Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

আমি কাঁদতে কাঁদতে গাইছিলাম ‘জনগণমন’, কিন্তু তা আমাকে রক্ষা করতে পারল না

শুভ প্রতিম

 


‘আমরা, এক সচেতন প্রয়াস’ এবং কয়েকটি সহযোগী সংগঠন মিলে কথা বলা হয় সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষত বিজেপি-শাসিত রাজ্যে প্রহৃত, বিতাড়িত অভিবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে। যদিও এর মধ্যে আম আদমি পার্টি-শাসিত পাঞ্জাবেও বাঙালি অভিবাসী শ্রমিক হয়রানির খবর এসেছে। এই পর্বে আমরা কথা বলি বিভিন্ন পরিসরে অভিবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে। যেমন বাংলাদেশে পুশব্যাক থেকে ফিরে আসা বিএসএফ ও মহারাষ্ট্র পুলিশের হাতে নির্যাতিত শ্রমিক, পুনরায় ফিরে যেতে চাওয়া শ্রমিক, হেবিয়াস কর্পাস করা শ্রমিক, কোচবিহারে ছিটমহলের অধিবাসী, মতুয়া ইত্যাদি। এখানে প্রথম পর্ব রাখা হল

 

সর্বশেষ ২০১১-র জনগণনা অনুসারে ভারতে প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন হলেন অভিবাসী। এঁদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ রাজ্যের মধ্যেই স্থানান্তরণ করেছেন, বাকিরা ভিনরাজ্যে গেছেন। সর্বশেষ আবাসস্থানের ভিত্তিতে (প্লেস অফ লাস্ট রেসিডেন্স বা পিএলআর) দেখতে গেলে, দেশের মধ্যে ৪৫ কোটি ৫৮ লক্ষ অভিবাসীর মধ্যে ৫ কোটি ৪৩ লক্ষ বিভিন্ন কারণে নিজ রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে গেছেন।[1] তুলনামূলক অর্থনীতিতে দুর্বল রাজ্যগুলি থেকে আগত অভিবাসী শ্রমিক অর্থনৈতিকভাবে সবল রাজ্যগুলিতে শ্রমের চাহিদা পূরণ করেছে।

অভিবাসী শ্রমিক বাংলার গ্রামীণ অর্থনীতির অন্যতম বৃহৎ অংশীদার। গ্রামবাংলার বিশেষত পিছিয়ে পড়া জেলাগুলিতে এমন গ্রাম খুঁজে পাওয়া দুষ্কর যেখানে পরিবারের কেউ না কেউ ভিনরাজ্যে পাড়ি দেয়নি কাজের জন্যে। এক্ষেত্রে মালদহ, মুর্শিদাবাদ তালিকার শীর্ষে। কোভিড-পর্বে সাময়িক উল্টো স্রোত দেখা গেলেও পরবর্তীকালে তা আবারও বহমান থেকেছে দেশের পশ্চিম বা দক্ষিণপানে। গ্রামীণ রোজগারের বড় জোগান, ‘১০০ দিনের কাজ’। তৃণমূলস্তরের দুর্নীতি ও কেন্দ্রীয় স্তরের সিদ্ধান্তে কাজ বন্ধের ফতোয়ার ফলে গ্রামে রোজগারের পথ বন্ধ হয়েছে। ফলে অভিবাসন পরিণত হয়েছে গণ-অভিবাসনে।

এই বাস্তবতার প্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষত বিজেপি-শাসিত রাজ্যে বাংলাভাষী শ্রমিকদের নির্যাতন, বেআইনি আটক, বাংলাদেশ সীমান্তে প্রেরণ (পুশব্যাক) এক চরম ‘অন্যায়’ কায়েম করেছে। চরম আতঙ্কে রয়েছেন ভিনরাজ্যে থাকা বাঙালি শ্রমিকরা। যাঁরা চলে এসেছেন তাঁদের মধ্যে অনেকেই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। অনেকে আবার ফিরেও গেছেন যেখানে কাজ করতেন সেখানে। অনেকে বিজেপিশাসিত রাজ্য বাদ দিয়ে অন্য রাজ্যে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন।

বাস্তবতা এই, এ-রাজ্যে কাজ নেই, কোথাও কোথাও কাজ থাকলেও তা নিয়মিত নয়, কাজের মজুরি খুব কম। ফিরে আসা শ্রমিকদের মুখ থেকেই এই বয়ান জানা গেছে। জানা গেছে, ‘আমাদের গ্রামে বসে থাকার উপায় নেই, এখানে থাকলে বৌ-বাচ্চা নিয়ে না খেতে পেয়ে মরব নাকি!’

