স্বামীকে খালু ডাকতাম। এমন এক দিনও যেত না যেদিন আমরা ওদের বাড়ি যাইনি, বা ওরা আমাদের বাড়ি আসেনি।

খালু প্রথমে ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটির লেকচারার ছিলেন, পরে এ এম ইউ-তে আসেন। কিছুদিন জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া আর শ্রীনগরে কাশ্মীর ইউনিভার্সিটিতেও ছিলেন। দুটো খুব গুরুত্বপূর্ণ মনোগ্রাফ লেখেন তিনি– একটি বাবর, অন্যটি টিপু সুলতানের ওপর। নিজের নিজের বিষয়ে দুটোই কয়েক দশক ধরে ছিল শেষ কথা। স্টিফেন ডেল-এর বাবর সংক্রান্ত কাজের আগে মুহিবুল হাসানের বাবর-জীবনীর কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না।

খালুর ছিল এক মেয়ে (সালমা বা’জি) আর চার ছেলে– মুজিব, নাজমুল, মুশির আর নাজিব। মুজিব সেইসময় সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছেন, পরে তিনি কর্মসূত্রে পাকিস্তান, আরও পরে ইউ এস-এ যাবেন, এবং সেখানে ইউ এস আর্মি আর ন্যাটো বাহিনীতে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মজীবনের পর রিটায়ার করবেন। তিনি প্রথমে বিয়ে করেন এক কাশ্মীরি মহিলাকে; পরে ওনাদের ডিভোর্স হয়ে গেলে আমার এক বোন আজরার সাথে বিয়ে হয়।

নাজমুল হাসান (বন্ধুমহলে ও পরিবারে সানি নামে পরিচিত) পড়াশোনা শেষ করে জার্নালিস্ট হন। তাঁর শেষ অ্যাসাইনমেন্ট ছিল রয়টার্সের হয়ে ইরান-ইরাক যুদ্ধ কভার করা, ইরাকি ল্যান্ডমাইনের ওপর পা ফেলে ওখানেই তিনি মারা যান। তাঁর স্ত্রী বাবরা রামপুরের মেয়ে, এখন দিল্লিতে মেয়ের সাথে থাকেন।

খালু কলকাতায় কর্মরত থাকার কারণে মুশিরের প্রথমদিকের পড়াশোনা ওখানেই। এখানে এসেই আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটির অধীন এসটি স্কুলে ভর্তি হয়। পরে আলিগড় থেকেই ইতিহাসে গ্রাজুয়েশন ও পোস্ট গ্রাজুয়েশন। ভাইদের মধ্যে (সবার ছোট ভাই নাজিবকে ধরে) মুশির ছিলেন সবচেয়ে বেশি সামাজিক, জনপ্রিয় আর সক্রিয়। ডিবেটে অংশ নিতেন, আমাদের বাড়ি থেকে শব-ই-আসুরার যে মিছিল বেরোতো তাতে সাহিব-ই-বায়াজ হয়ে নউহা পাঠ করতেন, আবার ছাত্র রাজনীতিতেও ছিলেন। একবার এ এম ইউ-র ছাত্রসভা নির্বাচনে ভাইস-প্রেসিডেন্টশিপের জন্য লড়েওছিলেন।

এএমইউ-তে মুশির ও তার বাবা দুজনেই বামমনস্ক বলে পরিচিত ছিলেন। অন্য অনেকের মত মুশিরও পাঠক্রমে ভারতীয় মধ্যযুগের ইতিহাস বেছে নেন এবং অন্যান্যদের মধ্যে মহম্মদ হাবিব, ইরফান হাবিব, নুরুল হাসান আর খালিক আহম্মদ নিজামির মত শিক্ষকদের কাছে পাঠ নেন। তার লেখালিখির এক জায়গায় মুশির আফসোস করেছেন যে সেইসময় আলিগড়ে আধুনিক সময়ের ইতিহাস পড়ানো হত না বললেই চলে। তাঁর ক্ষোভ ছিল যে মধ্যযুগের ভারতেতিহাস সম্পর্কে খুঁটিনাটি সব জানানো হলেও কাছাকাছি সময়ের ঘটনাবলী সম্পর্কে (বিশেষ করে দেশভাগের সময়কার ভারত, আর স্যার সৈয়দ আহমেদ খান সহ বাকি মুসলিমদের রাজনৈতিক ভূমিকা) তাঁকে কিছুই শেখানো হয়নি।

