Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

বাংলা বইয়ের সেকাল একাল পরকাল

স্বপন বিশ্বাস

 


মানুষ ছাপা বই পড়তে চায়। নতুন বইয়ের গন্ধ, পাতা উল্টিয়ে পড়ার আনন্দ, দুপুরের ভাতঘুমের আগে বই হাতে নেওয়ার অভ্যাস, কিংবা পড়তে পড়তে বুকের ওপর বই রেখে ঘুমিয়ে পড়ার সুখস্মৃতি— এইসবই ছাপা বইকে টিকিয়ে রাখবে আরও অনেক দিন। বাড়ির ড্রয়িংরুমের বুকশেলফ সাজানোর জন্যও বই লাগে। লেখকেরাও চান তাঁদের নতুন লেখা কাগজে ছাপা বই হয়ে পাঠকের হাতে পৌঁছাক। আর প্রকাশনাশিল্পের বিশাল জগৎ রাতারাতি হারিয়ে যাওয়ার নয়

 

আমাদের ছাপা বইয়ের ইতিকথা বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় ছাপাখানার কথা। ১৪৫৫ সালে জার্মানিতে জোহানেস গুটেনবার্গ আধুনিক ধরনের ছাপার মেশিন তৈরি করেন। পর্তুগিজরা প্রথম সেই যন্ত্র ভারতবর্ষে নিয়ে আসে ১৫৫৬ সালে। ভারতের পশ্চিম উপকূলের গোয়ায় বসানো হয়েছিল কাঠের তৈরি সেই ছাপার যন্ত্র। উদ্দেশ্য ছিল খ্রিস্টধর্ম প্রচারের বই ছাপানো। সেই বছরেই ছাপা হয়েছিল Compendio Spiritual Da Christa নামে একটি বই। বইটি এখন নিউইয়র্কের পাবলিক লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত আছে।

বাংলা ভাষায় প্রথম যে বইটি ছাপা হয়, তার নাম কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ। সেটিও খ্রিস্টধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে রচিত। ভাষা বাংলায় হলেও লেখা হয়েছিল রোমান হরফে। এক অনুলেখকের মাধ্যমে পর্তুগিজ লেখক ম্যানোয়েল দা আসসুমসাঁও এই বইটি রচনা করেন। বইটি প্রকাশিত হয় ১৭৪৩ সালে, পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে।

এরপর ১৭৭৮ সালে কোনও এক অ্যান্ড্রুজ সাহেব পশ্চিমবাংলার হুগলিতে একটি ছাপাখানা খোলেন। অর্থাৎ, পশ্চিম উপকূলের গোয়া থেকে পূর্বভারতের বাংলায় ছাপাখানা পৌঁছতে সময় লাগে পাক্কা দুশো বাইশ বছর। সেই হুগলি প্রেস থেকেই ছাপা হয় ন্যাথানিয়েল ব্র্যাসি হ্যালহেডের লেখা ইংরেজি বই A Grammar of the Bengal Language। বইটি বাঙালিদের জন্য নয়, ইংরেজদের বাংলা শেখার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছিল। তবে তাতে কিছু বাংলা অক্ষর ব্যবহার করতে হয়েছিল। এ কাজে চার্লস উইলকিন্স সাহেবকে বাংলা অক্ষর নির্মাণে সাহায্য করেছিলেন পঞ্চানন কর্মকার।

কলকাতায় প্রেস বসে ১৭৮০ সালে। সে বছর আইরিশ জেমস অগাস্টাস হিকি শুরু করেন Hicky’s Bengal Gazette। ছাপাখানার জন্য বিখ্যাত শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশন চালু হয় ১৮০০ সালে, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে উইলিয়াম কেরির নাম। তিনি ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে ভারতবর্ষে এসে প্রথমদিকে বেশ নাস্তানাবুদ হয়েছিলেন। সেই প্রসঙ্গ প্রমথনাথ বিশীর কেরী সাহেবের মুন্সী উপন্যাসে লেখা আছে। তবে বাংলা প্রকাশনার জগতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তিনি স্মরণীয়। কেরিই পঞ্চানন কর্মকারকে হুগলি থেকে শ্রীরামপুরে নিয়ে আসেন বাংলা অক্ষর তৈরির জন্য। সেখান থেকেই ১৮১৮ সালে প্রকাশিত হয় বাংলার প্রথম সংবাদপত্র সমাচার দর্পণ

শুরুতে কলকাতায় ‘সেন্ট অ্যান্ড্রুজ’ নামে একটি বিলিতি বইয়ের দোকান ছিল। লন্ডন থেকে ছাপানো কিছু বই পাওয়া যেত এই দোকানে। মূলত সাহেব–মেমরাই তার ক্রেতা ছিলেন। শ্রীরামপুর প্রেস থেকে সাহেবদের বাংলা শেখানোর জন্য যেসব বই ছাপা হত, তা এখানেও পাওয়া যেত। পরবর্তীতে বই প্রকাশনায় এগিয়ে আসে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ। তারা তুলনামূলক সস্তায় সাধারণ মানুষের জন্য বই ছাপা শুরু করে।

