সোমনাথ মুখোপাধ্যায়
আজ থেকে কমবেশি ছয় দশক আগে উদযাপিত শৈশব কি এই সময়ের তুলনায় অনেক বেশি “হিংসিত” ছিল? জনৈক পাঠক এই অধমের একটা লেখা পড়ে ঠিক এমনই মন্তব্য করেছিলেন। শব্দটা সেই থেকে মনকুলুঙ্গির মধ্যে সঙ্গোপনে গুঁজে রেখেছিলাম। আজ তাকে যত্ন করে সামনে আনছি আমাদের ফেলে আসা সময়ের এক অন্যরকম অভিজ্ঞতার কথা সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিতে।
এই বিষয়টা তো খুব স্বাভাবিক যে আমাদের সময় রুটিনবাঁধা পড়াশোনার বাইরেও বিনোদনের একটা অন্যরকম পরিসর ছিল। সেই পরিসর জুড়ে ছিল রামযাত্রা, অবিরাম সাইকেল চালানো, চার ফিট দশ ইঞ্চি উচ্চতার লিলিপুট খেলোয়াড়দের ফুটবল টুর্নামেন্ট, কালীপুজোর সময়ে তুবড়ি প্রতিযোগিতা, উনিশ পয়সার টিকিট কেটে চটের ওপর থেবড়ে বসে সিনেমা দেখা আর পুতুলনাচ। তালিকাটিকে আরও লম্বা করাই যায়, তবে আপাতত একদম শেষের বিষয়টি নিয়ে কিছু কথা বলব বলে এখানেই ইতি টানব।
দুই.
পুতুলনাচ বা পাপেট্রি ভারতের এক ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্প। মূল প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে পুতুলনাচের বিষয়ে প্রয়োজনীয় কয়েকটি কথা আলোচনা করে নিই। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, পুতুল হল মানুষের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও চমকদার উদ্ভাবন। আসলে পুতুল হল প্রতিরূপ— তা সে মানুষের হোক কিংবা পশুপাখির। পুতুলদের মধ্যে সজীব চরিত্রদের মূর্ত আরোপন যে খুব সহজ কাজ নয় তা আমরা খুব সহজেই বুঝতে পারি।
আমাদের দেশের প্রাচীন শাস্ত্রকার তথা দার্শনিকরা পুতুলনির্মাণের কাজকে অত্যন্ত সম্মানিত বৃত্তি হিসেবে মান্যতা দিয়েছেন। তাঁদের মতে, ঈশ্বর যেমন আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে জগতের আপামর মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীদের সৃষ্টি করেছেন, ঠিক একইভাবে একজন পুতুলনির্মাতা নিজের একান্ত আনন্দে সৃষ্টি করেন অসংখ্য প্রাণ-প্রতিরূপ— পুতুল। সুতরাং এই বিচারে পুতুলনাচিয়ে বা পাপেটিয়ার্সরা হলেন বিধাতার প্রতিনিধি।
তিন.
এ-কথা নিশ্চয়ই অজানা নয় যে, সংস্কৃত পুত্তলিকা বা পুত্তিকা শব্দ থেকেই বাংলা পুতুল শব্দের উৎপত্তি। পুত্তলিকা শব্দের অর্থ ‘ছোট ছেলে’। ল্যাটিন শব্দ pupa— যার অর্থ পুতুল— থেকে এসেছে ইংরেজি puppet শব্দটি। অনেকের মতে ভারতবর্ষই পুতুলনাচের আদিভূমি এবং পরবর্তীতে মুখ্যত যাযাবরশ্রেণির মানুষদের হাত ধরেই পুতুল নাচানোর বিদ্যা ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর অন্যত্র। এই বিষয়ে বিতর্ক থাকলেও বিনোদনের একটি অন্যতম মাধ্যম হিসেবে পুতুলনাচের গুরুত্বকে বোধহয় কোনওভাবেই অস্বীকার করা যায় না। বিশেষ করে কিশোরবেলায় বিমোহিত আমার মতো একজন সামান্য মানুষের পক্ষে তো নয়ই।
সাধারণ খেলনা পুতুলের থেকে পুতুলনাচের পুতুলের গড়ন-পিটনে একটা যে মৌলিক পার্থক্য আছে তা বোধহয় বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন নেই। ইদানিংকালের ব্যাটারিচালিত পুতুলেরা অবশ্য খানিক নড়েচড়ে বেড়ায়, দুই-একটা কলের বুলি আওড়ায়— তবে ওইটুকুই। পুতুলনাচের পুতুলেরা শুধু নড়েচড়ে বেড়ায় না, মুখ দিয়ে অনর্গল কথা বলে। পারস্পরিক সম্পর্কসূত্রে তুলে ধরে একটা সুগ্রন্থিত কাহিনি। এখানেই পুতুলনাচিয়েদের প্রশ্নাতীত দক্ষতা। বিনোদনের লোকায়ত উপকরণ হিসেবে এখানেই বোধহয় পুতুলনাচের সার্থকতা।
চার.