যে সময় মুশির আলিগড়ে পড়াশোনা করছেন, সেই সময়কার ইতিহাসটা ভুলে গেলে চলবে না। পাঁচের দশকেই ভারতের প্রথম প্রধান্মন্ত্রী জওহরলাল নেহরু আলিগড়কে বিশেষ অনুদান দেন মধ্যযুগে ভারতের ইতিহাসের জন্য। তাছাড়া দেশভাগের সময় আলিগড় ইউনিভার্সিটির বেশিরভাগ ছাত্র শিক্ষকই চলে গিয়েছিলেন সদ্যোজাত পাকিস্তানে– সেই ধাক্কার পর তখনও এক দশক কাটেনি। দেশভাগের ক্রস তখন আলিগড়ের কাঁধে চেপে বসে আছে। কাজেই তৎকালীন আলিগড়ে আধুনিক বা সমসাময়িক ঘটনাক্রম সম্পর্কে উপেক্ষাটা বোধগম্য হয়।

প্রফেসর ইরফান হাবিবের কথায় মুশির ছিলেন নিজের সময়ের সবচেয়ে পরিশ্রমী ছাত্র। শুধু ব্যাচের টপার নয়, ক্যাম্পাসের একাধিক সাংস্কৃতিক এবং সাহিত্য ক্লাবের, আবার এস এফ আইয়েরও সক্রিয় সদস্য।

রামযশ কলেজে স্বল্প কিছুদিন কাটানোর পর মুশির কেমব্রিজে যান আর সেখান থেকেই পি এইচ ডি করেন। ১৮৮৫-১৯৩০ সময়কালে ভারতে জাতীয়তাবাদ আর সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিয়ে সম্পূর্ণ  নতুন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লেখা তার গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হবার পর আরও অনেকগুলি এডিশন বেরিয়েছে। আলিগড়ে আধুনিক সময় ও মুসলিমসংক্রান্ত প্রশ্ন চর্চায় যে ঘাটতি ছিল, পরবর্তী সময়ে বিশেষ করে দেশভাগ নিয়ে গভীর ও অনুসন্ধানী  গবেষণা দিয়ে মুশির যেন তা পুষিয়ে দিতে চেয়েছেন। তাঁর এই কাজগুলি পৃথিবী জুড়ে প্রশংসিত হয়েছে।

কেমব্রিজ থেকে ভারতে ফিরে মুশির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে তার দীর্ঘ ইনিংসের শুরুয়াত করেন–একসময় যা ছিল তাঁর বাবারও কর্মক্ষেত্র। একজন নেহাৎ ছোকরা প্রফেসর হিসেবে শুরু করে আস্তে আস্তে সেখানকার ভাইস চ্যান্সেলর রূপে দেখা দেন তিনি। মুশিরের কাছে জে এম আইয়ের যতখানি ঋণ তত বোধহয় আর কারো কাছে নয়ঃ স্রেফ উঁচুদরের মাদ্রাসা থেকে তাকে বিশ্বখ্যাত এক ইউনিভার্সিটিতে বদলে দেন মুশিরই। এখন বিখ্যাত সেখানকার  সেন্টার আর ইনস্টিটিউটগুলির বেশিরভাগেরই স্রষ্টা তিনিই। ক্যাম্পাসের আধুনিকীকরণ, অ্যাকাডেমিক উৎকর্ষ বাড়ানো, নতুন নতুন বিল্ডিং আর পরিকাঠামো গড়ে তোলা– মুশির ছিলেন জামিয়া-র শাহজাহান।

তার মৃত্যুর খবর পেয়ে মনে আসছে কি অদ্ভুত ভিসি-ই না ছিলেন তিনি! আমি ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষী, এমন দু একটি ঘটনার কথাই শুধু বলব। আলিগড়ে ভিসি-রা যে রাজকীয় কায়দায় বিরাজ করেন তার সাথে পরিচিত হওয়ার ফলে এই সব ঘটনাগুলো আমার শুধুই মজাদার লাগে নি, যারপরনাই বিষ্মিতও হয়েছিলাম। এ এম ইউ-তে তো একজন ভিসি মানে যেন খুদা-এ-কুল–যাকে দেখে স্বয়ং বলবনও হিংসে করবে।