কলকাতায় প্রথম প্রেস স্থাপন করেছিলেন বাবুরাম নামে একজন বাঙালি। তবে বাংলা বই প্রকাশের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য। তিনি শ্রীরামপুর প্রেসে কম্পোজিটর হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। পরে তিনি লেখক, প্রকাশক, সাংবাদিক ও বইবিক্রেতা— সব ভূমিকাতেই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। প্রথম বাংলা সচিত্র গ্রন্থ, ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল, তিনিই প্রকাশ করেন ১৮১৬ সালে, কলকাতার ফেরিস কোম্পানির প্রেস থেকে।

সেই সময়ে কলকাতার শোভাবাজার রাজবাড়ির বিশ্বনাথ দেব নামে একজন প্রকাশনা ব্যবসায় নামেন। তিনি সাধারণ মানুষের চাহিদা অনুযায়ী পুঁথি, পাঁচালি, পঞ্জিকা, পুরাণ, লোককাহিনি ইত্যাদি-সহ ঘরোয়া কেচ্ছাকাহিনি নিয়ে সস্তা বই প্রকাশ শুরু করেন। তাঁর পথ অনুসরণ করে আরও অনেকে এগিয়ে আসেন। শোভাবাজার-চিৎপুর এলাকার একটি বিশাল বটগাছকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে বাংলা বইয়ের মুদ্রণ ও প্রকাশনা ব্যবসা। এখান থেকে সাধারণত জনপ্রিয় ধারার নিম্নমানের সাহিত্যের বই প্রকাশ করা হত। সেই থেকে এই ধরনের জনপ্রিয় ধারার সাহিত্য “বটতলার সাহিত্য” নামে পরিচিতি পায়। তবে বটতলা প্রেস থেকে অনেক গুণী লেখকের সৃজনশীল বইও প্রকাশিত হয়েছে। যেমন— ভারতচন্দ্র, মুকুন্দরাম, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, গিরিশচন্দ্র, বঙ্কিমচন্দ্র এমন অনেকের লেখাই ছাপা হয়েছে বটতলা থেকে।

জেমস লং সাহেব— যিনি মাইকেল মধুসূদন দত্তকে দিয়ে নীলদর্পণ নাটক অনুবাদ করিয়েছিলেন— তিনি দুঃখ করে লিখেছিলেন, “কলকাতায় কোনও বইয়ের দোকান নেই, আছে শুধু ফেরিওয়ালা। তাঁরা মাথায় ঝাঁকা নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় বই ফেরি করে বেড়ায়।” সেই সময়ে শুধু বাংলাতেই নয়, ইউরোপেও ফেরি করে বই বিক্রির রেওয়াজ ছিল। সাধারণ মানুষের কথা ভেবে সস্তা কাগজ ও সস্তা বাঁধাইয়ের বই প্রকাশ করা হত, যেগুলোকে বলা হতো chapbook। এই বইগুলো যারা ফেরি করে বিক্রি করত, তাঁদের বলা হত chapboy বা chapman। বাংলায় কেউ কেউ তাঁদের নাম দিয়েছিল “বইমালি”। কলকাতায় মহিলারাও বই ফেরি করতেন। উচ্চমধ্যবিত্ত মহিলারাই ছিলেন এই বইমালিনীদের প্রধান ক্রেতা।

কলেজ স্ট্রিটে প্রথম বইয়ের দোকান খোলেন গুরুদাস চট্টোপাধ্যায়। নাম ছিল বেঙ্গল মেডিক্যাল লাইব্রেরি। এরপর ১৮৪৭ সালে বইব্যবসায় আসেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। ছয়শো টাকা দিয়ে তিনি আর্মহার্স্ট স্ট্রিটে একটি কাঠের প্রেস কিনে আরপুলি লেনে একটি বইয়ের দোকান খুলেছিলেন। বর্তমান কলেজ স্ট্রিট অঞ্চলে যে সিরিয়াস বইয়ের ব্যবসা গড়ে ওঠে, তাতে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি নিজের প্রেসে ছাপানো বইয়ের পাশাপাশি অন্য প্রেসে ছাপা বইও বিক্রি করতেন। বই বিক্রি হলে কমিশন কেটে রেখে লেখক ও প্রকাশককে টাকা দেওয়ার নিয়মও তিনিই চালু করেন।

