পাঁচটি কবিতা
১.
মুখ চেনো বলেই পিছু ডাকবে— এ শতাব্দী এমন কিছু পূর্বশর্ত রাখেনি। বদলে জমিয়েছে নিরুত্তাপ আর ঘূর্ণির কেন্দ্রে এক অসুস্থ স্থিরতা। বাগানে এমনিই ফুটত ফুল আলগোছে। পুষ্পাঞ্জলি আর নতুন প্রেমের খোঁপায় বেড়ে উঠত বাগান। যাবতীয় শ্রাদ্ধবাসরের আয়োজনে কেড়ে নিলে ফুল। প্রেমিকের ফাঁকা হাত, চাষির বাঁজা জমি। মরচে ধরে গেল শ্রমিকের গায়ে। এমন চিবুক চিবুক নরম রইল না সোহাগ। গোটা গোটা ঘর আর ক্ষয়াটে ভাঙা মানুষের ফর্দ। জানলার গরাদে কী আশ্চর্য ক্যামোফ্লাজে মিশে থাকে অহল্যা। সংসদে বন্দি রাম তার বুকে পা ঠেকাতে পারবে না।
২.
আমিও তোমার হই এজন্মের মতো
কাঠচেরা গন্ধ নিয়ে আগামী শীতে
ভুলে যাই কম্বল ঘুমোতে শেখেনি
স্মৃতিটুকু লেগে থাকে রোঁয়ার মতন
দিকের অঙ্ক গুনে যে জাহাজ সমুদ্রে ভাসে
সে ডোবে যেখানে তার সঙ্গিনী নেই
বাতিঘরে বহুদিন আলো জ্বলেনিকো
মৃত জাহাজেরা তাই বাড়িও ফেরে না
তুমি ভেসে থাক তুলতুলে সোহাগে
পিতলের ঘটি ছাই মেজে রাখো চকচকে
আমি ফিরে মুখ ধোব
জল দেব ঘাড়ে ও গলায়
আমিও তোমার হব এজন্মের মতো
৩.
এসো।
শুধু এটুকু বলার পর থেমে থাকা যায়?
নাকি রোদ পড়ে আসা শীত দিনে
লুকিয়ে রাখা যায় চাবি।
এমন দ্বন্দ্বের কালে চৌকাঠ হারিয়ে যায়
অতিথি আর ঘরণী দুজনেই চুপ
যেন কত যুগ জল-না-ওঠা নলকূপ
নিঃশ্বাসহীন।
একজনের ঘর পেরোলে উঠোন
অন্যজনের আজীবন নির্বাসন।
৪.
ডান হাতের থেকে সেই তো কবেই সরে গেছে বাঁ হাত। এখন তুমি নাম দিতে শিখেছ। হাতে অতিমারির অভিধান।
ছক কাটছ। সংখ্যা লিখছ। মুছে ফেলছ ক্লান্তিহীন।
চোখের সামনে বিয়োগের খাতা হয়ে গেল আমার দেশ।
৫.
বৃষ্টির বিকেলে প্রজাপতিদের দেখানেই। পিচরাস্তা যেন শান-বাঁধানো পুকুর। ছাতা চুঁইয়ে পড়ে গন্তব্যের গদ্য। ট্রাকের রমণে ছলকে গায়ে এসে লাগে গত জন্মের প্রলাপ। গাঁ-ঘরের সাথে সুতোর যোগ নেই যাদের – তারা মিনিবাসের কাচ নামিয়ে দেয়। জল ছোঁয় না। আলস্যের দোকানপাট। বৃষ্টিভেজা একুশের সঙ্গে শুকনো আলাপ হয় প্রাচীনের। জল বাড়তে বাড়তে সিঁড়ি ছোঁয়। পরের টিউশনটা মিস হয়ে যায়। মহাসড়ক জুড়ে বৃষ্টি। অভ্যেসে ট্র্যাফিকের আলো বদলায়। দুপাশে শেডের তলায় জায়গা নেই। বৃষ্টি আসে। জল জমে। শহর ভেজে না।