একবার আমি গিয়েছিলাম আমার বড় জামাইবাবু রিজওয়ান হুসেইনের সাথে দেখা করার জন্য–তিনি তখন জে এম আই-তে একজন ভিজিটিং প্রফেসর। আমার বোন নজমা (বাজ্জো) আর তিনি থাকতেন ইউনিভার্সিটির অতিথিশালার একটা ঘরে। তো, আমি দেখলাম মুশির ক্যাম্পাসের যত্রতত্র দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন, সঙ্গে কোনও অনুচর-লোকজন কিচ্ছু নেই– দিব্যি একাই স্বচ্ছন্দে হেঁটে বেড়াচ্ছেন!

আর একবার গিয়েছি একটা সেমিনারে, দেখি মুশির নিজের অফিস থেকে বেরিয়ে আসছেন। আমাদের লনের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ঘুরপথ না ধরে সোজা বেড়া টপকে একগাল হাসি নিয়ে আমাদের দিকে এগিয়ে এলেন। আর একবার মনে আছে কিছুতেই লাইন ভেঙে খাবারের প্লেট নিতে রাজি হননি–সবার সাথে লাইনে দাঁড়িয়ে নিজের পালা এলে তবে নিয়েছিলেন। তাও কোথায়? না, নিজের ক্যাম্পাসের এক অনুষ্ঠানে, তিনি কি না যেখানকার ভি সি!

এই নম্রতার অভাব তাঁর মাঝে কখনো দেখিনি। মনে পড়ে, একটা সময় আমাকে প্রায়ই দিল্লি যেতে হত। মুশিরের বড়দা তখন ন্যাটো বাহিনীর সাথে যুক্ত। তাঁর সাথে আমার যে বোনের বিয়ে হয়েছিল তার জার্মান ভিসার জন্য অপেক্ষা চলছে। জেএনইউ থেকে মুশিরের স্ত্রী জোইয়া-কে যে বাড়ি দেওয়া হয়েছিল, মুশির তখন সেখানেই থাকতেন। আর মুশিরের আদেশে আমাদেরও (আমি এবং আমার এক বন্ধু) থাকতে হত সেই বাড়িতেই।  আমাদের খাওয়া-দাওয়া আদর আপ্যায়নের যাতে তিনি নিজে তদারকি করতে পারেন! এবং সন্ধেবেলায় আমাদের সাথে বসে আলিগড়ের গল্প শুনতে পারেন!

মুশিরের মাঝে কোনওদিনই কোনও হামবড়াপনা বা ভান ছিল না। তাঁর সাথে কথা বলে বোঝা যেত না যে এই লোকটাই পঞ্চাশটার ওপর বইয়ের লেখক, একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অথবা, জামিয়া ছাড়ার পর, ভারতের ন্যাশনাল আর্কাইভসের প্রধান। একবার আমাকে ন্যাশনাল আর্কাইভসে যেতে হয়েছিল কিছু নথিপত্র প্রয়োজন ছিল বলে। তখনও তাঁর ভণিতাহীন সহজ ব্যবহার চোখ টেনেছে। অধস্তন কর্মীদের সাথে তিনি যেরকম সহজ ব্যবহার করতেন সেরকমটা সাধারণত চোখে পড়ে না।

আলিগড়ের সাথে যুক্ত যে কোনও কিছু সম্পর্কেই তাঁর মনে ছিল একটা নরম জায়গা। মুখে বারবার বলতেন আলিগড় নেহাৎই সীমিত ধ্যানধারণার ‘স্মল টাউন’, এ এম ইউ-এর লোকজন হল ‘কুঁয়ে কে মেনঢক’, ইত্যাদি। কিন্তু এসব বিশেষণ শুনে ঠকে গেলে চলবে না। নিজের ‘আলমা মেইটার’ সম্পর্কে তাঁর ভালোবাসা আসলে এতটাই গভীর ছিল যে তার সাথে জড়িত কাউকেই তিনি অবহেলা করতে পারতেন না– তা সে আমির নিশানের কোনও দর্জিই হোক অথবা আলিগড়ের কোনও ছাত্র, গবেষক বা শিক্ষক। কারো কোনও সাহায্যের দরকার হলে তার জন্য মুশির থাকতেন তৈরি।