ধীরে ধীরে কলেজ স্ট্রিটে বাড়তে থাকে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ভিড়। চালু হয় সেই বিখ্যাত কফি হাউস। অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর বাংলা বইয়ের জগতে তৈরি হয় প্রবল সাড়া। বইব্যবসার এমনই এক রমরমা সময়ে ‘সেন ব্রাদার্স’-এর মালিক ভোলানাথ সেন হজরত মুহাম্মদকে নিয়ে একটি বই প্রকাশ করায়, ১৯৩১ সালের ৭ মে দুজন কর্মচারী-সহ খুন হয়ে যান। বইটির নাম ছিল প্রাচীন কাহিনী। কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়ায় এ-ধরনের ঘটনা ছিল সেই প্রথম।

প্রায় একই ধরনের ঘটনা ঘটে ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর ঢাকায় শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে। জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে খুন হন ফয়সাল আরেফিন দীপন। তিনি নিহত লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়ের কয়েকটি বইয়ের প্রকাশক ছিলেন। ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে বইমেলা থেকে ফেরার পথে আরেকটি হামলায় নিহত হয়েছিলেন লেখক অভিজিৎ রায়।

কলকাতার মতো ঢাকাতেও বই ব্যবসা শুরু হয়েছিল বিদেশিদের হাত ধরে। আলেকজান্ডার ফারবেক নামে এক ব্যাপটিস্ট মিশনারি ১৮৪৮ সালে পুরনো ঢাকার ছোট কাটরায় একটি ছোট ছাপাখানা বসান। নাম ছিল ঢাকা প্রেস। সেই প্রেস থেকেই বেরোয় ঢাকার প্রথম সংবাদপত্র Dhaka News

তবে ঢাকায় বই ছাপার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি ঘটে ১৮৬০ সালে। ব্রজসুন্দর মিত্র ও ভগবানচন্দ্র বসু নামে দুজন বাঙালি একটি ছাপাখানা স্থাপন করেন এবং সেখান থেকেই প্রকাশিত হয় দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ নাটক। নীলদর্পণ ছিল বাংলার প্রথম নাটক যা ইংরেজিতে অনূদিত হয়। অনুবাদ করেছিলেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত এবং বইটি প্রকাশিত হয়েছিল পাদ্রি রেভারেন্ড জেমস লং-এর নামে। এই অপরাধে জেমস লংকে কারাবাসও করতে হয়।

এরপর অল্প সময়ের মধ্যেই ঢাকায় আরও অনেক ছাপাখানা গড়ে ওঠে। সেই সব প্রেস থেকে পুঁথি, কেচ্ছা-কাহিনি প্রকাশিত হতে শুরু করে। এইসব পুঁথিকে কেন্দ্র করে চকবাজার ও আশেপাশের এলাকায় গড়ে ওঠে ‘পুঁথিপট্টি’। ঢাকাতেও ছাপা হতে থাকে কলকাতার ‘বটতলার সাহিত্য’-র মতো নানাধরনের বইপত্র।

১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ এবং ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর সমগ্র পূর্ববঙ্গ নতুনভাবে জেগে ওঠে। সেই জাগরণের ঢেউ বই-বাজারেও লাগে। তবে ১৯৪৭ সালের দেশভাগ বাংলা বাজারকে নতুনভাবে গড়ে তোলে। আগে ঢাকার ব্যবসায়ীরা কলকাতা থেকে বই এনে বিক্রি করত। দেশভাগের পর কলকাতা থেকে পূর্ববঙ্গে এসে দোকান খোলে মল্লিক ব্রাদার্স, ইসলামিয়া লাইব্রেরি-র মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠান। পরে গড়ে ওঠে নওরোজ কিতাবিস্তান, স্টুডেন্ট ওয়েজ, গ্রেট ইস্ট লাইব্রেরি, আল হামারা লাইব্রেরি, খোশরোজ কিতাব মহল, পুঁথিপত্র প্রভৃতি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান।

মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ঢাকার প্রকাশনাশিল্প পেয়েছে নতুন প্রাণ ও নিজস্ব সত্তা। মুক্তধারার চিত্তরঞ্জন সাহা ১৯৭২ সালেই বইমেলার বীজ বপন করেন। বাংলা অ্যাকাডেমির বটতলায় চটের ওপর সাজানো মাত্র ৩২টি বই নিয়েই শুরু হয়েছিল সেই বইমেলার গল্প— যা আমাদের সবার জানা। এখন সেই বইমেলা বাংলা অ্যাকাডেমি চত্বর ছাড়িয়ে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে বিস্তৃত হয়েছে। বইমেলাকে ঘিরে প্রতিবছর হাজার হাজার বই প্রকাশ হয়, কোটি কোটি টাকার বেচাকেনা হয়। মফস্বল শহরগুলোতেও বইমেলার আয়োজন হচ্ছে। দেশের বাইরেও, যেমন লন্ডন ও নিউইয়র্কের মতো শহরে, আয়োজিত হচ্ছে বাঙালিদের বইমেলা।