‘আমরা, এক সচেতন প্রয়াস’ এবং কয়েকটি সহযোগী সংগঠন মিলে কথা বলা হয় সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষত বিজেপি-শাসিত রাজ্যে প্রহৃত, বিতাড়িত অভিবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে। যদিও এর মধ্যে আম আদমি পার্টি-শাসিত পাঞ্জাবেও বাঙালি অভিবাসী শ্রমিক হয়রানির খবর এসেছে। এই পর্বে আমরা কথা বলি বিভিন্ন পরিসরে অভিবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে। যেমন বাংলাদেশে পুশব্যাক থেকে ফিরে আসা বিএসএফ ও মহারাষ্ট্র পুলিশের হাতে নির্যাতিত শ্রমিক, পুনরায় ফিরে যেতে চাওয়া শ্রমিক, হেবিয়াস কর্পাস করা শ্রমিক, কোচবিহারে ছিটমহলের অধিবাসী, মতুয়া ইত্যাদি। এখানে প্রথম পর্ব রাখা হল।

 

‘তুই বাংলাদেশি’, এই দেশে তোর স্থান নেই

তরতিপুরের নাজিমুদ্দিন মণ্ডল একটু ভোলেভালা গোছের মানুষ। মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া থানার তরতিপুর অভিবাসী শ্রমিকদের গ্রাম। এমন পরিবার খুঁজে পাওয়া দুষ্কর যে পরিবারের পুরুষরা ভিনরাজ্যে যায়নি কাজের খোঁজে। গ্রামটা বেশ বড়, একটা গ্রামেই ৫টা গ্রামপঞ্চায়েত মেম্বার। গ্রামের ভিতরে প্রায় ১ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তা, যদিও তাকে রাস্তা না বলে পুকুর বলাই ভালো। সকালের এক পশলা বৃষ্টিতে সেখানে বাস্তবিকই পাতিহাঁস চরছিল।

নাজিমুদ্দিন দেড় বছর থেকে মুম্বাইয়ের পালগড় নালাসোপরায় থাকেন। এর আগে মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে কাজ করেছেন তিনি, তা প্রায় ৫ বছর তাঁর এই যাতায়াত। এই দীর্ঘ যাতায়াতে তিনি কখনও ভাবেননি এইরকম কিছু হতে চলেছে! ১৩ জুন রাত্রে তাঁদের তুলে নিয়ে যায় মহারাষ্ট্র পুলিশ।

কালিনস থানায় আমাদের ৮ জনকে নিয়ে যায় ওরা, সেখানে গিয়ে দেখি প্রায় ১৫০ জন শ্রমিক জড়ো হয়েছে। মুম্বাইয়ের বিভিন্ন জায়গা থেকে তুলেছে তাদের। আমরা আমাদের সঙ্গের কাগজপত্র দেখালাম, ওরা সব ওরিজিনাল নিয়ে নিল। প্যান, আধার, ভোটার কার্ড সব। আমাদের ফিঙ্গার-এর ছাপ পর্যন্ত নেওয়া হল মেশিনে। জীবনে সবচেয়ে বেশি ভয় পেয়েছিলাম সেদিন। বাইরে রাজ্যে এসেছি পেটের তাগিদে, এইসব কার্ড, কাগজই তো আমাদের প্রমাণ, কী হবে শেষ পর্যন্ত! তখনও বুঝিনি শেষ পর্যন্ত কী হতে চলেছে।