পুতুলদের যেহেতু নড়াচড়া করতে হয় সেহেতু পুতুলনাচের কারিগরির মধ্যে রয়েছে নানান বৈচিত্র্য। এই বৈচিত্র্যের নিরিখে পুতুলনাচের পুতুলেরা চাররকমের হয়—
১) স্ট্রিং পাপেট বা তার পুতুল।
২) শ্যাডো পাপেট বা ছায়া পুতুল।
৩) রড পাপেট বা ডাং পুতুল।
৪) গ্লাভস পাপেট বা দস্তানা পুতুল।
ভারতের পুতুলনাচিয়েরা এই চার ধরনের পুতুল নাচানোর কাজেই দক্ষ। ভারতের প্রায় সমস্ত প্রদেশেই কমবেশি পুতুলনাচের এক দীর্ঘ পরম্পরা রয়েছে। এই বিষয়ে এত কিছু বলার বা লেখার আছে যে এই নিবন্ধের স্বল্প পরিসরে তা আলোচনা সম্ভব নয়। তাই এখানে এই প্রসঙ্গের ইতি টেনে আমার কিশোরবেলায় ফিরে যাব।
পাঁচ.
সে-কালের শহরতলি এলাকায় ডুগডুগি বাজাতে বাজাতে তিন ধরনের মানুষ আসতেন, অন্তত আমার স্মৃতি তেমনই বলে। ডুগডুগি বাজিয়ে এ-পাড়া, সে-পাড়া ঘুরে বেড়ানো এমন মানুষেরা প্রত্যেকেই ছিলেন এন্টারটেইনার বা বিনোদনশিল্পী। প্রশ্ন হল কে কে ডুগডুগি বাজিয়ে আসতেন আমাদের আকুল করে তুলতে? প্রথম হলেন বাঁদরনাচিয়েরা। লম্বা দড়ি দিয়ে বাঁধা দুটি বাঁদর যাদের একটির নাম দিলীপকুমার অন্যটি মধুবালা অথবা ধরমিন্দর-হেমা। ডুগডুগির তালে তাল মিলিয়ে তারা মাথায় লাঠি হাতে ঘুরে বেড়াত, ডিগবাজি দিত। সেসব দেখে আমোদিত হতাম আমরা। দ্বিতীয় মানুষটি হলেন ভালুকনাচিয়ে। দড়িতে বাঁধা শ্লথ ভালুক ডুগডুগির তালে নেচেকুঁদে নানান করতব দেখাত। ভালুকখেলার সবচেয়ে রোমাঞ্চকর অংশ অবশ্য ছিল ভালুকওয়ালার সঙ্গে কপট লড়াই। আমরা যারা সেই আসর ঘিরে থাকতাম, তাদের মধ্যে এক গভীর উত্তেজনা আর ভয়ঙ্কর আনন্দ ছড়িয়ে পড়ত। তৃতীয়জন হলেন পুতুলনাচিয়ে। হ্যামলিনের সেই আশ্চর্য বাঁশিওয়ালার মতো ডুগডুগি বাজিয়ে এইসব মানুষ ঘর থেকে টেনে বের করে আনতেন আমাদের মতো সত্যিকারের রসিক দর্শকদের। এইসব মানুষেরা আমাদের ফেলে আসা কিশোর-কিশোরীবেলার ট্রু হিরো ছিলেন। আকস্মিক উপস্থিত হয়ে এঁরাই আমাদের অপার আনন্দসাগরে অবগাহনের অবকাশ করে দিতেন। এঁদের কাছে আমাদের কৃতজ্ঞতার অন্ত ছিল না।
ছয়.