ধীরে ধীরে পুরনো ঢাকার বাংলাবাজার ছড়িয়ে পড়েছে নতুন ঢাকায়, নতুন আঙ্গিকে। সুপরিসর বুক ক্যাফেগুলোতে এখন জমে আড্ডা পাঠক-লেখকদের। পশ্চিমবাংলাতেও এখন বাংলা বইয়ের রমরমা অবস্থা। প্রতিবছর বইমেলা হয়। সেখানে বাংলাদেশি প্রকাশকদের জন্য আলাদা প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ করা হয়।

এক কথায় বলা যায়— ছাপা বইয়ের এখন স্বর্ণযুগ। ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রকাশনাশিল্পে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বই ছাপা, প্রচার, বিপণন— সবকিছুকেই করেছে সহজতর। অনলাইনে বই বিক্রি হচ্ছে, মানুষ ঘরে বসেই বই কেনার সুযোগ পাচ্ছে।

তবুও একটি প্রশ্ন প্রায়ই সামনে এসে দাঁড়ায়: ছাপা বইয়ের দিন কি শেষ হয়ে যাচ্ছে? ভবিষ্যতে কি ছাপা বই ই-বুকে লীন হয়ে যাবে? এই প্রশ্ন কেবল বাংলা বই নয়, সমগ্র বিশ্বের বইয়ের জন্যই প্রযোজ্য।

যেমন মানুষের পড়ন্ত যৌবনে মৃত্যু-চিন্তা ভর করে, তেমনি বইয়ের জগতেও ছায়া ফেলছে এক মৃত্যুভয়। তবে মানুষের মৃত্যুর পর যে পরলোকের কল্পনা আমরা করি, সেটি ভার্চুয়াল— দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না, তবু বিশ্বাস করি। বইয়ের ক্ষেত্রেও যে ডিজিটাল বা ভার্চুয়াল রূপান্তর ঘটছে, সেটি আলাদা; এর সঙ্গে আমাদের সরাসরি সংযোগ আছে। ইচ্ছে করলেই আমরা তা ব্যবহার করতে পারি। প্রয়োজন আর স্বাচ্ছন্দ্য বিবেচনা করেই মানুষ এই পরিবর্তনের দিকে এগোচ্ছে। ই-বুক বহন ও সংরক্ষণে এনে দিয়েছে এক বিরাট সুবিধা। হাতে একটি ফোন থাকলেই যেন গোটা বইয়ের দুনিয়া ধরা দেয় মুঠোয়।

তবু মানুষ ছাপা বই পড়তে চায়। নতুন বইয়ের গন্ধ, পাতা উল্টিয়ে পড়ার আনন্দ, দুপুরের ভাতঘুমের আগে বই হাতে নেওয়ার অভ্যাস, কিংবা পড়তে পড়তে বুকের ওপর বই রেখে ঘুমিয়ে পড়ার সুখস্মৃতি— এইসবই ছাপা বইকে টিকিয়ে রাখবে আরও অনেক দিন। বাড়ির ড্রয়িংরুমের বুকশেলফ সাজানোর জন্যও বই লাগে। লেখকেরাও চান তাঁদের নতুন লেখা কাগজে ছাপা বই হয়ে পাঠকের হাতে পৌঁছাক। আর প্রকাশনাশিল্পের বিশাল জগৎ রাতারাতি হারিয়ে যাওয়ার নয়।

এ-কথা সত্য, প্রযুক্তির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অনেক পুরনো জিনিস হারিয়ে যায়। যেমন, ডিজিটাল ক্যামেরা আসার পর কোডাক বা ফুজির রোল ফিল্ম বিলীন হয়ে গেছে। অথচ টেলিভিশন আসার পরও রেডিও হারিয়ে যায়নি— বরং যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে টিকে আছে। বইও সহজে হারিয়ে যাবে না। মানুষের আবেগ আর অভ্যাসের ভরসায় বই বহাল তবিয়তেই থাকবে আরও বহুদিন।

ভবিষ্যতের কথা ভবিষ্যৎই বলবে। তবে আমরা বর্তমান প্রজন্মের মানুষ সৌভাগ্যবান— একই সঙ্গে ভোগ করতে পারছি ছাপা বইয়ের স্পর্শ আর ভার্চুয়াল বইয়ের সুবিধা। কামনা করি, বই দীর্ঘজীবী হোক। কামনা করি, আগামী দিনের বইয়ের ভার্চুয়াল পরকাল আরও সহজগম্য ও সমৃদ্ধ হয়ে উঠুক। মানুষ পড়ুক আরও বেশি বেশি বই।