![sompa](https://i1.wp.com/www.4numberplatform.com/wp-content/uploads/2019/01/sompa.jpg?resize=678%2C381&ssl=1)
স্টেশন মাস্টার
আরও একটা বছর কাটল। আমাদের পত্রিকার সময়রেখায় এই নিয়ে দ্বিতীয়বার আমরা একটা বছরশেষের মুখোমুখি। প্রতিবারের ন্যায় এইবারও আমরা খুবই প্রত্যাশিতভাবে এই কাণ্ডটা করতে চলেছি। অর্থাৎ, ফিরে-দেখা, দু’হাজার আঠেরোর সালতামামি।
প্রতি বছর যেমন হয়, এই বছরেই বা তার ব্যত্যয় হবে কেন? প্রতিবারের ন্যায় এবারও বছরটা কেটেছে ভালয়-মন্দয়, মিলিয়ে-মিশিয়ে। হাহাকারবাদীরা বলছেন সর্বনাশ আরও ত্বরান্বিত হল, আর অন্যেরা বলছেন– ধুর এ আবার এমন কী! এমন তো হয়েই থাকে! এমনই তো… ইত্যাদি।
ফিরে-দেখতে গিয়ে চোখে পড়ছে দুটো বড় খবর। দুইয়েরই তারিখ পয়লা জানুয়ারি, দু’হাজার আঠেরো। প্রথমটা— ভারতের প্রথম রাজ্য হিসাবে তেলেঙ্গানা তার তেইশ লক্ষ কৃষকের জন্য বরাদ্দ করল বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, সারা দিন-রাতের জন্য। এই কৃষকদের লং মার্চও আমরা দেখলাম, তাঁদের প্রতি ক্রমাগত ঘটে-চলা বঞ্চনা ও অপরাধের প্রতিবাদে, একাধিকবার। আমাদের রিজার্ভড বগির মূল যে ভাবনা– অর্থাৎ ‘পিছু-হাঁটার এক বছর’, তার একটি রচনায় আমরা এই বিষয়ের কয়েকটা দিক তুলে ধরার চেষ্টা করেছি– পড়গুম্মি সাইনাথের কলমে।
আর দ্বিতীয়টা– গত অগাস্টে কেরালায় অভূতপূর্ব বন্যায় প্রাণ ও সম্পত্তির হানি। শতকের ভয়ঙ্করতম প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে পরিবেশের বদলের যাওয়াকে অন্যতম কারণ হিসাবে দেখালেন বিশেষজ্ঞেরা। তার কিছু আগে, জুন মাসে, ভারত সরকারের রিপোর্টে জানা গেল– দেশের একুশটি শহরে আর মাত্র আট বছর পরে ভূগর্ভস্থ জল বলে কিছু থাকবে না। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ‘পরিবেশ-বদল আসলে মানসিকতার বদল’ বলে নিদান দিলেও বিষয়টির গুরুত্ব ও এই বদলে কর্পোরেট দুনিয়ার হস্তক্ষেপ নিয়ে লিখলেন শুভাশিস মুখোপাধ্যায়।
দু-দুটো বিশ্বযুদ্ধের পর কী জানি কোন পুণ্যের ফলে– বড় বড় রাষ্ট্রনায়কেরা কিছু কিছু সিদ্ধান্ত করেছিলেন, যাতে করে সাধারণ মানুষ একটা অদ্ভুত শান্তির স্বপ্ন দেখেছিল সারা পৃথিবী জুড়ে। সেই সিদ্ধান্তসমূহ, এবং আমাদের শান্তির স্বপ্ন, এই দুইয়ে মিলে মোট ব্যাপারটা এমন দাঁড়াল, যাতে করে হিটলার-মুসোলিনির পথ যে বর্জনীয়, এ-নিয়ে হঠাত করে নিঃসংশয় হতে পারলাম সকলে। কিন্তু আজকাল, গোটা পৃথিবী জুড়েই, আমাদের অনেকেই ভাবতে শুরু করেছি– ওই ওদের রাস্তাটাই ভাল ছিল। ওই রাস্তায় যাওয়াটা সহজ, চলার কথা ভাবব পরে। যে ফ্যাসিজম ছিল নিন্দার বিষয়, সে-ই হয়ে উঠেছে অনেকের অবলম্বন। আমাদের দেশেও তার চকিত-ছায়া, কখনও শিকার, দেখছি। আবার করে এই ফ্যাসিজম-এর উত্থান ও তার লালন, এই নিয়ে লিখলেন আশীষ লাহিড়ী।
লিঙ্গবৈষম্য নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে, বাড়ছে ভাবনার সঙ্ঘাতও। যে দেশে কেবলমাত্র লিঙ্গবৈষম্যের কারণে প্রতি বছর খুন হয় দু’ লক্ষ ঊনচল্লিশ হাজার মেয়ে, সেই দেশেরই ইকোনমিক সার্ভের প্রচ্ছদ রাঙানো হয় গোলাপি রঙে। আবার সেই দেশেরই শাসকদলের নেতামন্ত্রীর মন্তব্যে উঠে আসে বৈষম্যের জঘন্যতম চেহারা। এর সাম্প্রতিক চেহারার নানান বৈশিষ্ট্য উঠে এল শতাব্দী দাশের লেখায়। দেশের প্রধান প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বশাসন নিয়ে বহু বিতর্ক উঠে আসছে, যে বিতর্কের সাম্প্রতিকতম কেন্দ্রে আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক– ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও সরকারের দ্বৈরথের ফল গভর্নরের সাম্প্রতিক পদত্যাগ। সেই দ্বৈরথের প্রকার ও কারণগুলি নিয়ে লিখলেন বিশ্বরূপ কোনার।
২০১৮ নিল অনেক। চলে গেলেন বহু বিশিষ্ট মানুষ। যাঁরা গেলেন, তাঁদের অনেককে ভিন্ন সময়ে, ভিন্ন-ভিন্ন সংখ্যায় বা আমাদের লোকাল ট্রেনে আমরা স্মরণ করেছি। যাঁদের কথা আমরা বলে উঠতে পারিনি তাঁদের ক্ষেত্রে আমাদের অক্ষমতাই প্রকাশ পেয়েছে, আমাদের অবহেলা বা অশ্রদ্ধা নয়। এই সংখ্যায় মা অন্নপূর্ণা দেবীর কথা লিখলেন উস্তাদ আলি আকবর খানসাহেবের কন্যা লাজওয়ন্তি খান গুপ্তা। এ ছাড়াও আমরা স্মরণ করলাম মৃণাল সেন, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, মুশিরুল হাসান, আবদুর রাকিব, পার্থপ্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায় ও অরুণ ভাদুড়িকে।
এর বাইরে আমাদের অন্যান্য বিভাগগুলোতে যথারীতি থাকছে নতুন-নতুন লেখা। তবে বছরের শুরুটা হচ্ছে একরকমের শেষ দিয়ে। চার্লস বুকাওস্কির যে-বইয়ের অনুবাদ আমরা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করলাম, তার শেষ কিস্তি প্রকাশিত হচ্ছে এই সংখ্যায়।
সব শেষে, ইংরিজি নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানবেন। সচেতন থাকুন নতুন বছরে, সারা বছর জুড়ে। সঙ্গে থাকুন।
অলমিতি।