আমাদের মোবাইল ফোনগুলিও নিয়ে নেওয়া হল। ফোনগুলিতে কোনও বাংলাদেশি নাম্বার আছে কিনা জানতে চাইল। আমার তো ছিল না, কিন্তু আমাদের মুর্শিদাবাদে অনেকের আত্মীয় থাকেন ওপারে, তাই তাঁদের ফোনে বাংলাদেশি আত্মীয়র ফোন নাম্বার থাকতেই পারে। আরও ভয় পেয়ে গেলাম।

বলেন নাজিমুদ্দিন।

সত্যিই কি এরকম কেউ ছিল, আমরা প্রশ্ন করাতে নাজিমুদ্দিন বলেন—

হ্যাঁ। বাংলাদেশিও ছিল পুলিশ যাদের ডেকেছিল তাদের মধ্যে। কেননা ওরাই বলাবলি করছিল। কিন্তু আমাদের কেন আটকে রাখা হল?

পরদিন আমাদের একে একে ডাকা হয়েছিল পুলিশের ঘরে, খুব ভয় পেয়েছিলাম। আগের দিন খুব মারধর করেছিল, চড় থাপ্পর লাথি। বারে বারে বলেছিলাম, বিশ্বাস করেন আমার বাড়ি মুর্শিদাবাদ, আমি ভারতীয়। মার থামায়নি। আজ আবার আলাদা আলাদা করে ডাকছে শুনে খুব ভয় পেয়েছিলাম, এবার যদি লাঠি দিয়ে মারে বা আরও ভয়ঙ্কর কিছু! আমি ঠকঠক করে কাঁপছিলাম। দুইজন পুলিশ অফিসার ছিল, আমাকে বলল, জাতীয় গান গেয়ে শোনা। প্রথমে বুঝতে পারিনি, বলি, ‘ক্যা বল রেহে হ্যায় সাহাব’। গালি দিয়ে বলে, ‘রাষ্ট্র গানা শুনা’। বিশ্বাস করেন, আমি কাঁদছিলাম আর গাইছিলাম, ‘জনগণমন অধিনায়ক জয় হে, ভারত ভাগ্যবিধাতা’। ভেবেছিলাম এই গান আমাকে রক্ষা করবে। অন্যদের কথা বলতে পারব না, কিন্তু আমাকে তো ‘বিদেশি’ তকমা দেওয়া থেকে রক্ষা করতে পারল না।

পুনে এয়ারপোর্টে আমাদের বলা হয়েছিল কলকাতায় পাঠানো হবে। প্লেনে হাত বাঁধা হয়েছিল আমাদের ট্যাগ বেল্ট দিয়ে। বাগডোগরা এয়ারপোর্টে হাত খোলা হয়েছিল। সামান্য কিছু খাবার দেওয়া হয়েছিল আমাদের। এয়ারপোর্টে লাইন দিয়ে দাঁর করানো হয়েছিল, তারপর তোলা হয়েছিল গাড়িতে। রাত্রি কত হবে মনে নেই। সেই সময় দিন রাত্রি সময়ের কোনও হিসাব ছিল না আমার। আমাদের নিয়ে যাওয়া হোল বিএসএফ-এর ডেরায়, কোন ক্যাম্প, বা কোন ব্যাটেলিয়ন কিছুই জানি না।

বিএসএফ ক্যাম্প থেকে আমাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তে। ক্যাম্পে আমাদের আবার মারধর করল বিএসএফ। মহারাষ্ট্রের পুলিশের পর আবার সীমান্তরক্ষী বাহিনী। আমি জানতে চেয়েছিলাম, মারছেন কেন? তখন আবার বেত দিয়ে মারতে শুরু করল। আমাদের কাপড়চোপড় সব খুলে সার্চ করতে শুরু করল। আমার কাছে রোজগারের জমানো টাকা ছিল, প্রায় পনেরো হাজার। কেড়ে নিল ওরা, আমাদের দেশের কোনও কিছু নিয়ে যেতে পারবি না, শাসানো হল বারবার। কোঁচরে কয়েকটা কয়েন ছিল, সেগুলোও কেড়ে নিল। টাকা যে নিল তার কিছুই লিখল না, রসিদও দিল না। বিনিময়ে আমাকে মাত্র তিনশো বাংলাদেশি টাকা দিয়েছিল। পরদিন আমাদের বিএসএফ-এর ছোট গাড়িতে বসাল, আমাদের নিয়ে যাওয়া হল বর্ডারে, প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টার জার্নি। বড় গেট দেখে, আর তাতে লেখা দেখে বুঝলাম এটা ভারতের শেষ প্রান্ত, ওইদিকে বাংলাদেশের বর্ডার। কোন গেট তা জানি না, জীবনে আসিনি তো এইদিকে। শিউড়ে উঠেছিলাম, আমি তো সেখানে চিনি না কিছুই! তখন রাত্রি তিনটে। চারিদিকে ঘন কালো অন্ধকার। ঠক ঠক করে কাঁপছিলাম আমি। আরও আটজন ছিল আমাদের সেই দলে। সকলকে চিনিও না, শুনেছি কয়েকজন বাংলাদেশিও ছিল। ওদের মোবাইল থেকে বাংলাদেশি নাম্বার, কথোপকথন জেনেছিল পুলিশ।