আমাদের মত কমবয়সী যারা মুশিরকে শ্রদ্ধার চোখে দেখতাম, তাদের মাঝে মুশির খুব ভালোবাসতেন নজফ হায়দারকে, যে নিজে এখন জেএনইউ-এর প্রফেসর। অ্যাকাডেমিকসের দিক থেকে তাঁর সাথে আমার কোনও সরাসরি সম্পর্ক ছিল না। মধ্যযুগের ইতিহাস, যার চর্চাতে আমি নিজেকে সীমাবদ্ধ রেখেছি, সে সম্পর্কে স্পষ্টতই বিশেষ আগ্রহ তাঁর কোনওকালে ছিল না। একবার শুধু আমায় প্রশ্ন করেছিলেন, আমি শুধু পেপার আর আর্টিকেলই কেন লিখি? ওসব আর হিসেবের মধ্যে আসে না আজকের দিনে– কটা বই লিখেছ সেটাই জরুরি। আমি বলেছিলাম, কিন্তু রাতারাতি তো আর একাধিক বই লিখে ফেলা যায় না। দ্রুত জবাব এসেছিল– তাহলে এডিট করো।

হয়তো ঠিকই বলেছিলেন তিনি।

১০ই ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মুশির মারা যাননি– ঐ দিন তিনি বিদায় নিয়েছেন এই মাত্র। ২০১৪-তে হরিয়ানার এক রাস্তায় এক ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার দিনই আসলে তাঁর মৃত্যু হয়। ওই দুর্ঘটনার পর পড়াশোনা বা গবেষণায় ব্যাপৃত হওয়ার মত শারীরিক বা মানসিক জোর আর তাঁর ছিল না। মনে পড়ে, ঐ বছরই ভারতীয় ইতিহাস কংগ্রেসের সাধারণ সভাপতি হওয়ার প্রস্তাব তাঁকে প্রত্যাখ্যান করতে হয়। সেদিনই আমরা বুঝেছিলাম মুশিরভাইকে আমরা হারিয়েছি।

যেরকম করে বেঁচেছিলেন, তেমন করেই বিদায় নিলেন তিনি। দুটি নামাজ-ই-জনাজা পড়া হয় তাঁর মৃত্যুতে– একটি বাবুল ইল্ম শিয়া কেন্দ্রে, অন্যটি জামিয়ার ভেতরের জামা মসজিদে। শিয়া আর সুন্নি ছাড়াও অনেকে এই দুই প্রার্থনায় অংশ নেয়। শেষযাত্রায় নারীপুরুষ নির্বিশেষে সবাই তাঁর সাথে পথ হাঁটেন। অন্তিম বিশ্রাম তিনি পান সেই ক্যাম্পাসেই যার শাহজাহান রূপে পরিচিত ছিলেন তিনি। অনেক ক্ষত্রপই তাঁকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তাদের সবাইকে ব্যর্থ করে তিনি চিরদিনের মত জামিয়াতেই রয়ে গেলেন।

 

A Personal Tribute to Mushirul Hasan (15 August 1949–10 December 2018)

Recent passing away of Professor Mushirul Hasan removed many cobwebs from my memory and I was transported back around half a century to a period when our families were not only very close to each other, but also neighbours. We used to live in an old evacuee property known as Azhar Manzil, situated on a corner of a large fresh-water pond popularly known as “Hathiduba”: it was rumoured that its depths were enough to drown a fully grown elephant! In fact it was situated just behind the Azhar Manzil.

In front of our house was a large barren field with just a skeletal ruins of a house popular as “Bhut Bangla”, it being a common belief that if anyone tried to renovate it or roof it, he would immediately die! It’s owner was MC Chhagla, a well-known personality who lived in the newly built Chandigarh. Beyond it, at an angle, was the rambling and ochre coloured Hamid Lodge, the residence of Nawwab Hamid Ali Khan ( Hamid Chacha, as I used to call him!). He was a bespectacled tall thin man with a flowing white beard and an extremely loud voice. I remember him always wearing a sherwani with a slender silver handled walking stick.