আমাদের আনন্দ দিতে মাঝেমাঝেই হাজির হতেন নিরাপদ সর্দার আর ফুলমতি সর্দার— স্বামী-স্ত্রী। বাড়ি কোথায়— জিজ্ঞেস করলে বলেছিলেন ডায়মন্ড হারবার লাইনে। নিরাপদদা ছিলেন আসলে সাপধরিয়ে সাপুড়ে। গাঁয়েগঞ্জে সাপ ধরে বাঁশের তৈরি বাক্সে তাদের ভরে নিয়ে ঘুরে ঘুরে সাপের খেলা দেখাতেন। ফুলমতিদি একজোড়া গ্লাভস পাপেটের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে খ্যাঁদা-খেঁদির নাচ দেখাতেন। ফুলমতিদির মুখে থাকত হালকা সুরে গাওয়া গান যার মধ্যে দিয়ে বিবৃত হত পুতুলনাচের আখ্যান। পুতুল বদলে কখনও রামায়ণ বা মহাভারতের কাহিনি পরিবেশন করতেন তাঁরা। বিনিময়ে হয়তো পেতেন পাঁচটি টাকা। সে-কালে অবশ্য পাঁচটা টাকাই অনেক মূল্যবান ছিল। পুতুলনাচের কৈশোরক অভিজ্ঞতা এখানেই শেষ তা কিন্তু মোটেই নয়। গরমের ছুটিতে পুতুলনাচের আসর বসত আশেপাশের কোথাও। বন্ধুবান্ধবরা মিলে সেই সব আয়োজনও উপভোগ করেছি বেশ কয়েকবার। এমন সব অভিজ্ঞতার মজা এতটাই গভীর এবং আনন্দময় ছিল যে, আজ এত বছর পরে দুই অনন্যা পুতুলনাচিয়ের সঙ্গে আপনাদের আলাপ করিয়ে দেওয়ার মুহূর্তেও সেই ছেলেবেলার দিনগুলোতে ফিরে যেতে হল।
সাত.
“নক্কুবিদ্যা পাভাক্কালি”— একটি বিরলতম পুতুলনাচের লুপ্তপ্রায় শৈলী। আর এই বিরল পুতুলনাচ রীতির শেষ দুই শিল্পী হলেন দিদিমা এবং নাতনি; নবতিপর বৃদ্ধা পদ্মশ্রী শ্রীমতী মুঝিক্কাল পঙ্কজাক্ষি এবং তাঁর বছর ২৪-এর এমকম পাশ নাতনি রেঞ্জিনি কেএস। এই দুজন এখনও অসীম আগ্রহ ও ভালোবাসায় আগলে রেখেছেন পুতুলনাচের এই বহুমূল্য কেরল-শৈলীর পুতুলনাচের ধারাটিকে। কোথায় এই বিশেষ ধারার বিনোদন মাধ্যমের স্বকীয়তা? আসুন জেনে নিই আমরা।
নক্কুবিদ্যা পাভাক্কালি বা সহজ কথায় নক্কুবিদ্যা হল ভারতের দক্ষিণতম রাজ্য কেরলের একান্ত নিজস্ব ধারার স্ট্রিং পাপেট বা তার পুতুলনাচ। তবে আগে যে বিশেষ চারটি পুতুলনাচানোর রীতিপদ্ধতির কথা বলেছি তাদের থেকে নক্কুবিদ্যা অনেকটাই স্বতন্ত্র। এখানে মাত্র একজন শিল্পীই গোটা অনুষ্ঠানে পুতুলগুলোকে পরিচালনা করেন এক অদ্ভুত উপায়ে। পুতুলগুলো অপেক্ষাকৃতভাবে ছোট আকারের হয়ে থাকে এবং দুটি আলাদা রকমের কাঠ দিয়ে এদের তৈরি করা হয়। এঝিলামপালা গাছের (Alstonia scholaris, বাংলার