নিজামুদ্দিনকে জিজ্ঞেস করা হয়, কীভাবে বুঝলেন বাংলাদেশি ছিল? আপনি মহারাষ্ট্রে যখন আটক করা হয় তখনও বাংলাদেশি ছিল বলছিলেন? উত্তরে নিজামুদ্দিন বলেন—

হ্যাঁ ওরা স্বীকার করেছিল, ওরা বাংলাদেশি। ওদের বাংলাদেশি ঠিকানা জানিয়েছিল মহারাষ্ট্র পুলিশকে, সেগুলি লেখা হয়েছিল খাতায়।

তারপর আবার বলেন—

গেটের কাছে নিয়ে গিয়ে আমাদের বলল, ইন্ডিয়ায় আর আসবি না, এলে গুলি করে মেরে দেব। বাংলায়, হিন্দিতে আমাদের এসব বলা হল। আমাদের হাতে এক বোতল পানি আর খাবার প্যাকেট দিয়েছিল। প্যাকেটে কী খাবার ছিল দেখিনি। সেই অবস্থায় ছবি তুলেছিল বিএসএফ। ছবি অবশ্য অসংখ্যবার নিয়েছে। মুম্বাই, পুনে, বাগডোগরা সর্বত্র।

ওপারে জঙ্গলের দিকে ঠেলে দেওয়া হল আমাদের। রাত্রির অন্ধকার ভালো করে ঠাহর হচ্ছিল না কিছুই। ওদিকে ইন্ডিয়ারও জমি ছিল, চা বাগান ছিল, আমরা ওখানেই বসে থাকলাম রাতভর। পরের দিন সকাল তখন ছটা বা সাড়ে ছটা হবে, তারিখটা মনে নেই, ১৪ জুন হতে পারে, কেননা ১৩ জুন আমরা বাগডোগরা পৌঁছেছিলাম। রাস্তা দিয়ে যখন হাঁটছি তখন দেখা হয় ওখানে যে গ্রাম আছে সেই গ্রামের লোকজনের সঙ্গে। তারা আমাদের পরিচয় জানতে চাইল, আমি বললাম আমরা ভারতীয়। দুইজন বাংলাদেশি ছিল আমাদের সঙ্গে। তারা চলে গিয়েছিল সকাল হতেই। আমরা তিনজন থেকে গেলাম। পরে জেনেছিলাম সেই বাংলাদেশি গ্রামটির নাম পাটগ্রাম। ভয়ে আমরা গ্রামটিতে ঢুকতেও পারিনি, ওইদিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আছে, ফেরার পথ নেই, এই দিকে বিএসএফ। আমরা চা বাগানে, ইন্ডিয়ার জায়গাতেই বসেছিলাম। দেশের মাটি ছেড়ে যাইনি।

সেখানের কয়েকজন যুবক আমাদের কথাগুলি ভিডিও রেকর্ডিং করে। ইউটিউবে প্রচার করে, আমাদের ফোন নাম্বার নিয়ে বাড়িতে যোগাযোগ করিয়ে দেয়। আমাদের খাবার দেয় ওরা। দুইদিন দুইরাত আমরা খোলা আকাশের নিচেই ছিলাম।

১৬ তারিখ বিকেলে বিএসএফ আসে, আমাদের নিয়ে যেতে। এসে বলল, তোমাদের নিয়ে যেতে এসেছি। নিয়ে গেল মেখলিগঞ্জ থানায়। কেন আমাদের পাঠালে আবার ফেরত নিতে এসেছই বা কেন, এই কথা জিজ্ঞেস করার মতো সাহস আমাদের ছিল না। তারপর ১৭ জুন বাড়ি ফিরলাম আমি।

 

‘আমরা সেখানেই ফিরে যাচ্ছি, বৌ-বাচ্চা নিয়ে না খেতে পেয়ে মরব নাকি!’