And just where the front lawn of Hamid Lodge finished was the road leading to a “chauraha” comprising of a few shops, mostly of a few tailors, one or two very small general stores and a small bakery. This market later on, was going to be known as “Amir Nishan” due to a house of a similar name situated there.

Between the chauraha and the Hamid Lodge (in fact connecting both) was the Hyder Villa, which had once belonged to the father of Salman Hyder ( and husband of Mumtaz Apa, the founder Principal of Abdullah Girls College). From him it was passed into the hands of a certain Dr. Seymour from whom Dr Muhibbul Hasan (father of Mushir) had bought it after coming back from Calcutta.

Our families, apart from thus being neighbours (at a time when Aligarh was a city of large open spaces dotted with kothis), were also related in another way: My father, before partition had been the chief librarian of the Mahmudabad Estate and been a close friend of the last Raja of Mahmudabad, Muhammad Amir Ahmad Khan. Muhibbul Hasan Sahib was related with that family.

Mushir’s mother was a friend of my mother and that is why we always called her “Khalu” [maternal aunt] and her husband as “Khalu” [maternal uncle]. Not a day passed when either they were not visiting our house, or they ours.

Khalu had first served as a lecturer in Calcutta University and then at AMU. He also served for sometime at Jamia Millia Islamia and the Kashmir University, Srinagar. He authored two very important monographs: one on Babur and the other on Tipu Sultan. Both the works remained the last word for decades. It was only after Stephen Dale’s work on Babur that Muhibbul Hasan’s biography of Babur found a competitor in the field.

Khalu had a daughter (Salma Baji) and four sons: Mujeeb, Najmul, Mushir and Najeeb. Mujeeb was doing Civil Engineering and destined to first go to Pakistan and then to US, where he retired after serving in the US Army and the NATO force as a civil engineer. He first married a Kashmiri girl and then later, after their divorce, one of my sisters, Azra.

Najmul Hasan (Sunny, as he was called by friends and family) after his education became a journalist. His last assignment was as a correspondent of Reuter’s posted to cover Iran-Iraq War, where he died after stepping over an Iraqi landmine. His wife Babra belongs to Rampur and still lives with their daughter in Delhi.

Mushir got his early education at Calcutta where Khalu was then posted. He soon joined ST School (Minto Circle) at AMU. From Aligarh he also did his graduation and post graduation in History. Amongst his brothers (including the youngest Najeeb) he was the most social, popular and active. He would take part in debates, recite nauha, as sahib-i bayaz, in the Shab-i Ashura procession taken out from our house, and participate in student politics. Once he also fought for the AMU Students Union elections and stood for the post of Vice Presidentship.

At AMU he and his father were identified with the Left. Like most others, Mushir too chose to offer courses in Medieval Indian History and studied from teachers like Muhammad Habib, Irfan Habib, Nurul Hasan and Khaliq Ahmad Nizami amongst others. At one place in his writings, Mushir does lament that Aligarh had hardly anything to offer as far as Modern period in history is concerned. One of his angst was that he was taught about all and sundry in Medieval Indian History but nothing about events much closer in time, especially the history of India’s partition, political role of Muslims or that of Sir Syed Ahmad Khan.

Let us not forget the time in History that Mushir was studying at Aligarh! It was in 1950’s that the first Prime Minister of India, Jawaharlal Nehru had ordained special grants to Aligarh for Medieval Indian History. And then just a decade back, Aligarh had survived the partition with most of it’s staff and students migrating to the newly created Nation! The cross of Partition at that time still lay heavily on Aligarh! The neglect of modern and contemporary period at Aligarh of those days is understandable.

According to Professor Irfan Habib, Mushir was one of the most diligent student of his time. He was not only the topper in his batch but also an active member of a number of cultural and literary clubs on the campus. He was also an active member of SFI.