ছাতিমগাছ) নরম কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয় পুতুলচরিত্রগুলোকে। গল্পের প্রয়োজন অনুসারে এদের একটা দু-ফুট লম্বা কাঠির ওপরে বসানো হয়। এই কাঠিটি তৈরি করতে কাজে লাগানো হয় কামুকগাছের (Areca catechu, বাংলার সুপারিগাছ) কাঠ। সম্পূর্ণভাবে ভেষজ প্রাকৃতিক উপাদান থেকে তৈরি রঙের সাহায্যে পুতুলগুলোকে রং করে নাচের আসরের উপযুক্ত করে তোলা হয়। পুতুলনাচের আসরে হাজির থাকেন বাদ্যযন্ত্রীরা ও কথাকার। পরিবারের সদস্যরাই এই ভূমিকা পালন করে থাকেন।
নক্কুবিদ্যায় পুতুলগুলোকে সচল করে তোলা হয় এক দুরূহ কষ্টসাধ্য ও ধৈর্যসাপেক্ষ উপায়ে। পুতুলচালক তাঁর ঠোঁটের উপরিভাগ ও নাকের ঠিক নিচে সামান্য উঁচু অংশের ওপর লাঠিটিকে বসান এবং হাত দিয়ে সুতো টেনে পুতুলদের অঙ্গসঞ্চালন করেন। মাথা উঁচিয়ে নজর স্থির রেখে হাতের সাহায্যে পুতুলগুলোকে কাহিনির দাবি অনুযায়ী পরিচালনা করতে শারীরিক সক্ষমতা ও ধৈর্যের প্রয়োজন হয়। এই কারণেই হয়তো নক্কুবিদ্যা পরিবেশনের জন্য উপযুক্ত শিল্পীর সংখ্যা এই মুহূর্তে মাত্র দুইজন— ৮৯ বছরের শ্রীমতী মুঝিক্কাল পঙ্কজাক্ষি এবং তাঁর নাতনি রেঞ্জিনি কেএস। দিদিমা পঙ্কজাক্ষি দেবী এতদিন একাই এই প্রাচীন লোককলার ঐতিহ্য বা পরম্পরার প্রদীপটিকে জ্বালিয়ে রেখেছেন পরম নিষ্ঠায়। এবার পারিবারিক পরম্পরা বজায় রাখতে ব্যাটন তুলে দিলেন আদরের নাতনি রেঞ্জিনির যোগ্য হাতে।
আট.
নক্কুবিদ্যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক পৌরাণিক আখ্যান। একদা ভগবান শিব এবং দেবী পার্বতী ছদ্মবেশে হাজির হলেন। শিবের নাম হল কুরাভান (ভেলান) এবং পার্বতীর নাম হল কুরাথি (ভেলাথি)। নতুন জায়গায় এসে পার্বতী খানিকটা মনমরা হয়ে আছেন দেখে তাঁকে খুশি করতে শিব এক নতুন কলা প্রদর্শন করলেন। সামান্য কিছু কাঠকুটো জোগাড় করে বানিয়ে ফেললেন গোটাকতক পুতুল। আর তারপর পার্বতীর সামনে প্রদর্শন করলেন পুতুলনাচ— নক্কুবিদ্যা পাভাকালি। সেদিন থেকে কেরলের ভেলার গোষ্ঠীর মানুষজনের একান্ত নিজস্ব শিল্পকলা হিসেবে স্বীকৃতি পেল নক্কুবিদ্যা, এক অভিনব পুতুলনাচের শৈলী। এদিক থেকে বিচার করলে বলা যায় স্ট্রিং পাপেটের এই বিশেষ ধারাটির জনক হলেন স্বয়ং ভগবান শিব।
নয়.