তরতিপুরের চারজন। নিউটন, মানারুজ্জামান, সামিউল, আমানত সকলেই আনসারি, অর্থাৎ জোলা। বয়স ত্রিশ থেকে চল্লিশের মধ্যে। এই পাড়াটা মুসলিম জোলাদের বসবাস। ‘বেলডাঙ্গার গামছা’ বলে যে বিখ্যাত গামছা আছে তা এখানে বাড়িতে বাড়িতে বোনা হয়।

মানারুজ্জামান বলেন,

আমরা ওড়িশার ঝাড়সুগুদা জেলার বজরংনগরের গান্ধিচকে ছিলাম। রাত্রি আড়াইটার সময় পুলিশ এল। বলল তোমাদের ডকুমেন্ট সার্ভে হবে। ওপর থেকে অর্ডার এসেছে। আমরা বজরংনগর থানায় আসি। আমাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ডকুমেন্ট যেমন আধার, ভোটার কার্ড দেখে। যাদের পাসপোর্ট আছে, জন্ম সার্টিফিকেট আছে তাদের লিখে ছেড়ে দিয়েছে। থানায় প্রায় ৩৭৫ জন ছিল, শুনেছি ঝাড়সুগুদা জেলা থেকে সেদিন ৪১৪ জনকে তুলেছে।

নিউটন জানালেন,

ঈদের পরে আমরা কাজে যোগ দিয়েছিলাম। রাজমিস্ত্রির কাজ, কামাই করলে আমাদেরই লস। এই প্রথম এমন অভিজ্ঞতা হল। থানায় আমাদের ফোনগুলো নিয়ে নেওয়া হয়, কিন্তু আমরা চাইলে ফোন করতে দিচ্ছিল। আমাদের ঠিকাদার প্রমোদ প্যাটেল, আমাদের সহযোগিতা করেছিল। ৭ জুলাই থেকে ১০ জুলাই, প্রায় ৭২ ঘণ্টা আমাদের আটক করে রাখে। না, খাবার বলুন বা ব্যবহার, কোনও খারাপ কিছু করেনি ওড়িশার পুলিশ-প্রশাসন। তবে কাজ করতে গিয়েছি, তিনদিন আটক করে রাখা মানে আমাদের মজুরি লস। আটক শ্রমিকদের মধ্যে ওখানে ৬-৭ জন হিন্দু ছিল, আলাপ হয়েছে আমাদের সঙ্গে। একজন আদিবাসীও ছিল জেনেছি।

আমানত বলেন,

আমাদের ডাক্তার দেখানো হয়। পুলিশ একটা নাম্বার দেয়, বলে কোথাও আটক করলে বা কোনও সমস্যা হলে এই নাম্বারে ফোন কোরো। আমরা আবার ওখানে কাজের জায়গায় ফিরতে চাই।

তাহলে এখন ফিরলেন কেন জানতে চাইলে আমানত বলেন,

বাড়ির মানুষ উৎকণ্ঠায়, বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে, মারধর করছে, এসব শুনে খুব ভয় পেয়েছিল।

প্রায় সকলেই জানালেন,

আবার কাজে যাব। কেনই বা যাব না, এখানে ৫০০ টাকা মজুরি, ওখানে ৮০০/১০০০ পাই। লাগাতার কাজ। এখানে কোনও কাজ নেই, খাব কী? এই যে আমরা ফিরে এসেছি, কাজ নাই, এখানে কি কোনও কাজের ব্যবস্থা করেছে? আমরা ফিরেছি নিজেদের খরচেই।

 

[ক্রমশ]


[1] জনগণনা ২০১১।