After a brief stint at Ramjas College, Mushir was destined then to go to Cambridge from where he completed his PhD. His thesis on Nationalism and Communal Politics in India during 1885-1930 broke a new ground when it was published, and subsequently ran into many editions. As if to counter the drawback at Aligarh of having neglected more recent times and the Muslim question, he later, did meticulously well-researched works on India’s partition which too got wide acclaim across the globe.

When he returned back to India from Cambridge, Mushir started his long innings at Jamia Millia Islamia where his father had once served. There he was appointed as one of the youngest Professors and slowly and gradually emerged as its Vice Chancellor.

Probably JMI doesn’t owe as much to any one else as it does to Mushir: he converted it from being a glorified “madrasa” to a University of world repute! Most of its famed institutes and centres were created by him. He modernised the campus, gave it academic excellence and took up the charge of constructing new buildings and structures. In fact he is taken to be the Shahjahan of Jamia!

As I got the news of his death, I was also reminded of the type of a VC that he was! I will narrate only some instances of which I was a personal witness. Having been used to the regal style of the functioning of the VCs at Aligarh, each of these incidents were not only refreshing but came as a surprise! In AMU a VC is a “khuda-i kul”, of whom even a Balban would be jealous of!

Once I had gone to meet my eldest brother in law, Professor Rizwan Husain, who was a Visiting Professor at JMI. He and my sister, Najma (Bajjo) were staying in one of the rooms of the University Guest House. I found Mushir walking around on the campus un-inhibited and un-escorted. He was simply walking alone!

At another occasion when I had gone to a seminar, we saw him emerge from his office. He saw us standing in the lawns. Instead of taking the road, he simply jumped a fence and came to us all smiling! And then I remember him refusing to take a plate out of turn but standing in the queue and insisting to wait for his turn! That too in a function on his own campus where he was the VC!

His humbleness had always been there! I also remember when I was frequently visiting Delhi at a time when we were waiting for the German Visa for my sister married to his elder brother who was serving in the NATO army those days. Mushir was living in a house at JNU allotted to his wife, Zoya. Express orders were that we (I and one of my friend) were to stay with him. He would see to it that we were properly fed and taken care of! And then he would, in the evenings, sit with us and joyfully hear the “Aligarh Stories”!

Mushir never had any airs or pretensions. While interacting with him you could never make out that he was the same man who had authored around 50 books, or that he was or had been a VC or was the Director General of the National Archives of India: a charge which he took after leaving Jamia. Once I was there at the National Archives for a meeting held to acquire certain manuscripts and documents. There too his unpretentious nature was in the forefront. The way he was interacting with his subordinates was something in contrast to what generally is the case!

He had a very soft corner for anything affiliated with Aligarh, which though he kept calling as a “small town” with “limited intellectual capacity”. He would also condemn those at AMU as “kuen ke mendhak” (frogs in a well)! But only a fool would be misled by these epithets. His love for his alma mater was such that he could never ignore anyone related with it. Be it the petty tailors of the Amir Nishan or any student, researcher or teacher of Aligarh: if anyone needed any kind of help or push, Mushir was there!

Amongst us “youngsters” who looked up towards him, he was very much fond of Najaf Haider, who now is a himself a Professor at JNU. Academically I never had any direct contact with him, I having confined myself to themes in Medieval Indian History with which he was apparently never interested. Once however he told me that you keep writing papers and articles. They don’t count in today’s world: What counts is authorship of books! And when I told him, one cannot become an author of multiple books overnight, he say: “edit them!”

He was perhaps correct to some extent!

Mushir did not die on 10th December 2018: He finally left us all on that date. He actually died the day he met with that horrible accident on a Haryana road way back in 2014. The accident left him physically and mentally in a condition that he could not keep himself engaged in his academic and intellectual activities. That year, I remember the Indian History Congress offered him the General President-ship. He had to decline it. It was that day that we realised that we had lost Mushir Bhai!

He finally left as he had lived! Two namaz-i janaza were offered for him: one at the Shi’a centre, Babul ‘ilm, and the other at the Jama Masjid of Jamia. Not only Shias and Sunnis but even others joined in the prayers. Both men and women walked him through his last journey. He finally came to rest on the campus which he served and of which he was labelled as the Shahjahan! Many a satrap had tried to hound him out, he worsted them all at that: he would instead remain in Jamia till eternity!