নক্কুবিদ্যা নিয়ে এত কথা বলছি অথচ পঙ্কজাক্ষি আম্মা সম্পর্কে কিছু বলব না তা কি হয়? পদ্মশ্রী সম্মানপ্রাপক শ্রীমতী মুঝিক্কাল পঙ্কজাক্ষি আম্মার জন্ম কেরলের কোট্টায়াম জেলার উরুলিকুন্নাথ গ্রামে ১৯৩৬ সালের ১৪ মার্চ এক দরিদ্র ভেলার গোষ্ঠীর পরিবারে। স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন বটে, তবে নিদারুণ দারিদ্র্যের কারণে মাঝপথেই স্কুল ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। তাঁর মা পাপ্পিয়াম্মা ছিলেন এক বিখ্যাত নক্কুবিদ্যাশিল্পী। তাই মায়ের কাছেই নাড়া বাঁধলেন বছর এগারোর কিশোরী পঙ্কজাক্ষি। ২০ বছর বয়সে পঙ্কজাক্ষি বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন কোট্টায়াম জেলার উঝাভুরের নিকটবর্তী মোনিপ্পাল্লি গ্রামের শিবরামা পানিক্করের সঙ্গে। এই সম্পর্ক স্থাপনের সূত্রে পঙ্কজাক্ষি আম্মার নক্কুবিদ্যা চর্চা নতুন গতি পেল। বিজয়ন, রাধামণি ও শিবা— এই তিন সন্তানের জননী পঙ্কজাক্ষি সন্তানদের প্রতিপালন, সংসারের খুঁটিনাটি গৃহস্থালি কাজকর্ম সামলানোর সঙ্গে সঙ্গে পুতুলনাচানোর কলা থেকে কখনওই নিজেকে সরিয়ে রাখেননি। আর সেই কারণেই টানা ছয় দশক ধরে দর্শকদের মনোরঞ্জনের জন্য নক্কুবিদ্যা পরিবেশন করেছেন দেশবিদেশের নানান মঞ্চে। তাঁর এই অনন্য কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২০ সালে সম্মানিত হয়েছেন পদ্মশ্রী পুরস্কারে। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া পঙ্কজাক্ষি আজ বাধ্য হয়েছেন তাঁর উত্তরাধিকারের গরিমার পতাকা নাতনি রেঞ্জিনির হাতে তুলে দিতে। পরম নিষ্ঠায় পারিবারিক পরম্পরাকে সঞ্জীবিত রাখতে রেঞ্জিনির অন্তহীন আগ্রহ।
দশ.
রেঞ্জিনির কিছু কথা দিয়েই আজ পুতুলনাচের ইতিকথার ইতি টানব। দিদিমা পঙ্কজাক্ষি আম্মার অবসর গ্রহণের পর রেঞ্জিনিই হলেন নক্কুবিদ্যার মতো এক বিরল লোকশিল্পের একমাত্র পরিবেশক। দিদিমা পঙ্কজাক্ষির আক্ষেপ যে তিনি তাঁর মেয়ে, রেঞ্জিনির মা, রাধামণিকে এই শিল্পধারার সঙ্গে যুক্ত করতে পারেননি। তবে সেই শূন্যতা পূরণ করেছে নাতনি রেঞ্জিনি। সেই আগামী দিনে এই বিলীয়মান শিল্পের পরম্পরাকে সঞ্জীবিত রাখতে বদ্ধপরিকর। রেঞ্জিনির মতে,
নক্কুবিদ্যায় তীক্ষ্ণ নজরের প্রয়োজন। শরীরের একটা অতি সংবেদনশীল অংশে একটা লাঠিকে ভারসাম্যে রেখে সুতো টেনে টেনে পুতুল নাচানোর কাজটা ভীষণ চ্যালেঞ্জিং। আমি চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসি। এই গুণটা দিদিমার কাছ থেকেই পেয়েছি। ২০০৮ সালে প্যারিসে আমরা নক্কুবিদ্যার অনুষ্ঠান করতে গিয়েছিলাম। ওটিই দিদিমার শেষ পাবলিক শো। ফেরার পথেই ঠিক করে নিয়েছিলাম, এই পারিবারিক পরম্পরাকে হারিয়ে যেতে দেব না, তাকে বাঁচিয়ে রাখব। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই আমি আগামীদিনে এগিয়ে যাব।
রেঞ্জিনি এগিয়ে চলুন। আমরা আশাভরা চোখে তাঁর দিকে নজর রাখব।
ঋণস্বীকার:
একাধিক সর্বভারতীয় সংবাদপত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। কাজে লাগানো হয়েছে উইকিপিডিয়া ও অন্যান্য কয়েকটি ডিজিটাল আখ্যানের তথ্যকেও। সবার কাছে আন্তরিকভাবে ঋণী।

